সরকার দায় এড়াবে কিভাবে by খন্দকার মাহবুব হোসেন
দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতিকে অতি দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য এ সংকটের বিশ্লেষণ করতে হবে। কারণ নির্ণয় করতে হবে এবং সুরাহার পথ বের করতে হবে। এ সংকটের জন্য দায়ী বর্তমান সরকার। নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি তৈরি করেছে তারা।
জননিরাপত্তা বিধানে তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে একের পর এক বিতর্ক তৈরি করে চলেছেন একেকটি বক্তব্য দিয়ে। তিনি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী সম্পর্কে একসময় বলেছেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নাকি তাঁকে গুম করে রেখেছেন এবং বেগম জিয়ার হেফাজতেই নাকি ইলিয়াস আলী আছেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এই সুর পাল্টে গেল। প্রধানমন্ত্রীর অসংগত এই বক্তব্য অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই পরস্পরবিরোধী বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। তাঁরা ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করার চেয়ে অন্ধভাবে দোষারোপ করাকেই বড় দায়িত্ব বলে মনে করছেন। শুধু তাই নয়, কখনো কখনো তাঁদের বক্তব্যগুলো অপ্রাসঙ্গিক এবং মিথ্যাচারে ভরপুর থাকে। সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে, এমন চিন্তাও তাঁরা করেন না। পরমতসহিষ্ণুতা বলতে যা বোঝায়, সেটা সরকারি দলের অভিধানে আছে বলে মনে হয় না। তারা ভুলেই যাচ্ছে কোনো নাগরিক অপহরণ হলে তাকে খুঁজে বের করা সরকারের দায়িত্ব।
ইলিয়াস আলীর সন্ধানে সরকারের ব্যর্থতা এবং কিছু অপকর্ম ঢাকার চেষ্টাও কাজ করে থাকতে পারে বলে অনেকেই সন্দেহ করে। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নিয়ে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল সারা দেশে। সেদিক থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যই নাকি এই গুমের মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একটার পর একটা ঘটনা কিন্তু সরকার ঘটিয়েই চলেছে। আর ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে সব এখন লেজেগোবরে হয়ে গেছে। ফলে গোটা বিএনপিকেই এখন তারা জেলখানায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গাড়ি পোড়ানোর মামলার নামে যেভাবে বিএনপির নেতাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে, তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে কারাগারে ঢুকিয়েই শেষ করে দেওয়া যায় না। সংকট থেকে মুক্তিরও এটা কোনো পথ নয়। এর জন্য সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার যদি মনে করে থাকে যে তারা নির্যাতন চালিয়ে, বিরোধী দলের নেতাদের ওপর স্বৈরাচারী কায়দায় জুলুমবাজি করে পার পেয়ে যাবে; তাহলে ভুল করবে। ইতিহাস বলে এই কৌশল অবলম্বন করে কেউ কোনো দিনও সফল হয়নি। বরং অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে মনে হয় এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সরকারি দল কোন পথটি বেছে নেবে? সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে, সুষ্ঠু দেশ পরিচালনার প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সেই দায়িত্ব থেকে তারা যদি বিচ্যুত হয় তাহলে দেশের যে ক্ষতি হবে, তার দায়ও সরকারি দলকেই নিতে হবে।
ক্ষমতার পালাবদলে সরকারকে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করল তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দিল। অথচ আদালত আমাদের দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করেছেন। আদালতের রায় অনুযায়ী আগামী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার কথা। সরকার আদালতের রায়ের কথা বলে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তারা সংবিধান তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল, এমনকি বিদেশে যাঁরা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন, প্রত্যেকেই চান সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কেননা গণতন্ত্রের স্বার্থে একটা গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া সরকার গঠিত হলে দেশবাসী সেটা মেনে নেবে না। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন চলাকালে ক্ষমতায় থাকবেন, এমনকি সংসদ সদস্যরাও নিজ পদে বহাল থাকবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস অস্বাভাবিক বেশি। সেই অবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকারই। জনমনে স্পষ্ট ধারণা আছে, এই দলটি আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে দেবে কি না। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা হলে তা হবে আত্মঘাতমূলক। তাই দেশকে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
তবে এটা বলছি না যে, দাড়ি-কমাসহ আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বহাল রাখতে হবে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে এবং আগে যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলোও সংশোধন করা যেতে পারে। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল করতে হলেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে, তাই সেসব ত্রুটি সংশোধনের একটি সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। আগের সংবিধানের সেসব দুর্বলতার সুযোগেই আসলে দেশে এক-এগারো সৃষ্টি হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী লোক দেশটাকে কঠিন সমস্যায় ফেলে দিয়েছিল। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছিল সে কারণে। আলোচনা করতে অসুবিধা নেই। বিরোধী দল স্পষ্টভাবে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। ফলে পরিস্থিতি আলোচনা অনুষ্ঠানের অনুকূলে বলতেই হবে।
