বিশেষ সাক্ষাৎকার-খাদ্যপণ্যের যথেষ্ট মজুদ আছে, সমস্যা সরবরাহের by হোসেন জিল্লুর রহমান
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হোসেন জিল্লুর রহমান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। পেশাগত দিক থেকে তিনি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টারের নির্বাহী চেয়ারম্যান। সার্ক দারিদ্র্য কমিশনের সদস্য ছাড়াও তিনি ২০০৫ সালে তৈরি করা প্রথম দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশলপত্রের খসড়ার প্রধান প্রণেতা ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি অর্জন করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ
প্রথম আলো খাদ্যপণ্যের দাম আবারও বাড়ছে? কারণ হিসেবে কী মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান খাদ্যের দাম বাড়ার কারণ বুঝতে চাহিদা ও জোগান পরিস্থিতির ভারসাম্য কী অবস্থায় আছে, তা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। বর্তমানে বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগানে ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয় না। খাদ্যব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণেই দাম বাড়ছে। দাবানলের কারণে রাশিয়া গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনা বিশ্ববাজারে গমের জোগানের ক্ষেত্রে যতটা না সমস্যা, তার চেয়ে ক্রেতাদের আচরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে বেশি করে খাদ্য কিনে রাখার চেষ্টা করছে। খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কৌশলগত অবস্থান নিতে হবে। খাদ্যপণ্যের বড় অংশের সরবরাহ হয়তো সরকারের পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে কৌশলগত মজুদ রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তা সরবরাহ করে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়। বাংলাদেশে চালের দাম সব সময় ভারতের চেয়ে বেশি থাকত। ফলে সেখান থেকে বৈধ-অবৈধ নানা পথে চাল আসত। দুই-তিন বছর ধরে ভারতে চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ফলে সরকারি পর্যায় ছাড়া ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে চালের বাজার কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। গত আমনে ঘাটতি ও বোরোতে হাওরের ফসল নষ্ট হওয়ার পরেও সামগ্রিকভাবে চালের উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি করবে না বলে আমি মনে করি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাতালগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ চাল আছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের গুদামগুলোতে গম, তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রামের খাদ্যগুদাম মালিক সমিতি আমাকে বলেছে, মজুদ ভালো। সার্বিকভাবে খাদ্যঘাটতি নেই। সমস্যা হচ্ছে এগুলো বাজারে নিয়ে আসা। সরকার গুদামগুলো থেকে খাদ্য কী ধরনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসবে, তার ওপর এর দাম স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি নির্ভর করছে।
প্রথম আলো বাজারে তো দাম এখন বেশি। ব্যবসায়ীদের হাতে মজুদ থাকা খাদ্য বাজারে আসছে না কেন? সমস্যাটা কোথায়?
হোসেন জিল্লুর রহমান সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরবরাহ-নির্দেশ (ডিও) ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। গুদামে পণ্য রেখে ব্যবসায়ীরা তা ডিওর মাধ্যমে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে একটি পণ্য বাজারে আসার আগে কাগজপত্রে তিন-চারজন ব্যবসায়ীর হাতে যাচ্ছে। তাঁরা হাতবদলের মাধ্যমে ব্যবসা করে চলেছেন। ব্যাংক থেকে কয়েক পর্বে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পণ্য ক্রেতাদের কাছে আসছে না।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় আমি ডিও ব্যবসার কারণে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট হওয়া খেয়াল করি। তা দূর করতে উদ্যোগও নিয়েছিলাম। সম্প্রতি আমি খেয়াল করলাম, চাল, চিনি, গম, ডালের মতো পণ্যের ক্ষেত্রেও ডিও ব্যবসা শুরু হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক এ ব্যবসা বন্ধ করলে পণ্য গুদাম থেকে বাজারে আসার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতে ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে ও চাপ প্রয়োগ করে যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল, তা সঠিক পদ্ধতি নয়।
প্রথম আলো খাদ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ও বেড়েছে। যে কারণে ওএমএস চাল বিক্রিতে মানুষের সাড়া কম বলে অনেকে বলছেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান ওএমএসের ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের সারি দেখে অনেকে নগর-দারিদ্র্যকে বুঝতে চান। কিন্তু ওএমএস বিক্রির প্রক্রিয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে। ধানমন্ডি এলাকায়ও ওএমএস ট্রাক দেখা গেছে। কিন্তু ওই এলাকায় তো গরিব মানুষ কম। অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে তো আর চাল কিনবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও বর্তমান নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম শহরের অলিগলির ভেতরে ওএমএস ডিলার দেওয়ার ব্যবস্থা করায় সেখানে প্রচুর ক্রেতার সমাগম হয়েছিল। এ ধরনের উদ্ভাবনী কায়দায় নগর-দরিদ্রদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তা করতে হবে।
রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালকেরা তাঁদের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে আয় বাড়িয়েছেন। কিন্তু শহরের পোশাকশ্রমিকসহ নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের বেতন তো খুব একটা বাড়েনি। এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের ২৪ শতাংশ মানুষ গরিব। মফস্বল শহরে এ সংখ্যা ৩০ শতাংশ। চালসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বাড়ায় এই মানুষগুলো অসুবিধায় আছে।
চাল ছাড়া অন্যান্য খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে টিসিবিকে শক্তিশালী করার কথা অনেকে বলছে। কিন্তু আমি বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় টিসিবিকে ঢেলে সাজানোর জন্য কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এ প্রতিষ্ঠানটি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে একে আর ঢেলে সাজানোর সুযোগ নেই। আমাদের নতুন করে একটি খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
প্রথম আলো তার মানে গ্রামীণ দারিদ্র্য নিয়ে আপাতত না ভাবলেও চলবে?
