সরেজমিন- হিস্পানিকরাই তুরুপের তাস? by মিজানুর রহমান খান

হিস্পানিক আমেরিকানরা এবার বারাক ওবামার ভাগ্য খুলতে সহায়ক হতে পারেন। তাঁরা যেদিকে কাত হবেন, সেদিকে পাল্লা ভারী হবে। এমনিতেই সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী নারী, তরুণ ও জাতিগত সংখ্যালঘুরা ডেমোক্র্যাটদের দিকেই ঝুঁকছেন বলে ধারণা মিলছে।


হিস্পানিকদের মন জয় করতে রিপাবলিকানরাও বসে নেই। দোদুল্যমান ফ্লোরিডায় গিয়ে সাবেক রিপাবলিকান গভর্নর বব মার্টিনেজ ও জেব বুশ শনিবার এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, মিট রমনি হিস্পানিকদের মনে আসন করে নিয়েছেন। বুশ বলেন, এই ভোটাররা জানতে চাইছেন, ওবামা কেন তাঁর মেয়াদের প্রথম দুই বছরে অভিবাসন সংস্কারে হাতে দেননি।
২৯টি নির্বাচকমণ্ডলীর ফ্লোরিডার হিস্পানিকদের পূর্বপুরুষেরা কিউবা, পোর্টিরিকো, ভেনেজুয়েলা ও মেক্সিকো থেকে এসেছেন।
হিস্পানিকরা অভিবাসী-বান্ধব প্রস্তাবিত ড্রিম অ্যাক্টের বাস্তবায়ন চাইছেন। এই আইন যাতে বাস্তবে রূপ পায়, সেটা আবার বাংলাদেশিসহ সব অভিবাসীরও একান্ত প্রত্যাশা। কারণ, এই আইন পাস হলে বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশু বা নাবালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা বাসিন্দারা বৈধ নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। কিছুদিন আগেও নিউইয়র্কে এক বাংলাদেশি তরুণীকে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার ফরমান জারি হয়েছিল। কারণ, তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে শিশু হিসেবে এসেছিলেন। কিন্তু পরে আর কাগজপত্র ঠিক করা সম্ভব হয়নি।
ওই আইন পাস হলে বহু অভিবাসীর বরাত খুলে যাবে। শুধু ভার্জিনিয়াতেই লেটিনোদের জন্য ২৭ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে সেখানে ৫০০ কোটি ডলারের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে যাবে।
২০০৮ সালে লেটিনোরা ওবামার বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। চার বছর আগের জনমত জরিপমতে, ওবামা ৬৭ শতাংশ এবং রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইন ৩১ শতাংশ হিস্পানিকের সমর্থন পেয়েছিলেন। এবার ডেমোক্র্যাটদের জন্য অবস্থার আরও উন্নতি ঘটেছে। কারণ, পিউ গবেষণা জরিপে দেখা গেছে, স্প্যানিশভাষী রেজিস্টার্ড লেটিনো ভোটারদের ৭০ ভাগ ওবামাকে এবং মিট রমনিকে ২৬ ভাগ ভোট দেবেন। তবে প্রশ্ন হলো, হিস্পানিকদের কতসংখ্যক আজকের ভোটাভুটিতে অংশ নিতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।
ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধিতে হিস্পানিকরা রীতিমতো একটা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। সিএনএনসহ প্রধান গণমাধ্যমগুলোতেও বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন লেটিনো ১৮ বছরের সীমা স্পর্শ করে চলেছেন। ১৮ বছরের নিচে প্রত্যেক চার মার্কিন নাগরিকের একজন হিস্পানিক।
এবারে সাড়ে ২৩ মিলিয়ন ভোটার হিস্পানিক। এটা একটা নতুন রেকর্ড। ২০০৮ সালে এটা ছিল মাত্র সাড়ে ১৯ মিলিয়ন। হিস্পানিকদের প্রায় অর্ধেকই থাকেন ক্যালিফোর্নিয়া ও টেক্সাসে। টেক্সাসের যুব জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই লেটিনো। কিন্তু ফ্লোরিডা, নেভাদা ও কলোরোডার মতো দোদুল্যমান রাজ্যেও তাঁদের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি আছে। ফ্লোরিডায় হিস্পানিকদের ভোটসংখ্যা ২৩ ভাগে পৌঁছেছে। নিউ মেক্সিকোতে তা ৪২ ভাগ। নেভাদায় ১৬ ভাগের বেশি। ওহাইওতে অবশ্য চার ভাগের বেশি নয়।
২০০৮ সালে ওবামা দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫২৭টি পপুলার ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ভার্জিনিয়ায় এবারে হিস্পানিক ভোটসংখ্যা এক লাখ ৮৩ হাজার। ২০০০ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ভার্জিনিয়ায় লেটিনো জনসংখ্যা ৭৬ ভাগ বেড়েছে। এদের প্রায় ৩৪ ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৯ ভাগের মধ্যে। এ রাজ্যে কৃষ্ণাঙ্গ লেটিনোরা নমনীয় অভিবাসী আইনের পক্ষে। কারণ, তাঁদের অনেকেই বৈধভাবে বসবাসের সুযোগ নিশ্চিত করতে পারেননি। সে কারণে তাঁরা অন্যান্য অভিবাসীর মতোই ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের অনুসারী। বারাক ওবামা ২০০৮ সালে অভিবাসী আইন সংস্কারে বক্তব্য রেখে অভিবাসী জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে হিস্পানিক ভোটারদের মন জয় করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরে তিনি সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় সক্রিয় হননি। এমনকি বুশের আমলের চেয়ে তাঁর আমলে লেটিনো বহিষ্কারের সংখ্যা বেশি। তবে এবারে তিনি সেই অঙ্গীকার নতুন করে ব্যক্ত করেছেন।
সম্প্রতি বারাক ওবামা দোদুল্যমান রাজ্য আইওয়ার মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, আগামী এক বছরের মধ্যে তিনি তাঁর অভিবাসন সংস্কারকে বাস্তবে রূপ দিতে পারবেন। এমনকি ওবামা এ কথাও বলেন, তিনি যদি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন, সেটা হবে দেশের দ্রুত বেড়ে ওঠা হিস্পানিক গ্রুপের আশীর্বাদ। কারণ, তিনি জানেন, এই গ্রুপটির সঙ্গে ইতিমধ্যেই রিপাবলিকানদের বেশ দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
২০০৪ সালে বুশ ৪০ ভাগ লেটিনো ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে জন ম্যাককেইন, যাঁর ঘরে বাংলাদেশি মেয়ে ব্রিজিত (সিন্ডি ম্যাককেইন বাংলাদেশে এসে দত্তক নিয়েছিলেন) বড় হয়ে উঠছে, তিনি মাত্র ৩১ ভাগ হিস্পানিক ভোট পেয়েছিলেন।
ওয়াশিংটন থেকে
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mৎkhanbd@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.