মৃত্যুর কাছ থেকে ফেরা স্বর্ণার বর্ণনা: মাটিতে পড়েই ভেঙে যায় বিমানটি by মহিউদ্দিন অদুল
সৈয়দা
কামরুন্নাহার স্বর্ণার প্রথম বিমান ভ্রমণ ছিল গত ১২ই মার্চ।
স্বামী-স্বজনদের সঙ্গে নেপাল ঘুরতে যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরে ভেঙে যায়
স্বজনদের নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন। তবে স্বর্ণা অনেকটা ভাগ্যবতী।
দুর্ঘটনায় ৫১ জন প্রাণ হারালেও বেঁচে যান স্বর্ণা ও তার স্বামী মেহেদী
হাসান। তারা দুজনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
স্বর্ণা গতকাল মানবজমিনের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন। বলেন, ঢাকা থেকে
বিমান ওড়ার সময় সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল বলে মনে হয়। বিমানটি নেপালের ত্রিভুবন
বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় ঝাঁকুনি খেয়েছে বলে মনে হলো। প্রচণ্ড ঝাঁকুনি।
কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তা স্বাভাবিক, না অস্বাভাবিক ছিল তাও বুঝতে
পারিনি। তিনি বলেন, একপর্যায়ে বিমানটি ডিগবাজি দেয়ার মতো করে আছড়ে পড়ে।
আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে ধোঁয়ায়। ভেঙে যায় বিমানটি। বিমানের প্রায় পেছনেই বসেছিলেন
স্বর্ণারা। তখনই বুঝতে পারেন বিমানটি দুর্ঘটনার শিকার। ততক্ষণে স্বর্ণা
নিজেকে আবিষ্কার করেন বিমানের পেছনের দিকে তিনি একটি কেবিন বক্সের পেছনে
আটকা অবস্থায়। সেখান থেকে আর সরতে পারছিলেন না। ধোঁয়া গ্রাস করছিল তাকে।
একপর্যায়ে ধোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা।
ততক্ষণে বিমানের একটি ভাঙা অংশ দিয়ে বের হয়ে পড়েন তার স্বামী মেহেদী হাসান।
চলে যান বাইরে। মেহেদী হাসানের ফুফাতো ভাই ফারুক হাসান প্রিয়কের স্ত্রী
অ্যানি হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যান একই পথ ধরে। তার শরীরের একটা অংশ বিমানের
ভেতরে থাকতেই মেহেদী হাসান তাকে টেনে বের করে নেন। তখনও বিমানের ভেতরে
ছিলেন স্বর্ণা। এরপর মেহেদী আবার বিমানের ভেতরে ঢুকে একটি কেবিন বক্সের
পেছনে আটকা পড়া স্বর্ণাকে টেনে তোলেন। তখন তিনি প্রায় জ্ঞান হারানোর
অবস্থা।
স্বর্ণা বলেন, আমি ধোঁয়ায় ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে যেন আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছিল। আমার স্বামী তখনই আমাকে বের না করতে পারলে আমি হয়তো চিরদিনের মতো হারিয়ে যেতাম। আমাকে বের করার সময় আবছাভাবে প্রিয়ক ভাইকে বিমানের চেয়ারেই বসে থাকতে দেখি। তার শ্বাস কষ্টের সমস্যা ছিল। হয়তো তিনি ধোঁয়ার প্রথম ধাক্কাটাই সহ্য করতে পারেননি। তিন টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানের একটি ফাটল দিয়ে আমরা বের হয়ে যেতে পারলেও প্রিয়ক ভাই আর প্রিয়ন্ময়ী বের হতে পারেনি। অন্তত ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই হয়তো এসব ঘটনা ঘটে যায়। আমাকে বের করার পরেই ঘটে বড় বিস্ফোরণ। বিমানে আগুন ধরে যায়। তখন ভেতরে থাকা অন্যদের বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।
স্বর্ণা মানবজমিনকে বলেন, আমার কোমরে ও পায়ে আঘাত পেয়েছি। তবে আল্লাহর রহমতে পুড়ে যায়নি। এখনও ব্যথা আছে। তার স্বামী মেহেদী হাসানের বিষয়ে বলেন, আমাকে ও অ্যানি ভাবিকে বের করার সময় ঘাড়ে ও বুকে ব্যথা পেয়েছে। এত দিন ব্যথা ছিল। তবে সম্প্রতি বুকে ব্যথাটা বেড়েছে। তাকে কেবিন থেকে মেডিকেল টেস্টের জন্য নেয়া হয়েছে।
তার পাশের অন্য এক কেবিনে রয়েছেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শাহরিন আহমেদ। গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায় তিনি শুয়ে আছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ফুফু বকুল আকতার। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই শাহরিন বলেন, আগের চেয়ে ভালো লাগছে। তবে শরীরে বার্ণ আছে তো ইনফেকশনের ভয়ে আছি। বুধবার অপারেশন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।
তার ফুফু বকুল বলেন, প্রথম প্রথম তাকে যখন আনা হয় তখন যন্ত্রণায় ছটফট করতো। এখন কিছুটা স্থিরতা এসেছে।