হোসেন জিল্লুর রহমান খাদ্যনিরাপত্তার আলোচনায় আমরা দরিদ্র বলতে এত দিন উত্তরাঞ্চলের গ্রামের মানুষদের বুঝতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে গ্রামীণ কৃষি মজুরদের মজুরি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাঁরা দৈনিক মজুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই গ্রামে থেকেই খাদ্যের জোগান পান। ধানের দাম বাড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডির মতো সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমগুলো গ্রামের দিকে নেওয়া হয়।
চালের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। নির্দিষ্ট আয়ের এই মানুষগুলোর বেশির ভাগই কিন্তু গ্রামে থাকে না। শহরের বিভিন্ন অংশে এদের বসবাস। মধ্যবিত্তকে সবকিছুই কিনে খেতে হয়। তারা মোটা চাল খায় না, চিকন চাল কিনতে অভ্যস্ত। বাসাভাড়া ও অন্য সব ক্ষেত্রে তাদের জীবনযাপন-খরচ গ্রামের চেয়ে বেশি। খাদ্যের দাম যখন বাড়ে, তখন তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে। সরকার যখন ওএমএস চালু করে, তখন তারা সদর রাস্তায় ট্রাকের সামনে সারি ধরে দাঁড়িয়ে চাল কিনতে পারে না।
নগর-দারিদ্র্যের বিষয়টিও তেম আলোচনায় আসে না। গ্রামীণ দারিদ্র্যকে আমরা যতটা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারছি, নগর-দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে ততটা পারছি না। নগর-দরিদ্রদের খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সৃজনশীল উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। মেট্রোপলিটন ও মফস্বল শহরগুলোতে কী ধরনের উদ্যোগ দরিদ্রদের খাদ্য নিশ্চিত করবে, তা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রথম আলো উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা মোকাবিলার বিষয়টি এখনো আলোচনা ও উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান মঙ্গা এলাকাগুলোয় একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আধুনিক জাতের কৃষি প্রযুক্তি ও শস্য বহুমুখীকরণের ফলে সেখানে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এমনিতেই উত্তরাঞ্চল খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা ছিল। প্রধান সমস্যা ছিল আশ্বিন-কার্তিকে কোনো কাজ না থাকা। বিআর-৩৩ ধানের জনপ্রিয়তার কারণে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা মৌসুমে কৃষিশ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন। ফসলেরও একটি বৈচিত্র্য এসেছে। যমুনার চরগুলোতে মিষ্টিকুমড়া চাষের বিপ্লব হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা সবজি, ভুট্টা, রবিশস্যের চাষ করছেন। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
জাতীয়ভাবে মঙ্গাকে মনোযোগে নিয়ে এসে এ পরিবর্তনটি হয়েছে। ২০০৪ সালে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) তৈরির সময় আমি যখন মঙ্গার বিষয়টি উল্লেখ করলাম, তখন তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। অনেকে বলেছিলেন, ‘সরকারি নথিতে এ বিষয়গুলো না আনলে হয় না।’ কিন্তু পিআরএসপিতে তা আসায় সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে মঙ্গা মোকাবিলায় মাঠে নামানো গেছে।
উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা কমে এলেও সেখানকার দারিদ্র্যের পরবর্তী ধাপকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকার দরিদ্ররা সমস্যায় পড়বে। তবে তা সামগ্রিকভাবে যে পরিবর্তনটা হচ্ছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মঙ্গা এলাকা বলতে একসময় রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধাকে বোঝানো হতো। মঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু উপজেলায়। যেমন—রংপুরের গঙ্গাচড়া, গাইবান্ধার সাঘাটাসহ নির্দিষ্ট কিছু উপজেলায় এখন মঙ্গা রয়েছে। এ এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রথম আলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে, বিশেষ করে আইলা ও সিডর এলাকার পরিস্থিতি বেশ নাজুক।
