মার্কিন গণমাধ্যম থেকে যা শেখার আছে বাংলাদেশের by নাজমুল আহসান
প্রথম
ও একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি
ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন আইরিন জোবায়দা খান।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি
বলেছিলেন, বাংলাদেশের যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে ব্যথিত করে তা হলোÑ
গণমাধ্যমে গণমাধ্যমের প্রতি সংহতির অভাব।
বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল হতে শুরু করে, সেখানেই স্বৈরাচারের উদয় ঘটে। এ যেন ‘জিরো-সাম গেইম’। আর দেশে দেশে স্বৈরাচারের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, গণমাধ্যম তার চক্ষুশূল হবেই হবে। এ কারণে সস্তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে গণমাধ্যমকে একটি জায়গায় একতাবদ্ধ হতেই হয়। রাষ্ট্র বা ক্ষমতাশালী কোনো গোষ্ঠীর হাতে একটি সংবাদপত্র আক্রান্ত হলে, দেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবাদ করা অপরিহার্য। শুধু স্বৈরতন্ত্র বা দুর্বল গণতন্ত্রেই নয়। গণমাধ্যমের ঐক্য একটি উন্নত গণতন্ত্রেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
যারা আমেরিকার রাজনীতি কৌতূহল নিয়ে অনুসরণ করেন, তারা দেখে থাকবেন যে, কীভাবে দেশের প্রেসিডেন্টকে যাচ্ছেতাইভাবে সমালোচনা করছে গণমাধ্যম। এমনকি গালিগালাজ করতেও কারও মুখ কাঁপে না। আমেরিকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেশটির সংবিধানে প্রোথিত। আমাদের সংবিধানেও এই মত প্রকাশের নিশ্চয়তা দেয়া আছে। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়? তাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ে এই সংবিধানকে ধারণ করে বড় হয়। সংবিধানে সুরক্ষিত অধিকার সম্পর্কে তারা অবগত। আমাদের দেশে এমনটা চিন্তাও করা যায় না। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ক্ষুদ্র অংশ হয়তো সংবিধান পড়ে দেখেছে। এদের অনেকে পড়েছে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। সংবিধানকে ধারণ করাটা নাগরিকদেরকে শাসকরা কখনও শেখাননি। নাগরিকরাও শিখেননি।
উপনিবেশিক শাসনযন্ত্রের উত্তরাধিকার আমরা। সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনও শাসক-প্রজার মতো। শুধু ভোটাভুটি ছাড়া গণতন্ত্রের আর কোনো বিষয়ই আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। ভোটাভুটিও এখন হয় নামেমাত্র। যে দেশে গণতন্ত্রই সবল নয়, সেখানে মুক্ত গণমাধ্যমের আশা করাটা বাতুলতা। কিন্তু এ দেশে সংবাদমাধ্যম জগতে কাজ করা প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই স্বপ্ন দেখেন মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করার। সেই লক্ষ্য অর্জনে একটি সংবাদ মাধ্যমকে অপর একটি সংবাদ মাধ্যমের বিপদে শামিল হতে হবে। আমাদের দেশই নয়। একটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রের গণমাধ্যম যে কোনো সময় শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে যেতে পারে। তাই আমেরিকার মতো দেশেও সংবাদ মাধ্যমের পারস্পরিক সংহতির গুরুত্ব প্রত্যেকে বোঝেন।
আমেরিকায় প্রায় প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যমই কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশে কে বিএনপি করেন বা কে আওয়ামী লীগ করেন, তা নিয়ে কানাঘুষা থাকে। এখন অবশ্য যুগ পাল্টেছে। প্রত্যেকে নিজেকে তীব্র আওয়ামী লীগ প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় আছেন। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করার আগে মানুষ দু’বার ভাবতেন। কিছু বিশেষ পেশার মানুষদের কাছ থেকে সবাই নিরপেক্ষতা আশা করতো বা করে। যেমন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, বিচারক, সাংবাদিক, ইত্যাদি। এখন অবশ্য কী সরকারি কর্মচারী কী সাংবাদিক! শাসকদলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার সুযোগ পেলে কেউ ছাড়েন না।
