বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা-কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি আমরা? by আদনান মান্নান, নাসরীন আকতার ও নুরুদ্দীন মাহমুদ
কিছুদিন আগে শেষ হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি-প্রক্রিয়া। ক্লাসভর্তি ঝলমলে উজ্জ্বল মুখ। আমরাও আশাবাদী হয়ে আগ্রহ নিয়ে ক্লাস করি। কিন্তু হঠাৎ করেই আমরা বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা আবিষ্কার করলাম, ক্লাসরুমে আগের সেই প্রাণবন্ত পরিবেশটা যেন পাচ্ছি না।
দেখতে পেলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞান ও মৌলিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে চৌকস এবং সামনের সারির শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে গেছে। তার চেয়েও অদ্ভুত ব্যাপার, জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে মেয়েদের সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে আর ছেলেদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে—এ তথ্যটি যেমন আশাপ্রদ, তার চেয়েও বড় বাস্তবতা হলো, মেধাবী ছেলেরা জীববিজ্ঞান ও গবেষণাধর্মী বিষয়গুলোয় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। খুব কমসংখ্যক শিক্ষার্থী এখন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার, মাইক্রোবায়োলজিস্ট কিংবা পরিবেশবিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারা যেন শুধু স্বপ্ন দেখে কোট-টাই পরা বড় ব্যাংকার কিংবা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে থাকা করপোরেট কর্মকর্তা হওয়ার। তাই মেধাবীদের অধিকাংশই ঝুঁকছে বাণিজ্যের বিষয়গুলোতে, পাশাপাশি মেডিকেল ও প্রকৌশল শিক্ষা তো আছেই। কিন্তু মৌলিক বিজ্ঞান আর গবেষণার স্থান কোথায়?
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘অদম্য চট্টগ্রাম’ অনুষ্ঠানে ‘চট্টগ্রাম ও বিজ্ঞান’ শীর্ষক একটি আয়োজন করতে গিয়ে আমরা সীমিত আকারে কিছু গবেষণা পরিচালনা করেছিলাম। গত এক দশকে চট্টগ্রামে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর হার ১০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুলগুলোতে বায়োটেকনোলজি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম, জীববিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের রয়েছে উপেক্ষা ও অনীহাভাব। যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ইউরোপে যেখানে দশম গ্রেডের একজন শিক্ষার্থী ডিএনএ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, অপরাধী শনাক্ত করার নতুন নতুন আইডিয়া দেয়, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞানকে মনে করে একটি মুখস্থবিদ্যাসর্বস্ব বিষয়। এর পেছনের কারণগুলো দেখতে গেলে উন্মোচিত হবে বিজ্ঞানশিক্ষার দুর্বলতার দিকগুলো, সেই গতানুগতিক পাঠদানপদ্ধতি, সেই প্রশ্ন আর উত্তর মুখস্থ করার মধ্যে সব শেষ। বিদ্যালয়গুলোতে পদার্থবিজ্ঞান কিংবা গণিত কিছুটা হলেও গুরুত্ব পায়, কিন্তু জীববিজ্ঞান ঠিক তার উল্টো, কেবল মুখস্থ শেখা আর তা আদায় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাঠদান। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন, আকর্ষণীয় পাঠদানপদ্ধতি প্রশিক্ষণ, আরও কৌতূহলোদ্দীপক পাঠ্যবই এবং জীববিজ্ঞান ও রসায়নের সুনির্দিষ্ট শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই এ ক্ষেত্রে।
বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষার্থী কমে গেছে কেন, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যাবে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাকে ধনীদের শিক্ষাব্যবস্থা বলে আমরা অনেকেই উড়িয়ে দিই। গত পাঁচ-ছয় বছরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এবং এ লেভেল পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও জীববিজ্ঞানে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছে এবং রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এদের অনেকেই জায়গা করে নিয়েছে পেনসিলভানিয়া, কেমব্রিজ, ম্যানচেস্টার, ইমপেরিয়ালের মতো পশ্চিমের বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ইংরেজি মাধ্যমের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় না। আমাদের প্রচলিত বাংলা মাধ্যমের সিলেবাস এবং ব্রিটিশ কারিকুলামের সিলেবাসের মধ্যে কিছু ফারাক এবং উপস্থাপনের ভিন্নতার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো ইংরেজি মাধ্যমের এসব শিক্ষার্থীর কাছে একেবারেই ভিন্নধারার। আমরা কি তবে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের কথা ভর্তি-পরীক্ষায় না ভেবে অনেকটা জোর করে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি না? অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার জন্য বাধ্য হচ্ছে দেশের বাইরে চলে যেতে। মেধা পাচারের এ তো একটি বড় কারণ বলে মনে হয়। ভর্তি-পরীক্ষায় কি আমরা তাদের জন্য ব্রিটিশ কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্নপত্রের কথা ভাবতে পারি না?
