রাজনীতি-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-স্বাধীনতার চেতনা by মোহাম্মদ নুরাল হক
স্বাধীন বাংলাদেশে এখন আমরা একচলি্লশ বছরে। আর বীর বাঙালি একাত্তরে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা শুধু একটি স্লোগান ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের একশ্রেণীর মানুষ সূক্ষ্ম কারসাজির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনাকে ব্যবহার করছে ক্ষমতাবান হওয়ার এবং অঢেল সম্পদ আহরণের ঢাল হিসেবে। ভাবতে অবাক লাগে, কী অদ্ভুত আমাদের মানবিক চেতনাবোধ?
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার কার্যকর অর্থ বুঝিয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সব নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল উলি্লখিত বিষয়গুলোর অসামঞ্জস্যপূর্ণ বণ্টন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা একেবারেই বঞ্চিত ছিলাম বলে। অথচ বিগত একচলি্লশ বছরে আমরা দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার যে তুবড়ি ছুটিয়েছি তা কি কোনোভাবে উলি্লখিত বিষয়গুলোর নিশ্চিতকরণ সমর্থন করে?
আজকাল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার, অর্থনৈতিক হাতিয়ার এবং সমাজনীতির হাতিয়ার। কী সাংঘাতিক এক খেলা? আসলে চেতনা কি কখনও কোনোভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে? নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে-বিপক্ষের ফিরিস্তি অবলোকন করি, তখনই আতঙ্কিত হতে হয় এই ভেবে যে, একাত্তরের পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ আমরা কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি? এটা কি ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়? আর ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানেই তো নিশ্চিত পরাজয়। তাই নিশ্চিত পরাজয় মানতেই কি আমরা একাত্তরে এক বুক রক্ত ঢেলেছিলাম বাংলাদেশের মাটিতে_ বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করতে?
পৃথিবীর ইতিহাসে যে জাতি যখন, যেখানেই ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, সে জাতি দিন দিন ততই নিঃশেষিত হয়েছে। পরিণতিতে নিশ্চিত পরাজয় এবং সে জাতির অনিবার্য ধ্বংস। বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোতে অতীতের উদাহরণসহ বর্তমানেও অনেক উদাহরণ বিদ্যমান। কারণ আমি আগেই বলেছি, আমাদের ক্ষমতার লোভ এবং সম্পদের লিপ্সা। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলগত স্বার্থ চরিতার্থের উদগ্র বাসনা। আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের পচন বর্তমানে এমন একটি জায়গায় পেঁৗছেছে যে, এখন আর এর বাইরে যাওয়া বোধ করি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অতি সত্বর যা প্রয়োজন তা হলো, সমাজ ব্যবস্থার একটি আমূল পরিবর্তন।
বিষয়টি দেরিতে হলেও স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা রাজনীতিতে কখনোই ব্যবহারের বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা একটা উপলব্ধির বিষয়। এক ধরনের আবেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা ভিন্নমত দলন, দমন বা ধ্বংসের কোনো হাতিয়ার হতে পারে না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার স্লোগান দ্বারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার প্রয়াস গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। মূলকথা হলো, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা নির্যাস রাজনীতিকে কার্যকর সহায়তার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে_ এটাই কাম্য।
তাই সব রাজনীতিবিদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনাকে দ্রব্য-পণ্যের মতো ব্যবহার না করে বিষয়টিকে রাজনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য সহায়ক হিসেবে দেখতে চেষ্টা করুন। তাতেই বাংলাদেশের মুক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) মোহাম্মদ নুরাল হক পিএসসি :কলাম লেখক
haquenoor@yahoo.com
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার কার্যকর অর্থ বুঝিয়েছিলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে সব নাগরিকের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হয়েছিল উলি্লখিত বিষয়গুলোর অসামঞ্জস্যপূর্ণ বণ্টন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা একেবারেই বঞ্চিত ছিলাম বলে। অথচ বিগত একচলি্লশ বছরে আমরা দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার যে তুবড়ি ছুটিয়েছি তা কি কোনোভাবে উলি্লখিত বিষয়গুলোর নিশ্চিতকরণ সমর্থন করে?
আজকাল বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার, অর্থনৈতিক হাতিয়ার এবং সমাজনীতির হাতিয়ার। কী সাংঘাতিক এক খেলা? আসলে চেতনা কি কখনও কোনোভাবে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে? নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু যখন আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার পক্ষে-বিপক্ষের ফিরিস্তি অবলোকন করি, তখনই আতঙ্কিত হতে হয় এই ভেবে যে, একাত্তরের পর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আজ আমরা কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি? এটা কি ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়? আর ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ মানেই তো নিশ্চিত পরাজয়। তাই নিশ্চিত পরাজয় মানতেই কি আমরা একাত্তরে এক বুক রক্ত ঢেলেছিলাম বাংলাদেশের মাটিতে_ বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করতে?
পৃথিবীর ইতিহাসে যে জাতি যখন, যেখানেই ছায়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে, সে জাতি দিন দিন ততই নিঃশেষিত হয়েছে। পরিণতিতে নিশ্চিত পরাজয় এবং সে জাতির অনিবার্য ধ্বংস। বাংলাদেশের আশপাশের দেশগুলোতে অতীতের উদাহরণসহ বর্তমানেও অনেক উদাহরণ বিদ্যমান। কারণ আমি আগেই বলেছি, আমাদের ক্ষমতার লোভ এবং সম্পদের লিপ্সা। ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলগত স্বার্থ চরিতার্থের উদগ্র বাসনা। আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনের পচন বর্তমানে এমন একটি জায়গায় পেঁৗছেছে যে, এখন আর এর বাইরে যাওয়া বোধ করি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অতি সত্বর যা প্রয়োজন তা হলো, সমাজ ব্যবস্থার একটি আমূল পরিবর্তন।
বিষয়টি দেরিতে হলেও স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা রাজনীতিতে কখনোই ব্যবহারের বিষয় নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা একটা উপলব্ধির বিষয়। এক ধরনের আবেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা ভিন্নমত দলন, দমন বা ধ্বংসের কোনো হাতিয়ার হতে পারে না। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনার স্লোগান দ্বারা কোনো ধরনের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার প্রয়াস গর্হিত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। মূলকথা হলো, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনা নির্যাস রাজনীতিকে কার্যকর সহায়তার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে_ এটাই কাম্য।
তাই সব রাজনীতিবিদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, আপনারা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা স্বাধীনতার চেতনাকে দ্রব্য-পণ্যের মতো ব্যবহার না করে বিষয়টিকে রাজনীতির জন্য উল্লেখযোগ্য সহায়ক হিসেবে দেখতে চেষ্টা করুন। তাতেই বাংলাদেশের মুক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) মোহাম্মদ নুরাল হক পিএসসি :কলাম লেখক
haquenoor@yahoo.com
No comments