আমেরিকায় রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কেউ লুকোছাপা করেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করেন, সেটিও সবার জানা থাকে। কিন্তু পেশাদারিত্বে কেউ ঘাটতি দেখান না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এফবিআই’র সাবেক প্রধান জেমস কমি একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ছিলেন। কিন্তু তিনিই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মামলার তদন্ত বেশ জোরেশোরে এগিয়ে নিয়েছিলেন। জেমস কমিকে যখন ট্রাম্প বরখাস্ত করলেন, তখন ট্রাম্পের মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা কিন্তু আইন বা বিচার মন্ত্রণালয়ের কেউ হলেন না। কারণ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সবাইকে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য আনা হলো অবসরপ্রাপ্ত এক এফবিআই প্রধানকে। তিনি থমাস মুলার। মুলারও একজন রিপাবলিকান। অথচ, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তে তিনি এক সুঁই ছাড় দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
আমেরিকার কাছ থেকে এখানে তিনটি বিষয় শেখার আছে। এক. পেশাদারিত্ব। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পেশা ও দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কোনো সমস্যা নয়। দুই. ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা। আমেরিকার একজন সাধারণ নাগরিকও নিজের ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সচেতন থাকেন। অবশ্য ট্রাম্পের মতো কিছু ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। উচ্চপদে আসীন কর্মকর্তা ও বিশেষ পেশাজীবী যেমন সাংবাদিকদের ক্যারিয়ারই ধসে যেতে পারে, যদি তারা এমন কিছু করে বসেন যাতে তাদের ক্রেডিবিলিটি ক্ষুণœ হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বিচার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় তৃতীয় একজন কৌসুঁলিকে আনা হলো তদন্ত করতে। কেন? কারণ, ট্রাম্পের নিয়োগকৃত কোনো কৌঁসুলি বা কর্মকর্তা এই মামলা তদন্ত করলে, সেই তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। আর আমাদের দেশে কার যে একটু ক্রেডিবিলিটি আছে, সেটি খুঁজে পাওয়া ভার।
তিন. কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে’র ধারণা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের মামলার তদন্ত থেকেই উদাহরণ টানা যাক। গত মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে যে তদন্ত চলছে, তার তত্ত্বাবধান করার কথা কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের, যিনি কিনা আইন মন্ত্রণালয়ের প্রধান। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স ছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর। গোঁড়া ডানপন্থি। তিনি ট্রাম্পের প্রথম দিককার সমর্থক। নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প তাকে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বানিয়েছেন। কিন্তু মাঝেই খবরে প্রকাশ হয় যে, নির্বাচনের আগে সেশন্স রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নিয়োগকালীন সাক্ষাৎকারে সিনেট সদস্যরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি সম্প্রতি সাক্ষাৎ করেছিলেন কিনা। জবাবে তিনি নেতিবাচক উত্তর দেন। ফলে যখন খবর প্রকাশ হলো যে, সিনেট সাক্ষাৎকারে সেশন্স মিথ্যা বলেছিলেন, তখন অবধারিতভাবে এই রাশিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে নিজের তাগিদ থেকেই তিনি রাশিয়া তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। কেউ তাকে বাধ্য করেনি। তিনি চাইলেও থাকতে পারতেন। এমনকি পরে জানা যায়, ট্রা¤প দূত পাঠিয়ে তার সিদ্ধান্ত পাল্টানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
