এবারও ওহাইও যাঁর, হোয়াইট হাউস তাঁর? by মিজানুর রহমান খান

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সুয়িং স্টেট, অর্থাৎ দলীয় সমর্থনের বিবেচনায় দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতেই অনেক সময় জয়-পরাজয়ের চাবিকাঠি থাকে। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মিডওয়েস্ট অঞ্চলের তুলনামূলক ছোট অঙ্গরাজ্য ওহাইও। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঙ্গরাজ্যে না জিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার নজির নেই।


লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস বলেছে, ১৯৬০ সালে কেনেডি ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি ওহাইওতে হেরেও প্রেসিডেন্ট হন। এর পর থেকে প্রত্যেকে ওহাইও জিতেই তবে জাতীয় নির্বাচনে জিতছেন। সে কারণেই নিশ্চয়ই বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বিল মাইলাম ২ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরকে লিখেছিলেন, ‘ওহাইওর দিকে নজর রাখুন। এটাই চাবি।’ পত্রপত্রিকা আর টিভিতে বিশ্লেষকদের কণ্ঠেও সেই কথা। তা হলে কি এবারও ওহাইও যাঁর, হোয়াইট হাউস হবে তাঁর?
সোমবার মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলোচনা হলো। বহু বছর ধরে তাঁরা উভয়ে নির্বাচনী প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁরা বললেন, মাইলাম জ্যোতিষী হননি, তিনি যা বলেছেন, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। তবে ওহাইও জয় করবেন যিনি, তিনিই রাষ্ট্রপতি হবেন—এ নিশ্চয়তায় একটা ফাঁক আছে। কারণ, এ কথাটা রমনির জন্য যতটা অমোঘ সত্য, ওবামার জন্য তা নয়। ওবামা ওহাইও ছাড়াই প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। কিন্তু রমনিকে ওহাইও পেতেই হবে। তবে রমনির ওহাইও বাদে ২০ ইলেকটোরাল ভোটের রাজ্য পেনসিলভানিয়া পেলেও চলে। সে কারণেই রমনিকে রোববার সেখানে দেখা যায়। যদিও পূর্বাভাসমতে, এটি ওবামার দিকে ঝুঁকে আছে।
মার্কিন সরকারি ওই কর্মকর্তা সত্তরের দশকে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তিনি বললেন, রমনিকে যদি ওহাইও বাদ দিয়ে বাকি ছয়টি দোদুল্যমান রাজ্যের ৭১টি ভোটের সব দিয়েও দেওয়া হয় (যা বাস্তবে তিনি পাবেনও না), তা হলেও তাঁকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে ওহাইও ছাড়া চলবে না। ২৭০-এর বুড়ি ছুঁতে ওহাইও তাঁর লাগবেই।
এদিকে প্রচারণা শেষ হতে না হতেই আইনি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। ডেমোক্র্যাটরা ২৯ ভোটের দোদুল্যমান রাজ্য ফ্লোরিডায় আগাম ভোট নিয়ে একটি মামলা করেছেন। সেখানকার রাজ্য সরকার রিপাবলিকানদের। অন্যদিকে ওহাইর নির্বাচনী কর্মকর্তারাও আগাম ভোটের অনিয়ম নিয়ে মামলা ঠুকছেন। ২০০০ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে বুশ-গোর আদালতে যান ফ্লোরিডার ফল নিয়েই। ফ্লোরিডার ভোট পেয়েই বুশের ২৭১ হয়েছিল বলে রিপাবলিকানরা দাবি করেন এবং সুপ্রিম কোর্টে তা টিকে যায়।
এবারের নির্বাচনী বিতর্কে সবকিছু ছাপিয়ে দেশের সার্বিক অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এক নম্বর ইস্যুতে পরিণত হয়। এরপর অভিবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, করারোপ, গৃহসংস্থান, শিক্ষা, অধ্যয়ন ঋণ প্রভৃতি বিষয় ভোটারদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে। লক্ষণীয় যে, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় বৈদেশিক নীতি আগের তুলনায় অনেক নিষ্প্রভ থেকেছে।
নির্বাচনে ব্যয়ের দিক থেকে এবার নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। এটা হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার নির্বাচন, যা ২০০৮ সালের খরচের চেয়ে ১২ গুণ বেশি।

No comments

Powered by Blogger.