বিলুপ্তির পথে তাঁতশিল্প
আগের মতো আর কর্মব্যস্ততা নেই গাংনী উপজেলার রাজাপুর গ্রামের তাঁতপল্লীতে। একাত্তর পরবর্তী সময়ে এখানকার তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছার দেশজোড়া কদর থাকলেও আধুনিক পোশাকের ভিড়ে এ জৌলুস হারাতে বসেছে। সব শ্রেণীর মানুষের ক্রয় উপযোগী পোশাক তৈরির কারিগরদের খোঁজ রাখে না কেউ। অভিভাবকহীনতায় আজ বিলুপ্ত হতে বসেছে রাজাপুরের তাঁতশিল্প। গাংনী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটির পূর্ব দিকে মাথাভাঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত রাজাপুর গ্রাম। এখানে প্রায় ২৫০টি তাঁতি পরিবারের বাস। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও তাঁত শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এক সময় এখানে তৈরি হতো উন্নতমানের লুঙ্গি, শাড়ি ও গামছা। কদরও ছিল বেশ। ১০-১৫ বছর আগেও তাঁতপল্লী ঘিরে ছিল চরম ব্যস্ততা। দেশের বড় বড় কাপড়ের মার্কেটসহ কুষ্টিয়ার পোড়াদহ বাজারের সিংহভাগ দখলে ছিল রাজাপুরের তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতিতে তৈরি চিকন সুতার শাড়ি, লুঙ্গির কাছে হার মেনেছে। এখন অনেকেই শুধু গামছা তৈরি করে টিকিয়ে রেখেছেন বাপ-দাদার পৈতৃক এ পেশা কিন্তু সুতাসহ পোশাক তৈরির সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধি পেলেও তাঁতিদের তৈরি পোশাকের তেমন দাম না বাড়ায় ঐতিহ্যবাহী পোশাক তৈরির কারিগরদের অনেকেই এখন ঋণগ্রস্ত। তাই রুটি-রুজির তাগিদে বাধ্য হয়ে পেশা বদল করছেন তারা। মধ্য বয়সী কারিগর রহিদুল ইসলাম জানান, ছোটবেলা থেকে যে কাজ করে আসছি তা চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না। দিনমজুরি কিংবা ক্ষেতের কাজে অভ্যস্ত নয় তাঁতিরা। কাপড় তৈরি কাজে তেমন আয়-উপার্জন নেই আবার অন্য পেশায় গিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারছি না। এ কারণে অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যাদের পুঁজি আছে তারা কিছুটা লাভ করতে পারলেও যারা শুধু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাদের কষ্টের অন্ত নেই। তাঁত শ্রমিক ইসমত আরা জানান, স্বামী ডিভোর্স দেয়ার পর পিতার বাড়িতে শিশু ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছি। প্রতিদিন তিনি ৪-৬টি গাছমা তৈরি করেন। কিন্তু মজুরি পান প্রতি পিসে মাত্র ১০ টাকা। কারিগর বজলুর রহমান ও আলমগীর হোসেন জানান, এক সময় রাজাপুরের শাড়ি, লুঙ্গি ও গামছা মেহেরপুর জেলার পোশাকের চাহিদা পূরণ করেছে। তখন কারিগরদের যেমনি কদর ছিল তেমনি ছিল পোশাকের জৌলুস। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের পোশাক নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। কিন্তু এখন সেই সুদিন আর নেই। পোশাকের কদর হারানোর পাশাপাশি কারিগররাও অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। ব্যাংক ঋণও যেন তাদের কাছে অধরা। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ঋণ কিংবা অর্থ সহযোগিতা দিয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি ক্রয় করা গেলে আবার সুদিন ফিরে আসা সম্ভব। তবে তাঁতিদের আশ্বস্ত করলেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল আমিন। তিনি জানান, পোশাক কারিগরদের সহযোগিতার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।
No comments