আমাদের গবেষণার অন্যতম করুণ একটি ক্ষেত্র হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। অনেকেই চিকিৎসক হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে অনেকেই চিকিৎসক হতে চায়। এ ক্ষেত্রে কঠিন হলেও সত্যটা হলো আর্থিক সচ্ছলতা এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে মেডিকেলে পড়তে চায়। আসলে বিজ্ঞানশিক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য, সেই কৌতূহল ও উদ্ভাবনী চেতনা নিয়ে খুব বেশি ছেলেমেয়ে পড়তে আসছে না। চিকিৎসকেরা এখন হচ্ছে রোগী দেখা ও প্র্যাকটিসসর্বস্ব মানুষ। গবেষণার স্থান সেখানে খুব একটা নেই। দেশে যেভাবে জনস্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমস্যা বাড়ছে, সে ব্যাপারে এখনই কি চিকিৎসকদের বৃহদাকারে অনেক বেশি গবেষণা করা উচিত নয়? আর তা না হলে ৩০ বছর পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমস্যা সমাধানের জন্য পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল হয়ে যাব পশ্চিমা কিংবা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের হাতে।
লেখা শুরু করেছিলাম বিজ্ঞানশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে। জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে মেয়েরা এগিয়ে আসছে। বিষয়টা ইতিবাচক, কিন্তু আশঙ্কার জায়গাটি এখানেই যে মেয়েরা যে লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞানচর্চায় যাত্রা শুরু করে, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে কয়জন। পরিবারের বৃত্তে বন্দী হয়ে নারীরা খুব কম ক্ষেত্রেই স্বপ্নের ডানা মেলে ধরতে পারে। এখনো অনেক পরিবার থেকে মেয়েদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা পিএইচডি করাকে উৎসাহিত করা হয় না, গবেষণাকাজে খুব বেশি সময় দিতে উৎসাহিত করা হয় না। বিয়ের পর তার জীবনটা অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।
দুঃখ হয় যখন জীববিজ্ঞানের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকে দেখি অনার্সের পর এমবিএ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাই যখন ছাত্ররা এসে বলে, ‘স্যার, আমাদের চাকরির জায়গাটা কোথায়?’ আর কতবার চিৎকার করলে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা মানুষেরা বুঝতে পারবে ৩০ বছর পর টিকে থাকতে হলে, বাণিজ্য করতে হলে এখনই অগ্রাধিকার দিতে হবে বিজ্ঞান ও গবেষণাকে। আর কতবার চিৎকার করলে শক্তিশালী করা হবে বিসিএস, আইআর, বন গবেষণা ইনস্টিটিউট আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে?
কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি আমরা? এভাবে মেধাশূন্য হতে থাকলে ২০৩৫ সালে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বাংলদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা?
লেখকেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত ‘অদম্য চট্টগ্রাম’ অনুষ্ঠানে ‘চট্টগ্রাম ও বিজ্ঞান’ শীর্ষক একটি আয়োজন করতে গিয়ে আমরা সীমিত আকারে কিছু গবেষণা পরিচালনা করেছিলাম। গত এক দশকে চট্টগ্রামে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর হার ১০ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্কুলগুলোতে বায়োটেকনোলজি-বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করতে গিয়ে উপলব্ধি করলাম, জীববিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের রয়েছে উপেক্ষা ও অনীহাভাব। যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা ইউরোপে যেখানে দশম গ্রেডের একজন শিক্ষার্থী ডিএনএ নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন দেখে, অপরাধী শনাক্ত করার নতুন নতুন আইডিয়া দেয়, সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা জীববিজ্ঞানকে মনে করে একটি মুখস্থবিদ্যাসর্বস্ব বিষয়। এর পেছনের কারণগুলো দেখতে গেলে উন্মোচিত হবে বিজ্ঞানশিক্ষার দুর্বলতার দিকগুলো, সেই গতানুগতিক পাঠদানপদ্ধতি, সেই প্রশ্ন আর উত্তর মুখস্থ করার মধ্যে সব শেষ। বিদ্যালয়গুলোতে পদার্থবিজ্ঞান কিংবা গণিত কিছুটা হলেও গুরুত্ব পায়, কিন্তু জীববিজ্ঞান ঠিক তার উল্টো, কেবল মুখস্থ শেখা আর তা আদায় করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পাঠদান। শিক্ষকদের মানোন্নয়ন, আকর্ষণীয় পাঠদানপদ্ধতি প্রশিক্ষণ, আরও কৌতূহলোদ্দীপক পাঠ্যবই এবং জীববিজ্ঞান ও রসায়নের সুনির্দিষ্ট শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই এ ক্ষেত্রে।
বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষার্থী কমে গেছে কেন, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে জানা যাবে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষাকে ধনীদের শিক্ষাব্যবস্থা বলে আমরা অনেকেই উড়িয়ে দিই। গত পাঁচ-ছয় বছরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও এবং এ লেভেল পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, গণিত ও জীববিজ্ঞানে বিশ্বে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছে এবং রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এদের অনেকেই জায়গা করে নিয়েছে পেনসিলভানিয়া, কেমব্রিজ, ম্যানচেস্টার, ইমপেরিয়ালের মতো পশ্চিমের বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ইংরেজি মাধ্যমের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় না। আমাদের প্রচলিত বাংলা মাধ্যমের সিলেবাস এবং ব্রিটিশ কারিকুলামের সিলেবাসের মধ্যে কিছু ফারাক এবং উপস্থাপনের ভিন্নতার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রগুলো ইংরেজি মাধ্যমের এসব শিক্ষার্থীর কাছে একেবারেই ভিন্নধারার। আমরা কি তবে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের কথা ভর্তি-পরীক্ষায় না ভেবে অনেকটা জোর করে তাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি না? অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী, বিশেষ করে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার জন্য বাধ্য হচ্ছে দেশের বাইরে চলে যেতে। মেধা পাচারের এ তো একটি বড় কারণ বলে মনে হয়। ভর্তি-পরীক্ষায় কি আমরা তাদের জন্য ব্রিটিশ কারিকুলামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশ্নপত্রের কথা ভাবতে পারি না?
আমাদের গবেষণার অন্যতম করুণ একটি ক্ষেত্র হচ্ছে চিকিৎসাবিজ্ঞান। অনেকেই চিকিৎসক হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে অনেকেই চিকিৎসক হতে চায়। এ ক্ষেত্রে কঠিন হলেও সত্যটা হলো আর্থিক সচ্ছলতা এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে অধিকাংশ ছেলেমেয়ে মেডিকেলে পড়তে চায়। আসলে বিজ্ঞানশিক্ষার যে মূল উদ্দেশ্য, সেই কৌতূহল ও উদ্ভাবনী চেতনা নিয়ে খুব বেশি ছেলেমেয়ে পড়তে আসছে না। চিকিৎসকেরা এখন হচ্ছে রোগী দেখা ও প্র্যাকটিসসর্বস্ব মানুষ। গবেষণার স্থান সেখানে খুব একটা নেই। দেশে যেভাবে জনস্বাস্থ্য-সম্পর্কিত সমস্যা বাড়ছে, সে ব্যাপারে এখনই কি চিকিৎসকদের বৃহদাকারে অনেক বেশি গবেষণা করা উচিত নয়? আর তা না হলে ৩০ বছর পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সমস্যা সমাধানের জন্য পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল হয়ে যাব পশ্চিমা কিংবা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের হাতে।
লেখা শুরু করেছিলাম বিজ্ঞানশিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে। জীববিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে মেয়েরা এগিয়ে আসছে। বিষয়টা ইতিবাচক, কিন্তু আশঙ্কার জায়গাটি এখানেই যে মেয়েরা যে লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞানচর্চায় যাত্রা শুরু করে, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারে কয়জন। পরিবারের বৃত্তে বন্দী হয়ে নারীরা খুব কম ক্ষেত্রেই স্বপ্নের ডানা মেলে ধরতে পারে। এখনো অনেক পরিবার থেকে মেয়েদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা কিংবা পিএইচডি করাকে উৎসাহিত করা হয় না, গবেষণাকাজে খুব বেশি সময় দিতে উৎসাহিত করা হয় না। বিয়ের পর তার জীবনটা অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।
দুঃখ হয় যখন জীববিজ্ঞানের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীকে দেখি অনার্সের পর এমবিএ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজের কাছে নিজেই ছোট হয়ে যাই যখন ছাত্ররা এসে বলে, ‘স্যার, আমাদের চাকরির জায়গাটা কোথায়?’ আর কতবার চিৎকার করলে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা মানুষেরা বুঝতে পারবে ৩০ বছর পর টিকে থাকতে হলে, বাণিজ্য করতে হলে এখনই অগ্রাধিকার দিতে হবে বিজ্ঞান ও গবেষণাকে। আর কতবার চিৎকার করলে শক্তিশালী করা হবে বিসিএস, আইআর, বন গবেষণা ইনস্টিটিউট আর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে?
কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছি আমরা? এভাবে মেধাশূন্য হতে থাকলে ২০৩৫ সালে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বাংলদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা?
লেখকেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক।
No comments