জলাবদ্ধতা নিরসনে হাঁকডাকই সার by মিঠুন চৌধুরী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলমের নির্বাচনী ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসনে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ’-এর কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু নির্বাচনের দুই বছর পরও জলাবদ্ধতা সমস্যার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে মনে করছে নগরবাসী।
জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন এখন কেবল ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করছে।
গত শুক্রবার বিকেলে নগরে আষাঢ়ের প্রথম দিনে ভারী বর্ষণ হয়। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ, হামজারবাগ, কাপাসগোলা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, কমার্স কলেজ সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, বাকলিয়া ও হালিশহরের বেশ কিছু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের মুরাদপুর মোড়ে কথা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ে। নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হলে জলাবদ্ধতা অনেক কমে আসত।
এর আগে ৬ জুন মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই দিন নগরে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত মে মাসেও অল্প সময়ের বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হচ্ছে। সরকারি অর্থ বরাদ্দও পর্যাপ্ত নয়। কোথাও কোথাও রাস্তা এমনভাবে উঁচু করা হচ্ছে যাতে বাড়িঘর নিচে থেকে যাচ্ছে। এটা আত্মহত্যার শামিল। সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এমন অবিবেচনাপ্রসূত কাজ হতো না। পরিকল্পনা না থাকলে জলাবদ্ধতা নিরসন কষ্টসাধ্য হবে।’
এ বিষয়ে চসিকের জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন খাল খননের কোনো বিকল্প নেই। আমরা এখন রুটিন ওয়ার্ক করছি। বড় খাল-নালার মাটি নিয়মিত অপসারণ করা হচ্ছে। এ বছর খাল-নালা থেকে প্রায় ৪৫ লাখ ঘনফুট মাটি অপসারণ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য কম সময়ে যাতে পানি নেমে যায়। বৃষ্টির সময় যদি জোয়ার থাকে তাহলে পানি নামতে বেশি সময় লাগে।’
চসিক সূত্র জানায়, নগরে মোট ১৭টি প্রাকৃতিক খাল আছে। এসব খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার। ২০১০-১১ অর্থবছরে খালের মাটি উত্তোলনে খরচ হয় ১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। এবার চসিক নিজস্ব উদ্যোগে চার মাসের জন্য ৫০০ শ্রমিক নিয়োগ করে ৪১টি ওয়ার্ডের খাল ও নালা-নদর্মা পরিষ্কার করেছে।
তবে সিটি করপোরেশন খালের মাটি উত্তোলনের কথা বললেও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নগরের বাদুরতলা মাজার গেট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো. ইলিয়াস ও ফারেসা জাহান বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে সংলগ্ন চাক্তাই খালের মাটি তোলে সিটি করপোরেশন। কিন্তু খাল থেকে তোলা মাটির অধিকাংশই সরিয়ে নেওয়ার আগে বৃষ্টিতে ধুয়ে আবার খালে গিয়ে পড়েছে।’
বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলমের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা ছিল, জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খাল পুনর্খননসহ প্রয়োজনীয় নালা-নর্দমা নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন জন-উদ্যোগের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিজয় কুমার চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) অনুসারে বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটি খাল খননের জন্য ২৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। পাশাপাশি বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের মেরিনার্স বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য ৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন পাওয়া গেছে। ওই রাস্তাটি হয়ে গেলে চাক্তাই খালের অধিকাংশ স্থান থেকে মাটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
গত শুক্রবার বিকেলে নগরে আষাঢ়ের প্রথম দিনে ভারী বর্ষণ হয়। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের মুরাদপুর, মোহাম্মদপুর, দুই নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ, হামজারবাগ, কাপাসগোলা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, কমার্স কলেজ সড়ক, জাকির হোসেন সড়ক, বাকলিয়া ও হালিশহরের বেশ কিছু এলাকা হাঁটু থেকে কোমর পানিতে তলিয়ে যায়।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের মুরাদপুর মোড়ে কথা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাইফুল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে। বৃষ্টিতে পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ে। নিয়মিত নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হলে জলাবদ্ধতা অনেক কমে আসত।
এর আগে ৬ জুন মাত্র এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, ওই দিন নগরে ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে গত মে মাসেও অল্প সময়ের বৃষ্টিতে নগরের নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে বিচ্ছিন্নভাবে কাজ হচ্ছে। সরকারি অর্থ বরাদ্দও পর্যাপ্ত নয়। কোথাও কোথাও রাস্তা এমনভাবে উঁচু করা হচ্ছে যাতে বাড়িঘর নিচে থেকে যাচ্ছে। এটা আত্মহত্যার শামিল। সামগ্রিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোলে এমন অবিবেচনাপ্রসূত কাজ হতো না। পরিকল্পনা না থাকলে জলাবদ্ধতা নিরসন কষ্টসাধ্য হবে।’
এ বিষয়ে চসিকের জলাবদ্ধতা স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিজয় কুমার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে নতুন খাল খননের কোনো বিকল্প নেই। আমরা এখন রুটিন ওয়ার্ক করছি। বড় খাল-নালার মাটি নিয়মিত অপসারণ করা হচ্ছে। এ বছর খাল-নালা থেকে প্রায় ৪৫ লাখ ঘনফুট মাটি অপসারণ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য কম সময়ে যাতে পানি নেমে যায়। বৃষ্টির সময় যদি জোয়ার থাকে তাহলে পানি নামতে বেশি সময় লাগে।’
চসিক সূত্র জানায়, নগরে মোট ১৭টি প্রাকৃতিক খাল আছে। এসব খালের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৪ কিলোমিটার। ২০১০-১১ অর্থবছরে খালের মাটি উত্তোলনে খরচ হয় ১২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এ খাতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা। এবার চসিক নিজস্ব উদ্যোগে চার মাসের জন্য ৫০০ শ্রমিক নিয়োগ করে ৪১টি ওয়ার্ডের খাল ও নালা-নদর্মা পরিষ্কার করেছে।
তবে সিটি করপোরেশন খালের মাটি উত্তোলনের কথা বললেও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নগরের বাদুরতলা মাজার গেট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো. ইলিয়াস ও ফারেসা জাহান বলেন, ‘বছর দুয়েক আগে সংলগ্ন চাক্তাই খালের মাটি তোলে সিটি করপোরেশন। কিন্তু খাল থেকে তোলা মাটির অধিকাংশই সরিয়ে নেওয়ার আগে বৃষ্টিতে ধুয়ে আবার খালে গিয়ে পড়েছে।’
বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলমের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা ছিল, জলাবদ্ধতা নিরসনে চাক্তাই খাল পুনর্খননসহ প্রয়োজনীয় নালা-নর্দমা নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। এ বিষয়ে পরিবেশবাদী সংগঠন জন-উদ্যোগের সমন্বয়ক শরীফ চৌহান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বিজয় কুমার চৌধুরী বলেন, ‘১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের করা মহাপরিকল্পনা (মাস্টার প্ল্যান) অনুসারে বহদ্দারহাট থেকে বারইপাড়া হয়ে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত একটি খাল খননের জন্য ২৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। পাশাপাশি বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের মেরিনার্স বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য ৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন পাওয়া গেছে। ওই রাস্তাটি হয়ে গেলে চাক্তাই খালের অধিকাংশ স্থান থেকে মাটি সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।’
No comments