আমি বৃদ্ধাশ্রমে যেতে চাই, সন্তানরা বলে জাত যাবে by আদিত্য আরাফাত
রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের অধিকাংশ দেশে পালন করা হয় বাবা দিবস। ১৯৭২ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একেক নিয়মে পালিত হয়ে আসছে বাবাকে নিবেদিত এ দিবসটি। বাংলাদেশসহ ৩৮টি দেশে দিনটি পালিত হয় জুনের তৃতীয় রোববার।
তারপরও সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, জীবন সায়াহ্নে এসে সেই বাবা সন্তানদের অসহযোগিতা ও ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে একপর্যায়ে হয়ে পড়েন নি:সঙ্গ। কোনো কোনো বাবাকে আশ্রয় নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে। আবার কোনো কোনো সন্তান সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় বৃদ্ধাশ্রমেও দিতে চান না বাবাকে। সেই বাবা তখন চার দেয়ালেই শারিরীক আর মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অপেক্ষায় থাকেন মৃত্যুর। রাজধানীর এমন এক নি:সঙ্গ বাবাকে নিয়ে লিখেছেন বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত।
ঢাকা: ‘‘ছবির এ ছেলেটা আমার বড় ছেলে ডা. জুলফিকার হোসেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৯৫ কি ৯৬ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছে। পরে কানাডায় এফসিফিএস করেছে। দশ বছর ধরে কানাডার একটি হাসপাতালে মেডিসিন স্পেশালিস্ট হিসেবে আছে। বৌমাও ডাক্তার। আমার ছেলে আর ছেলের বৌয়ের মাঝে যে পিচ্চিটাকে দেখছো, এটা আমার দাদু ভাই।বয়স ৬ বছর হবে। ভারী দুষ্টু নাকি।’’
‘‘আর ছবিতে যে ছেলেটাকে দেখছো, সে আমার মেঝ ছেলে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বুয়েট থেকে ২০০৩ সালে পাস করেছে। মেঝ ছেলেও বৌসহ চায়না থাকে।’’
‘‘ছবির এ মেয়েটা আমার কলিজার ধন বুবলি মা (নওরিন আক্তার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর করেছে। পাঁচ বছর ধরে স্বামীসহ সুইডেনে আছে। সুইডেনের স্টকহোমে মেয়ের জামাইয়ের রেস্টুরেন্ট আছে। মেয়ে ও মেয়ের জামাই রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করেন।’’
‘‘আর এ ছবিতে যে বৃদ্ধাকে দেখছো, সে আমার স্ত্রী। আজিমপুর গোরস্থানের সাড়ে ৩ হাত মাটির নিচে আছে। সবাই যার যার মতো আছে।’’
চোখ থেকে চশমা নামিয়ে চোখ মোছেন পঁচাত্তর বয়সী আলতাফ হোসেন। পারিবারিক অ্যালবাম বন্ধ করেন। আলতো করে বুকে জড়িয়ে নেন। অ্যালবামে চুমু খান। প্রচণ্ড কান্না আসে বৃদ্ধ আলতাফ হোসেনের। চেপে ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সে জল জমাট বাধে চোখে। চোখের পাতা এ দিক ওদিক করে সে জল লুকাতে চেষ্টা করেন সাবেক ডাক বিভাগের কর্মকর্তা আলতাফ। কিন্তু পারেন না।
শনিবার সন্ধ্যায় বাবা দিবসকে সামনে রেখে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ৩ তলার এক ফ্ল্যাটে এক নি:সঙ্গ বাবার মুখোমুখি হলে তিনি তার নি:সঙ্গ এক অসহায় জীবনের কথা তুলে ধরেন তার কথা আর চোখের জলে।
চোখের পানি পড়লে সন্তানের অমঙ্গল হয় মনে করেন তিনি। তাই বার বার চোখ মোছেন। কান্না চেপে রাখতে চেষ্টা করেন।
ষোল কি সতের বছর আগেই চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন আলতাফ হোসেন। পেনশন বিক্রি করে ছেলে সন্তারদের লেখাপড়া চালিয়েছেন। মোহাম্মদপুরেই দুই কাঠা জায়গা ছিল তার। দশ বছর আগে সন্তানরা তা বিক্রি করে টাকা ভাগ করে নিয়ে গেছেন। সন্তানদের লাগবে, তাই না করেননি তিনি। আলতাফ হোসেন তার নিজের ফান্ডে কিছু টাকা রেখে দিয়েছেন, যা দিয়ে তার চিকিৎসা খরচ ও বাসা ভাড়া চলছে।
গত তিন বছরে ২ বার হার্ট অ্যাটার্ক করেছেন। সন্তানরা কেউ আসেনি। এর জন্য কোনো দূ:খও যেনো নেই তার। বললেন, ‘‘তারা চিকিৎসা বাবদ খরচ পাঠিয়েছে। বাসায় একজন ছেলে এখন দিনে ৩ বার এসে দেখে যায়।’’