হোসেন জিল্লুর রহমান উপকূল ও হাওর এলাকার জন্য অবকাঠামোগত নিরাপত্তাহীনতা দারিদ্র্য সৃষ্টি করছে। এ এলাকাগুলোতে ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড দিয়ে হবে না। নীতিনির্ধারকেরা এ এলাকার সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। দেড় বছর হয়ে গেলেও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত শেষ হয়নি। হাওর এলাকায় বাঁধ ভেঙে সেখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধান নষ্ট হয়েছে।
দারিদ্র্য বলতে আমরা জীর্ণশীর্ণ চেহারার মানুষকে বুঝি। উপকূলে গেলে অনেক সুন্দর স্বাস্থ্যের মানুষকে দরিদ্র অবস্থার মধ্যে দেখা যাবে। যারা ভিজিডি কার্ড পেয়ে হয়তো তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছে। কিন্তু তাদের সম্পদের নিরাপত্তা নেই। অনেকে এখনো বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে। অক্ষত আছে এমন অনেক ঘর বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে।
হাওর এলাকায় যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা দিয়ে সেখানকার মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু হাওরের সম্পদ ব্যবস্থাপনা এখনো সেই সামন্তীয় কায়দায় হচ্ছে। বাড়ির সামনে দিয়ে মাছ গেলেও ইজারাপ্রথার কারণে তা সংগ্রহ করতে পারছে না হাওরবাসী।
প্রথম আলো তাহলে সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের সাফল্য হিসেবে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার পেলেন। দেশে কিন্তু পুষ্টি-সমস্যা রয়ে গেছে। এমডিজির সূচকেও পুষ্টি বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত মানুষ পুষ্টি-সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্তেরও গড় উচ্চতা ও স্বাস্থ্য যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখব, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় খারাপ। পুষ্টি নিশ্চিত করায় চীন, জাপান, সুইডেনে মানুষের গড় উচ্চতা অনেক বেড়েছে।
খাদ্যের দাম বাড়ায় মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর উপাদানগুলো কাটছাঁট করে। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের খাদ্যতালিকায় দুধ ও ডিম খুঁজে পাওয়া যাবে না। সরকারও কৃষি নিয়ে আলোচনাটাকে ধানের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে ফেলেছে। দেশে হয়তো কোনো মানুষ না খেয়ে মরছে না, কিন্তু ভয়াবহ পুষ্টি-সংকটের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত ‘আমূল’ নামক বিশাল ডেইরি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সে দেশের পুষ্টি-পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করেছে। আমাদের এখানে মিল্ক ভিটারও ওই সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেখানেও সুশাসন ও ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে। গত বাজেটে গুঁড়ো দুধ আমদানির ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ডেইরি-শিল্পকে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। পুষ্টি নিশ্চিত করতে আমাদের ডেইরি, গবাদিপশু ও পোলট্রিশিল্পের দিকে নজর দিতে হবে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
হোসেন জিল্লুর রহমান ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইফতেখার মাহমুদ
প্রথম আলো খাদ্যপণ্যের দাম আবারও বাড়ছে? কারণ হিসেবে কী মনে করেন?
