আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা
তৈরি পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ায় আশুলিয়া এলাকার সব কারখানা আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটি জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে সারা দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ করে দেবেন শিল্প মালিকরা।
শ্রমিকদের সহিংসতার সঙ্গে মজুরি বাড়ানোর সম্পর্ক নেই দাবি করে বিজিএমইএর সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, 'পোশাক শিল্প নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও যারা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেখতে চায় না তারা জড়িত থাকতে পারে।'
গতকাল শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি। বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আশুলিয়া এলাকায় তিন শতাধিক কারখানা আছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'আশুলিয়ায় বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি শিল্পে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎসটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা শত বাধা অতিক্রম করে চেষ্টা করেছি এ শিল্প যেন কোনো অবস্থায়ই অচল হয়ে না যায়। সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে আলোচনা সত্ত্বেও অপশক্তির ইন্ধনে ৩০ বছরে গড়ে ওঠা এই জাতীয় সম্পদ আজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে এ শিল্পে জড়িত কয়েক হাজার উদ্যোক্তা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কারখানা খুলছেন এবং অনেকেই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, 'চলমান এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও শিল্প উভয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়া এলাকায় অবস্থিত সব পোশাক কারখানা অত্যন্ত অপারগ হয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। শিল্পের সুস্থ ধারা, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং যারা এ শিল্পকে অস্থির করার জন্য দায়ী তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো আশ্বাসের ভিত্তিতে কারখানা খোলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে গোটা দেশের পোশাক শিল্প বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হব।'
গত ১১ মে সহকর্মীকে মেরে ফেলার গুজব থেকে আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা থেকে সহিংসতার শুরু হয়। ওই সময় আশুলিয়া এলাকায় কমপক্ষে ১৫০টি পোশাক কারখানায় 'ধ্বংসযজ্ঞ' চালানো হয় বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। তাদের দাবি, যেসব কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সেগুলো পোশাক শিল্পের প্রথম সারির কমপ্লায়েন্ট কারখানা।
বিজিএমইএ সভাপতি দাবি করেন, ছয় দিন ধরে আশুলিয়ার কারখানাগুলোর সাধারণ শ্রমিকরা প্রবেশের পরও বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা থেকে তাঁদের বের করে আনা হয়।
সফিউল ইসলাম আরো বলেন, 'মজুরি বৃদ্ধির জন্যই শ্রমিকরা কারখানা ভাঙচুর করছেন বলা হচ্ছে। এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই। কারণ মাত্র দেড় বছর আগে আমরা তাঁদের মজুরি গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছি। সব কারখানায় বর্ধিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, বিকেএমইএর সহসভাপতি মো. হাতেম, বিজিএমইএর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চম দিনেও উত্তপ্ত আশুলিয়া
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর দেওয়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে কোনো কাজে আসেনি। এক দিন বিরতি দিয়ে পঞ্চম দিনের মতো শ্রমিকরা গতকাল শনিবারও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্পটে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ, দফায় দফায় গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রায় চার ঘণ্টা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক অবরোধ থাকে। এ সময় পুলিশসহ শতাধিক শ্রমিক ও পথচারী আহত হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন।
বিক্ষোভরত বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় বৃহস্পতিবার দিনভর শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু কেবল ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যান্য কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ বাড়ি ভাড়া না বাড়ানোর যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা তাঁদের (শ্রমিকদের) বাড়িওয়ালারা মানবেন না বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার মাহবুব অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা সকাল ৮টার দিকে কর্মস্থলে এসে কারখানা বন্ধ দেখে কাঠগড়া-জিরাব সড়কে বিক্ষোভ করেন এবং আশপাশের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। তখন ওই