স্মরণ-গাজীউল হক : বায়ান্নর কাণ্ডারি by তামান্না ইসলাম অলি
'ভুলবো না, ভুলবো না, ভুলবো না, এই একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলবো না'- এ গানের স্রষ্টা গাজীউল হককেও আমরা ভুলব না। তিনি জড়িয়ে আছেন ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে। জড়িয়ে আছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গেও। তাঁর এই গানই একসময় প্রভাতফেরিতে গাওয়া হতো। স্কুলজীবন থেকেই দেশের প্রতিটি আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল।
দেশের জন্য জেলও খেটেছেন। তিনি একাধারে ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, কবি, লেখক, গীতিকার ও আইনজীবী। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও ছিলেন তিনি। ছিলেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান।
আজ ১৭ জুন। ২০০৯ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গাজীউল হকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। বাবা মাওলানা সিরাজুল হক, মা নূরজাহান বেগম। বাবা ছিলেন কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। এ কারণে পরিবার থেকেই দেশপ্রেম, আন্দোলন- এগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। আইএ ভর্তি হন বগুড়া আযিযুল হক কলেজে। এখানে তিনি অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। যুক্ত হন বাম রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৪৭ সালে নির্বাচিত হন উত্তরবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বগুড়া শাখার সভাপতি হন। আর এ সময় থেকেই শুরু হয় তাঁর রাষ্ট্রভাষা বাংলার সংগ্রাম। এ সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেলে যান। ১৯৪৯ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় কাজ করেন। ১৯৫১ সালে বিএ পাস করে ভর্তি হন এমএ-তে। ১৯৫২ সালে এমএ পাস করেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। পরে ছাত্রনেতাদের আন্দোলনের মুখে ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
১৯৫২ সাল। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারা দেশ। ২৬ জানুয়ারি জিন্নাহ ঘোষণা দেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এর প্রতিবাদে প্রতিটি হলে ছাত্রসভা হয়। ৩০ জানুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। এ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্রসভা ও মিছিল বের হয় এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন গাজীউল হক। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ। সকাল ৯টায় মেডিক্যাল কলেজের গেটে সমবেত হয় ছাত্রছাত্রীরা। কাজী গোলাম মাহাবুব, গাজীউল হক, অলি আহাদ ও আবদুল মতিনের নেতৃত্বে সমাবেশ শুরু হয়। কিন্তু ওই দিন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল পাকিস্তান সরকার। উদ্দেশ্য ছিল ভাষা আন্দোলনের সব প্রস্তুতি পণ্ড করা। সেদিনের ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে মত দেন আবদুল মতিন ও গাজীউল হক। এ দিন পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে। প্রাণে বেঁচে যান গাজীউল হক। তবে গুজব ছড়িয়েছিল তিনিও শহীদ হয়েছেন। বগুড়ায় গায়েবানা জানাজাও হয়েছিল তাঁর।
গাজীউল হক অর্জন করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে 'ডক্টর অব লজ ডিগ্রি্র' দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে পান 'পাবনা থিয়েটার পুরস্কার'। ১৯৯৩ সালে 'রাষ্ট্রভাষা পুরস্কার' পান বাংলাদেশ জাতীয় ব্যক্তিত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়ার তাঁকে 'ভাষাসৈনিক পদক' দেয়। ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমী থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি জাতীয় স্বর্ণপদক 'সিপাপ' পান। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাঁকে 'একুশে পদকে' ভূষিত করে। এ বছর তিনি 'বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন' পুরস্কারও লাভ করেন। এ ছাড়া জাহানারা ইমাম পদক, বঙ্গবন্ধু পদক, শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কারসহ অসংখ্য ক্রেস্ট ও সম্মাননা লাভ করেন।
তামান্না ইসলাম অলি
আজ ১৭ জুন। ২০০৯ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গাজীউল হকের জন্ম ১৯২৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। বাবা মাওলানা সিরাজুল হক, মা নূরজাহান বেগম। বাবা ছিলেন কংগ্রেস ও খিলাফত আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। এ কারণে পরিবার থেকেই দেশপ্রেম, আন্দোলন- এগুলো নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। আইএ ভর্তি হন বগুড়া আযিযুল হক কলেজে। এখানে তিনি অধ্যক্ষ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সংস্পর্শে আসার সুযোগ পান। যুক্ত হন বাম রাজনীতির সঙ্গে। ১৯৪৭ সালে নির্বাচিত হন উত্তরবঙ্গ শাখার যুগ্ম সম্পাদক।
১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বগুড়া শাখার সভাপতি হন। আর এ সময় থেকেই শুরু হয় তাঁর রাষ্ট্রভাষা বাংলার সংগ্রাম। এ সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে যোগ দিয়ে জেলে যান। ১৯৪৯ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় কাজ করেন। ১৯৫১ সালে বিএ পাস করে ভর্তি হন এমএ-তে। ১৯৫২ সালে এমএ পাস করেন। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর এমএ ডিগ্রি কেড়ে নেয়। পরে ছাত্রনেতাদের আন্দোলনের মুখে ফেরত দিতে বাধ্য হয়।
১৯৫২ সাল। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে উত্তাল ছিল ঢাকাসহ সারা দেশ। ২৬ জানুয়ারি জিন্নাহ ঘোষণা দেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এর প্রতিবাদে প্রতিটি হলে ছাত্রসভা হয়। ৩০ জানুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়। এ দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় যে ছাত্রসভা ও মিছিল বের হয় এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন গাজীউল হক। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ। সকাল ৯টায় মেডিক্যাল কলেজের গেটে সমবেত হয় ছাত্রছাত্রীরা। কাজী গোলাম মাহাবুব, গাজীউল হক, অলি আহাদ ও আবদুল মতিনের নেতৃত্বে সমাবেশ শুরু হয়। কিন্তু ওই দিন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল পাকিস্তান সরকার। উদ্দেশ্য ছিল ভাষা আন্দোলনের সব প্রস্তুতি পণ্ড করা। সেদিনের ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে মত দেন আবদুল মতিন ও গাজীউল হক। এ দিন পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। শহীদ হন রফিক, সালাম, বরকতসহ অনেকে। প্রাণে বেঁচে যান গাজীউল হক। তবে গুজব ছড়িয়েছিল তিনিও শহীদ হয়েছেন। বগুড়ায় গায়েবানা জানাজাও হয়েছিল তাঁর।
গাজীউল হক অর্জন করেছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে 'ডক্টর অব লজ ডিগ্রি্র' দেওয়া হয়। ১৯৭৭ সালে পান 'পাবনা থিয়েটার পুরস্কার'। ১৯৯৩ সালে 'রাষ্ট্রভাষা পুরস্কার' পান বাংলাদেশ জাতীয় ব্যক্তিত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে। ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম ইয়ুথ কয়ার তাঁকে 'ভাষাসৈনিক পদক' দেয়। ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমী থেকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ অর্জন করেন। তিনি জাতীয় স্বর্ণপদক 'সিপাপ' পান। বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে তাঁকে 'একুশে পদকে' ভূষিত করে। এ বছর তিনি 'বিশ্ব বাঙালি সম্মেলন' পুরস্কারও লাভ করেন। এ ছাড়া জাহানারা ইমাম পদক, বঙ্গবন্ধু পদক, শেরে বাংলা জাতীয় পুরস্কার, মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কারসহ অসংখ্য ক্রেস্ট ও সম্মাননা লাভ করেন।
তামান্না ইসলাম অলি
No comments