শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন দুই বছরেও নেই দৃশ্যমান অগ্রগতি: কর্মসংস্থান হবে ৩০ হাজার লোকের by ইমাদ উদ দীন
উদ্বোধনের
২ বছর। কিন্তু নেই কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি। এ নিয়ে অনেকটা হতাশ স্থানীয়
বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। শুরু থেকে ভূমি অধিগ্রহনের জায়গার মালিকানা নিয়ে
নানা জালিয়াতির অভিযোগ। জায়গার ভূয়া মালিক সেজে একটি প্রভাবশালি চক্র
হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। ওদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুয়েছেন প্রকৃত
ভূমি মালিকরা। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও প্রশাসনের কিছু দূর্নীতি পরায়ন
কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় ওই চক্রটির এখনো শকুনি দৃষ্টি শ্রীহট্র ইকোনমিক
জোনের উপর। ইকোনমিক জোনের প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা সুযোগ পেলে পুরোটাই
গিলে খেতে চায় তারা। এমনটিই অভিযোগ স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ ভোক্তভোগি মানুষের।
মৌলভীবাজার জেলাবাসীর প্রত্যাশিত ইকোনমিক জোন নিয়ে বেকারত্ব ঘুছানোর
স্বপ্ন ছিল স্থানীয় বেকারদের। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকে চোখের সামনে ঘটে
যাওয়া নানা দূর্নীতিতে হতাশ হচ্ছেন তারা। জানা যায় বিনিয়োগে ও উৎপাদনের
কাঙ্খিত পথে দেশকে এগিয়ে নিতে ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা সারা দেশে এক সাথে ১০টি ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন করেন। তার মধ্যে
সিলেট বিভাগের মিলনস্থল মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরে ৩৫২.১২ একর জায়গার
উপর (মোট ৩৫২.১২ একর জায়গার মধ্যে স্থাপন হওয়া ইপিজেডের ২৩৯.৮৭ একর ভূমি
ব্যক্তি মালিকানাধীন) শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর
থেকেই ইকোনমিক জোন নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এজেলার শিক্ষিত বেকাররা
আশান্বিত হন। কিন্তু শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহনের জায়গা নিয়ে ঘটে যায় তুলকালাম
কান্ড। সরকারদলের স্থানীয় কিছু নেতা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের
একটি সিন্ডেকেট ভূয়া মালিক সেজে হাতিয়ে নেয় টাকা। এতে শুরুতেই হুছুট খান
স্থানীয় বাসিন্দারা। সরজমিনে স্থানীয়দের সাথে কথা হলে জানা যায় উদ্বোধনের
দুই বছর পার হলেও এখনও কাজের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো নয়। তারা
জানালেন প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের জন্য একটি টেন্ডার হলেও সেটাতেও হয়েছে
ভাগভাটোরা। অভিযোগ উঠেছে এই ভাগভাটোরায় জড়িত আছেন সরকার দলের গ্রাম থেকে
শুরু করে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় নেতারাও। একটি সূত্র জানায়
নিয়মিতভাবে নেতাদের পকেটে যাচ্ছে ভাগভাটোরার টাকা। মাটি ভরাটের নামে
অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে তুলা হচ্ছে বালু। এখানেও গড়ে
উঠেছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো টেন্ডার না নিয়ে দলের
জোরে চলছে রমরমা বাণিজ্য। তাদের এমন বেপরোয়া অবৈধ বাণিজ্যে কুশিয়ারা নদীর
তীরবর্তী বাসিন্দারা ঝুঁকিতে পড়েছেন। বর্ষা মৌসুম এলেই ওই সকল স্থানে
কুশিয়ারা নদীর পাড় ভেঙ্গে তীরবর্তী গ্রাম গুলো প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায়
পড়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান ভূমি অধিগ্রহণে শুরু থেকে চরম অনিয়ম হয়েছে।
একারনে ভোগান্তিতে পড়েন প্রকৃত ভূমি মালিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে
অধিগ্রহণকৃত জায়গার শতক প্রতি নির্ধারণ করে দেয়া হয় ২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন অজুহাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের কতিপয়
কর্মকর্তারা ভূমি মালিকদের কাছ থেকে বড় অংকের ঘুষ ও কমিশন আদায় করেন।
অনেকেই ভুয়া মালিক সেজে অধিগ্রহণ অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ভূয়া
কাগজপত্র দেখিয়ে অন্য ব্যক্তির মালিকানাকৃত জায়গার টাকা উত্তোলন করে নেন।
ভূক্তভোগি মজলিশপুর গ্রামের ভূমি মালিক শামীম আহমদ জানান অধিগ্রহণকৃত
জায়গার টাকা উত্তোলনের জন্য আবেদন করলে তিনি জানতে পারেন ওই ভূমির টাকা
উত্তোলন করা হয়ে গেছে। তারমত একই অভিযোগ স্থানীয় একাধিক ক্ষতিগ্রস্থদের।
জানা যায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই অধিগ্রহণকৃত ভূমি মালিকদের ভূমির
মূল্য পরিশোধ করার জন্য ২শ’ ৯২ কোটি ৫ লক্ষ ৬৫ হাজার ৩৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া
হয়। কিন্তু বরাদ্ধকৃত টাকা আত্মসাতের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকের
কার্যালয়ের এলএ শাখার কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ
শেরপুর ইপিজেড এলাকাকে ঘিরে গজিয়ে উঠে একটি প্রতারক সিন্ডিকেট চক্র। এই
চক্রটি নানা ভাবে স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই
চালায় তাদের প্রতারণা। আর হাতিয়ে নেয় ভুমি মালিকদের কোটি কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বৃহৎ ৫টি প্রতিষ্ঠান ১শ ৩০ কোটি ১১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া আরোও কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহী। এতে বার্ষিক ৩৫২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রপ্তানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। ইকোনমিক জোনটি চালু হওয়ার পর স্থানীয়দের বেকারত্ব অনেকটা কমে আসবে। প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে মাটি ভরাটসহ অনান্য কাজের ধীরগতি আর ওই প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা আতœসাতে উৎপেতে থাকা প্রভাবশালী সিন্ডেকেট চক্র এনিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। তবে গ্যাস সংযোগ দিতে ইতি মধ্যে জালালাবাদ গ্যাস কাজ শুরু করেছে। গ্যাসভিত্তিক শিল্পের জন্য শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ইউপি সদস্য অভিযোগ করে বলেন, জায়গা অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের ভাগভাটোরার বাণিজ্যের সাথে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য পরোক্ষভাবে জড়িত। এই অবৈধ বাণিজ্য অনেকটা তাদের ইশারায় হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেই তা জানেন কিন্তু ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না। তিনি আরোও বলেন, আওয়ামীলীগের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীরা অধিগ্রহণকৃত জায়গা অন্যের নামে রদবদ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
এবিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন মাটি ভরাটের কাজ চলছে। বেজার মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত জায়গা ইতি মধ্যে লিজ দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেজার প্রকল্প পরিচালক পরিদর্শনে আসার পর হয়তো তিনি সম্ভাব্য একটা তারিখ দিতে পারেন। তবে এখন সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না। অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি পানি উন্নয় বোর্ড থেকে লিজ নিয়ে ওরা বালি তুলছে। অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমার যোগদানের পর থেকে এরকম কোনো অনিয়ম হয়নি। যদি কোনো মালিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে উনাকেই টাকা দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে বৃহৎ ৫টি প্রতিষ্ঠান ১শ ৩০ কোটি ১১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া আরোও কয়েকটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহী। এতে বার্ষিক ৩৫২ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রপ্তানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার কথা। ইকোনমিক জোনটি চালু হওয়ার পর স্থানীয়দের বেকারত্ব অনেকটা কমে আসবে। প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে এখানে অনেকের কর্মসংস্থান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে মাটি ভরাটসহ অনান্য কাজের ধীরগতি আর ওই প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত টাকা আতœসাতে উৎপেতে থাকা প্রভাবশালী সিন্ডেকেট চক্র এনিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে। তবে গ্যাস সংযোগ দিতে ইতি মধ্যে জালালাবাদ গ্যাস কাজ শুরু করেছে। গ্যাসভিত্তিক শিল্পের জন্য শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্থান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ইউপি সদস্য অভিযোগ করে বলেন, জায়গা অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাটের ভাগভাটোরার বাণিজ্যের সাথে হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার কয়েকজন সংসদ সদস্য পরোক্ষভাবে জড়িত। এই অবৈধ বাণিজ্য অনেকটা তাদের ইশারায় হচ্ছে। স্থানীয় অনেকেই তা জানেন কিন্তু ভয়ে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না। তিনি আরোও বলেন, আওয়ামীলীগের জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীরা অধিগ্রহণকৃত জায়গা অন্যের নামে রদবদ করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
এবিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম বলেন মাটি ভরাটের কাজ চলছে। বেজার মাধ্যমে অধিগ্রহণকৃত জায়গা ইতি মধ্যে লিজ দেয়া হয়েছে। কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেজার প্রকল্প পরিচালক পরিদর্শনে আসার পর হয়তো তিনি সম্ভাব্য একটা তারিখ দিতে পারেন। তবে এখন সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা যাচ্ছে না। অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি পানি উন্নয় বোর্ড থেকে লিজ নিয়ে ওরা বালি তুলছে। অধিগ্রহণকৃত জায়গায় অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, আমার যোগদানের পর থেকে এরকম কোনো অনিয়ম হয়নি। যদি কোনো মালিক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে উনাকেই টাকা দেয়া হবে।
No comments