যুক্তরাজ্যে ‘রাষ্ট্রহীন’ পথশিশুরা

যুক্তরাজ্যে ক্ষুধায় কাতর পথশিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের একটি ধনী এ দেশটির বাসিন্দা হয়েও এই শিশুরা কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে না। কোনো মর্যাদা জোটে না এদের ভাগ্যে। ক্ষুধার তাড়নায় এদের কাউকে চুরি করতে হয়, আর কেউ হয়ে পড়ে যৌনকর্মী।


এ রকমই একটি শিশু টনি। উগান্ডার বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের টনিকে তার বাবা দুই বছর আগে ঘর থেকে বের করে দেয়। তার পর থেকেই সে পথে পথে। রাতে ঘুমানোর জন্য আশ্রয় খোঁজে বাসস্ট্যান্ডে ভিড়িয়ে রাখা কোনো বাসে। হাড্ডিসার এ শিশুটি বলে, ‘এ এক কঠিন জীবন। ক্ষুধা লাগলেই অর্থের দরকার হয়। কিন্তু আমার কাছে কোনো পাউন্ড নেই। আর চুরিও করতে চাই না। গত শীতে গরম কাপড়ের অভাবে প্রচণ্ড ঠান্ডায় কষ্ট পেয়েছি।’
এ রকম মেয়েশিশুর অবস্থা আরও খারাপ। পরিস্থিতি শেষে এদেরকে যৌনকর্মী হতে বাধ্য করে। এ রকম এক লিবীয় বংশোদ্ভূত ১৭ বছরের মেয়ে জানায়, তার দেশে সেনা-নৃশংসতার আশঙ্কায় তার মা তাঁর এক বন্ধুর জিম্মায় তাকে ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেন। তাকে দেখাশোনার জন্য মা তাঁর ওই বন্ধুকে টাকাও দিতেন। কিন্তু কয়েক মাস পরই মেয়েটিকে পরিত্যাগ করে মায়ের সেই বন্ধু। মেয়েটি বিবিসিকে জানায়, তার পর থেকেই সে পথে পথে। মাঝে মাঝে তার আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়। একটু খাবার জোটাতে গুটিকয় পাউন্ড, কিংবা স্রেফ কয়েকটি পেনির জন্য তাকে এমন সব কাজ করতে হয়, যার জন্য তাকে লজ্জিত হতে হয়, যা তাকে অসুস্থ করে তোলে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারা যুক্তরাজ্যেই এ রকম গৃহহীন, রাষ্ট্রহীন শিশু ছড়িয়ে আছে। কয়েকটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের মতে লন্ডন, বার্মিংহাম, লিডস, কভেনট্রি, নটিংহাম, নিউক্যাসেল, লিভারপুল, অক্সফোর্ড ও কারডিফ শহরে এ সমস্যা প্রকট। কোরাম ও পেকহামের মতো সেবামূলক প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এ রকম অসহায় শিশুর সংখ্যা শত শত। এরা বৈধভাবে দেশটিতে অভিবাসী হয়ে এলেও সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধার জন্য আবেদন পর্যন্ত করতে পারে না। সরকারি কোনো নথিপত্রেও এদের খোঁজ পাওয়া যাবে না। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.