ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন কাজাখ নারীরা
মধ্য
এশিয়ার প্রজাতন্ত্র কাজাখস্তানের রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে ধর্ষণ কিংবা যৌন
হয়রানির প্রশ্নে নারীরা কথা বলতেই ভয় পান। কিন্তু সেই সমাজেই শুরু হয়েছে
নীরবতা ভাঙার এক আন্দোলন। সাইনা রাইসোভাকে গত বছরের যে দিনে দুই ব্যক্তি
ধর্ষণ করে সেই দিনটির কথা মনে করতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
ধর্ষণকারীদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি চারতলার ওপর থেকে মাটিতে
ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার কোমর ও পায়ের গোড়ালি ভেঙে যায়। কিন্তু সে দিন
প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি বলছিলেন, "প্রথম যে কথাটা আমার মাথায় এসেছিল তা
হলো আত্মহত্যা। আমার মনে হয়েছিল এই জীবন রেখে আর কী হবে?" তার দেহের ক্ষত
মিলিয়ে এলেও ওই অপরাধের জন্য ন্যায়বিচার না পাওয়ার যে বেদনা সেটা তার
এখনও আছে। কাজাখ সমাজে যৌন নিপীড়নের কথা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করাকে এখনও
লজ্জার ব্যাপার বলে মনে করা হয়। বিবিসির সাথে আলাপকালে তার ধর্ষণের কথা
গোপন রাখার জন্য তাকেও অনেক চাপ সইতে হয়েছে বলে সাইনা জানান। "আমাকে শুধু
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথেই লড়াই করতে হয়নি," বলছিলেন তিনি, "আমাকে লড়তে
হয়েছে নিজের সাথে, আত্মীয়স্বজনের সাথে। কারণ তারা স্তম্ভিত হয়ে
পড়েছিলেন। তারা বিষয়টা ধরতে পারছিলেন না।" "পুরো ব্যাপারটা আমার পরিবার
লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল।
এটা ছিল তাদের জন্য চরম লজ্জার ব্যাপার।" ধর্ষকদের
বিরুদ্ধে সাইনা যে মামলা করেছিলেন তার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় এবং
ধর্ষকরা মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় সাইনা গত বছর এই
ঘটনাটি সবার সামনে ফাঁস করে দেন। এরপর গত জানুয়ারি মাসে আদালত একজনকে ১০
বছর কারাদণ্ড দেয়। দ্বিতীয় অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনও ফেরার। "ধর্ষণের ঘটান
ঘটলে অনেকেই নারীকেই দোষ দেয়," সাইনা বলছেন, "তারা বলে তোমার সেখানে
যাওয়া উচিত হয়নি। ওই লোকের সাথে কথা বলা উচিত হয়নি, ইত্যাদি।" সাইনার
মতোই যৌন নিপীড়নের শিকার অনেক নারী এখন কাজাখস্তানের 'নীরব থাকবো না"
নামের এক আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। এই সংস্থাটি গড়ে তোলা হয় ২০১৬ সালে।
সংস্থাটি এপর্যন্ত ১৯ জন নারীকে আদালতে তাদের ওপর নিপীড়নকারীদের বিরুদ্ধে
মামলা চালাতে সাহায্য করেছে। এই আন্দোলনের হ্যাশট্যাগ এপর্যন্ত এক লক্ষবার
ব্যবহার করা হয়েছে। দিনা স্মাইলোভা এই আন্দোলনের এক নেতা। তার বয়স যখন ২০
বছর তখন তাকে ধর্ষণ করা হয়। এই কথা তিনি ফেসবুকে প্রকাশ করার পর এই 'নীরব
থাকবো না' আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তার পোস্ট নিয়ে কাজাখস্তানের সোশাল
মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। বহু লোক তার পোস্ট শেয়ার করেন, অনেকেই ঐ
ঘটনার প্রতিবাদ জানান। কেউ কেউ সাহায্য করারও প্রস্তাব দেন। দিনা বলছেন,
তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য হচ্ছে এই প্রশ্নে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গীতে পরিবর্তন
ঘটানো।"
সমাজে লজ্জার ধারণা এরকম যে সবাই ধর্ষণের শিকার নারীকেই খারাপ বলে
মনে করে - ধর্ষককে নয়,"তিনি বলছেন, "আমি বলবো ধর্ষিতর লজ্জা পাওয়ার কোনো
কারণ নেই। ধর্ষকের লজ্জা পাওয়া উচিত।" সরকারি হিসেব মতে, ২০১৭ সালে
কাজাখস্তানে যৌন সহিংসতার ২২৫০টি কেস রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা
বলছেন, আসলে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। কারণ ধর্ষণ বা অন্য কোন যৌন
নিপীড়নের শিকার নারীরা পুলিশের কাছে যেতে চান না। অন্য ধরনের আইনগত
জটিলতাও রয়েছে। কাযাখস্তানের ফৌজদারি আইন অনুযায়ী, যৌন সহিংসতার মামলায়
দুই পক্ষ একমত হলে মামলা তুলে নেয়া যায় এবং তখন তা অপরাধ হিসেবে বিবেচনা
করা হয় না। তখন ঐ আইনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ভিকটিম নারীকে অর্থের
প্রলোভন দেখানো হয় কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হয় বলে সমালোচকরা বলছেন।
No comments