নিজের নামই যেই তদন্তের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে, সেই তদন্তের তত্ত্বাবধান করাটা সেশন্স সমীচীন মনে করেননি। তিনি যদি দায়িত্বে অটল থাকতেন, তাহলে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে’র প্রশ্ন উঠতো। এই বিষয়টি আমেরিকায় খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যিনি ক্ষমতায় আসেন, তাদের বিরুদ্ধে আগের মামলা বা অভিযোগ এক অঙ্গুলি হেলনে গায়েব হয়ে যায়।
ধান ভানতে এসে শিবের গীত গাওয়ার মতো শোনাচ্ছে হয়তো। কিন্তু একটি দেশের মননে, চিন্তা ও চেতনায় স্বাধীনতা (ফ্রিডম) প্রোথিত না থাকলে, সেই দেশ মুক্ত হয় না, গণতান্ত্রিক হয় না। যেই প্রসঙ্গে এতগুলো কথা বলা হলো, সেটা হলো গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক সংহতি থাকার বিষয়টি। আমেরিকায় সবার মতো গণমাধ্যমেরও মতদর্শগত অবস্থান স্পষ্ট। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই তা উল্লেখ করে। কারও কারও অবস্থান তাদের কভারেজ, সম্পাদকীয় নীতি ও টোন থেকে বোঝা যায়। কেউ কেউ আবার একেবারে খুল্লামখুল্লা। যেমন, ফক্স নিউজ। আমেরিকার রিপাবলিকান দল বা রক্ষণশীল গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এই টিভি চ্যানেল।
গত বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে ট্রাম্প প্রশাসন সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, লস এঞ্জেলস টাইমস ও পলিটিকোকে হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণটা সহজেই অনুমেয়। এই প্রত্যেকটি সংবাদ মাধ্যমকেই নিজের প্রতিপক্ষ বলে ট্রাম্প মনে করেন। অবশ্য রয়টার্স, ব্লুমবার্গ এবিএস, সিবিএস, এনবিসি ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো বৃহৎ সংবাদ মাধ্যমকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অনুমোদিত বাকি মিডিয়াগুলোর মধ্যে প্রায় সবাই ছিল ফক্স নিউজ বা ব্রেইটবার্টের মতো কট্টর ডানপন্থি বা ডানপন্থি মিডিয়া। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ।
বাদ পড়া প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম তো বটেই, হোয়াইট হাউস কভার করার দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকদের সংগঠন কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। টাইম ম্যাগাজিন, বার্তা সংস্থা এপি অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বাদপড়া সংবাদ মাধ্যমের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হোয়াইট হাউসের সম্মেলন বয়কট করে। রক্ষণশীল বলে পরিচিত ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, তাদের রিপোর্টার নিজের অজ্ঞাতে ওই সম্মেলনে ছিলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে বিশেষ কোনো গণমাধ্যমকে টার্গেট করা হলে, সম্মেলন বয়কট করবে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। কড়া প্রতিবাদ আসে আমেরিকার বৃহৎ পাঁচটি জাতীয় টিভি চ্যানেলের জোটের পক্ষ থেকে। এই জোটের অংশ কিন্তু ফক্স নিউজও। গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক সংহতির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটে।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেইয়ের তখন ব্যবসায়িক ও মতাদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বী সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের পক্ষে দাঁড়ান। পুরনো একটি ঘটনার সূত্র ধরে তিনি টুইটারে লিখেন, ২০০৯ সালে বারাক ওবামার প্রশাসন ফক্স নিউজকে হোয়াইট হাউসের সংবাদ কভার করা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন ওই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ করে সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস। পাশে দাঁড়ায় ফক্স নিউজের। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে সকল সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশাধিকার থাকা উচিত। এই বক্তব্যের মাধ্যমেই ব্রেট বেইয়ের বুঝিয়ে দিলেন গণমাধ্যম সম্প্রদায়ে পারস্পরিক সংহতির গুরুত্ব কতটা।
আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে অন্তত দু’টি বড় পত্রিকার প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হয় না। কেন যে দেয়া হয় না, সেটা বোঝাটা কঠিন কিছু নয়। যেসব সাংবাদিক উপস্থিত থাকেন, তাদের ‘প্রশ্ন’ শুনলেই তা বোঝা যায়।
কোনো বিশেষ সংবাদ মাধ্যমকে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। তার সমালোচনা করুন। ত্রুটি- বিচ্যুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলুন। সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা সংবাদ মাধ্যমকেই করতে হবে। আমেরিকায় ফক্স নিউজের মিথ্যার বেসাতি বা বিভ্রান্তির যে সমালোচনা করা হয় নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন বা ওয়াশিংটন পোস্টে, সেটি না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। তেমনি, ফক্স নিউজও সুযোগ পেলে প্রতিপক্ষকে এক চোট দেখে নিতে ভোলে না। বৃটেনে দ্য সান বা ডেইলি মেইলকে প্রায়ই সমালোচনায় জর্জরিত করে গার্ডিয়ান। আবার তারাও সুযোগ পেলে সমালোচনা করতে ছাড়ে না। কিন্তু পেশাগতভাবে কেউ হুমকিতে পড়লে, অন্যরা ঠিকই একে-অপরের পাশে এসে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে ‘কাকে কাকের গোস্ত খায় না’ নামে এক অদ্ভুত নীতির আওতায় সংবাদ মাধ্যম অপর সংবাদ মাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা করে না। অবশ্য, উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা আমরা দেখেছি, যেটাকে সমালোচনা না বলে, শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ বলা ভালো।
আবার কারও বিপদে কেউ সংহতিও প্রকাশ করে না। আমেরিকার কাছ থেকে সবচেয়ে বড় যেই জিনিসটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিখতে পারে সেটি হলো এই সংহতির চর্চা। দেশের শাসক স্বৈরাচার হোন আর গণতান্ত্রিক হোন, ডনাল্ড ট্রাম্প হোন আর বারাক ওবামা হোন, সংবাদ মাধ্যমকে তারা প্রায়ই প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে করেন বা করবেন। তাই শাসকদের বিপরীতে মতাদর্শগত মতপার্থক্য ভুলে গণমাধ্যমকে অন্তত পেশাগত স্বাধীনতার জায়গায় একাট্টা থাকতেই হবে। নয়তো আজ সরকার, কাল গোয়েন্দা বাহিনী নয়তো পরশু জঙ্গিদের আক্রমণে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হবে।
(লেখক: সাংবাদিক।)
বিশ্বের প্রতিটি দেশে যেখানে গণতন্ত্র দুর্বল হতে শুরু করে, সেখানেই স্বৈরাচারের উদয় ঘটে। এ যেন ‘জিরো-সাম গেইম’। আর দেশে দেশে স্বৈরাচারের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, গণমাধ্যম তার চক্ষুশূল হবেই হবে। এ কারণে সস্তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে গণমাধ্যমকে একটি জায়গায় একতাবদ্ধ হতেই হয়। রাষ্ট্র বা ক্ষমতাশালী কোনো গোষ্ঠীর হাতে একটি সংবাদপত্র আক্রান্ত হলে, দেশের প্রতিটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবাদ করা অপরিহার্য। শুধু স্বৈরতন্ত্র বা দুর্বল গণতন্ত্রেই নয়। গণমাধ্যমের ঐক্য একটি উন্নত গণতন্ত্রেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
যারা আমেরিকার রাজনীতি কৌতূহল নিয়ে অনুসরণ করেন, তারা দেখে থাকবেন যে, কীভাবে দেশের প্রেসিডেন্টকে যাচ্ছেতাইভাবে সমালোচনা করছে গণমাধ্যম। এমনকি গালিগালাজ করতেও কারও মুখ কাঁপে না। আমেরিকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেশটির সংবিধানে প্রোথিত। আমাদের সংবিধানেও এই মত প্রকাশের নিশ্চয়তা দেয়া আছে। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়? তাদের প্রতিটি ছেলেমেয়ে এই সংবিধানকে ধারণ করে বড় হয়। সংবিধানে সুরক্ষিত অধিকার সম্পর্কে তারা অবগত। আমাদের দেশে এমনটা চিন্তাও করা যায় না। দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ক্ষুদ্র অংশ হয়তো সংবিধান পড়ে দেখেছে। এদের অনেকে পড়েছে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। সংবিধানকে ধারণ করাটা নাগরিকদেরকে শাসকরা কখনও শেখাননি। নাগরিকরাও শিখেননি।