এক পর্যায়ে আলতাফ হোসেন হাত ধরে ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমে নিয়ে যান। আলমিরা থেকে বের করেন কয়েকটি জিনিস। বলেন, ‘‘এই দেখো আমি একা নই। আমার ডাক্তার ছেলের অ্যাপ্রোনটা আমি বিছানার পাশে রেখেছি। ওটাতে এখনও ওর গায়ের গন্ধ আছে। দেখো দেখো...।আর এটা আমার বুবলি মায়ের চশমা। যদিও চশমার একটি গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। আর এই ছেড়া দুটি বই আমার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলের।’’ সন্তানদের এসব জিনিস বুকে জড়িয়ে ধরে যেন সন্তানদের ছোঁয়া পেতে চান জীবনসায়াহ্নে উপনীত আলতাফ হোসেন।
একপর্যায়ে স্ত্রীর পানের কৌটা বের করে বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এ মানুষটা আমার আগে যাবে না...।’’
হু হু করে কেঁদে উঠেন আলতাফ। কাঁদতে কাঁদতেই বলে ওঠেন, ‘‘বৃদ্ধ বয়সের এ যন্ত্রণা কেউ বুঝবে না। পেনশন বিক্রি, জমি বিক্রি করে ছেলেদের মানুষ করেছি, দূরে থাকার জন্য?’’
যেন নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখেন নিজে। আর কাকেই বা বলবেন। সন্তানেরা যে থেকেও নেই তার!
আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘মাসে একবারও এ বৃদ্ধ বাবাকে ফোন করার সময় হয় না আমার সন্তানদের। তারা অনেক ব্যস্ত। আমি বারবার বলেছি, এ বাসায় আমি আর থাকতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছি। আমি ওল্ডহোমে (বৃদ্ধাশ্রম) যেতে চাই। ছেলেরা বলে, ওখানে গেলে তাদের জাত যাবে।’’
গলার স্বর যেনো ক্ষীণ হয়ে আসে তার। চোখের পাতা মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘যখন রাত হয়, খুব কষ্ট হয়। ঘুম আসে না। কি যন্ত্রণার রাত আমার...খুব মন পোড়ে সন্তানদের জন্য। ওরাতো সেটা বোঝে না।’’
‘‘যখন ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় তখন নামাজ পড়ে বলি, আল্লাহ আমাকে ঘুমের মাঝে তুমি নিয়ে নাও। এভাবেতো ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’’
এক পর্যায়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘‘ইয়া রব, আমার চোখের পানি যেনো আমার সন্তানদের জন্য অভিশাপ না হয়।’’
আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে একটি ছেলে আসে। দিনে তিনবারই আসে ছেলেটি। তিন বেলার খাবার ও ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যায়। রাতের খাবার রান্না করে বৃদ্ধ আলতাফ হোসেনকে ওষুধ খাওয়ায়।
রাত তখন সাড়ে ৯টা। ছেলেটি চলে চায়। একটু পরে বিছানায় যাবেন এ বৃদ্ধ বাবা। ফ্ল্যাটজুড়ে তখন কেবলই শূন্যতা নেমে আসবে। আলতাফ হোসেনের রুম জুড়ে কেবলই শূন্যতা। একাকিত্ব।
একাকিত্বের চেয়ে ভয়ঙ্কর যে আর কিছু নেই তা আলতাফ হোসেনের মতো বাবাদের চেয়ে বেশি আর কেউ বোঝেন না।
এমন একাকিত্ব, শূন্যতা আর হাহাকার নিয়েই আছেন অনেক বৃদ্ধ বাবা। যাদের খোঁজ সন্তানরা নেন না। কেউ ফেলে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। কেউ বন্দী করে রাখেন চার দেয়ালের মাঝে। যার গায়ে পড়ে না ভালোবাসার হাত। যে বৃদ্ধ বয়সে বাবারা সন্তানের কাছে থাকার আশা করেন, সে বয়সে বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থতা আর মানসিক যন্ত্রণায় একা একাই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
অথচ, সকল পিতাই বেঁচে থাকুক সন্তানের মাঝে, এ আবেদনেই প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে বাবা দিবস। এ বছরও এসেছে। রোববারের এই দিনে হয়তো কোনো কোনো বাবার ভাগ্যে জুটবে সন্তানের ভালোবাসা আর উপহার। কিন্তু বেশিরভাগ বৃদ্ধ-অসহায় বাবাদেরই আলতাফ হোসেনের মতোই একাকি, নি:সঙ্গ দু:সহ জীবনযাপনের মাঝেই কেটে যাবে আরো একটি দিন। হয়তো বা এ দিনটিই হবে তাদেরই কাঙ্খিত মৃত্যুর দিকে আরো একটু এগিয়ে থাকা।