এলাকার সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েক হাজার শ্রমিক জিরাব এলাকায় গিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক অবরোধ এবং ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাণ্ডবরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ধাওয়া করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে পাল্টাধাওয়া করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাব পর্যন্ত এলাকার উভয় পাশের দুই শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নরসিংহপুর এলাকায় দেওয়ান সিএনজি স্টেশনের সামনের সড়কে শ্রমিকরা মিছিল ও বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের বিরত রাখার চেষ্টা করলে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাইপাইল-নবীনগর পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন কারখানায় ছুটি দেওয়া হলে ওই এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পল্লী বিদ্যুৎ ও ডেণ্ডাবর এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মহাসড়কে যানবাহন সচল রাখতে চেষ্টা চালায়। জামগড়া, সরকার মার্কেটসহ আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।
একই সময় আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের জামগড়া ও ইউনিক পয়েন্টে কংক্রিট ও সিমেন্ট নির্মিত স্যুয়ারেজের বড় বড় পাইপ জড়ো করে মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় পুলিশ-শ্রমিকের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দৈনিক আজকালের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক মনিরুজ্জামান রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন। তাঁকে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এ সময় পুলিশ, শ্রমিক, পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনোয়ার হোসেন। পুলিশ জানায়, আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি (নং-৩৬) দায়ের করেন। মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈন উদ্দিন বিপ্লব (৪০), মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), মো. শরীফ চৌধুরী (৩০), আনোয়ার হোসেন মৃধা (৩৩), শফি (৩২), ইলিয়াস শাহী মোখলেছ মকু (৩৫), আবদুল মালেক মেম্বার (৪৫), ছালাম (৪৭), তারিক দেওয়ান (৩৮) ও আনোয়ার (৩৫)।
গতকাল শনিবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিজিএমইএর সভাপতি। বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পোশাক শিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আশুলিয়া এলাকায় তিন শতাধিক কারখানা আছে উল্লেখ করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'আশুলিয়ায় বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি শিল্পে সহিংসতা অব্যাহত থাকায় আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎসটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা শত বাধা অতিক্রম করে চেষ্টা করেছি এ শিল্প যেন কোনো অবস্থায়ই অচল হয়ে না যায়। সরকার, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে আলোচনা সত্ত্বেও অপশক্তির ইন্ধনে ৩০ বছরে গড়ে ওঠা এই জাতীয় সম্পদ আজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে এ শিল্পে জড়িত কয়েক হাজার উদ্যোক্তা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কারখানা খুলছেন এবং অনেকেই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, 'চলমান এ পরিস্থিতিতে ব্যক্তি ও শিল্প উভয়ের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য আশুলিয়া এলাকায় অবস্থিত সব পোশাক কারখানা অত্যন্ত অপারগ হয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। শিল্পের সুস্থ ধারা, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এবং যারা এ শিল্পকে অস্থির করার জন্য দায়ী তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো আশ্বাসের ভিত্তিতে কারখানা খোলা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রয়োজনে গোটা দেশের পোশাক শিল্প বন্ধ করে দিতে আমরা বাধ্য হব।'
গত ১১ মে সহকর্মীকে মেরে ফেলার গুজব থেকে আশুলিয়ায় হা-মীম গ্রুপের একটি কারখানা থেকে সহিংসতার শুরু হয়। ওই সময় আশুলিয়া এলাকায় কমপক্ষে ১৫০টি পোশাক কারখানায় 'ধ্বংসযজ্ঞ' চালানো হয় বলে দাবি করেছে বিজিএমইএ। তাদের দাবি, যেসব কারখানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সেগুলো পোশাক শিল্পের প্রথম সারির কমপ্লায়েন্ট কারখানা।
বিজিএমইএ সভাপতি দাবি করেন, ছয় দিন ধরে আশুলিয়ার কারখানাগুলোর সাধারণ শ্রমিকরা প্রবেশের পরও বাইরে থেকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে কারখানা থেকে তাঁদের বের করে আনা হয়।
সফিউল ইসলাম আরো বলেন, 'মজুরি বৃদ্ধির জন্যই শ্রমিকরা কারখানা ভাঙচুর করছেন বলা হচ্ছে। এর পেছনে কোনো যুক্তি নেই। কারণ মাত্র দেড় বছর আগে আমরা তাঁদের মজুরি গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়েছি। সব কারখানায় বর্ধিত মজুরি কাঠামো বাস্তবায়িত হয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, বিকেএমইএর সহসভাপতি মো. হাতেম, বিজিএমইএর সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পঞ্চম দিনেও উত্তপ্ত আশুলিয়া
