স্বজনের অশ্রুভেজা কফিন
বনানীর
আর্মি স্টেডিয়ামে কান্নার রোল উঠেছিল সোমবার। সন্তানহারা বাবা-মা, বাবা-মা
হারা সন্তানসহ স্বজনহারাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠেছিল সেখানকার বাতাস। এ
দৃশ্য সত্যিই বেদনাদায়ক। শুধু স্বজনদেরই নয়, সারা দেশের মানুষের মন ছেয়ে
গিয়েছিল বিষাদে। কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায়
নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে শনাক্ত হওয়া ২৩ জনের মরদেহ এদিন দেশে আনা হয়
কফিনবন্দি অবস্থায়। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া লাশগুলো বিকালে বাংলাদেশ
বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ উড়োজাহাজে কাঠমান্ডু থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছে বিকাল
৪টায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিহতদের মরদেহ আনুষ্ঠানিকভাবে
গ্রহণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় বিমান
পরিবহনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বিকাল ৫টা ১০
মিনিটে নিহতদের লাশবাহী গাড়িগুলো আর্মি স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছে। সেখানে আগে
থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনরা। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে
নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে
সম্পন্ন হয় জানাজা। জানাজা শেষে লাশগুলো যখন তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
করা হয় তখনই সৃষ্টি হয় সেই হৃদয়বিদারক ঘটনা। কফিন জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে
ওঠেন স্বজনরা। এ কষ্ট অসহনীয়- যার যায় সে-ই তা বোঝে। ইউএস-বাংলা
এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের প্রতি রইল আমাদের
গভীর সমবেদনা। দুর্ঘটনায় যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের দ্রুত
আরোগ্য কামনা করছি আমরা। জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহত আরও এক বাংলাদেশি
যাত্রীর লাশ শনাক্ত করা গেছে সোমবার। তার লাশ বুধবার দেশে আনার কথা।
তবে
আরও দু’জন বাংলাদেশির লাশ এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
তাদের স্বজনরাও নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন আকুল হয়ে। আমরা আশা করব, ডিএনএ
পরীক্ষার মাধ্যমে বাকি দু’জনের লাশও শিগগির শনাক্ত করা সম্ভব হবে এবং দেশে
ফিরিয়ে আনা হবে তাদের মরদেহ। মৃত্যু অবধারিত। এটি প্রকৃতির নিয়ম। এ নিয়মের
ব্যত্যয় হওয়ার সুযোগ নেই। মানুষ তাই মেনে নিয়েছে প্রকৃতির অলঙ্ঘনীয় নিয়মটি।
তবে সবাই চায় স্বাভাবিক মৃত্যু। অস্বাভাবিক মৃত্যু কারও কাম্য নয়।
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু অস্বাভাবিক। আর বিমান দুর্ঘটনা কিছুটা বেশি
অস্বাভাবিক। কারণ পৃথিবীতে অন্যান্য দুর্ঘটনার তুলনায় বিমান দুর্ঘটনার
প্রবণতা কম। গত ৩৪ বছরের মধ্যে দেশের বিমানের বড় ধরনের দুর্ঘটনা এটাই
প্রথম। তাই হয়তো এ নিয়ে আলোচনা, কৌতূহল এবং নিহতদের জন্য শোকের মাত্রাও
বেশি। তবে সেই সঙ্গে এটিও কাম্য- এমন দুর্ঘটনা আর যেন একটিও না ঘটে। এভাবে
কারও মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না। মানুষের ভ্রমণ হবে নিরাপদ। সেটা নিশ্চিত
করবে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি পক্ষ। এজন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তার
সবটাই করতে হবে। দেশে বেসরকারি বিমান চলাচল ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটেছে,
এটি ইতিবাচক। তবে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোকে ব্যবসা প্রসারের পাশাপাশি
যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের দুর্ঘটনা
ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে
হবে।
No comments