হোসেন জিল্লুর রহমান খাদ্যের দাম বাড়ার কারণ বুঝতে চাহিদা ও জোগান পরিস্থিতির ভারসাম্য কী অবস্থায় আছে, তা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। বর্তমানে বাজারে খাদ্যপণ্যের জোগানে ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয় না। খাদ্যব্যবস্থাপনা সমস্যার কারণেই দাম বাড়ছে। দাবানলের কারণে রাশিয়া গম রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনা বিশ্ববাজারে গমের জোগানের ক্ষেত্রে যতটা না সমস্যা, তার চেয়ে ক্রেতাদের আচরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। সবাই আতঙ্কিত হয়ে বেশি করে খাদ্য কিনে রাখার চেষ্টা করছে। খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কৌশলগত অবস্থান নিতে হবে। খাদ্যপণ্যের বড় অংশের সরবরাহ হয়তো সরকারের পক্ষে জোগান দেওয়া সম্ভব হবে না। তবে কৌশলগত মজুদ রাখতে হবে। যাতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তা সরবরাহ করে বাজার স্থিতিশীল রাখা যায়। বাংলাদেশে চালের দাম সব সময় ভারতের চেয়ে বেশি থাকত। ফলে সেখান থেকে বৈধ-অবৈধ নানা পথে চাল আসত। দুই-তিন বছর ধরে ভারতে চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। ফলে সরকারি পর্যায় ছাড়া ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চালের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে চালের বাজার কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। গত আমনে ঘাটতি ও বোরোতে হাওরের ফসল নষ্ট হওয়ার পরেও সামগ্রিকভাবে চালের উৎপাদনে বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি করবে না বলে আমি মনে করি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাতালগুলোতে যথেষ্ট পরিমাণ চাল আছে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের গুদামগুলোতে গম, তেল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। চট্টগ্রামের খাদ্যগুদাম মালিক সমিতি আমাকে বলেছে, মজুদ ভালো। সার্বিকভাবে খাদ্যঘাটতি নেই। সমস্যা হচ্ছে এগুলো বাজারে নিয়ে আসা। সরকার গুদামগুলো থেকে খাদ্য কী ধরনের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারে নিয়ে আসবে, তার ওপর এর দাম স্বাভাবিক রাখার বিষয়টি নির্ভর করছে।
প্রথম আলো বাজারে তো দাম এখন বেশি। ব্যবসায়ীদের হাতে মজুদ থাকা খাদ্য বাজারে আসছে না কেন? সমস্যাটা কোথায়?
হোসেন জিল্লুর রহমান সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরবরাহ-নির্দেশ (ডিও) ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। গুদামে পণ্য রেখে ব্যবসায়ীরা তা ডিওর মাধ্যমে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে একটি পণ্য বাজারে আসার আগে কাগজপত্রে তিন-চারজন ব্যবসায়ীর হাতে যাচ্ছে। তাঁরা হাতবদলের মাধ্যমে ব্যবসা করে চলেছেন। ব্যাংক থেকে কয়েক পর্বে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পণ্য ক্রেতাদের কাছে আসছে না।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় আমি ডিও ব্যবসার কারণে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট হওয়া খেয়াল করি। তা দূর করতে উদ্যোগও নিয়েছিলাম। সম্প্রতি আমি খেয়াল করলাম, চাল, চিনি, গম, ডালের মতো পণ্যের ক্ষেত্রেও ডিও ব্যবসা শুরু হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক এ ব্যবসা বন্ধ করলে পণ্য গুদাম থেকে বাজারে আসার প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যাবে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুতে ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে ও চাপ প্রয়োগ করে যেভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছিল, তা সঠিক পদ্ধতি নয়।
প্রথম আলো খাদ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি মানুষের আয়ও বেড়েছে। যে কারণে ওএমএস চাল বিক্রিতে মানুষের সাড়া কম বলে অনেকে বলছেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান ওএমএসের ট্রাকের সামনে ক্রেতাদের সারি দেখে অনেকে নগর-দারিদ্র্যকে বুঝতে চান। কিন্তু ওএমএস বিক্রির প্রক্রিয়ায় সমস্যা রয়ে গেছে। ধানমন্ডি এলাকায়ও ওএমএস ট্রাক দেখা গেছে। কিন্তু ওই এলাকায় তো গরিব মানুষ কম। অন্য এলাকা থেকে লোকজন এসে তো আর চাল কিনবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমরা দেখেছি, চট্টগ্রামের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও বর্তমান নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম শহরের অলিগলির ভেতরে ওএমএস ডিলার দেওয়ার ব্যবস্থা করায় সেখানে প্রচুর ক্রেতার সমাগম হয়েছিল। এ ধরনের উদ্ভাবনী কায়দায় নগর-দরিদ্রদের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার চিন্তা করতে হবে।
রিকশাওয়ালা, সিএনজিচালকেরা তাঁদের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে আয় বাড়িয়েছেন। কিন্তু শহরের পোশাকশ্রমিকসহ নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের বেতন তো খুব একটা বাড়েনি। এক গবেষণায় দেখতে পেয়েছি, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের ২৪ শতাংশ মানুষ গরিব। মফস্বল শহরে এ সংখ্যা ৩০ শতাংশ। চালসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম বাড়ায় এই মানুষগুলো অসুবিধায় আছে।
চাল ছাড়া অন্যান্য খাদ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে টিসিবিকে শক্তিশালী করার কথা অনেকে বলছে। কিন্তু আমি বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকা অবস্থায় টিসিবিকে ঢেলে সাজানোর জন্য কয়েক দফা বৈঠক করেছি। এ প্রতিষ্ঠানটি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে একে আর ঢেলে সাজানোর সুযোগ নেই। আমাদের নতুন করে একটি খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।
প্রথম আলো তার মানে গ্রামীণ দারিদ্র্য নিয়ে আপাতত না ভাবলেও চলবে?