বাবা দিবস তাই আলতাফ হোসেনদের জীবনে আলাদা করে তেমন কোনো আবেদন সৃষ্টি করে না।
ঢাকা: ‘‘ছবির এ ছেলেটা আমার বড় ছেলে ডা. জুলফিকার হোসেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ৯৫ কি ৯৬ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছে। পরে কানাডায় এফসিফিএস করেছে। দশ বছর ধরে কানাডার একটি হাসপাতালে মেডিসিন স্পেশালিস্ট হিসেবে আছে। বৌমাও ডাক্তার। আমার ছেলে আর ছেলের বৌয়ের মাঝে যে পিচ্চিটাকে দেখছো, এটা আমার দাদু ভাই।বয়স ৬ বছর হবে। ভারী দুষ্টু নাকি।’’
‘‘আর ছবিতে যে ছেলেটাকে দেখছো, সে আমার মেঝ ছেলে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। বুয়েট থেকে ২০০৩ সালে পাস করেছে। মেঝ ছেলেও বৌসহ চায়না থাকে।’’
‘‘ছবির এ মেয়েটা আমার কলিজার ধন বুবলি মা (নওরিন আক্তার)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে সমাজকল্যাণে স্নাতকোত্তর করেছে। পাঁচ বছর ধরে স্বামীসহ সুইডেনে আছে। সুইডেনের স্টকহোমে মেয়ের জামাইয়ের রেস্টুরেন্ট আছে। মেয়ে ও মেয়ের জামাই রেস্টুরেন্ট দেখাশোনা করেন।’’
‘‘আর এ ছবিতে যে বৃদ্ধাকে দেখছো, সে আমার স্ত্রী। আজিমপুর গোরস্থানের সাড়ে ৩ হাত মাটির নিচে আছে। সবাই যার যার মতো আছে।’’
চোখ থেকে চশমা নামিয়ে চোখ মোছেন পঁচাত্তর বয়সী আলতাফ হোসেন। পারিবারিক অ্যালবাম বন্ধ করেন। আলতো করে বুকে জড়িয়ে নেন। অ্যালবামে চুমু খান। প্রচণ্ড কান্না আসে বৃদ্ধ আলতাফ হোসেনের। চেপে ধরে রাখতে চেষ্টা করেন। কিন্তু সে জল জমাট বাধে চোখে। চোখের পাতা এ দিক ওদিক করে সে জল লুকাতে চেষ্টা করেন সাবেক ডাক বিভাগের কর্মকর্তা আলতাফ। কিন্তু পারেন না।
শনিবার সন্ধ্যায় বাবা দিবসকে সামনে রেখে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের ৩ তলার এক ফ্ল্যাটে এক নি:সঙ্গ বাবার মুখোমুখি হলে তিনি তার নি:সঙ্গ এক অসহায় জীবনের কথা তুলে ধরেন তার কথা আর চোখের জলে।
চোখের পানি পড়লে সন্তানের অমঙ্গল হয় মনে করেন তিনি। তাই বার বার চোখ মোছেন। কান্না চেপে রাখতে চেষ্টা করেন।
ষোল কি সতের বছর আগেই চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন আলতাফ হোসেন। পেনশন বিক্রি করে ছেলে সন্তারদের লেখাপড়া চালিয়েছেন। মোহাম্মদপুরেই দুই কাঠা জায়গা ছিল তার। দশ বছর আগে সন্তানরা তা বিক্রি করে টাকা ভাগ করে নিয়ে গেছেন। সন্তানদের লাগবে, তাই না করেননি তিনি। আলতাফ হোসেন তার নিজের ফান্ডে কিছু টাকা রেখে দিয়েছেন, যা দিয়ে তার চিকিৎসা খরচ ও বাসা ভাড়া চলছে।
গত তিন বছরে ২ বার হার্ট অ্যাটার্ক করেছেন। সন্তানরা কেউ আসেনি। এর জন্য কোনো দূ:খও যেনো নেই তার। বললেন, ‘‘তারা চিকিৎসা বাবদ খরচ পাঠিয়েছে। বাসায় একজন ছেলে এখন দিনে ৩ বার এসে দেখে যায়।’’
এক পর্যায়ে আলতাফ হোসেন হাত ধরে ড্রয়িংরুম থেকে বেডরুমে নিয়ে যান। আলমিরা থেকে বের করেন কয়েকটি জিনিস। বলেন, ‘‘এই দেখো আমি একা নই। আমার ডাক্তার ছেলের অ্যাপ্রোনটা আমি বিছানার পাশে রেখেছি। ওটাতে এখনও ওর গায়ের গন্ধ আছে। দেখো দেখো...।আর এটা আমার বুবলি মায়ের চশমা। যদিও চশমার একটি গ্লাস ভেঙ্গে গেছে। আর এই ছেড়া দুটি বই আমার সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলের।’’ সন্তানদের এসব জিনিস বুকে জড়িয়ে ধরে যেন সন্তানদের ছোঁয়া পেতে চান জীবনসায়াহ্নে উপনীত আলতাফ হোসেন।
একপর্যায়ে স্ত্রীর পানের কৌটা বের করে বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এ মানুষটা আমার আগে যাবে না...।’’
হু হু করে কেঁদে উঠেন আলতাফ। কাঁদতে কাঁদতেই বলে ওঠেন, ‘‘বৃদ্ধ বয়সের এ যন্ত্রণা কেউ বুঝবে না। পেনশন বিক্রি, জমি বিক্রি করে ছেলেদের মানুষ করেছি, দূরে থাকার জন্য?’’
