আসেম শীর্ষ সম্মেলন- বাংলাদেশ কী পাবে? by সমীরণ রায়
গতকাল থেকে লাওসের রাজধানী ভিয়েনতিয়েনে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ‘এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)’-এর নবম শীর্ষ সম্মেলন। আসেম এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতাকে গভীরতর করার একটি উদ্যোগ।
উত্তর আমেরিকার বলয়মুক্ত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার একটি প্রচেষ্টা। ১৯৯৬ সালে ব্যাংকক শীর্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এ গ্রুপের সৃষ্টি হয়। একটি সুষম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তোলা এর মূল লক্ষ্য। সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের অংশগ্রহণে শীর্ষ সম্মেলন প্রতি দুই বছরে একবার এশিয়া ও ইউরোপে পালাক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। দুই শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যবর্তী সময়ে মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ে শতাধিক বৈঠক হয়। যেখানে দীর্ঘমেয়াদি বিষয় ছাড়াও সমসাময়িক চ্যালেঞ্জগুলো আলোচিত হয়। অর্থ, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, দুর্যোগ মোকাবিলা, ইমিগ্রেশন, জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তি, খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা, কর্মসংস্থান, জ্বালানি নিরাপত্তা, বিশ্বায়ন ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় হয়। এভাবে সদস্যদের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গভীর হয়। সরকারি পর্যায়ে আলোচনার পাশাপাশি সদস্যদেশগুলোর আইনপ্রণেতা, ব্যবসায়ী ও সিভিল সোসাইটি নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করে।
সম্প্রতি সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এসব কারণে আসেম একটি স্পন্দিত গ্রুপে পরিণত হয়েছে। দ্রুত এর প্রসার ঘটছে। ২৬টি দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ইতিমধ্যে এ গ্রুপের সদস্য ৪৮-এ উন্নীত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ ছাড়াও চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও নিউজিল্যান্ড—এই ৪৬টি দেশ এবং ইউরোপীয় কমিশন ও আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট এ জোটের সদস্য। এই জোট বিশ্বের ৫৮ শতাংশ মানুষ, বিশ্ব জিডিপির অর্ধেক এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৬০ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণেও গ্রুপটির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। নবম শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আসেমে যোগ দিচ্ছে। অপর দুটি দেশ হচ্ছে ইউরোপের নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। ইউরোপের ৩০টি দেশ এবং এশিয়া-ওশেনিয়ার ১৯টি দেশ নিয়ে আসেমের নবতর যাত্রা শুরু হচ্ছে।
আসেম গ্রুপে সদস্যদেশগুলোর চাহিদা, সামর্থ্য ও বৈশিষ্ট্যে অনেক তারতম্য আছে। এ গ্রুপে জাপান, জার্মানির মতো ধনী দেশ আছে। আবার লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের মতো স্বল্পোন্নত দেশও আছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো কার্বন নিরোধক দেশ আছে। আবার চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়ার মতো উচ্চ কার্বন নিঃসারক দেশও আছে। আছে ভারত, পাকিস্তানের মতো চির বৈরীভাবাপন্ন দেশ। আবার ইউরোপ যতটা সংঘবদ্ধ, এশিয়া ততটাই বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন। বিচিত্র এ দেশগুলো নিয়ে গ্রুপ গঠিত হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমন্বিত, সবার জন্য প্রযোজ্য ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের কর্মসূচি নেওয়া যায় না। অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।
বিশ্বমন্দায় ইউরোপ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং এশিয়ার প্রধান বাজার ইউরোপ হওয়ায় এ দুটি অঞ্চলকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। মন্দাজনিত সংকট কাটিয়ে উঠে অগ্রগতির পথে চলার জন্য ছোট-বড়, রক্ষণশীল-উদার, ডান-বাম সব দেশই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে সহযোগিতার পথ বেছে নিয়েছে। এ দুটি উপমহাদেশ এখনো বিশ্ব উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাদের ঐক্যবদ্ধ সামর্থ্য পরখ করে দেখেনি। এ পর্যন্ত সবাই উত্তর আমেরিকার নেতৃত্বই মেনে নিয়েছে। আসেম সদস্যরা মনে করছে, তাদের জেগে ওঠার সময় এসেছে। এ জন্যই আসেম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশে-দেশে, অঞ্চলে-অঞ্চলে দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই আসেম অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক খাতগুলোতে সহযোগিতার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছে। ২০১০ সালে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত অষ্টম আসেম শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণায় এশিয়া-ইউরোপ সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ব-অর্থনীতি ও আর্থিক পদ্ধতির দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা, একটি শক্তিশালী, টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার সাধন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২ দফা ঘোষণায় উন্নয়নের আরও টেকসই মডেল, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুবিধা নিশ্চিতে ব্যবস্থা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণায় আশা প্রকাশ করা হয়েছে, বাজার প্রবেশাধিকার, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক সহায়তা, ঋণ মওকুফ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নবম শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়গুলো আলোচিত হবে। এরই আলোকে লাওস শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘শান্তির জন্য বন্ধুত্ব, উন্নতির জন্য অংশীদারত্ব’।
এমনি পটভূমিতে আসেমে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ফলপ্রদ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। ইউরোপ বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। বিগত পাঁচ বছরের রপ্তানি-তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৩ শতাংশ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে। কিন্তু ইউরোপের বাজার চাহিদা কমে যাওয়ায় এ রপ্তানি আয়ে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তদুপরি তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশ ইইউ থেকে জিএসপি সুবিধা পেতে চাইছে। তা হলে বাংলাদেশ আরও প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। বাংলাদেশে ইউরোপীয় বিনিয়োগও তেমন আশাপ্রদ নয়। ইউরোপের উন্নয়ন সহায়তা কমে গেছে। তারা প্রযুক্তি হস্তান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাংলাদেশ আসেমের সদস্য হওয়ায় শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়গুলো বন্ধুত্ব ও অংশীদারির দাবি নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি একেবারে কম। মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ৯ শতাংশ আসে পুরো এশিয়া থেকে। অথচ বাংলাদেশ এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত। এশিয়া থেকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগও আসছে না। যদিও দেশের আমদানির প্রায় ৭৪ শতাংশ আসে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। শীর্ষ সম্মেলন এবং মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ের সভাগুলোতে বাংলাদেশ এ অনুযোগটিও উপস্থাপন করতে পারবে, যা এশিয়াতে রপ্তানি বৃদ্ধি ও এশিয়ার দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজ করবে।
আসেম সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব সুদৃঢ় হলে এশিয়া ও ইউরোপে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। যা বিশ্ব-অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ বিকাশে উত্তর আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য হ্রাস করবে। এশিয়া-ইউরোপ-উত্তর আমেরিকা একটি ত্রিভুজ শক্তিবলয়ে পরিণত হবে। এভাবে সমতাপূর্ণ বিশ্ব গড়ে উঠবে। যেখানে সব দেশই বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাবে। দেশে-দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূরত্ব কমে আসবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উত্তম ক্ষেত্র তৈরি হবে।
সমীরণ রায়: বাণিজ্য বিশ্লেষক।
samiৎon.ৎoy.1957@hotmail.com
সম্প্রতি সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। এসব কারণে আসেম একটি স্পন্দিত গ্রুপে পরিণত হয়েছে। দ্রুত এর প্রসার ঘটছে। ২৬টি দেশ নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ইতিমধ্যে এ গ্রুপের সদস্য ৪৮-এ উন্নীত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ ছাড়াও চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, মঙ্গোলিয়া, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও নিউজিল্যান্ড—এই ৪৬টি দেশ এবং ইউরোপীয় কমিশন ও আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট এ জোটের সদস্য। এই জোট বিশ্বের ৫৮ শতাংশ মানুষ, বিশ্ব জিডিপির অর্ধেক এবং বিশ্ব বাণিজ্যের ৬০ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব করে। এ কারণেও গ্রুপটির গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। নবম শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আসেমে যোগ দিচ্ছে। অপর দুটি দেশ হচ্ছে ইউরোপের নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ড। ইউরোপের ৩০টি দেশ এবং এশিয়া-ওশেনিয়ার ১৯টি দেশ নিয়ে আসেমের নবতর যাত্রা শুরু হচ্ছে।
আসেম গ্রুপে সদস্যদেশগুলোর চাহিদা, সামর্থ্য ও বৈশিষ্ট্যে অনেক তারতম্য আছে। এ গ্রুপে জাপান, জার্মানির মতো ধনী দেশ আছে। আবার লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমারের মতো স্বল্পোন্নত দেশও আছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো কার্বন নিরোধক দেশ আছে। আবার চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়ার মতো উচ্চ কার্বন নিঃসারক দেশও আছে। আছে ভারত, পাকিস্তানের মতো চির বৈরীভাবাপন্ন দেশ। আবার ইউরোপ যতটা সংঘবদ্ধ, এশিয়া ততটাই বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন। বিচিত্র এ দেশগুলো নিয়ে গ্রুপ গঠিত হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সমন্বিত, সবার জন্য প্রযোজ্য ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের কর্মসূচি নেওয়া যায় না। অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বাধা।