হোসেন জিল্লুর রহমান খাদ্যনিরাপত্তার আলোচনায় আমরা দরিদ্র বলতে এত দিন উত্তরাঞ্চলের গ্রামের মানুষদের বুঝতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধরে গ্রামীণ কৃষি মজুরদের মজুরি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তাঁরা দৈনিক মজুরি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পাচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই গ্রামে থেকেই খাদ্যের জোগান পান। ধানের দাম বাড়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। কাবিখা, ভিজিএফ, ভিজিডির মতো সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমগুলো গ্রামের দিকে নেওয়া হয়।
চালের দাম বাড়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। নির্দিষ্ট আয়ের এই মানুষগুলোর বেশির ভাগই কিন্তু গ্রামে থাকে না। শহরের বিভিন্ন অংশে এদের বসবাস। মধ্যবিত্তকে সবকিছুই কিনে খেতে হয়। তারা মোটা চাল খায় না, চিকন চাল কিনতে অভ্যস্ত। বাসাভাড়া ও অন্য সব ক্ষেত্রে তাদের জীবনযাপন-খরচ গ্রামের চেয়ে বেশি। খাদ্যের দাম যখন বাড়ে, তখন তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে। সরকার যখন ওএমএস চালু করে, তখন তারা সদর রাস্তায় ট্রাকের সামনে সারি ধরে দাঁড়িয়ে চাল কিনতে পারে না।
নগর-দারিদ্র্যের বিষয়টিও তেম আলোচনায় আসে না। গ্রামীণ দারিদ্র্যকে আমরা যতটা সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারছি, নগর-দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে ততটা পারছি না। নগর-দরিদ্রদের খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমরা সৃজনশীল উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না। মেট্রোপলিটন ও মফস্বল শহরগুলোতে কী ধরনের উদ্যোগ দরিদ্রদের খাদ্য নিশ্চিত করবে, তা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রথম আলো উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা মোকাবিলার বিষয়টি এখনো আলোচনা ও উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান মঙ্গা এলাকাগুলোয় একটি কাঠামোগত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আধুনিক জাতের কৃষি প্রযুক্তি ও শস্য বহুমুখীকরণের ফলে সেখানে কর্মসংস্থান বেড়েছে। এমনিতেই উত্তরাঞ্চল খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলা ছিল। প্রধান সমস্যা ছিল আশ্বিন-কার্তিকে কোনো কাজ না থাকা। বিআর-৩৩ ধানের জনপ্রিয়তার কারণে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা মৌসুমে কৃষিশ্রমিকেরা কাজ পাচ্ছেন। ফসলেরও একটি বৈচিত্র্য এসেছে। যমুনার চরগুলোতে মিষ্টিকুমড়া চাষের বিপ্লব হয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকেরা সবজি, ভুট্টা, রবিশস্যের চাষ করছেন। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
জাতীয়ভাবে মঙ্গাকে মনোযোগে নিয়ে এসে এ পরিবর্তনটি হয়েছে। ২০০৪ সালে দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (পিআরএসপি) তৈরির সময় আমি যখন মঙ্গার বিষয়টি উল্লেখ করলাম, তখন তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। অনেকে বলেছিলেন, ‘সরকারি নথিতে এ বিষয়গুলো না আনলে হয় না।’ কিন্তু পিআরএসপিতে তা আসায় সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোকে মঙ্গা মোকাবিলায় মাঠে নামানো গেছে।
