কল্পকথার গল্প-কালনেমির লঙ্কাভাগ ও কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ by কল্পকথার গল্প-কালনেমির লঙ্কাভাগ ও কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ by আলী হাবিব
সময়টা যে মোটেও ভালো যাচ্ছে না, সেটা এক বাক্যে সবাই স্বীকার করবেন। সর্বত্রই কেমন একটা অস্থিরতা। একটুতেই লাঠি হাতে বেরিয়ে পড়ছে সবাই। কোথাও কোথাও যেন অস্ত্রের প্রদর্শনী হচ্ছে। সমাজ কিংবা রাজনীতি বিশ্লেষকরা হয়তো বলবেন, একটা পরিবর্তন আসন্ন।
পরিবর্তন যখন 'আসি আসি' করে, তখন এমন হয়। সমাজে ও রাষ্ট্রে একধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। অতীতের উদাহরণও টানতে পারেন কেউ কেউ। আজ আমেরিকায় নির্বাচন হচ্ছে। চার বছর আগের এই নির্বাচনে মাত্র একটি শব্দের মন্ত্রে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন বারাক ওবামা। গতবার তিনি বলেছিলেন, 'চেঞ্জ- পরিবর্তন চাই।' পরিবর্তন হয়েছিল। এবারও তিনি বেশ জুতসই একটি মন্ত্র উচ্চারণ করেছেন। 'ফরোয়ার্ড- সামনে বাড়ো'। সমীকরণটা খুব সোজা। যে পরিবর্তনের সূচনা গেল নির্বাচনে হয়েছিল, সেটাকে আরো সংহত করতে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন যে তিনি আমেরকাবাসীর মনে গেঁথে দিতে চান, সেটা স্পষ্ট।
আগে দুটো গল্প বলে নেওয়া যাক। কালনেমির লঙ্কাভাগ ও কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের গল্প। পুরাণে পাওয়া মামাদের একজন এই কালনেমি, রাক্ষসরাজ রাবণের মামা তিনি। দেবতাদের ঘরবাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র বানাতেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। অন্যদিকে রাক্ষসদের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতেন ময়দানব। শক্তিশেল নামের অস্ত্রটি তাঁরই তৈরি। এই শক্তিশেলের আঘাতে লক্ষণ যখন মৃতপ্রায়, তখন হনুমান যাচ্ছিলেন গন্ধমাদন পর্বতে ভেষজ গাছের সন্ধানে। রাবণ তখন ডেকে পাঠালেন তাঁর মামাকে। হনুমানকে ঠেকাতে হবে। রাবণ জানালেন, হনুমান বধ করতে পারলে পুরস্কার হিসেবে তিনি পাবেন লঙ্কার অর্ধেক অংশ। হনুমানকে হত্যার আগেই কালনেমি হিসাব করতে থাকেন লঙ্কার কোন অংশ নেওয়া যায়। তাঁর ভাবনার মধ্যে কেবলই লঙ্কার ভাগ। হনুমান বিষয়টি টের পেয়ে গন্ধমাদন পর্বতের কাছ থেকে তাঁকে ধরে ছুড়ে মারতেই কালনেমির দেহ গিয়ে পড়ল রাবণের সিংহাসনে। অন্যদিকে কুম্ভকর্ণ ছিলেন রাবণের ভাই। দেবতাদের বরে তিনি বছরের অর্ধেকটা সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন। এই বরে আবার শর্ত ছিল। আজকাল যেমন ঋণ নিতে গেলে বাঁধা পড়তে হয় নানা শর্তের জালে। আজকালকার দাতারা বোধ হয় দেবতাদের চেয়েও শক্তিশালী! সে যাকগে, বর নিতে গিয়ে দেবতাদের শর্তের জালে বাঁধা পড়েছিলেন কুম্ভকর্ণ। অকালে কেউ ঘুম ভাঙালে মৃত্যু হবে তার। রাবণ যখন যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হচ্ছেন, লঙ্কা যখন হাত থেকে যায়-যায় অবস্থা, তখন কোনো উপায় না দেখে কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে জাগানো হলো। তিনি যুদ্ধযাত্রা করলেন। কিন্তু রামের নিক্ষেপ করা বায়ব্যাস্ত্র, ঐন্দাস্ত্র ও অর্ধচন্দ্র বাণে নিহত হলেন তিনি।
পৌরাণিক যুগে নানাবিধ অস্ত্র তৈরি হতো। সেগুলো এখন আর দেখা যায় না। সেসব অস্ত্রের গুণ ছিল। একেক অস্ত্র একেকটি কাজ করত। আজকের দিনে ড্রোন তৈরি হচ্ছে, মাটি ভেদ করে আঘাত করছে। পৌরাণিক যুগে অমন অনেক অস্ত্রের কথা শোনা যায়। সেসব অস্ত্র যাকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হতো, ঠিক তাকেই আঘাত করত। কোনো কোনো অস্ত্র আবার ফিরে আসত। আজকাল রাজনীতির মাঠেও অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। না, আমাদের দেশের মতো আগ্নেয়াস্ত্র নয়। নানাবিধ অস্ত্র আছে পৃথিবীতে। আমাদের দেশেও