সংবর্ধনা-মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে দেশটা সাজাও

এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনায় গুণীজনেরা বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের জন্য একটা স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছেন। এই দেশটাকে এখন মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে সাজিয়ে তোলার দায়িত্ব তোমাদের।’


সংবর্ধিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গুণীজনেরা বলেন, শুধু ভালো ফল অর্জন করে মেধার পরিচয় দিলেই হবে না, দেশের জন্য এই মেধা কাজে লাগাতে হবে। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে।
প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবি) সহযোগিতায় গতকাল শনিবার নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট ও বাগেরহাট—এই চার জেলার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা সার্বিক সহায়তা দেন।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
নোয়াখালী: আষাঢ়ের মুষলধারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তন শিক্ষার্থীদের পদচারণে সরগরম হয়ে ওঠে। আট উপজেলার ৮০টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৬০০ কৃতী শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সকাল ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মূল আয়োজন শুরু হয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল গান, আবৃত্তি।
সংবর্ধিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন চন্দ্র রায় বলেন, ‘তোমরা যারা জিপিএ-৫ পেয়েছ, তারা দেশের সম্পদ। এ ফল ধরে রাখার জন্য আরও পরিশ্রম করতে হবে।’
প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক এম এ ওয়ারেছ বলেন, ধাপে ধাপে স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নোয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আল-হেলাল মোশারফ হোসেন, ইউসিবির মাইজদী কোর্ট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার আলম, নোয়াখালী জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. জামালউদ্দিন ভূঁইয়া, নোয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মতিলাল সাহা, প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান ও বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়জুন্নেছা পাপড়ি।
অনুষ্ঠানে জেলার সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফাল চন্দ্র শীলের হাতে সম্মাননা পদক (ক্রেস্ট) তুলে দেওয়া হয়। আলোচনা সভা শেষে ক্লোজআপ ওয়ান শিল্পী পলাশ গান গেয়ে শিক্ষার্থীদের মাতিয়ে রাখেন।
কুড়িগ্রাম: সংবর্ধনাস্থল ছিল পৌরসভা মাঠ। কিন্তু শুক্রবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টি শনিবার সকালেও না থামায় বাধ্য হয়ে সংবর্ধনাস্থল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাঠের পাশের পৌর হলে অনুষ্ঠান শুরুর উদ্যোগ নিতেই বৃষ্টি থেমে যায়! এতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবারও মাঠের সংবর্ধনা মঞ্চে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
তবে, বৃষ্টির ভোগান্তির মধ্যেও প্রায় ৬০০ শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি ছিল না। বেলা পৌনে ১১টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আলোচনা সভায় স্কাউট ব্যক্তিত্ব সামিউল হক নান্টু মেধাবীদের উদ্দেশে বলেন, শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে হবে। জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা সব সময় থাকতে হবে।
কুড়িগ্রাম সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘শুধু মেধাবী হলেই হবে না। দেশপ্রেমিক হতে হবে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা একটা দেশ পেয়েছি। এ দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব তোমাদের।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার সভাপতি আকরাম হোসেন, ক্রীড়া সংগঠক রোস্তম আলী তোতা, শিক্ষক মো. মাহাফুজ-ই এলাহী, কুড়িগ্রামে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক সফি খান।
অনুষ্ঠানে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়কে সেরা বিদ্যালয়ের সম্মাননা দেওয়া হয়। বৃষ্টিভেজা শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্লোজআপ ওয়ান তারকা আতিকের গান।
জয়পুরহাট: দুর্নীতি, মাদক আর বাল্যবিবাহকে ‘না’ বলার শপথ নিয়েছে জয়পুরহাটের প্রায় ৬০০ মেধাবী শিক্ষার্থী। সকাল সোয়া ১০টায় জয়পুরহাট পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি আসাদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে এসএসসির এই সাফল্য ধরে রেখে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করার পরামর্শ দেন জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ খায়রুল আলম।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হাসান কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। সমাজের সব অসংগতি দূর করার দায়িত্ব নিতে হবে।’
বাল্যবিবাহ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান প্রবীণ শিক্ষাবিদ মো. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, শুধু ভালো ছাত্র হলে হবে না, ভালো মানুষও হতে হবে। আরও বক্তব্য দেন কৃষ্ণনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান, শালগাঁও দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল হালিম।
পরে জয়পুরহাট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা নাসরিনের হাতে জেলার অন্যতম সেরা বিদ্যালয়ের সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে শিশুশিল্পী নীরব দেবনাথের গান উপস্থিত সবাইকে আনন্দ দেয়।
বাগেরহাট: জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সকাল ১০টায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে জেলার চার শতাধিক জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের অধ্যক্ষ সুকণ্ঠ কুমার মণ্ডল বলেন, সব সময় লেখাপড়ায় ধারাবাহিকতা থাকা প্রয়োজন। এই ফল ধরে রাখতে হলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়ায় শৈথিল্য দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক কাজী আলিম উজ-জামান বলেন, লেখাপড়ার উদ্দেশ্য কখনোই সনদ সংগ্রহ নয়।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ শেখ মুস্তাহিদুল আলম, ফকিরহাট ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অমিত রায় চৌধুরী, খানজাহান আলী কলেজের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার আসিফ উদ্দিন, বাগেরহাট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মুজিবুর রহমান, ফকিরহাট উপজেলার আট্টাকা কেরামত আলী পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঢালী আবদুল মালেক, বাগেরহাট বন্ধুসভার উপদেষ্টা অধ্যাপক বিষ্ণুপ্রিয়া সাহা, বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা উম্মে হানি ও প্রথম আলোর বাগেরহাট প্রতিনিধি আহাদ হায়দার।
অনুষ্ঠানে জেলার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আকরাম হোসেনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। সংবর্ধনা শেষে বন্ধুসভার সদস্যদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র আমার বন্ধু রাশেদ প্রদর্শন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.