উত্তরাঞ্চল থেকে মঙ্গা কমে এলেও সেখানকার দারিদ্র্যের পরবর্তী ধাপকে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। বর্তমান খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকার দরিদ্ররা সমস্যায় পড়বে। তবে তা সামগ্রিকভাবে যে পরিবর্তনটা হচ্ছে, তাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। মঙ্গা এলাকা বলতে একসময় রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধাকে বোঝানো হতো। মঙ্গা পরিস্থিতি এখন অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত হয়েছে নির্দিষ্ট কিছু উপজেলায়। যেমন—রংপুরের গঙ্গাচড়া, গাইবান্ধার সাঘাটাসহ নির্দিষ্ট কিছু উপজেলায় এখন মঙ্গা রয়েছে। এ এলাকাগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রথম আলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দারিদ্র্য বেড়েছে, বিশেষ করে আইলা ও সিডর এলাকার পরিস্থিতি বেশ নাজুক।
হোসেন জিল্লুর রহমান উপকূল ও হাওর এলাকার জন্য অবকাঠামোগত নিরাপত্তাহীনতা দারিদ্র্য সৃষ্টি করছে। এ এলাকাগুলোতে ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ড দিয়ে হবে না। নীতিনির্ধারকেরা এ এলাকার সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি। দেড় বছর হয়ে গেলেও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ মেরামত শেষ হয়নি। হাওর এলাকায় বাঁধ ভেঙে সেখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধান নষ্ট হয়েছে।
দারিদ্র্য বলতে আমরা জীর্ণশীর্ণ চেহারার মানুষকে বুঝি। উপকূলে গেলে অনেক সুন্দর স্বাস্থ্যের মানুষকে দরিদ্র অবস্থার মধ্যে দেখা যাবে। যারা ভিজিডি কার্ড পেয়ে হয়তো তিন বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছে। কিন্তু তাদের সম্পদের নিরাপত্তা নেই। অনেকে এখনো বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে। অক্ষত আছে এমন অনেক ঘর বেড়িবাঁধ ভেঙে যেকোনো সময় তলিয়ে যেতে পারে।
হাওর এলাকায় যে পরিমাণ সম্পদ আছে, তা দিয়ে সেখানকার মানুষের খাদ্যের সংস্থান করা তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। কিন্তু হাওরের সম্পদ ব্যবস্থাপনা এখনো সেই সামন্তীয় কায়দায় হচ্ছে। বাড়ির সামনে দিয়ে মাছ গেলেও ইজারাপ্রথার কারণে তা সংগ্রহ করতে পারছে না হাওরবাসী।
প্রথম আলো তাহলে সুনির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান প্রধানমন্ত্রী শিশুমৃত্যু হার হ্রাসের সাফল্য হিসেবে জাতিসংঘের এমডিজি পুরস্কার পেলেন। দেশে কিন্তু পুষ্টি-সমস্যা রয়ে গেছে। এমডিজির সূচকেও পুষ্টি বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। দরিদ্র থেকে মধ্যবিত্ত পর্যন্ত মানুষ পুষ্টি-সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের মধ্যবিত্তেরও গড় উচ্চতা ও স্বাস্থ্য যদি আমরা খেয়াল করি, তাহলে দেখব, অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় খারাপ। পুষ্টি নিশ্চিত করায় চীন, জাপান, সুইডেনে মানুষের গড় উচ্চতা অনেক বেড়েছে।
খাদ্যের দাম বাড়ায় মানুষ তাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে পুষ্টিকর উপাদানগুলো কাটছাঁট করে। দেশের ৫০ শতাংশ মানুষের খাদ্যতালিকায় দুধ ও ডিম খুঁজে পাওয়া যাবে না। সরকারও কৃষি নিয়ে আলোচনাটাকে ধানের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে ফেলেছে। দেশে হয়তো কোনো মানুষ না খেয়ে মরছে না, কিন্তু ভয়াবহ পুষ্টি-সংকটের দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত ‘আমূল’ নামক বিশাল ডেইরি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সে দেশের পুষ্টি-পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি করেছে। আমাদের এখানে মিল্ক ভিটারও ওই সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেখানেও সুশাসন ও ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে। গত বাজেটে গুঁড়ো দুধ আমদানির ওপর ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত ডেইরি-শিল্পকে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে না। পুষ্টি নিশ্চিত করতে আমাদের ডেইরি, গবাদিপশু ও পোলট্রিশিল্পের দিকে নজর দিতে হবে।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
হোসেন জিল্লুর রহমান ধন্যবাদ।
No comments