উপনিবেশিক শাসনযন্ত্রের উত্তরাধিকার আমরা। সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক এখনও শাসক-প্রজার মতো। শুধু ভোটাভুটি ছাড়া গণতন্ত্রের আর কোনো বিষয়ই আমরা আয়ত্ত করতে পারিনি। ভোটাভুটিও এখন হয় নামেমাত্র। যে দেশে গণতন্ত্রই সবল নয়, সেখানে মুক্ত গণমাধ্যমের আশা করাটা বাতুলতা। কিন্তু এ দেশে সংবাদমাধ্যম জগতে কাজ করা প্রায় প্রত্যেকটি মানুষই স্বপ্ন দেখেন মুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করার। সেই লক্ষ্য অর্জনে একটি সংবাদ মাধ্যমকে অপর একটি সংবাদ মাধ্যমের বিপদে শামিল হতে হবে। আমাদের দেশই নয়। একটি সুষ্ঠু গণতন্ত্রের গণমাধ্যম যে কোনো সময় শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে যেতে পারে। তাই আমেরিকার মতো দেশেও সংবাদ মাধ্যমের পারস্পরিক সংহতির গুরুত্ব প্রত্যেকে বোঝেন।
আমেরিকায় প্রায় প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যমই কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের দেশে কে বিএনপি করেন বা কে আওয়ামী লীগ করেন, তা নিয়ে কানাঘুষা থাকে। এখন অবশ্য যুগ পাল্টেছে। প্রত্যেকে নিজেকে তীব্র আওয়ামী লীগ প্রমাণ করার প্রতিযোগিতায় আছেন। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন নিজের রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করার আগে মানুষ দু’বার ভাবতেন। কিছু বিশেষ পেশার মানুষদের কাছ থেকে সবাই নিরপেক্ষতা আশা করতো বা করে। যেমন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, বিচারক, সাংবাদিক, ইত্যাদি। এখন অবশ্য কী সরকারি কর্মচারী কী সাংবাদিক! শাসকদলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার সুযোগ পেলে কেউ ছাড়েন না।
আমেরিকায় রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কেউ লুকোছাপা করেন না। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ ধারণ করেন, সেটিও সবার জানা থাকে। কিন্তু পেশাদারিত্বে কেউ ঘাটতি দেখান না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এফবিআই’র সাবেক প্রধান জেমস কমি একজন নিবন্ধিত রিপাবলিকান ছিলেন। কিন্তু তিনিই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মামলার তদন্ত বেশ জোরেশোরে এগিয়ে নিয়েছিলেন। জেমস কমিকে যখন ট্রাম্প বরখাস্ত করলেন, তখন ট্রাম্পের মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা কিন্তু আইন বা বিচার মন্ত্রণালয়ের কেউ হলেন না। কারণ, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সবাইকে ট্রাম্প প্রশাসন নিয়োগ দিয়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা তদন্ত করার জন্য আনা হলো অবসরপ্রাপ্ত এক এফবিআই প্রধানকে। তিনি থমাস মুলার। মুলারও একজন রিপাবলিকান। অথচ, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্তে তিনি এক সুঁই ছাড় দিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না।
আমেরিকার কাছ থেকে এখানে তিনটি বিষয় শেখার আছে। এক. পেশাদারিত্ব। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি পেশা ও দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠাবান থাকবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কোনো সমস্যা নয়। দুই. ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা। আমেরিকার একজন সাধারণ নাগরিকও নিজের ক্রেডিবিলিটি বা বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সচেতন থাকেন। অবশ্য ট্রাম্পের মতো কিছু ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। উচ্চপদে আসীন কর্মকর্তা ও বিশেষ পেশাজীবী যেমন সাংবাদিকদের ক্যারিয়ারই ধসে যেতে পারে, যদি তারা এমন কিছু করে বসেন যাতে তাদের ক্রেডিবিলিটি ক্ষুণœ হয়। ট্রাম্প প্রশাসন বিচার মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলায় তৃতীয় একজন কৌসুঁলিকে আনা হলো তদন্ত করতে। কেন? কারণ, ট্রাম্পের নিয়োগকৃত কোনো কৌঁসুলি বা কর্মকর্তা এই মামলা তদন্ত করলে, সেই তদন্তের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতো। আর আমাদের দেশে কার যে একটু ক্রেডিবিলিটি আছে, সেটি খুঁজে পাওয়া ভার।
