২০১২ যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ- ওবামা না রমনি by আলী রীয়াজ

দীর্ঘ ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ভরা প্রচারণা শেষে আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী বারাক ওবামা এবং রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ম্যাসাচুসেটসের সাবেক গভর্নর মিট রমনি।


আরও প্রায় ২০ জন প্রার্থী রয়েছেন এই পদের জন্য। তবে দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে নাম রয়েছে শুধু ওবামা ও রমনির। মোট প্রায় ১৬ কোটি ৯০ লাখ ভোটার ভোট দিচ্ছেন এবারের নির্বাচনে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দুই ধরনের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। তা হলো, দেশের আইনসভা কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ আসন এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদের সব কটি আসন। ১১টি রাজ্যে গভর্নর নির্বাচনও হচ্ছে।
মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছাড়াও রয়েছেন আরও কয়েকজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। তবে তাঁরা বরাবরের মতোই মূল তারকাদের আড়ালে পড়ে আছেন। এঁদের মধ্যে অনেক অঙ্গরাজ্যের ব্যালটে নাম রয়েছে লিবারেটারিয়ান পার্টির প্রার্থী গ্যারি জনসন ও গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনের। সব প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর সঙ্গেই তাঁদের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নামও রয়েছে ব্যালটে। গত নির্বাচনের মতো এবারও ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট (রানিং মেট) প্রার্থী হচ্ছেন জো বাইডেন। আর রমনির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন পল রায়ান।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন। নির্বাচনের দিন আজ হলেও যুক্তরাষ্ট্রে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ডাকযোগে এবং বিশেষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাররা আগেই ভোট দিতে পারেন। বহু ভোটার ইতিমধ্যেই ভোট দিয়েও ফেলেছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
নির্বাচনী পদ্ধতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সরাসরি জনগণের ভোটে (পপুলার ভোট) নির্বাচিত হন না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে ৫৩৮টি ইলেকটোরাল কলেজ (নির্বাচকমণ্ডলী) ভোটের মধ্যে ২৭০টি ভোট পেতে হয়। অঙ্গরাজ্যগুলোর জনসংখ্যা অনুপাতে ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। যে প্রার্থী যে অঙ্গরাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ পপুলার ভোট পাবেন, তিনিই সে রাজ্যের সব কটি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পাবেন। এ কারণে বিষয়টি পরিচিত ‘উইনার টেক অল’ হিসেবে। যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যকে দোদুল্যমান বলে মনে করা হচ্ছে, তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ফ্লোরিডা, ওহাইও এবং ভার্জিনিয়াতে জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট ওবামা এগিয়ে আছেন। তবে এগুলোতে তীব্র লড়াই হবে বলেই সবার অনুমান। ওবামার দিকে ঝুঁকে থাকা কোনো রাজ্যে নাটকীয় পরিবর্তন না ঘটলে এর যেকোনো একটি রাজ্যের ভোট পেলেই তিনি বিজয়ী হবেন। তবে রমনির জন্য ফ্লোরিডা জেতা অবশ্যই দরকার।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, ওবামা ও রমনির প্রতি জাতীয় পর্যায়ে সমর্থন যথাক্রমে ৪৮ ও ৪৭ শতাংশ। জনমত জরিপের ফলে আরও দেখা যাচ্ছে, নারীদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ওবামার সমর্থন রমনির চেয়ে বেশি—ওবামা ৫১ শতাংশ, রমনি ৪৩ শতাংশ। পুরুষদের মধ্যে রমনির সমর্থন ৫১ শতাংশ, ওবামার ৪৪ শতাংশ। কৃষ্ণাঙ্গ বা লাতিনোদের মতো সংখ্যালঘুদের মধ্যে ওবামার জনপ্রিয়তা রমনির চেয়ে ৫৯ পয়েন্ট বেশি, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে রমনি এগিয়ে আছেন ২০ পয়েন্টে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে ওবামার সমর্থন রমনির চেয়ে ৩৫ পয়েন্ট বেশি, বয়স্কদের, বিশেষত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে রমনি এগিয়ে আছেন ১২ পয়েন্টে। এই জনগোষ্ঠীর কোন অংশ শেষ পর্যন্ত বেশি সংখ্যায় ভোট দেয়, বিশেষত দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে, তার ওপরই ফলাফল নির্ভর করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিনেট নির্বাচন
১০০ আসনবিশিষ্ট সিনেটের সদস্যদের মেয়াদ ছয় বছরের, কিন্তু প্রতি দুই বছরে এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচন হয়। সে হিসাবে এবার ৩৩টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। এখন সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদের আসন হলো ৫১। তাঁদের সঙ্গে আছেন আরও দুজন, যাঁরা নির্দলীয়। রিপাবলিকানদের আসনসংখ্যা ৪৭। এবার যে ৩৩টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে, তার ২১টিতে এখন ডেমোক্র্যাট সদস্যরা আছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানদের হাতে থাকা ১০টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে। নির্দলীয় ব্যক্তিরা আসীন, এমন দুটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটদের ২১টি আসনের ১৫টিতে বর্তমানে যিনি সদস্য, তিনি পুনর্নির্বাচনের প্রার্থী, ছয়টি আসনের সদস্যরা অবসর নিচ্ছেন। রিপাবলিকানদের ১০টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনজন অবসর নিচ্ছেন। নির্দলীয় দুজনের একজন অবসর নিচ্ছেন। স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে বলা যায়, কিছু আসনের হাতবদল ঘটলেও শেষ পর্যন্ত সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহাল থাকবে। কারও কারও অনুমান, ডেমোক্র্যাটরা একটা আসন বাড়াতেও পারে। সিনেটে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার কারণেই গত দুই বছর প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর নেওয়া অনেক পদক্ষেপ টিকিয়ে রাখতে পেরেছেন। এসব আসনের মধ্যে যে কিছু আসন বিশেষভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তার একটি হলো ম্যাসাচুসেটসের একটি আসন। টেড কেনেডির মৃত্যুর পর এই আসন রিপাবলিকানরা জিতে নেয়। এবার নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা আসনটি ফিরে পেতে চায়। ২০১০ সালে সিনেটের ৩৪টি আসনে নির্বাচন হয়েছিল। সে সময় ডেমোক্র্যাটরা ছয়টি আসন হারায়।
প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের মোট আসন হলো ৪৩৫টি। সব আসনেই নির্বাচন হচ্ছে। এখন প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানদের আসনসংখ্যা হলো ২৪১, ডেমোক্র্যাটদের ১৯১। গত নির্বাচনে রিপাবলিকানদের মধ্যকার তুলনামূলকভাবে বেশি রক্ষণশীল ‘টি পার্টি’র সমর্থকেরা বড় সংখ্যায় জিতে নিজ আসনে এবং দলের ওপর তাঁদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। এই নির্বাচনে রিপাবলিকানরা প্রতিনিধি পরিষদে তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবেন এমন কোনো আশঙ্কা নেই মোটেই। তবে জনমত জরিপ এবং নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা যদিও তাঁদের এখনকার সব কটি আসন দখলে রাখতে পারবেন না, তবে সব মিলে হাতবদলের মাধ্যমে সম্ভবত তাঁরা পাঁচটি আসন বেশি লাভ করবেন।
গভর্নর নির্বাচন
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য এবং টেরিটোরিতে আছেন নির্বাচিত গভর্নর। তার মধ্যে ২৯ জন রিপাবলিকান, ২০ জন ডেমোক্র্যাট, একজন নির্দলীয়। নির্বাচন হবে ১১টিতে। মাত্র তিনটিকে মনে করা হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। বাকিগুলোর মধ্যে চারটিতে সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে রাজ্য পর্যায়ে যতটা উৎসাহ আছে, জাতীয় পর্যায়ে ততটা নয়। তবে এগুলোর ফলাফল আগামী দিনের ইঙ্গিত বলে অনেক সময় মনে করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.