সরকারের সদিচ্ছা আছে কি না তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ আছে। কারণ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আলোচনায় সম্মতি জানানোর পরও তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি। এতে দেশের অর্থনৈতিক ও নাগরিক জীবনে যে অসুবিধা তৈরি হচ্ছে, তার দায়ও বহন করতে হবে সরকারকে।
(অনুলিখন)
লেখক : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি
ইলিয়াস আলীর সন্ধানে সরকারের ব্যর্থতা এবং কিছু অপকর্ম ঢাকার চেষ্টাও কাজ করে থাকতে পারে বলে অনেকেই সন্দেহ করে। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএসের গাড়িতে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়ার পর সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে নিয়ে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল সারা দেশে। সেদিক থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যই নাকি এই গুমের মতো ঘটনা ঘটানো হয়েছে। একটার পর একটা ঘটনা কিন্তু সরকার ঘটিয়েই চলেছে। আর ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দিতে গিয়ে সব এখন লেজেগোবরে হয়ে গেছে। ফলে গোটা বিএনপিকেই এখন তারা জেলখানায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গাড়ি পোড়ানোর মামলার নামে যেভাবে বিএনপির নেতাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে, তাকে কিভাবে মূল্যায়ন করা হবে? কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে কারাগারে ঢুকিয়েই শেষ করে দেওয়া যায় না। সংকট থেকে মুক্তিরও এটা কোনো পথ নয়। এর জন্য সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকার যদি মনে করে থাকে যে তারা নির্যাতন চালিয়ে, বিরোধী দলের নেতাদের ওপর স্বৈরাচারী কায়দায় জুলুমবাজি করে পার পেয়ে যাবে; তাহলে ভুল করবে। ইতিহাস বলে এই কৌশল অবলম্বন করে কেউ কোনো দিনও সফল হয়নি। বরং অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। বাংলাদেশে যে অবস্থা বিরাজ করছে, তাতে মনে হয় এ ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সরকারি দল কোন পথটি বেছে নেবে? সুষ্ঠু রাজনীতির স্বার্থে, সুষ্ঠু দেশ পরিচালনার প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সেই দায়িত্ব থেকে তারা যদি বিচ্যুত হয় তাহলে দেশের যে ক্ষতি হবে, তার দায়ও সরকারি দলকেই নিতে হবে।
ক্ষমতার পালাবদলে সরকারকে সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করল তারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বাতিল করে দিল। অথচ আদালত আমাদের দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করেছেন। আদালতের রায় অনুযায়ী আগামী দুটি জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার কথা। সরকার আদালতের রায়ের কথা বলে। অথচ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তারা সংবিধান তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল, এমনকি বিদেশে যাঁরা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন, প্রত্যেকেই চান সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কেননা গণতন্ত্রের স্বার্থে একটা গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন ছাড়া সরকার গঠিত হলে দেশবাসী সেটা মেনে নেবে না। সংশোধিত সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন চলাকালে ক্ষমতায় থাকবেন, এমনকি সংসদ সদস্যরাও নিজ পদে বহাল থাকবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস অস্বাভাবিক বেশি। সেই অবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকারই। জনমনে স্পষ্ট ধারণা আছে, এই দলটি আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হতে দেবে কি না। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা হলে তা হবে আত্মঘাতমূলক। তাই দেশকে বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে হলে সরকারকে অবশ্যই বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
তবে এটা বলছি না যে, দাড়ি-কমাসহ আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাই বহাল রাখতে হবে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে এবং আগে যেসব ত্রুটি ছিল সেগুলোও সংশোধন করা যেতে পারে। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল করতে হলেও সংবিধান সংশোধন করতে হবে, তাই সেসব ত্রুটি সংশোধনের একটি সুযোগ পাওয়া যেতে পারে। আগের সংবিধানের সেসব দুর্বলতার সুযোগেই আসলে দেশে এক-এগারো সৃষ্টি হয়েছিল। সামরিক বাহিনীর কতিপয় উচ্চাভিলাষী লোক দেশটাকে কঠিন সমস্যায় ফেলে দিয়েছিল। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হয়েছিল সে কারণে। আলোচনা করতে অসুবিধা নেই। বিরোধী দল স্পষ্টভাবে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। বিরোধী দল সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। ফলে পরিস্থিতি আলোচনা অনুষ্ঠানের অনুকূলে বলতেই হবে।
সরকারের সদিচ্ছা আছে কি না তা নিয়ে অবশ্য সন্দেহ আছে। কারণ বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আলোচনায় সম্মতি জানানোর পরও তারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি। এতে দেশের অর্থনৈতিক ও নাগরিক জীবনে যে অসুবিধা তৈরি হচ্ছে, তার দায়ও বহন করতে হবে সরকারকে।
(অনুলিখন)
লেখক : সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি
No comments