আছে। নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আধুনিক মারণাস্ত্রের যুগে দেশি অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে। একটুতেই এখানে-সেখানে কাজিয়া লেগে যাচ্ছে। ভৈরবে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে নরসিংদী ও ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। ব্যবহৃত হচ্ছে অস্ত্র। আহত মানুষের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। বিদেশে রাজনীতির মাঠে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে ব্রহ্মাস্ত্র বলা চলে। গেলবারের নির্বাচনে যেমন পরিবর্তনের কথা বলে বারাক ওবামা সেই ব্রহ্মাস্ত্রটিই ব্যবহার করেছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। এবারও নতুন এক অস্ত্র বের করেছেন খাপ থেকে। পরিবর্তনের পর এবার তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে আমেরিকার জনগণকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। মোক্ষম অস্ত্রটাই বেছে নিয়েছেন তিনি। দেখা যাক, কোনদিকে যায় জনগণের রায়। কিন্তু বারাক ওবামা কিংবা মিট রমনি যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্নের নেপথ্যে একটি চেয়ার। সেই চেয়ারটির দখল পেতেই এত আয়োজন। ফরোয়ার্ড কিংবা বিলিভ নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া কেবল ওই চেয়ার বা আসনটির জন্য।
অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আসন নিয়ে একটি জোক বলে নেওয়া যাক। না, একেবারেই সত্যি ঘটনা নয় এটা। বরং বলা যেতে পারে শতভাগ বানানো গল্প। স্রেফ কল্পকথা। ক্লিনটনের শাসনামলের কথা। একটি বিমানে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন ও আল গোর যাচ্ছিলেন। পথে প্লেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। মারা গেলেন ক্লিনটন, হিলারি ও আল গোর। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলো ঈশ্বরের দরবারে। সেখানে পরমেশ্বর জানতে চাইলেন, তাঁদের ইচ্ছের কথা। ইচ্ছে মানে স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করা হবে। প্রথমেই আল গোরের পালা। বৎসে আল গোর, তোমার মনের ইচ্ছে খুলে বলো- ঈশ্বর বললেন। আল গোর বললেন, আমি চাই পৃথিবী বিষাক্ত গ্যাস থেকে মুক্ত হোক। পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হোক।
ঈশ্বর আল গোরের কথা শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে। তুমি আমার পাশের আসনে এসে বসো।
এবার তিনি বিল ক্লিনটনকে একই কথা বললেন। জানতে চাইলেন তাঁর মনের ইচ্ছের কথা। ক্লিনটন বললেন, আমি জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। আমি চাই, মানুষ নিজেদের ভালো-মন্দ বুঝতে পারবে। আমি নিজে মানুষের বেদনা অনুভব করতে চাই। তাদের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার হতে চাই।
বিল ক্লিনটনের কথা শুনে ঈশ্বর খুবই খুশি হলেন। এবার হিলারি ক্লিনটনের কাছে জানতে চাইলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। হিলারি বললেন, পরমেশ্বর, আমি স্বপ্ন দেখছি আমার আসনে আপনি বসে আছেন, আপনার আসনে আমি।
আমেরিকায় আজ যে নির্বাচনটি হচ্ছে সেই নির্বাচন ওই একটি আসনের জন্য। এই আসনের জন্য ভাষণ দিতে হয়েছে। মুখোমুখি বসে একে অন্যের ত্রুটি তুলে ধরতে হয়েছে। তর্ক ও বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়নি। কে রাস্তার লোক, আর কে এসেছেন সাতমহলা থেকে- তা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। তাই বলে কি উত্তেজনা ছিল না? ছিল। সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা আজ পর্যন্ত যেমন আছে, তেমন থাকবে ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে মানুষ। ইলেক্টরাল ভোট কিংবা পপুলার ভোট- নানা সমীকরণ পেরিয়ে তবেই তো বসা যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আসনে। আমাদের শুধু দেখার অপেক্ষা কোনদিকে যায় আমেরিকার মানুষের রায়। কার স্বপ্ন সফল হয়।