পবিত্র কোরআনের আলো-ফিরআউন ও তার রাজন্যবর্গ মুসার মাধ্যমে প্রেরিত সত্যকে গ্রহণ করল না

৮০. ফালাম্মা- জা-আচ্ছাহারাতু ক্বা-লা লাহুম্ মূছা- আলক্বূ মা আনতুম্ মুলক্বূন।৮১. ফালাম্মা আলক্বাও ক্বা-লা মূছা মা জি'তুম্ বিহিস সিহরি্; ইন্নাল্লা-হা সাইউবতি্বলুহূ; ইন্নাল্লা-হা লা-ইউসলিহু আ'মালাল মুফ্ছিদীন।


৮২. ওয়া ইউহিক্কুল্লা-হুল হাক্কা বিকালিমা-তিহি ওয়া লাও কারিহাল মুজরিমূন।
৮৩. ফামা আ-মানা লিমূছা ইল্লা যুর্রিয়্যাতুম্ মিন ক্বাওমিহি আ'লা খাওফিম্ মিন্ ফিরআ'ওনা ওয়া মালা-য়িহিম আন ইয়্যাফ্তিনাহুম; ওয়া ইন্না ফিরআ'ওনা লাআ'-লিন ফিল আরদ্বি; ওয়া ইন্নাহূ লামিনাল মুছিরফীন। [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৮০-৮৩]

অনুবাদ : ৮০. অতঃপর যখন জাদুকররা এলো, তখন মুসা তাদের বললেন, তোমাদের যা কিছু (জাদুটোনা) নিক্ষেপ করে দেখার আছে, তা নিক্ষেপ করো।
৮১. এরপর তারা যখন (তাদের জাদুর উপকরণ) নিক্ষেপ করল। মুসা বললেন, তোমরা যা কিছু নিয়ে এলে অর্থাৎ দেখালে এসব তো জাদু। আল্লাহ তায়ালা অতিসত্বর এসব বাতিল করে দেবেন (অর্থাৎ আমি তোমাদের দেখাব, জাদু আর কাজ করছে না)। আল্লাহ ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের কাজ সফল হতে দেন না।
৮২. আল্লাহ তাঁর বাণীর মাধ্যমেই সত্যকে সত্য করে দেখান, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।
৮৩. এরপর (মুসার কাছে জাদুকরদের পরাজয়ের পর) মুসার প্রতি অন্য কেউ ইমান না আনলেও তার সম্প্রদায়েরই কিছু যুবক ইমান আনল ফিরআউন (সম্রাট) ও তার রাজন্যবর্গের নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে। পৃথিবীর বুকে ফিরআউন অতি পরাক্রমশালী শাসক ছিল এবং সে ছিল সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে হজরত মুসা (আ.)-এর সঙ্গে ফিরআউনের জাদুকরদের মোকাবিলার কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। মুসার মোজেজা দেখে ফিরআউন ভেবেছিল এটা জাদু। তাই সে তার দেশের সব জাদুকরকে ডেকে এনেছিল মুসাকে পর্যুদস্ত করতে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সে যুগে জাদুবিদ্যার ব্যাপক উন্নতি ঘটেছিল মিসরে এবং মিসরীয় জাদুকর বা ওঝারা ছিল বেশ ক্ষমতাশালী। মুসাকে মোকাবিলা করতে গিয়ে জাদুকররা শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারে মুসা আসলে জাদুকর নয়, বরং তাদের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী কেউ, যিনি একজন নবীও হতে পারেন। ৮০ নম্বর আয়াতে মুসার যে উদ্ধৃতিটি উপস্থাপন করা হয়েছে, এর তাৎপর্য এই যে তিনি তাঁর প্রতিপক্ষকে প্রথমে আক্রমণ চালানোর জন্য আহ্বান জানালেন। এটাই ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি এবং দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি। জাদুকররা জানত মুসার অন্যতম মোজেজা হলো, তিনি তাঁর লাঠিকে সাপ বানিয়ে ফেলতে পারেন। তাই তারা তাঁর অনুকরণে দড়ি ও লাঠি ব্যবহার করে সাপ তৈরির ভেলকিবাজি তৈরি করে। কিন্তু মুসা যখন তার লাঠি নিক্ষেপ করল তখন সব ভেলকিবাজি শেষ। মুসার লাঠি সাপ হয়ে ভেলকিবাজির সব উপকরণ খেয়ে ফেলল। মুসার কাছে জাদুকরদের শোচনীয় পরাজয়ের পরও ফিরআউন বা তার সম্প্রদায়ের শাসকবর্গের কেউ মুসার ওপর ইমান আনা বা সত্যকে স্বীকার করতে রাজি হয়নি। তবে ইমান এনেছিল বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের কিছু যুবক। তারা জানত এর ফলে তারা শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়তে পারে, তবু তারা পিছপা হয়নি। এই আয়াতগুলোতে সে আমলে মিসরে পরাক্রমশালী ফারাও শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের চিত্রও ফুটে উঠেছে। বনি ইসরাইল তখন মিসরে ফারাও শাসকগোষ্ঠীর দাস হিসেবেই বসবাস করত। উল্লেখ করা প্রয়োজন, হজরত ইউসুফ (আ.) যখন মিসর সম্রাটের প্রধানমন্ত্রী, তখন বনি ইসরাইল সেখানে যায়। এরপর তারা ফারাও শাসকগোষ্ঠীর দাসে পরিণত হয়ে যায়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.