বিশ্বমন্দায় ইউরোপ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং এশিয়ার প্রধান বাজার ইউরোপ হওয়ায় এ দুটি অঞ্চলকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। মন্দাজনিত সংকট কাটিয়ে উঠে অগ্রগতির পথে চলার জন্য ছোট-বড়, রক্ষণশীল-উদার, ডান-বাম সব দেশই নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ঘুচিয়ে সহযোগিতার পথ বেছে নিয়েছে। এ দুটি উপমহাদেশ এখনো বিশ্ব উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাদের ঐক্যবদ্ধ সামর্থ্য পরখ করে দেখেনি। এ পর্যন্ত সবাই উত্তর আমেরিকার নেতৃত্বই মেনে নিয়েছে। আসেম সদস্যরা মনে করছে, তাদের জেগে ওঠার সময় এসেছে। এ জন্যই আসেম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশে-দেশে, অঞ্চলে-অঞ্চলে দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই আসেম অর্থনীতির পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক খাতগুলোতে সহযোগিতার কৌশল নিয়ে আলোচনা করছে। ২০১০ সালে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত অষ্টম আসেম শীর্ষ সম্মেলন ঘোষণায় এশিয়া-ইউরোপ সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ব-অর্থনীতি ও আর্থিক পদ্ধতির দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা, একটি শক্তিশালী, টেকসই ও সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে প্রত্যেকের প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনা, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার সাধন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২ দফা ঘোষণায় উন্নয়নের আরও টেকসই মডেল, উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুবিধা নিশ্চিতে ব্যবস্থা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণায় আশা প্রকাশ করা হয়েছে, বাজার প্রবেশাধিকার, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক সহায়তা, ঋণ মওকুফ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। নবম শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়গুলো আলোচিত হবে। এরই আলোকে লাওস শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘শান্তির জন্য বন্ধুত্ব, উন্নতির জন্য অংশীদারত্ব’।
এমনি পটভূমিতে আসেমে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ফলপ্রদ হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। ইউরোপ বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। বিগত পাঁচ বছরের রপ্তানি-তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৫৩ শতাংশ এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে। কিন্তু ইউরোপের বাজার চাহিদা কমে যাওয়ায় এ রপ্তানি আয়ে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। তদুপরি তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশ ইইউ থেকে জিএসপি সুবিধা পেতে চাইছে। তা হলে বাংলাদেশ আরও প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। বাংলাদেশে ইউরোপীয় বিনিয়োগও তেমন আশাপ্রদ নয়। ইউরোপের উন্নয়ন সহায়তা কমে গেছে। তারা প্রযুক্তি হস্তান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। বাংলাদেশ আসেমের সদস্য হওয়ায় শীর্ষ সম্মেলনে এ বিষয়গুলো বন্ধুত্ব ও অংশীদারির দাবি নিয়ে আলোচনা করতে পারবে। এশিয়ার দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি একেবারে কম। মোট রপ্তানি আয়ের মাত্র ৯ শতাংশ আসে পুরো এশিয়া থেকে। অথচ বাংলাদেশ এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত। এশিয়া থেকে প্রত্যাশিত বিনিয়োগও আসছে না। যদিও দেশের আমদানির প্রায় ৭৪ শতাংশ আসে এশিয়ার দেশগুলো থেকে। শীর্ষ সম্মেলন এবং মন্ত্রী ও কর্মকর্তা পর্যায়ের সভাগুলোতে বাংলাদেশ এ অনুযোগটিও উপস্থাপন করতে পারবে, যা এশিয়াতে রপ্তানি বৃদ্ধি ও এশিয়ার দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ সহজ করবে।
আসেম সদস্যদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব সুদৃঢ় হলে এশিয়া ও ইউরোপে উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। যা বিশ্ব-অর্থনীতি, রাজনীতি ও সমাজ বিকাশে উত্তর আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্য হ্রাস করবে। এশিয়া-ইউরোপ-উত্তর আমেরিকা একটি ত্রিভুজ শক্তিবলয়ে পরিণত হবে। এভাবে সমতাপূর্ণ বিশ্ব গড়ে উঠবে। যেখানে সব দেশই বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাবে। দেশে-দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দূরত্ব কমে আসবে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উত্তম ক্ষেত্র তৈরি হবে।
সমীরণ রায়: বাণিজ্য বিশ্লেষক।
samiৎon.ৎoy.1957@hotmail.com
No comments