ফয়জুরের বন্ধু সোহাগ জাফর ইকবালের ওপর হামলা সবই জানতো by ওয়েছ খছরু
ফয়জুর
ও সোহাগ। দু’জনে বন্ধু। এই বন্ধুত্বের বয়স তিন থেকে চার বছর। ফয়জুর
পরিবারের অজান্তে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতো। সোহাগও তাই করতো। দু’জনই ছিল
চুপচাপ স্বভাবের। পরিবার থেকে তারা ছিল প্রায় বিচ্ছিন্ন। নামাজ পড়তো। একা
একা ঘুরে বেড়াতো। সারাক্ষণ মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তবে বেশিরভাগ সময়
ফয়জুর ও সোহাগ একসঙ্গে থাকতো। ফয়জুর আটকের পরপরই সোহাগ গ্রেপ্তার এড়াতে
গা-ঢাকা দেয়। সোহাগকে হন্য হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। আটকের পর ফয়জুর পুলিশের কাছে
সোহাগের নাম বলেছিল সুমন। পরে আসল নাম সোহাগ বলে পরিচয় দেয়। ঠিকানাও বলে
দেয়। ফয়জুরের রিমান্ড শেষ হওয়ার দিনই পুলিশ নগরীর কালিবাড়ি বাসা থেকে
সোহাগকে গ্রেপ্তার করেছে। ফয়জুর ইতিমধ্যে পুলিশের কাছে তার কাছের বন্ধু
সোহাগের কথা স্বীকার করেছে। এবং এই ঘটনা সোহাগ জানতো বলে জানিয়েছে। জাফর
ইকবালের উপর হামলা- তারা দুই বন্ধুর প্লান ছিল বলে পুলিশের কাছে স্বীকার
করেছিল ফয়জুর। সোহাগকে সোমবার আদালতে তুলে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এখন সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও জালালাবাদ
থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সোহাগের তথ্য তারা ফয়জুরের মুখ থেকেই
পেয়েছেন। সোহাগকেও ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা মামলার আসামি করেছে পুলিশ।
সোহাগের কাছ থেকে তথ্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি। শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ফয়জুরদের বাড়ি বেশি
দূর নয়। শেখপাড়া হবে এক মাইলের মতো। আবার ক্যাম্পাস থেকে সোহাগের বাড়ির
দূরত্বও হবে এক কিলোমিটারের মতো। ফয়জুরের বাসা ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে ও
সোহাগের বাড়ি পূর্ব দিকে। সোহাগের আদি বাড়িও দিরাই উপজেলায়। তার পিতা
ছাদিকুর রহমান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। বাড়ি রাজানগর ইউনিয়নের উমেদনগর
গ্রামে। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, বেশি দূর পড়ালেখা করেনি সোহাগও। অষ্টম
শ্রেণিতে উঠে পড়ালেখা ছেড়ে দেয়। এরপর সে চলে আসে সিলেট শহরে। গ্রামে থাকতে
সোহাগ ছিল বেশ ডানপিটে। এলাকায় বাউল গানসহ খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকতো সে।
কিন্তু সিলেটে আসার পর বদলে যায় সোহাগের জীবনধারা। এখন সে পাঁচওয়াক্ত নামাজ
পড়ে। এলাকায় ফয়জুর ও সোহাগ প্রায় সময় যেতো। তারা কাপড়ের ব্যবসা করতো বলে
পরিবারকে জানাতো। প্রায় সময় কাপড় নিয়ে গিয়ে তারা ফেরি করে বিক্রি করতো।
এরপর চলে আসতে সিলেটে। বাড়িতে একা একা থাকলে সোহাগ কারও সঙ্গে মিশতো না।
নিজ ঘরেই দিন কাটাতো। আর মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। একই চরিত্র ছিল
ফয়জুরের। শাবি ক্যাম্পাসে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার পরপরই বাড়ি চলে
যায় সোহাগ। কিন্তু পরে ফিরেও আসে। রাতে সে বাড়ি থাকেনি। এরপর থেকে সোহাগ
সিলেট নগরীতেই ছিল বলে জানা যায়। পুলিশ জানায়, ফয়জুরের সঙ্গে সোহাগের
বন্ধুত্বের সম্পর্কের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে সোহাগ। তবে এখনো
সে পুরো তথ্য দেয়নি। তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত কর্মকর্তা
জানিয়েছেন, ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে সোহাগের সম্পৃক্ততার
বিষয়টি পরিষ্কার হচ্ছে। এক্ষেত্রে সোহাগের প্ররোচনা থাকতে পারে। সেটি আরো
জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাবে। এদিকে গতকাল সিলেটের আদালতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত
থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে ৮ দিনের রিমান্ডে থাকা ফয়জুরের বড়
ভাই এনামুল হাসান। সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের
বিচারক হরিদাস কুমারের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সে ওই তথ্য জানায়। রিমান্ড
শেষে গতকাল দুপুরে মামলার আইও ওসি শফিকুর রহমান তাকে প্রথমে সিলেটের মুখ্য
মহানগর হাকিম আদালতে তোলেন। ওখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তাকে নিয়ে যায়
বিচারিক আদালতে। সেখানে এনামুল শাবি ক্যাম্পাসে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার
ঘটনায় জবানবন্দি দেয়। বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত এনামুল আদালতে প্রায় ২ ঘণ্টা
জবানবন্দি দেয়। বিকেল সোয়া ৪টায় জবানবন্দি গ্রহণের পর বেরিয়ে এসে সহকারী
কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমুল্য ভুষণ বড়ুয়া সাংবাদিকদের জানান, এনামুল স্বীকার
করেছে যে সে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিল। হামলার পরপরই
ফয়জুর ধরা পড়ে যাওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে পালায়। ৩রা মার্চ বিকেলে সে নিজ গ্রামে
থেকেই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছিল। কিন্তু যখন ফয়জুর ধরা পড়ে তখন সে বাড়ি চলে
যায়। সেখানে গিয়ে পিতা-মাতাকে ঘটনাটি জানায়। এরপর সে সবাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে
বেরিয়ে পড়ে। ওই রাতেই এনামুল সিলেট থেকে পালায়। ঘটনার চারদিন পর পুলিশ
তাকে গাজীপুর থেকে আটক করে। এনামুল পুলিশকে জানিয়েছে, হামলার আগে ফয়জুরই
তার কাছে মোবাইল ফোন ও ট্যাব দিয়েছিল। রোববার ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে ফয়জুরও
অনেক কিছু পরিষ্কার করেছে। ওই সময় সে জানিয়েছিল- ড. জাফর ইকবালকে হত্যার
উদ্দেশ্যেই তার ওপর হামলা চালিয়েছে।
No comments