গদ্যকার্টুন-আমরা আদিম, আমরা গুহাবাসী... by আনিসুল হক
আদিম প্রস্তর যুগের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে আমাদের। যাত্রা না বলে বলতে হবে উল্টোযাত্রা, পেছনের দিকে হাঁটা। মানুষের কোনো আবিষ্কারই আর আমাদের মানায় না। আমরা বস্ত্রের উপযুক্ত নই, কারণ বস্ত্র বয়নের জন্য যন্ত্র দরকার, চাকা দরকার, আমরা তার উপযুক্ত নই। আমাদের পরিধানের পোশাক আমাদের ব্যঙ্গ করছে।
তীর-ধনুকও তো একটা হাতিয়ার, ওটার সন্ধান পেতেও আদিম মানুষকে বুদ্ধি প্রয়োগ করতে হয়েছে, গাছের বাঁকা ডালের সঙ্গে লতা বাঁধতে হয়েছে। আমরা তারও উপযুক্ত নই। আমরা আদিম, আমরা প্রস্তর যুগের। ছাদের নিচে, দেয়ালঘেরা, বেড়া দেওয়া বসতবাটিতে বসবাস আমাদের মানায় না। মুক্ত অরণ্য, ঘন জঙ্গল, অন্ধকার গুহাই আমাদের উপযুক্ত বাসস্থান। আমরা টোটেমবদ্ধ একদল প্রাণী। মানুষ হওয়ার আগের স্তরে বিরাজ করছি আমরা। আরও সহস্র বছর পরে একদিন হয়তো মানুষ হয়েও উঠব। আপাতত আমরা ঊনমানুষ। আমরা আদিম, আমরা বর্বর, আমরা গোত্রবাদী, আমরা এক গোত্র আরেক দলের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ি। না, কোনো ধরনের অস্ত্র আমরা আবিষ্কার করে উঠতে পারিনি, পলিমাটির দেশ বলে প্রস্তরও আমাদের কাছে সুলভ নয়, আমাদের একমাত্র ভরসা হলো প্রকৃতির অপার দান বৃক্ষরাজি থেকে পাওয়া লাঠিসোঁটা। তাই নিয়েই সজ্জিত হই, আমরা দলভুক্ত হই, তা নিয়েই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি আরেক দলের ওপর। লাঠির বেদম আঘাতে আমরা থেঁতলে দিই প্রতিপক্ষের মাথা। আমরা ক্ষতবিক্ষত করি তাদের দেহ, চূর্ণ-বিচূর্ণ করি তাদের হাড়গোড়। আমরা চাষাবাস জানি না, চাষ করতেও তো লাঙল দরকার, লোহার ফলা আবিষ্কার করার মতো প্রতিভা আমাদের নেই, আমরা তাই বনের ফল কুড়িয়ে খাই। হয়তো আমাদের মধ্যে কেউ কেউ পাথরে পাথর ঘসে আগুন জ্বালানোটা শিখে নিয়েছে, তাই তারা বনের কাঠ জড়ো করে অগ্নিকুণ্ড তৈরি করে, আর বনের পশু লাঠিপেটা করে মেরে সেটাকে আগুনে ঝলসে নিয়ে খায়। আমাদের কেউ কেউ তাও করতে জানে না, তারা কাঁচা মাংসই ভক্ষণ করে।
আমরা সভ্যতা থেকে এতটাই দূরবর্তী। পরনের কাপড় আমাদের মানায় না। এমনকি গরুগাড়িও আমাদের জন্য অনেক বেশি আধুনিক একটা যান। কারণ, গরুগাড়িরও অন্তত দুটো চাকা আছে। দুটো বনের গরুকে ঘরে বেঁধে প্রতিপালন করতে শিখতে হয়েছে গরুগাড়ি-চালক সভ্যজনদের। আমরা তো তারও অধম, তাদের থেকেও পশ্চাদ্বর্তী।
এই বর্বরতা, এই সভ্যতাবিমুখতার কোনো তুলনা নেই। কোনো ব্যাখ্যাও নেই। বলা যেতে পারে, দিনের পরে দিন অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করার পাপের ফলে এই নিষ্ঠুরতা, অসভ্যতা, নৈরাজ্য আজ আমাদের ওপর সওয়ার হয়েছে। মগবাজারের মিছিল থেকে গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার করা হলে পাবনার নৈরাজ্য ঘটে না। পাবনার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে নাটোরের বড়াইগ্রাম সংঘটিত হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরিচ-হত্যাকাণ্ড, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে আরেকটা একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হয়।
অনেক সভ্য দেশেই এমন ঘটেছে, একজন লোক উন্মত্ত হয়, হাতের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে, এমনকি স্কুলছাত্রদের খুন করে, এমন ঘটনার খবর আমরা পশ্চিমা দেশ থেকেও পাই। কিন্তু একদল লোক উন্মত্ত হয়ে পড়ে, তারা সহপাঠীকে খুন করে, সহপাঠীকে ছাত্রাবাসের ছাদ থেকে ফেলে দেয়, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে হত্যা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে—এই বীভৎসতা কোনো সভ্যতার লক্ষণ নয়। আমরা আর সভ্য নই। আর এই বর্বরতাকে যারা আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়, এই নিষ্ঠুরতা দেখেও যাদের চোখের পাতা কাঁপে না, শরীর শিউরে ওঠে না, ভাতের থালা সামনে রেখে যারা নির্বিকার চিত্তে চর্বণ ও গলাধঃকরণ চালিয়ে যেতে পারে, তাদের কী বলব?