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর দেওয়া শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে কোনো কাজে আসেনি। এক দিন বিরতি দিয়ে পঞ্চম দিনের মতো শ্রমিকরা গতকাল শনিবারও শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন স্পটে দলে দলে বিভক্ত হয়ে মহাসড়ক অবরোধ, দফায় দফায় গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। প্রায় চার ঘণ্টা আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক অবরোধ থাকে। এ সময় পুলিশসহ শতাধিক শ্রমিক ও পথচারী আহত হয়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিভিন্ন পয়েন্টে অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন।
বিক্ষোভরত বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে আলাপ করলে তাঁরা জানান, আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের হা-মীম গ্রুপের পোশাক কারখানায় বৃহস্পতিবার দিনভর শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে কথা বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু কেবল ওই কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়েছেন। অন্যান্য কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। এ ছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার তৌহিদ জং মুরাদ বাড়ি ভাড়া না বাড়ানোর যে আশ্বাস দিয়েছেন, তা তাঁদের (শ্রমিকদের) বাড়িওয়ালারা মানবেন না বলে শ্রমিকদের জানিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার মাহবুব অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা সকাল ৮টার দিকে কর্মস্থলে এসে কারখানা বন্ধ দেখে কাঠগড়া-জিরাব সড়কে বিক্ষোভ করেন এবং আশপাশের কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের বের হয়ে আসার আহ্বান জানান। তখন ওই এলাকার সব কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরপর কয়েক হাজার শ্রমিক জিরাব এলাকায় গিয়ে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়ক অবরোধ এবং ১০-১২টি গাড়িতে ভাঙচুর চালান। তাণ্ডবরত শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ধাওয়া করে। শ্রমিকরাও পুলিশকে পাল্টাধাওয়া করে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। শুরু হয় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়। সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের বাইপাইল থেকে জিরাব পর্যন্ত এলাকার উভয় পাশের দুই শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নরসিংহপুর এলাকায় দেওয়ান সিএনজি স্টেশনের সামনের সড়কে শ্রমিকরা মিছিল ও বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাঁদের বিরত রাখার চেষ্টা করলে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাইপাইল-নবীনগর পর্যন্ত এলাকার বিভিন্ন কারখানায় ছুটি দেওয়া হলে ওই এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পল্লী বিদ্যুৎ ও ডেণ্ডাবর এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এতে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নবীনগর-কালিয়াকৈর সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মহাসড়কে যানবাহন সচল রাখতে চেষ্টা চালায়। জামগড়া, সরকার মার্কেটসহ আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলতে থাকে।
একই সময় আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের জামগড়া ও ইউনিক পয়েন্টে কংক্রিট ও সিমেন্ট নির্মিত স্যুয়ারেজের বড় বড় পাইপ জড়ো করে মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় পুলিশ-শ্রমিকের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় দৈনিক আজকালের খবরের নিজস্ব প্রতিবেদক মনিরুজ্জামান রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন। তাঁকে স্থানীয় নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এ সময় পুলিশ, শ্রমিক, পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়।
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের
আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনে শুক্রবার রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সাভার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনোয়ার হোসেন। পুলিশ জানায়, আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলাটি (নং-৩৬) দায়ের করেন। মামলায় যাঁদের আসামি করা হয়েছে তাঁরা হলেন আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেওয়ান মঈন উদ্দিন বিপ্লব (৪০), মো. কামাল উদ্দিন চৌধুরী (৫৫), মো. শরীফ চৌধুরী (৩০), আনোয়ার হোসেন মৃধা (৩৩), শফি (৩২), ইলিয়াস শাহী মোখলেছ মকু (৩৫), আবদুল মালেক মেম্বার (৪৫), ছালাম (৪৭), তারিক দেওয়ান (৩৮) ও আনোয়ার (৩৫)।
No comments