শেষ ঠিকানা ভাইভা বোর্ড by হাফিজ মুহাম্মদ
আনিসুজ্জামানের
চোখে অন্ধকার। ভবিষ্যৎ কালো মেঘে ঢাকা। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও
বেকারের বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে। তার প্রয়োজন একটি চাকরির। বলেন,
মেধার জোরেই চাকরি চাই। কিন্তু মেধা দিয়ে কতটুকু যাওয়া যায়? দীর্ঘ
অভিজ্ঞতায় আনিসুজ্জামান বলেন, মামা-খালুই এখন মেধা, নইলে টাকা-পয়সা। আমার
এসবের কিছুই নেই। এ পর্যন্ত তিনবার শুধু বিসিএস পরীক্ষায় ভাইভা দিয়েছি।
একাধিকবার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু সান্ত্বনা
শুধু ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়া। এটাই আমার শেষ ঠিকানা। এটাই আমার মেধা
আর যোগ্যতার ফসল। শেষবার বিসিএস ভাইভায় নন ক্যাডার সিরিয়ালে নাম এসেছে।
কিন্তু এখনো পোস্টিং দেয়নি। এটাও প্রায় দুই বছর হলো। এভাবেই চাকরি না
পাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন টাঙ্গাইলের মো. আনিসুজ্জামান। কথা বলার
সময় তার দুই চোখ পানিতে ছলছল করছিল। বুকের দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনিস বলেন, ২০১১
সালে প্রথম বিসিএসে অংশ নিই। সেবার প্রিলিতে টিকলেও লিখিত পরীক্ষায় বাদ
পড়ে যাই। এরপরের বার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভাইভা বোর্ড পর্যন্ত যাই।
আমার আশা ছিল সাধামাটা। শিক্ষক হওয়ার ব্রত নিয়ে প্রথম পছন্দ দিয়েছিলাম
শিক্ষা ক্যাডার। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনায় ভাইবা বোর্ড উৎরাতে পারিনি। এর
পরের বারও একই কাহিনী। তৃতীয়বার যখন বিসিএসে ভাইভা দিতে যাই, স্বপ্ন ছিল
এবার কোনো না কোনো ক্যাডার পাবই। কিন্তু ভাইভার আগেই ঘটে যায় অঘটন। পুলিশ
ভেরিফিকেশনে আটকে যায় আমার ফাইল। আনিস জানান, এখন পুলিশ ভেরিফিকেশন মানে
নানা ঝামেলা, হয়রানি। সরকারি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে নিদৃষ্ট
ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়। তারা যদি শত্রুতা করেও কোনো ভুল তথ্য দেয়,
সেটাই বিবেচ্য হয়। আমার ক্যাডার না হওয়ার পথের কাঁটা পুলিশ ভেরিফিকেশন।
সমস্যটা হয় মূলত এখান থেকেই। রাজনীতির সঙ্গে আমার কোনো দিন বিন্দুমাত্র
সম্পর্ক ছিল না। তার পরও স্থানীয় এক নেতা আমাকে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কর্মী
বলে জানিয়ে দেন। যার কারণে আমার ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। আনিস
বলেন, একদিকে সরকারি চাকরির জন্য একের পর এক অপেক্ষা। অন্যদিকে বয়সের চাকা
ঘুরছে তার মতো করে। সরকারি চাকরির বয়স আছে আর এক বছর। এদিকে পরিবার থেকে
বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ বাড়ছে। কিন্তু চাকরি না হলে সেটাও করতে পারছি না। এখন
নন-ক্যাডারে পোস্টিং দিলে না হয় একটা দিশা হতো। কিন্তু এখনো নাকি পুলিশ
ভেরিফিকেশন চলছে। আর কত দিন চলবে তা-ও জানি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চাকরি প্রত্যাশী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স শেষ করেই ১০ম জুডিসিয়ারি (বাংলাদেশ জুডিসিয়ারি সার্ভিস কমিশন-বিজেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিই। সবকিছু ঠিকভাবেই এগিয়েছিল। প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভা। কিন্তু স্বপ্ন এক জায়গায় এসে আটকে গেল। ভাইভায় উত্তীর্ণ হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে আমার ফাইল আটকে যায়। এ মন্ত্রণালয় থেকে আমার ফাইল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। আমার সঙ্গের সবাই গত ১লা মার্চ নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে। অথচ আমি এখনো দিন গুনি কবে সুখবরটা পাবো সে আশায়। তিনি আরো বলেন, প্রথমবার অংশ নিয়ে জুডিসিয়ারি পরীক্ষার সব পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ায় আর কোথাও কোনো পরীক্ষায় অংশ নিইনি। এমনকি ১১তম জুডিসিয়ারি পরীক্ষায় অংশ নিইনি। কোর্টে প্রাক্টিসও শুরু করিনি। আমার স্বপ্ন এখন ডুকরে কাঁদে। এখন আমি কী যে করবো তা আর ভাবতে পারছি না। ভাবছি, আমাদের যে কয়জনের পোস্টিং হয়নি তারা মিলে আপিল করবো। সেখানে ফলাফল কী হবে জানি না। তবে সেখানে যদি ফলাফল পক্ষে না যায় তাহলে আমার তিনটি বছর তো মাটি হয়ে গেল।
হতাশা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ দেশে মামু, চাচা না থাকলে শুধু মেধা দিয়ে এগোনো যায় না। অন্যদিকে আবার দেখা হয় বংশে কোনোকালে কেউ সরকারি দলের মতাদর্শী ছিল কি না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে করা হয় হয়রানি। তারা ঠিকভাবে তথ্য যাচাইবাছাই না করে স্থানীয় রাজনীতিবিদ থেকে তথ্য নেন। একই কথা বলেন আরেক চাকরি প্রত্যাশী। যিনি দুবার বিজেএসসি এবং একবার বিএমএর ফাইনাল ভাইভা দিয়েও চাকরি পাননি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে স্বপ্ন ছিল বড় আইনজীবী হবো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছর থেকে সংবাদপত্রে চাকরি করতাম। অনার্স শেষ বর্ষে এসে পরিবারের প্রত্যাশা আর নিজের স্বপ্ন নিয়ে আটঘাট বেঁধে পড়ালেখা শুরু করি। জুডিসিয়ারির পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। ২০১৬ সালে ১০তম জুডিসিয়ারিতে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পড়ালেখা আরো বাড়িয়ে দিই। ফলে লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভাইভাতে গিয়ে ফিরতে হলো। আমি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আশাবাদী ছিলাম ভাইবা পরীক্ষায় আমি টিকবো। অনেক ভালো প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও স্বপ্ন পূরণ হলো না। ভাবলাম, একবার হয়নি তাতে কী? সামনে হবে। এই আশায় আবারো লেখাপড়া অব্যাহত রাখলাম। তুলনামূলকভাবে ১১তম জুডিসিয়ারির জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলাম আগের থেকে অনেক ভালোভাবে। কিন্তু আবারো একইভাবে প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু ভাইভা থেকে ফেরত। এবারের ভাইভাটা আগের বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছিল। মানসিকভাবে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। ভেবেছিলাম আমার স্বপ্ন এবার পূরণ হবে। পরিবারের আশাও রাখতে পারবো। জুডিসিয়ারিতে টিকতে হবে, জজ হতে হবে, এই স্বপ্ন পূরণের জন্য গত ২টি বছর অন্য কোনো চাকরিতে আবেদন করিনি। এমনকি কোর্টে প্র্যাকটিসেও যাইনি। এখন সামনে শুধু হতাশা এবং স্বপ্নভঙ্গের হাতছানি। কোনো কাজে হাত দিলেও কেমন জানি মনে হয়, আমি কি পারবো? নাকি আবারো তীরে এসে তরী ডুববে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চাকরি প্রত্যাশী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি অনার্স শেষ করেই ১০ম জুডিসিয়ারি (বাংলাদেশ জুডিসিয়ারি