এই দেশের মানুষ লাঠিপেটা করে বাঘ মারে, সেটাকেই পৈশাচিক বলে মনে হয়। আর এই দেশের মানুষেরা নিয়মিতভাবে লাঠিপেটা করে মানুষ মারছে, লাঠি তো লাঠি, কিরিচ-বল্লম, লগি-বৈঠা যা পাচ্ছে, তা-ই দিয়ে তারা মানুষ মেরে চলেছে। এইটা কি কোনো রাষ্ট্রের লক্ষণ, নাগরিকতার লক্ষণ, সভ্যতা-ভব্যতার পরিচয়?
না।
আমরা অসভ্য, এটা সত্য, কিন্তু এই নিষ্ঠুর সত্য থেকে বেরিয়ে আমরা কি সামনের দিকে এগোব না? আমরা কি আদিম প্রস্তর যুগে ফিরে যাব বলে অটল সংকল্পে স্থির, নাকি আমরা একটা মোটামুটি বসবাসযোগ্য একটা দেশ, একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই? আমরা আসলে চাইটা কী? নাকি আমরা কিছুই চাই না! চাইতেও জানি না! আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই। কোনো বিবেকবোধ নেই। আমরা সবাই মিলে হিস্টিরিয়া-আক্রান্ত হয়ে গেছি!
এ হচ্ছে পতনের শেষ ধাপ। এর পরে আর ফিরে আসার পথ নেই, অতল খাদের শেষ কিনারে এখন আমরা। এখান থেকেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই কেবল আমরা রোধ করতে পারব আমাদের সামগ্রিক পতন, সমূহ বিনাশ।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা—এসব তো অনেক দূরের শব্দ। শিক্ষা, বিজ্ঞান, উন্নতি, প্রগতি—এসব তো সুদূরের কল্পনা। আপাতত মানুষ, না মানুষের আদিম স্তর, সভ্য না জংলি—এই দুইয়ের যেকোনো একটা বেছে নেওয়ার পরীক্ষার মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। যদি কারও মধ্যে একটুখানি বিবেক থেকে থাকে, সে যেন তার দ্বারা দংশিত হয়। যদি কারও মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতা থেকে থাকে, সে যেন তার দ্বারা জাগ্রত হয়। এক সম্মিলিত লজ্জার অনন্ত অন্ধকারের নিচে আমরা চাপা পড়ে আছি, এই অন্ধকার আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে।
অন্ধকারের অন্তহীন তলের দিকে ধাবিত হতে হতে পতিত হতে হতে মনে হয়, তবু যেন কান পেতে থাকি, কেউ একজন যেন বলে, অন্ধকারই শেষ কথা নয়। আলো আছে। পশুত্বই শেষ নয়, মনুষ্যত্ব বোধ কোথাও এখনো অবশিষ্ট আছে এই রাষ্ট্রে, এই রাষ্ট্রের চালকদের মধ্যে। যদি সত্যি সত্যি তা কোথাও থেকে থাকে, তবে তার প্রমাণ আমরা দেখতে চাই। কঠোর আইনি ব্যবস্থা, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে সেই প্রমাণের প্রথম ধাপ।
তা যদি না হয়, তাহলে বস্ত্র আমাদের পরিধেয় নয়, বাসগৃহ আমাদের আবাসস্থল নয়, বিদ্যুতের আলো আমাদের প্রাপ্য নয়। গুহাবাসী জীবনের অন্ধকারেই কেবল আমরা থাকতে পারি, পশুর চামড়া গায়ে পরে হাতে লাঠি নিয়ে যেখানে আমরা ধাওয়া করব প্রতিদ্বন্দ্বী টোটেমের সদস্যদের। আমাদেরই মতো দুপেয়ে আরেকজনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আমরা আগুনের কুণ্ড ঘিরে আদিম নৃত্যে মত্ত হব।