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে না। কথাটা একটু ঘুরিয়েও বলা যায়- স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্ন দেখতে হয়। কখনো কখনো এই স্বপ্ন আবার দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। যেমন হয়েছিল কালনেমির ক্ষেত্রে। কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। আমরাও তো স্বপ্ন দেখছি। আমাদের সে স্বপ্নের পরিণতি যেন কালনেমির লঙ্কাভাগ কিংবা কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের মতো না হয়।
লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@yahoo.com
আগে দুটো গল্প বলে নেওয়া যাক। কালনেমির লঙ্কাভাগ ও কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের গল্প। পুরাণে পাওয়া মামাদের একজন এই কালনেমি, রাক্ষসরাজ রাবণের মামা তিনি। দেবতাদের ঘরবাড়ি, অস্ত্রশস্ত্র বানাতেন দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা। অন্যদিকে রাক্ষসদের অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতেন ময়দানব। শক্তিশেল নামের অস্ত্রটি তাঁরই তৈরি। এই শক্তিশেলের আঘাতে লক্ষণ যখন মৃতপ্রায়, তখন হনুমান যাচ্ছিলেন গন্ধমাদন পর্বতে ভেষজ গাছের সন্ধানে। রাবণ তখন ডেকে পাঠালেন তাঁর মামাকে। হনুমানকে ঠেকাতে হবে। রাবণ জানালেন, হনুমান বধ করতে পারলে পুরস্কার হিসেবে তিনি পাবেন লঙ্কার অর্ধেক অংশ। হনুমানকে হত্যার আগেই কালনেমি হিসাব করতে থাকেন লঙ্কার কোন অংশ নেওয়া যায়। তাঁর ভাবনার মধ্যে কেবলই লঙ্কার ভাগ। হনুমান বিষয়টি টের পেয়ে গন্ধমাদন পর্বতের কাছ থেকে তাঁকে ধরে ছুড়ে মারতেই কালনেমির দেহ গিয়ে পড়ল রাবণের সিংহাসনে। অন্যদিকে কুম্ভকর্ণ ছিলেন রাবণের ভাই। দেবতাদের বরে তিনি বছরের অর্ধেকটা সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন। এই বরে আবার শর্ত ছিল। আজকাল যেমন ঋণ নিতে গেলে বাঁধা পড়তে হয় নানা শর্তের জালে। আজকালকার দাতারা বোধ হয় দেবতাদের চেয়েও শক্তিশালী! সে যাকগে, বর নিতে গিয়ে দেবতাদের শর্তের জালে বাঁধা পড়েছিলেন কুম্ভকর্ণ। অকালে কেউ ঘুম ভাঙালে মৃত্যু হবে তার। রাবণ যখন যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হচ্ছেন, লঙ্কা যখন হাত থেকে যায়-যায় অবস্থা, তখন কোনো উপায় না দেখে কুম্ভকর্ণকে ঘুম থেকে জাগানো হলো। তিনি যুদ্ধযাত্রা করলেন। কিন্তু রামের নিক্ষেপ করা বায়ব্যাস্ত্র, ঐন্দাস্ত্র ও অর্ধচন্দ্র বাণে নিহত হলেন তিনি।
পৌরাণিক যুগে নানাবিধ অস্ত্র তৈরি হতো। সেগুলো এখন আর দেখা যায় না। সেসব অস্ত্রের গুণ ছিল। একেক অস্ত্র একেকটি কাজ করত। আজকের দিনে ড্রোন তৈরি হচ্ছে, মাটি ভেদ করে আঘাত করছে। পৌরাণিক যুগে অমন অনেক অস্ত্রের কথা শোনা যায়। সেসব অস্ত্র যাকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হতো, ঠিক তাকেই আঘাত করত। কোনো কোনো অস্ত্র আবার ফিরে আসত। আজকাল রাজনীতির মাঠেও অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। না, আমাদের দেশের মতো আগ্নেয়াস্ত্র নয়। নানাবিধ অস্ত্র আছে পৃথিবীতে। আমাদের দেশেও আছে। নারায়ণগঞ্জে অস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। আধুনিক মারণাস্ত্রের যুগে দেশি অস্ত্রও ব্যবহৃত হচ্ছে। একটুতেই এখানে-সেখানে কাজিয়া লেগে যাচ্ছে। ভৈরবে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষ হয়েছে নরসিংদী ও ঝিনাইদহের শৈলকূপায়। ব্যবহৃত হচ্ছে অস্ত্র। আহত মানুষের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। বিদেশে রাজনীতির মাঠে যেসব অস্ত্র ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে ব্রহ্মাস্ত্র বলা চলে। গেলবারের নির্বাচনে যেমন পরিবর্তনের