যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-জয় হবে গণতন্ত্রের

গোটা পৃথিবীর চোখ এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিধর এই দেশে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৫৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং রিপাবলিকান পার্টির মনোনীত প্রার্থী সিনেটর মিট রমনি।


কে হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট, তা নিয়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার-জনগণের মধ্যে আগ্রহ ও উত্তেজনার কমতি নেই। সোমবার পর্যন্ত জনমত জরিপে দুই দলের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে। জরিপে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মাত্র ০.০২ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। জরিপ অনুযায়ী দোদুল্যমান কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের, বিশেষ করে ফ্লোরিডা, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাডা, ওহাইয়ো, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনী ফলাফলের ওপর পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন তা নির্ভর করছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বারাক ওবামা রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইনকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। তাঁর পুনর্নির্বাচনে আরেকটি ইতিহাস সৃষ্টি হবে।
এবারের নির্বাচনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো- দুটি প্রধান দলের কাছেই এশিয়ান-আমেরিকান ভোটাররা বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এশীয় বংশোদ্ভূত নাগরিকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পররাষ্ট্রনীতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাস্তবতা হলো, এ দেশের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশের মঙ্গল-অমঙ্গল নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শুধু রাজনৈতিক বন্ধুই নয়, বাংলাদেশ সর্বাধিক পরিমাণ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে এই বিশাল দেশটিতে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অভিবাসী রয়েছেন, যাঁরা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ভূমিকা রাখছেন। আজকের নির্বাচনে যে দলই জয়লাভ করুক, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক অপরিবর্তিত ও অব্যাহত থাকবে। আমরা আশা করব, সম্পর্কের বন্ধন ক্রমে আরো ঘনিষ্ঠ ও দৃঢ় হয়ে উঠবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্বাচন থেকে আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চায় শিক্ষণীয় রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণায় গণতন্ত্রের সংস্কৃতি অনুসরণ করে দুই প্রার্থী তথা দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ দেখা গেছে। কিন্তু তা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, শিষ্টাচার ও পরমতসহিষ্ণুতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়নি। ৩১ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যার এ দেশে দুই পক্ষের প্রচার কার্যক্রম চলার সময় কোথাও সমর্থকদের মধ্যে কোনো বাড়াবাড়ি, হানাহানি, সহিংসতা, সংঘাত বা অসহিষ্ণুতার লেশমাত্র দেখা যায়নি। দুই প্রার্থীর মনোজ্ঞ নির্বাচনী বিতর্কে কখনোই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির অভাব দেখা যায়নি। নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্কসহ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ভয়াবহ ঝড় সুপার স্টর্ম 'স্যান্ডি', যাতে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং কয়েক লাখ মানুষ ঘরবাড়ি-ছাড়া হয়েছে, বিদ্যুৎ-খাবার পানির সংকটে বিশাল এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, যার রেশ এখনো কাটেনি। অথচ এ নিয়ে প্রতিপক্ষের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি দেখা যায়নি। জাতির সংকট সময়ে দুই দল সমানভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে। এ রাজনৈতিক সংস্কৃতি অবশ্যই আমাদের জন্য শিক্ষণীয়। যুক্তরাষ্ট্রের এ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে অনুসরণীয়।

No comments

Powered by Blogger.