তিন. কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব। এই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে’র ধারণা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের মামলার তদন্ত থেকেই উদাহরণ টানা যাক। গত মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়ে যে তদন্ত চলছে, তার তত্ত্বাবধান করার কথা কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের, যিনি কিনা আইন মন্ত্রণালয়ের প্রধান। বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্স ছিলেন রিপাবলিকান সিনেটর। গোঁড়া ডানপন্থি। তিনি ট্রাম্পের প্রথম দিককার সমর্থক। নির্বাচনে জেতার পর ট্রাম্প তাকে দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল বানিয়েছেন। কিন্তু মাঝেই খবরে প্রকাশ হয় যে, নির্বাচনের আগে সেশন্স রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে তার নিয়োগকালীন সাক্ষাৎকারে সিনেট সদস্যরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, রাশিয়ার কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তিনি সম্প্রতি সাক্ষাৎ করেছিলেন কিনা। জবাবে তিনি নেতিবাচক উত্তর দেন। ফলে যখন খবর প্রকাশ হলো যে, সিনেট সাক্ষাৎকারে সেশন্স মিথ্যা বলেছিলেন, তখন অবধারিতভাবে এই রাশিয়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে নিজের তাগিদ থেকেই তিনি রাশিয়া তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। কেউ তাকে বাধ্য করেনি। তিনি চাইলেও থাকতে পারতেন। এমনকি পরে জানা যায়, ট্রা¤প দূত পাঠিয়ে তার সিদ্ধান্ত পাল্টানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
নিজের নামই যেই তদন্তের আওতাভুক্ত হয়ে গেছে, সেই তদন্তের তত্ত্বাবধান করাটা সেশন্স সমীচীন মনে করেননি। তিনি যদি দায়িত্বে অটল থাকতেন, তাহলে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টে’র প্রশ্ন উঠতো। এই বিষয়টি আমেরিকায় খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যিনি ক্ষমতায় আসেন, তাদের বিরুদ্ধে আগের মামলা বা অভিযোগ এক অঙ্গুলি হেলনে গায়েব হয়ে যায়।
ধান ভানতে এসে শিবের গীত গাওয়ার মতো শোনাচ্ছে হয়তো। কিন্তু একটি দেশের মননে, চিন্তা ও চেতনায় স্বাধীনতা (ফ্রিডম) প্রোথিত না থাকলে, সেই দেশ মুক্ত হয় না, গণতান্ত্রিক হয় না। যেই প্রসঙ্গে এতগুলো কথা বলা হলো, সেটা হলো গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক সংহতি থাকার বিষয়টি। আমেরিকায় সবার মতো গণমাধ্যমেরও মতদর্শগত অবস্থান স্পষ্ট। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই তা উল্লেখ করে। কারও কারও অবস্থান তাদের কভারেজ, সম্পাদকীয় নীতি ও টোন থেকে বোঝা যায়। কেউ কেউ আবার একেবারে খুল্লামখুল্লা। যেমন, ফক্স নিউজ। আমেরিকার রিপাবলিকান দল বা রক্ষণশীল গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এই টিভি চ্যানেল।
গত বছরের ফেব্রুয়ারির দিকে ট্রাম্প প্রশাসন সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি, লস এঞ্জেলস টাইমস ও পলিটিকোকে হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলন কাভার করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণটা সহজেই অনুমেয়। এই প্রত্যেকটি সংবাদ মাধ্যমকেই নিজের প্রতিপক্ষ বলে ট্রাম্প মনে করেন। অবশ্য রয়টার্স, ব্লুমবার্গ এবিএস, সিবিএস, এনবিসি ও ওয়ালস্ট্রিট জার্নালের মতো বৃহৎ সংবাদ মাধ্যমকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। অনুমোদিত বাকি মিডিয়াগুলোর মধ্যে প্রায় সবাই ছিল ফক্স নিউজ বা ব্রেইটবার্টের মতো কট্টর ডানপন্থি বা ডানপন্থি মিডিয়া। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ।