ব্যাখ্যা: গত মঙ্গলবার অরণ্যে রোদন কলামে বলেছিলাম, বাংলা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা, এটা ইউনেসকোর জরিপ থেকে এসেছে। ইউনেসকোর বিভিন্ন ওয়েব প্রকাশনা ঘুরে দেখলাম, এ ধরনের কোনো জরিপের কথা কোথাও উল্লিখিত হয়নি। সম্ভবত বাংলা মধুরতম ভাষা নির্বাচিত হয়েছে ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীদের কোনো জরিপে, ইউনেসকো এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত খবরটি (সুইটেস্ট ল্যাংগুয়েজ ট্যাগ ফর বেঙ্গলি) পাওয়া যাবে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২২ এপ্রিল ২০১০-এর ওয়েব সংস্করণে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
আমরা সভ্যতা থেকে এতটাই দূরবর্তী। পরনের কাপড় আমাদের মানায় না। এমনকি গরুগাড়িও আমাদের জন্য অনেক বেশি আধুনিক একটা যান। কারণ, গরুগাড়িরও অন্তত দুটো চাকা আছে। দুটো বনের গরুকে ঘরে বেঁধে প্রতিপালন করতে শিখতে হয়েছে গরুগাড়ি-চালক সভ্যজনদের। আমরা তো তারও অধম, তাদের থেকেও পশ্চাদ্বর্তী।
এই বর্বরতা, এই সভ্যতাবিমুখতার কোনো তুলনা নেই। কোনো ব্যাখ্যাও নেই। বলা যেতে পারে, দিনের পরে দিন অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করার পাপের ফলে এই নিষ্ঠুরতা, অসভ্যতা, নৈরাজ্য আজ আমাদের ওপর সওয়ার হয়েছে। মগবাজারের মিছিল থেকে গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার করা হলে পাবনার নৈরাজ্য ঘটে না। পাবনার নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলে নাটোরের বড়াইগ্রাম সংঘটিত হয় না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কিরিচ-হত্যাকাণ্ড, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে আরেকটা একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি নিরুৎসাহিত হয়।
অনেক সভ্য দেশেই এমন ঘটেছে, একজন লোক উন্মত্ত হয়, হাতের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে, এমনকি স্কুলছাত্রদের খুন করে, এমন ঘটনার খবর আমরা পশ্চিমা দেশ থেকেও পাই। কিন্তু একদল লোক উন্মত্ত হয়ে পড়ে, তারা সহপাঠীকে খুন করে, সহপাঠীকে ছাত্রাবাসের ছাদ থেকে ফেলে দেয়, লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে হত্যা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে—এই বীভৎসতা কোনো সভ্যতার লক্ষণ নয়। আমরা আর সভ্য নই। আর এই বর্বরতাকে যারা আশ্রয় দেয়, প্রশ্রয় দেয়, এই নিষ্ঠুরতা দেখেও যাদের চোখের পাতা কাঁপে না, শরীর শিউরে ওঠে না, ভাতের থালা সামনে রেখে যারা নির্বিকার চিত্তে চর্বণ ও গলাধঃকরণ চালিয়ে যেতে পারে, তাদের কী বলব?
এই দেশের মানুষ লাঠিপেটা করে বাঘ মারে, সেটাকেই পৈশাচিক বলে মনে হয়। আর এই দেশের মানুষেরা নিয়মিতভাবে লাঠিপেটা করে মানুষ মারছে, লাঠি তো লাঠি, কিরিচ-বল্লম, লগি-বৈঠা যা পাচ্ছে, তা-ই দিয়ে তারা মানুষ মেরে চলেছে। এইটা কি কোনো রাষ্ট্রের লক্ষণ, নাগরিকতার লক্ষণ, সভ্যতা-ভব্যতার পরিচয়?