এর বিপরীত দিকের কেবিনে (৬০১) গতকাল দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলেন শেখ রাশেদ রুবায়েত। তার শাশুড়ি ছিলেন সঙ্গে। তিনি বলেন, তার পায়ে, পাঁজরের হাড়ে, পিঠে ও কোমরে আঘাত রয়েছে। ব্যথা এখনও আছে। পাশের ৬০২ নম্বর কেবিনে, মো. শাহীন ব্যাপারী। তার শ্বাস কষ্ট বাড়লে গতকাল দুপুরের দিকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এছাড়া রয়েছেন কবির হোসেনও। ওই ছয়জন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
এদিকে নিহত প্রিয়কের স্ত্রী ও শিশু প্রিয়ন্মীর মা আলমুন নাহার অ্যানিকে সোমবার লাশ দাফনের আগে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে। গতকাল গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন হয়েছে প্রিয়ক ও প্রিয়ন্মীর লাশ।
অন্যদিকে আজ বুধবার শনাক্ত না হওয়া বাংলাদেশের অপর তিন নাগরিক ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত দেশে আনা হচ্ছে। ডিএনএ টেস্টের পরই শনাক্ত হবে নেপালে থাকা পিয়াস রায়, মো. হাসান রকিবুল ও মোল্লা আলিফুজ্জামানের লাশ।
স্বর্ণা বলেন, আমি ধোঁয়ায় ধীরে ধীরে জ্ঞান হারাচ্ছিলাম। ধীরে ধীরে যেন আমার অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছিল। আমার স্বামী তখনই আমাকে বের না করতে পারলে আমি হয়তো চিরদিনের মতো হারিয়ে যেতাম। আমাকে বের করার সময় আবছাভাবে প্রিয়ক ভাইকে বিমানের চেয়ারেই বসে থাকতে দেখি। তার শ্বাস কষ্টের সমস্যা ছিল। হয়তো তিনি ধোঁয়ার প্রথম ধাক্কাটাই সহ্য করতে পারেননি। তিন টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানের একটি ফাটল দিয়ে আমরা বের হয়ে যেতে পারলেও প্রিয়ক ভাই আর প্রিয়ন্ময়ী বের হতে পারেনি। অন্তত ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই হয়তো এসব ঘটনা ঘটে যায়। আমাকে বের করার পরেই ঘটে বড় বিস্ফোরণ। বিমানে আগুন ধরে যায়। তখন ভেতরে থাকা অন্যদের বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।
স্বর্ণা মানবজমিনকে বলেন, আমার কোমরে ও পায়ে আঘাত পেয়েছি। তবে আল্লাহর রহমতে পুড়ে যায়নি। এখনও ব্যথা আছে। তার স্বামী মেহেদী হাসানের বিষয়ে বলেন, আমাকে ও অ্যানি ভাবিকে বের করার সময় ঘাড়ে ও বুকে ব্যথা পেয়েছে। এত দিন ব্যথা ছিল। তবে সম্প্রতি বুকে ব্যথাটা বেড়েছে। তাকে কেবিন থেকে মেডিকেল টেস্টের জন্য নেয়া হয়েছে।
তার পাশের অন্য এক কেবিনে রয়েছেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শাহরিন আহমেদ। গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখা যায় তিনি শুয়ে আছেন। তার সঙ্গে রয়েছেন ফুফু বকুল আকতার। কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই শাহরিন বলেন, আগের চেয়ে ভালো লাগছে। তবে শরীরে বার্ণ আছে তো ইনফেকশনের ভয়ে আছি। বুধবার অপারেশন। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।
তার ফুফু বকুল বলেন, প্রথম প্রথম তাকে যখন আনা হয় তখন যন্ত্রণায় ছটফট করতো। এখন কিছুটা স্থিরতা এসেছে।
এর বিপরীত দিকের কেবিনে (৬০১) গতকাল দুপুরে ঘুমিয়ে ছিলেন শেখ রাশেদ রুবায়েত। তার শাশুড়ি ছিলেন সঙ্গে। তিনি বলেন, তার পায়ে, পাঁজরের হাড়ে, পিঠে ও কোমরে আঘাত রয়েছে। ব্যথা এখনও আছে। পাশের ৬০২ নম্বর কেবিনে, মো. শাহীন ব্যাপারী। তার শ্বাস কষ্ট বাড়লে গতকাল দুপুরের দিকে নেয়া হয় আইসিইউতে। এছাড়া রয়েছেন কবির হোসেনও। ওই ছয়জন এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
এদিকে নিহত প্রিয়কের স্ত্রী ও শিশু প্রিয়ন্মীর মা আলমুন নাহার অ্যানিকে সোমবার লাশ দাফনের আগে গ্রামের বাড়িতে নেয়া হয়েছে। গতকাল গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে দাফন হয়েছে প্রিয়ক ও প্রিয়ন্মীর লাশ।
অন্যদিকে আজ বুধবার শনাক্ত না হওয়া বাংলাদেশের অপর তিন নাগরিক ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত দেশে আনা হচ্ছে। ডিএনএ টেস্টের পরই শনাক্ত হবে নেপালে থাকা পিয়াস রায়, মো. হাসান রকিবুল ও মোল্লা আলিফুজ্জামানের লাশ।
No comments