বাদ পড়া প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম তো বটেই, হোয়াইট হাউস কভার করার দায়িত্বে থাকা সাংবাদিকদের সংগঠন কড়া প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। টাইম ম্যাগাজিন, বার্তা সংস্থা এপি অনুমতি থাকা সত্ত্বেও বাদপড়া সংবাদ মাধ্যমের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে হোয়াইট হাউসের সম্মেলন বয়কট করে। রক্ষণশীল বলে পরিচিত ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল জানায়, তাদের রিপোর্টার নিজের অজ্ঞাতে ওই সম্মেলনে ছিলেন। কিন্তু ভবিষ্যতে বিশেষ কোনো গণমাধ্যমকে টার্গেট করা হলে, সম্মেলন বয়কট করবে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল। কড়া প্রতিবাদ আসে আমেরিকার বৃহৎ পাঁচটি জাতীয় টিভি চ্যানেলের জোটের পক্ষ থেকে। এই জোটের অংশ কিন্তু ফক্স নিউজও। গণমাধ্যমের মধ্যে পারস্পরিক সংহতির প্রতিক্রিয়া হিসেবেই ট্রাম্প প্রশাসন তাদের অবস্থান থেকে পিছু হটে।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেইয়ের তখন ব্যবসায়িক ও মতাদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বী সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের পক্ষে দাঁড়ান। পুরনো একটি ঘটনার সূত্র ধরে তিনি টুইটারে লিখেন, ২০০৯ সালে বারাক ওবামার প্রশাসন ফক্স নিউজকে হোয়াইট হাউসের সংবাদ কভার করা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন ওই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিবাদ করে সিএনএন ও নিউ ইয়র্ক টাইমস। পাশে দাঁড়ায় ফক্স নিউজের। হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে সকল সংবাদ মাধ্যমের প্রবেশাধিকার থাকা উচিত। এই বক্তব্যের মাধ্যমেই ব্রেট বেইয়ের বুঝিয়ে দিলেন গণমাধ্যম সম্প্রদায়ে পারস্পরিক সংহতির গুরুত্ব কতটা।
আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে অন্তত দু’টি বড় পত্রিকার প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেয়া হয় না। কেন যে দেয়া হয় না, সেটা বোঝাটা কঠিন কিছু নয়। যেসব সাংবাদিক উপস্থিত থাকেন, তাদের ‘প্রশ্ন’ শুনলেই তা বোঝা যায়।
কোনো বিশেষ সংবাদ মাধ্যমকে আপনি অপছন্দ করতেই পারেন। তার সমালোচনা করুন। ত্রুটি- বিচ্যুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলুন। সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা সংবাদ মাধ্যমকেই করতে হবে। আমেরিকায় ফক্স নিউজের মিথ্যার বেসাতি বা বিভ্রান্তির যে সমালোচনা করা হয় নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন বা ওয়াশিংটন পোস্টে, সেটি না দেখলে বোঝানো সম্ভব নয়। তেমনি, ফক্স নিউজও সুযোগ পেলে প্রতিপক্ষকে এক চোট দেখে নিতে ভোলে না। বৃটেনে দ্য সান বা ডেইলি মেইলকে প্রায়ই সমালোচনায় জর্জরিত করে গার্ডিয়ান। আবার তারাও সুযোগ পেলে সমালোচনা করতে ছাড়ে না। কিন্তু পেশাগতভাবে কেউ হুমকিতে পড়লে, অন্যরা ঠিকই একে-অপরের পাশে এসে দাঁড়ায়।
আমাদের দেশে ‘কাকে কাকের গোস্ত খায় না’ নামে এক অদ্ভুত নীতির আওতায় সংবাদ মাধ্যম অপর সংবাদ মাধ্যমের গঠনমূলক সমালোচনা করে না। অবশ্য, উদ্দেশ্যমূলক সমালোচনা আমরা দেখেছি, যেটাকে সমালোচনা না বলে, শত্রুতার বহিঃপ্রকাশ বলা ভালো।
আবার কারও বিপদে কেউ সংহতিও প্রকাশ করে না। আমেরিকার কাছ থেকে সবচেয়ে বড় যেই জিনিসটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিখতে পারে সেটি হলো এই সংহতির চর্চা। দেশের শাসক স্বৈরাচার হোন আর গণতান্ত্রিক হোন, ডনাল্ড ট্রাম্প হোন আর বারাক ওবামা হোন, সংবাদ মাধ্যমকে তারা প্রায়ই প্রতিপক্ষ বা শত্রু মনে করেন বা করবেন। তাই শাসকদের বিপরীতে মতাদর্শগত মতপার্থক্য ভুলে গণমাধ্যমকে অন্তত পেশাগত স্বাধীনতার জায়গায় একাট্টা থাকতেই হবে। নয়তো আজ সরকার, কাল গোয়েন্দা বাহিনী নয়তো পরশু জঙ্গিদের আক্রমণে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হবে।
(লেখক: সাংবাদিক।)
No comments