কথা বলে বারাক ওবামা সেই ব্রহ্মাস্ত্রটিই ব্যবহার করেছিলেন। সফলও হয়েছিলেন। এবারও নতুন এক অস্ত্র বের করেছেন খাপ থেকে। পরিবর্তনের পর এবার তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে আমেরিকার জনগণকে উজ্জীবিত করতে চেয়েছেন। মোক্ষম অস্ত্রটাই বেছে নিয়েছেন তিনি। দেখা যাক, কোনদিকে যায় জনগণের রায়। কিন্তু বারাক ওবামা কিংবা মিট রমনি যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্নের নেপথ্যে একটি চেয়ার। সেই চেয়ারটির দখল পেতেই এত আয়োজন। ফরোয়ার্ড কিংবা বিলিভ নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়া কেবল ওই চেয়ার বা আসনটির জন্য।
অন্য প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আসন নিয়ে একটি জোক বলে নেওয়া যাক। না, একেবারেই সত্যি ঘটনা নয় এটা। বরং বলা যেতে পারে শতভাগ বানানো গল্প। স্রেফ কল্পকথা। ক্লিনটনের শাসনামলের কথা। একটি বিমানে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন ও আল গোর যাচ্ছিলেন। পথে প্লেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। মারা গেলেন ক্লিনটন, হিলারি ও আল গোর। তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলো ঈশ্বরের দরবারে। সেখানে পরমেশ্বর জানতে চাইলেন, তাঁদের ইচ্ছের কথা। ইচ্ছে মানে স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণ করা হবে। প্রথমেই আল গোরের পালা। বৎসে আল গোর, তোমার মনের ইচ্ছে খুলে বলো- ঈশ্বর বললেন। আল গোর বললেন, আমি চাই পৃথিবী বিষাক্ত গ্যাস থেকে মুক্ত হোক। পৃথিবী মানুষের বাসযোগ্য হোক।
ঈশ্বর আল গোরের কথা শুনে খুবই খুশি হলেন। তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছে পূরণ হবে। তুমি আমার পাশের আসনে এসে বসো।
এবার তিনি বিল ক্লিনটনকে একই কথা বললেন। জানতে চাইলেন তাঁর মনের ইচ্ছের কথা। ক্লিনটন বললেন, আমি জনগণের ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করি। আমি চাই, মানুষ নিজেদের ভালো-মন্দ বুঝতে পারবে। আমি নিজে মানুষের বেদনা অনুভব করতে চাই। তাদের দুঃখ-কষ্টের অংশীদার হতে চাই।
বিল ক্লিনটনের কথা শুনে ঈশ্বর খুবই খুশি হলেন। এবার হিলারি ক্লিনটনের কাছে জানতে চাইলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। হিলারি বললেন, পরমেশ্বর, আমি স্বপ্ন দেখছি আমার আসনে আপনি বসে আছেন, আপনার আসনে আমি।
আমেরিকায় আজ যে নির্বাচনটি হচ্ছে সেই নির্বাচন ওই একটি আসনের জন্য। এই আসনের জন্য ভাষণ দিতে হয়েছে। মুখোমুখি বসে একে অন্যের ত্রুটি তুলে ধরতে হয়েছে। তর্ক ও বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়নি। কে রাস্তার লোক, আর কে এসেছেন সাতমহলা থেকে- তা নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। তাই বলে কি উত্তেজনা ছিল না? ছিল। সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা আজ পর্যন্ত যেমন আছে, তেমন থাকবে ভোটের ফল প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে মানুষ। ইলেক্টরাল ভোট কিংবা পপুলার ভোট- নানা সমীকরণ পেরিয়ে তবেই তো বসা যায় আমেরিকার প্রেসিডেন্টের আসনে। আমাদের শুধু দেখার অপেক্ষা কোনদিকে যায় আমেরিকার মানুষের রায়। কার স্বপ্ন সফল হয়।
স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচে না। কথাটা একটু ঘুরিয়েও বলা যায়- স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। স্বপ্ন দেখতে হয়। কখনো কখনো এই স্বপ্ন আবার দুঃস্বপ্ন হয়ে যায়। যেমন হয়েছিল কালনেমির ক্ষেত্রে। কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি তিনি। আমরাও তো স্বপ্ন দেখছি। আমাদের সে স্বপ্নের পরিণতি যেন কালনেমির লঙ্কাভাগ কিংবা কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গের মতো না হয়।
লেখক : সাংবাদিক
habib.alihabib@yahoo.com
No comments