জেএসসি পরীক্ষা-আলোর ছবিতে কালো ছায়া
রোববার দেশের আট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট বা জেএসসি এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেডিসি) শুরু হয়েছে। পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৯ লাখ আট হাজারের কিছু বেশি। এর মধ্যে ১০ লাখ ১১ হাজার ৫০৩ জন ছাত্রী এবং ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৮৬২ জন ছাত্র।
অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষায় ছাত্রের চেয়ে ছাত্রী বেশি_ এ তথ্য কি আমরা সুসংবাদ হিসেবে ধরে নিতে পারি? আপাতদৃষ্টে এমনটি মনে হতেই পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি উদ্বেগের চিত্রই তুলে ধরে। আমাদের শিক্ষা নীতির লক্ষ্য অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সব ছাত্রছাত্রীকে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষা দান। এদের কেউ ঘরে বসে থাকবে না, শ্রমবাজারে নাম লেখাবে না। আমাদের জনসংখ্যার ধারা অনুযায়ী নারী ও পুরুষ সংখ্যা মোটামুটি সমান। এর অর্থ হচ্ছে স্কুলে যাওয়ার উপযোগী বয়সী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও প্রায় সমান। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে যে বিশেষ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যা মোটামুটি সমান হওয়ার কথা। কিন্তু জুনিয়র স্কুল সার্টিফেকেট ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেটের পরীক্ষায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রী সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ৬৪১ জন কম। প্রথম শ্রেণীতে যদি তাদের সংখ্যা সমান থাকে, তাহলে অষ্টম শ্রেণীতেও প্রায় একই সংখ্যা থাকার কথা। স্কুল-মাদ্রাসার নিচের দিকের পরীক্ষায় ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা ভালো করছে এবং এ কারণে ছাত্ররা ঝরে পড়ছে, এমন তথ্য আমাদের জানা নেই। তাহলে কেন ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যায় এমন পার্থক্য? ছাত্ররা কেন ঝরে পড়ছে_ এ বিষয়টি অবশ্যই জানা প্রয়োজন। ছাত্রীরা যাতে স্কুল শিক্ষায় আগ্রহী হয় সেজন্য উপবৃত্তিসহ আরও কিছু প্রণোদনা চালু রয়েছে। কিন্তু কেবল এ কারণে ছাত্র ও ছাত্রী সংখ্যায় এত পার্থক্য হওয়ার কথা নয়। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা হয় এবং তাতে প্রতিযোগিতা থাকে তীব্র। সেখানে ছাত্রীরা বেশি সংখ্যায় ভর্তির সুযোগ পেলে তাদের বাহবা দেওয়াই সঙ্গত। কিন্তু অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা সংক্রান্ত যে তথ্য, তা দেখে 'ছাত্রীরা এগিয়ে চলেছে' বলে আত্মপ্রসাদ লাভের অবকাশ নেই। এ যে আলোর ছবিতে উদ্বেগের কালো ছায়া!
No comments