ভেঙে পড়েছে আরবান স্বাস্থ্যসেবা-ব্যর্থতার পাল্লাই ভারী by প্রণব বল

২০১০ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম। তাঁর নির্বাচনের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। এই সময় মেয়র থাকাকালে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে আমাদের আজকের বিশেষ আয়োজন


সিটি করপোরেশন পরিচালিত ৪৩টি আরবান প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র্র ও দুটি মাতৃসদনের সাড়ে ৫০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী তিন মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় পরিচালিত এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মরত ব্যক্তিরা তাঁদের চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। ফলে ভেঙে পড়েছে এসব প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা।
প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য (চুক্তি নবায়ন) দরপত্র আহ্বান করা হলেও তা সিটি করপোরেশন পাবে কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া চুক্তি নবায়নের আওতার মধ্যে মেমন ও দেওয়ানবাজার অঞ্চলের ১১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। ফলে এসব কেন্দ্রের কার্যক্রম ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
আন্দরকিল্লা বান্ডেল সড়কের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। নিজেই আছি সমস্যার মধ্যে। সেখানে মানুষকে সেবা দিব কীভাবে?’
জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে এডিবির অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করা হয়। তিন দফায় নগরের মোহরা ও কাট্টলীতে দুটি আরবান মাতৃসদন ছাড়াও ৪৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপিত হয়। এর মধ্যে সাতটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মমতা পরিচালিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করে সিটি করপোরেশন।
এই প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরে। এরপর প্রকল্পটির মেয়াদ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু বাড়ানো হলেও কর্মরত প্রায় সাড়ে ৫০০ জনবলের মার্চ পর্যন্ত বেতন বকেয়া রয়েছে। গত মে মাসে তাঁদের সিটি করপোরেশন থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও পরবর্তী মাসগুলোর বেতনের কোনো খবর নেই।
বিষয়টি স্বীকার করে প্রকল্পের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। মার্চ মাসের বেতন সিটি করপোরেশন থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। এখন নতুন চুক্তি অনুযায়ী সিটি করপোরেশন অঞ্চলকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এই দরপত্রে অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও অংশ নেবে। ফলে সিটি করপোরেশন দরপত্র পাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তবে মেয়র মহোদয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
জানা গেছে, ৪৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা, একজন ফার্মাসিস্ট, একজন কাউন্সিলরসহ ১২ জন করে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। এ ছাড়া আরবান প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত দুটি মাতৃসদনে অন্তত ৫০ জন কর্মরত আছেন।
চুক্তি নবায়নের দরপত্র যদি সিটি করপোরেশন না পায় তাহলে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির নিশ্চয়তা নেই। কারণ, নতুনভাবে যারা এই প্রকল্প পরিচালনার দায়িত্ব পাবে, তারা এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করলে কিছু করার থাকবে না। এই শঙ্কায় ভুগছেন এখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ব্যক্তিরা। তাঁদের মধ্যে হতাশার কারণে চিকিৎসাসেবাও আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ায় তেমন ওষুধপত্রও নেই প্রতিটি কেন্দ্রে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পাঁচটি অঞ্চলের জন্যই দরপত্রে অংশ নেব। সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে প্রকল্পগুলো আবার পাই। আর যে ১১টি বন্ধ হয়ে যাবে বলে বলা হচ্ছে সেগুলো আস্তে আস্তে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে চালানো হবে। বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই।’

No comments

Powered by Blogger.