যেন নিজের কাছেই প্রশ্ন রাখেন নিজে। আর কাকেই বা বলবেন। সন্তানেরা যে থেকেও নেই তার!
আক্ষেপ করে বলেন, ‘‘মাসে একবারও এ বৃদ্ধ বাবাকে ফোন করার সময় হয় না আমার সন্তানদের। তারা অনেক ব্যস্ত। আমি বারবার বলেছি, এ বাসায় আমি আর থাকতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে মারা যাচ্ছি। আমি ওল্ডহোমে (বৃদ্ধাশ্রম) যেতে চাই। ছেলেরা বলে, ওখানে গেলে তাদের জাত যাবে।’’
গলার স্বর যেনো ক্ষীণ হয়ে আসে তার। চোখের পাতা মুছতে মুছতে বলেন, ‘‘যখন রাত হয়, খুব কষ্ট হয়। ঘুম আসে না। কি যন্ত্রণার রাত আমার...খুব মন পোড়ে সন্তানদের জন্য। ওরাতো সেটা বোঝে না।’’
‘‘যখন ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় তখন নামাজ পড়ে বলি, আল্লাহ আমাকে ঘুমের মাঝে তুমি নিয়ে নাও। এভাবেতো ধুকে ধুকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’’
এক পর্যায়ে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘‘ইয়া রব, আমার চোখের পানি যেনো আমার সন্তানদের জন্য অভিশাপ না হয়।’’
আলতাফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে একটি ছেলে আসে। দিনে তিনবারই আসে ছেলেটি। তিন বেলার খাবার ও ওষুধ খাইয়ে দিয়ে যায়। রাতের খাবার রান্না করে বৃদ্ধ আলতাফ হোসেনকে ওষুধ খাওয়ায়।
রাত তখন সাড়ে ৯টা। ছেলেটি চলে চায়। একটু পরে বিছানায় যাবেন এ বৃদ্ধ বাবা। ফ্ল্যাটজুড়ে তখন কেবলই শূন্যতা নেমে আসবে। আলতাফ হোসেনের রুম জুড়ে কেবলই শূন্যতা। একাকিত্ব।
একাকিত্বের চেয়ে ভয়ঙ্কর যে আর কিছু নেই তা আলতাফ হোসেনের মতো বাবাদের চেয়ে বেশি আর কেউ বোঝেন না।
এমন একাকিত্ব, শূন্যতা আর হাহাকার নিয়েই আছেন অনেক বৃদ্ধ বাবা। যাদের খোঁজ সন্তানরা নেন না। কেউ ফেলে আসেন বৃদ্ধাশ্রমে। কেউ বন্দী করে রাখেন চার দেয়ালের মাঝে। যার গায়ে পড়ে না ভালোবাসার হাত। যে বৃদ্ধ বয়সে বাবারা সন্তানের কাছে থাকার আশা করেন, সে বয়সে বার্ধ্যক্যজনিত অসুস্থতা আর মানসিক যন্ত্রণায় একা একাই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
অথচ, সকল পিতাই বেঁচে থাকুক সন্তানের মাঝে, এ আবেদনেই প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে বাবা দিবস। এ বছরও এসেছে। রোববারের এই দিনে হয়তো কোনো কোনো বাবার ভাগ্যে জুটবে সন্তানের ভালোবাসা আর উপহার। কিন্তু বেশিরভাগ বৃদ্ধ-অসহায় বাবাদেরই আলতাফ হোসেনের মতোই একাকি, নি:সঙ্গ দু:সহ জীবনযাপনের মাঝেই কেটে যাবে আরো একটি দিন। হয়তো বা এ দিনটিই হবে তাদেরই কাঙ্খিত মৃত্যুর দিকে আরো একটু এগিয়ে থাকা।
বাবা দিবস তাই আলতাফ হোসেনদের জীবনে আলাদা করে তেমন কোনো আবেদন সৃষ্টি করে না।
No comments