সার্ভিস কমিশন-বিজেএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিই। সবকিছু ঠিকভাবেই এগিয়েছিল। প্রিলি, লিখিত এবং ভাইভা। কিন্তু স্বপ্ন এক জায়গায় এসে আটকে গেল। ভাইভায় উত্তীর্ণ হলেও পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসে আমার ফাইল আটকে যায়। এ মন্ত্রণালয় থেকে আমার ফাইল আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি। আমার সঙ্গের সবাই গত ১লা মার্চ নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছে। অথচ আমি এখনো দিন গুনি কবে সুখবরটা পাবো সে আশায়। তিনি আরো বলেন, প্রথমবার অংশ নিয়ে জুডিসিয়ারি পরীক্ষার সব পর্বে উত্তীর্ণ হওয়ায় আর কোথাও কোনো পরীক্ষায় অংশ নিইনি। এমনকি ১১তম জুডিসিয়ারি পরীক্ষায় অংশ নিইনি। কোর্টে প্রাক্টিসও শুরু করিনি। আমার স্বপ্ন এখন ডুকরে কাঁদে। এখন আমি কী যে করবো তা আর ভাবতে পারছি না। ভাবছি, আমাদের যে কয়জনের পোস্টিং হয়নি তারা মিলে আপিল করবো। সেখানে ফলাফল কী হবে জানি না। তবে সেখানে যদি ফলাফল পক্ষে না যায় তাহলে আমার তিনটি বছর তো মাটি হয়ে গেল।
হতাশা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘এ দেশে মামু, চাচা না থাকলে শুধু মেধা দিয়ে এগোনো যায় না। অন্যদিকে আবার দেখা হয় বংশে কোনোকালে কেউ সরকারি দলের মতাদর্শী ছিল কি না। পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে করা হয় হয়রানি। তারা ঠিকভাবে তথ্য যাচাইবাছাই না করে স্থানীয় রাজনীতিবিদ থেকে তথ্য নেন। একই কথা বলেন আরেক চাকরি প্রত্যাশী। যিনি দুবার বিজেএসসি এবং একবার বিএমএর ফাইনাল ভাইভা দিয়েও চাকরি পাননি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে স্বপ্ন ছিল বড় আইনজীবী হবো। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছর থেকে সংবাদপত্রে চাকরি করতাম। অনার্স শেষ বর্ষে এসে পরিবারের প্রত্যাশা আর নিজের স্বপ্ন নিয়ে আটঘাট বেঁধে পড়ালেখা শুরু করি। জুডিসিয়ারির পরীক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। ২০১৬ সালে ১০তম জুডিসিয়ারিতে প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে পড়ালেখা আরো বাড়িয়ে দিই। ফলে লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ভাইভাতে গিয়ে ফিরতে হলো। আমি মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে আশাবাদী ছিলাম ভাইবা পরীক্ষায় আমি টিকবো। অনেক ভালো প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও স্বপ্ন পূরণ হলো না। ভাবলাম, একবার হয়নি তাতে কী? সামনে হবে। এই আশায় আবারো লেখাপড়া অব্যাহত রাখলাম। তুলনামূলকভাবে ১১তম জুডিসিয়ারির জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলাম আগের থেকে অনেক ভালোভাবে। কিন্তু আবারো একইভাবে প্রিলি এবং লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু ভাইভা থেকে ফেরত। এবারের ভাইভাটা আগের বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছিল। মানসিকভাবে আমি সন্তুষ্ট ছিলাম। ভেবেছিলাম আমার স্বপ্ন এবার পূরণ হবে। পরিবারের আশাও রাখতে পারবো। জুডিসিয়ারিতে টিকতে হবে, জজ হতে হবে, এই স্বপ্ন পূরণের জন্য গত ২টি বছর অন্য কোনো চাকরিতে আবেদন করিনি। এমনকি কোর্টে প্র্যাকটিসেও যাইনি। এখন সামনে শুধু হতাশা এবং স্বপ্নভঙ্গের হাতছানি। কোনো কাজে হাত দিলেও কেমন জানি মনে হয়, আমি কি পারবো? নাকি আবারো তীরে এসে তরী ডুববে।
No comments