না।
আমরা অসভ্য, এটা সত্য, কিন্তু এই নিষ্ঠুর সত্য থেকে বেরিয়ে আমরা কি সামনের দিকে এগোব না? আমরা কি আদিম প্রস্তর যুগে ফিরে যাব বলে অটল সংকল্পে স্থির, নাকি আমরা একটা মোটামুটি বসবাসযোগ্য একটা দেশ, একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই? আমরা আসলে চাইটা কী? নাকি আমরা কিছুই চাই না! চাইতেও জানি না! আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই। কোনো বিবেকবোধ নেই। আমরা সবাই মিলে হিস্টিরিয়া-আক্রান্ত হয়ে গেছি!
এ হচ্ছে পতনের শেষ ধাপ। এর পরে আর ফিরে আসার পথ নেই, অতল খাদের শেষ কিনারে এখন আমরা। এখান থেকেই ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াতে পারলেই কেবল আমরা রোধ করতে পারব আমাদের সামগ্রিক পতন, সমূহ বিনাশ।
গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা—এসব তো অনেক দূরের শব্দ। শিক্ষা, বিজ্ঞান, উন্নতি, প্রগতি—এসব তো সুদূরের কল্পনা। আপাতত মানুষ, না মানুষের আদিম স্তর, সভ্য না জংলি—এই দুইয়ের যেকোনো একটা বেছে নেওয়ার পরীক্ষার মধ্যে আমরা পড়ে গেছি। যদি কারও মধ্যে একটুখানি বিবেক থেকে থাকে, সে যেন তার দ্বারা দংশিত হয়। যদি কারও মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতা থেকে থাকে, সে যেন তার দ্বারা জাগ্রত হয়। এক সম্মিলিত লজ্জার অনন্ত অন্ধকারের নিচে আমরা চাপা পড়ে আছি, এই অন্ধকার আমাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলছে।
অন্ধকারের অন্তহীন তলের দিকে ধাবিত হতে হতে পতিত হতে হতে মনে হয়, তবু যেন কান পেতে থাকি, কেউ একজন যেন বলে, অন্ধকারই শেষ কথা নয়। আলো আছে। পশুত্বই শেষ নয়, মনুষ্যত্ব বোধ কোথাও এখনো অবশিষ্ট আছে এই রাষ্ট্রে, এই রাষ্ট্রের চালকদের মধ্যে। যদি সত্যি সত্যি তা কোথাও থেকে থাকে, তবে তার প্রমাণ আমরা দেখতে চাই। কঠোর আইনি ব্যবস্থা, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে সেই প্রমাণের প্রথম ধাপ।
তা যদি না হয়, তাহলে বস্ত্র আমাদের পরিধেয় নয়, বাসগৃহ আমাদের আবাসস্থল নয়, বিদ্যুতের আলো আমাদের প্রাপ্য নয়। গুহাবাসী জীবনের অন্ধকারেই কেবল আমরা থাকতে পারি, পশুর চামড়া গায়ে পরে হাতে লাঠি নিয়ে যেখানে আমরা ধাওয়া করব প্রতিদ্বন্দ্বী টোটেমের সদস্যদের। আমাদেরই মতো দুপেয়ে আরেকজনকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে আমরা আগুনের কুণ্ড ঘিরে আদিম নৃত্যে মত্ত হব।
ব্যাখ্যা: গত মঙ্গলবার অরণ্যে রোদন কলামে বলেছিলাম, বাংলা পৃথিবীর মধুরতম ভাষা, এটা ইউনেসকোর জরিপ থেকে এসেছে। ইউনেসকোর বিভিন্ন ওয়েব প্রকাশনা ঘুরে দেখলাম, এ ধরনের কোনো জরিপের কথা কোথাও উল্লিখিত হয়নি। সম্ভবত বাংলা মধুরতম ভাষা নির্বাচিত হয়েছে ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহারকারীদের কোনো জরিপে, ইউনেসকো এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা যাচ্ছে না। এ সংক্রান্ত খবরটি (সুইটেস্ট ল্যাংগুয়েজ ট্যাগ ফর বেঙ্গলি) পাওয়া যাবে টাইমস অব ইন্ডিয়ার ২২ এপ্রিল ২০১০-এর ওয়েব সংস্করণে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments