ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান-মিয়ানমারকেই করতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান
রোহিঙ্গা সংকট মিয়ানমারের নিজস্ব ব্যাপার- এ কথা স্বীকার করেছেন ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান ক্রেইগ সেন্ডারস। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ও শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, 'এ সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
এ সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে মিয়ানমারকেই। তবে এটি যে একটু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এতে সন্দেহ নেই।'
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে কিছু বলা হয় না কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ রকম বক্তব্যের পর এই প্রথম জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তরফে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হলো।
সম্প্রতি মিয়ানমারে সহিংসতার ঘটনায় সে দেশের শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান ক্রেইগ সেন্ডারস গতকাল বিকেলে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পেঁৗছান। এ সময় কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা কথা বলতে চাইলে সম্মতি জানান সেন্ডারস।
ক্রেইগ সেন্ডারস বলেন, 'এর আগেও মিয়ানমার থেকে এ দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল- এ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল রয়েছি। আর প্রতিবারই বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছে।' মিয়ানমারের আরাকানে আসলে কী ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস্তবে এ কথা সত্যি যে সেখানে গুজবের পর গুজব রটেছে। আর এ রকম গুজবের কারণে প্রকৃত তথ্যও ঢাকা পড়ার অবস্থা হয়েছে।
গতকাল ক্রেইগ স্যান্ডারস উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পরিদর্শনে আসেন। তিনি ইউএনএইচসিআরের কুতুপালং ক্যাম্প অফিসে শরণার্থী ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সর্দারদের সঙ্গে আলাদাভাবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে শতাধিক রোহিঙ্গা সর্দার উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। একইভাবে গতকাল বিকেলে তিনি টেকনাফে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একান্ত বৈঠকে বসেন বলে জানা গেছে।
কুতুপালং শরণার্থী শিবির ইনচার্জ ও সহকারী কমিশনার জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। বৈঠকে নিজে উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে জালাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন : ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা কুতুপালংয়ে শরণার্থী নেতাদের সঙ্গে যখন বৈঠক করছিলেন তখন কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রবেশদ্বারে এলাকাবাসী একাধিক ব্যানার হাতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন, নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং শরণার্থীদের সেবার নামে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহদানকারী দেশি-বিদেশি এনজিওদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের দাবি জানায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা এ মানববন্ধন করে। তারা বিকেলে কুতুপালং বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশও করে।
বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হক চৌধুরী। বক্তব্য দেন রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোছেন, উখিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক খান, অ্যাডভোকেট ছমি উদ্দিন, সাবেক ইউপি মেম্বার বখতিয়ার আহাম্মদ প্রমুখ।
চার দিন এক পোশাকে : 'ভিন্ন স্টেশন থেকে ছয় দিন আগে এসেছি টেকনাফ সীমান্তে। গায়ের পোশাক চার দিন ধরে বদলানো হয়নি। গায়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে, গায়েই শুকাচ্ছে। তবুও মনে একটুও অশান্তি নেই। কেননা, ওপারের (মিয়ানমার) সীমান্ত শান্ত হয়ে আসছে। তাই এপারেও অশান্তির কোনো কারণ নেই।' টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার পাড়া নাফ নদীর তীরে গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাবিলদার গোলাম নবী (৫২)। অদূরেই স্থানীয় জেলে আবদুল্লাহ জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। আবদুল্লাহ বলেন, আট দিন ধরে সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে ছিল। তার ওপর তিন দিন ধরে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। এসব কারণে তিনি সাগরে মাছ ধরতে পারেননি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় আবারও তিনি জাল হাতে নিয়েছেন।
ঘোলার পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিম তাঁর দুটি নৌকার মাছ ধরার জাল ঠিকঠাক করছিলেন। তিনি বলেন, 'আল্লাহ দিলে আগামী কদিন পরই নামতে পারব সাগরে। এখন সীমান্ত শান্ত। রোহিঙ্গারাও ওপার থেকে আর আসছে না।' শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় জেলে বদিউর তাঁর মাছ ধরার নৌকায় বরফ নিতে নিতে বলেন, 'আশা করি আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাব। সাগরে যাব, মাছ ধরব, খাব পেট ভরে।'
টেকনাফের বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহিদ হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত স্বাভাবিক হয়ে গেছে। গতকাল নাফ নদীতে কোনো অনুপ্রবেশ বা পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্তের জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনীকে চিঠি দিয়ে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান জানায়। নাসাকা সেই চিঠির লিখিত জবাব না দিলেও মৌখিকভাবে ইতিবাচক খবর পাঠিয়েছে বলে গতকাল জানান লে. কর্নেল জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, নাসাকা বাহিনী বর্তমানে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। সে দেশে এখন জরুরি অবস্থা চলছে। তাই তারা অত্যন্ত ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততা কমে গেলে তারা বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত জানাবে বলে বাহক মারফত বিজিবিকে জানিয়েছে। সীমান্তের ওপারে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে আসছে বলে মিয়ানমার থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্রেও জানা গেছে।
এদিকে শুক্রবার রাতে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে ছাপানো 'মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা' শীর্ষক এক রঙিন পোস্টার উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানায়, গতকাল সকালে পোস্টারটি চোখে পড়লে তারা তা ছিঁড়ে ফেলে।
সাংবাদিকদের বাধা : উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসংলগ্ন বিদেশি এনজিও এমএসএফের (মিদ্সে সঁ ফ্রতিরে) ক্লিনিকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী গুলিবিদ্ধ তিনজন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল বিকেল ৪টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক উক্ত ক্লিনিকে গেলে এনজিওর দায়িত্বরত কর্মচারীরা সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি। ক্লিনিকে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার রাজিব কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, 'সাংবাদিক কেন, প্রধানমন্ত্রী আসলেও অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।' গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তাদের ইন্টারনাল ও মানবিক ব্যাপার।
এ ঘটনায় উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও হানিফ আজাদ গণমাধ্যমের কাছে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারকে কিছু বলা হয় না কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ রকম বক্তব্যের পর এই প্রথম জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তরফে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া হলো।
সম্প্রতি মিয়ানমারে সহিংসতার ঘটনায় সে দেশের শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান ক্রেইগ সেন্ডারস গতকাল বিকেলে টেকনাফ সীমান্তের শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাটে পেঁৗছান। এ সময় কালের কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা কথা বলতে চাইলে সম্মতি জানান সেন্ডারস।
ক্রেইগ সেন্ডারস বলেন, 'এর আগেও মিয়ানমার থেকে এ দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল- এ সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল রয়েছি। আর প্রতিবারই বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেছে।' মিয়ানমারের আরাকানে আসলে কী ঘটেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাস্তবে এ কথা সত্যি যে সেখানে গুজবের পর গুজব রটেছে। আর এ রকম গুজবের কারণে প্রকৃত তথ্যও ঢাকা পড়ার অবস্থা হয়েছে।
গতকাল ক্রেইগ স্যান্ডারস উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পরিদর্শনে আসেন। তিনি ইউএনএইচসিআরের কুতুপালং ক্যাম্প অফিসে শরণার্থী ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সর্দারদের সঙ্গে আলাদাভাবে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে শতাধিক রোহিঙ্গা সর্দার উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁদের মধ্যে কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি। একইভাবে গতকাল বিকেলে তিনি টেকনাফে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গাদের নিয়ে একান্ত বৈঠকে বসেন বলে জানা গেছে।
কুতুপালং শরণার্থী শিবির ইনচার্জ ও সহকারী কমিশনার জালাল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশপ্রধান শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। বৈঠকে নিজে উপস্থিত ছিলেন না জানিয়ে জালাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে, তা তিনি জানেন না।
প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন : ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তা কুতুপালংয়ে শরণার্থী নেতাদের সঙ্গে যখন বৈঠক করছিলেন তখন কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের প্রবেশদ্বারে এলাকাবাসী একাধিক ব্যানার হাতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরে। তারা বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন, নতুনভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ এবং শরণার্থীদের সেবার নামে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহদানকারী দেশি-বিদেশি এনজিওদের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের দাবি জানায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তারা এ মানববন্ধন করে। তারা বিকেলে কুতুপালং বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশও করে।
বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল হক চৌধুরী। বক্তব্য দেন রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোছেন, উখিয়া থানা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক খান, অ্যাডভোকেট ছমি উদ্দিন, সাবেক ইউপি মেম্বার বখতিয়ার আহাম্মদ প্রমুখ।
চার দিন এক পোশাকে : 'ভিন্ন স্টেশন থেকে ছয় দিন আগে এসেছি টেকনাফ সীমান্তে। গায়ের পোশাক চার দিন ধরে বদলানো হয়নি। গায়েই বৃষ্টিতে ভিজেছে, গায়েই শুকাচ্ছে। তবুও মনে একটুও অশান্তি নেই। কেননা, ওপারের (মিয়ানমার) সীমান্ত শান্ত হয়ে আসছে। তাই এপারেও অশান্তির কোনো কারণ নেই।' টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার পাড়া নাফ নদীর তীরে গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাবিলদার গোলাম নবী (৫২)। অদূরেই স্থানীয় জেলে আবদুল্লাহ জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন। আবদুল্লাহ বলেন, আট দিন ধরে সীমান্ত পরিস্থিতি ঘোলাটে ছিল। তার ওপর তিন দিন ধরে প্রবল বর্ষণ হচ্ছে। এসব কারণে তিনি সাগরে মাছ ধরতে পারেননি। পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসায় আবারও তিনি জাল হাতে নিয়েছেন।
ঘোলার পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রহিম তাঁর দুটি নৌকার মাছ ধরার জাল ঠিকঠাক করছিলেন। তিনি বলেন, 'আল্লাহ দিলে আগামী কদিন পরই নামতে পারব সাগরে। এখন সীমান্ত শান্ত। রোহিঙ্গারাও ওপার থেকে আর আসছে না।' শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাটে গতকাল সন্ধ্যায় স্থানীয় জেলে বদিউর তাঁর মাছ ধরার নৌকায় বরফ নিতে নিতে বলেন, 'আশা করি আমরা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাব। সাগরে যাব, মাছ ধরব, খাব পেট ভরে।'
টেকনাফের বিজিবি ৪২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জাহিদ হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, সীমান্ত স্বাভাবিক হয়ে গেছে। গতকাল নাফ নদীতে কোনো অনুপ্রবেশ বা পুশব্যাকের ঘটনা ঘটেনি। সীমান্তের জীবনযাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
গত ১৩ জুন বাংলাদেশের পক্ষে বিজিবি মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী নাসাকা বাহিনীকে চিঠি দিয়ে পতাকা বৈঠকের জন্য আহ্বান জানায়। নাসাকা সেই চিঠির লিখিত জবাব না দিলেও মৌখিকভাবে ইতিবাচক খবর পাঠিয়েছে বলে গতকাল জানান লে. কর্নেল জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, নাসাকা বাহিনী বর্তমানে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। সে দেশে এখন জরুরি অবস্থা চলছে। তাই তারা অত্যন্ত ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ততা কমে গেলে তারা বৈঠক নিয়ে বিস্তারিত জানাবে বলে বাহক মারফত বিজিবিকে জানিয়েছে। সীমান্তের ওপারে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে সহনীয় হয়ে আসছে বলে মিয়ানমার থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সূত্রেও জানা গেছে।
এদিকে শুক্রবার রাতে সচেতন নাগরিকের ব্যানারে ছাপানো 'মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে নির্বিচারে রোহিঙ্গা মুসলিম গণহত্যা' শীর্ষক এক রঙিন পোস্টার উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসী জানায়, গতকাল সকালে পোস্টারটি চোখে পড়লে তারা তা ছিঁড়ে ফেলে।
সাংবাদিকদের বাধা : উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরসংলগ্ন বিদেশি এনজিও এমএসএফের (মিদ্সে সঁ ফ্রতিরে) ক্লিনিকে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী গুলিবিদ্ধ তিনজন রোহিঙ্গাকে চিকিৎসা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ খবরের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল বিকেল ৪টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক উক্ত ক্লিনিকে গেলে এনজিওর দায়িত্বরত কর্মচারীরা সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি। ক্লিনিকে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার রাজিব কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের পরিচয় জানার পর বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেওয়া যাবে না। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, 'সাংবাদিক কেন, প্রধানমন্ত্রী আসলেও অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।' গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা তাদের ইন্টারনাল ও মানবিক ব্যাপার।
এ ঘটনায় উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রফিক উদ্দিন বাবুল, উখিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ও হানিফ আজাদ গণমাধ্যমের কাছে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
No comments