সিলেটে রেকর্ডসংখ্যক পর্যটক, মাজারের ভিড় উপচে পড়লো রাস্তায় by ওয়েছ খছরু
উরসের ভিড় শুক্রবার দেখা গেল ওলিকুল শিরোমণি হযরত শাহ্জালাল (র.) দরগাহে। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না দরগাহে। শুক্রবার জুমার আজানের আগেই কানায় কানায় পূর্ণ ৫ তলার মসজিদ। প্রখর রোদেও মহিলাদের ঠাসা ভিড়। আর আজান হতেই লোকারণ্য হয়ে উঠে পুরো মাজার এলাকা। জুমার নামাজে মুসল্লিদের ঢল উপচে পড়ে রাস্তায়ও। এতো মানুষের লোক সমাগমের কারণ একটাই। ঈদের ছুটিতে এবার রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সিলেটে এসেছেন। বুধবার থেকে দূর- দূরান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে সিলেটে আসেন পর্যটকরা। আর এই ঢল সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিলেটবাসীকে। পর্যটন এলাকা জাফলং পর্যটকদের পদভারে মুখরিত। সিলেটে চা বাগানগুলোতে বিনোদনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে। প্রতি বৃহস্পতিবারে সাপ্তাহিক ভিড় বাড়ে দরগাহে হযরত শাহ্জালালে। কিন্তু ঈদে যারাই সিলেটে বেড়াতে এসেছেন তারা মাজার করতে ভিড় করে দরগাহে। এ কারণে বৃহস্পতিবার থেকে দরগাহ্ এলাকায় ভিড় বেশি। রাতে মাজার আঙ্গিনায় অনেকেই রাত কাটান। ইবাদত বন্দেগির পর ফজরের নামাজ পড়ে তারা সিলেট ঘুরতে বের হন। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কুমিল্লা থেকে আসা কয়েকজন ভক্ত জানিয়েছেন, তারা সিলেটে বেড়াতে এলেও মাজার জিয়ারতই মুখ্য উদ্দেশ্য। এ কারণে তারা রাতে হোটেলে থেকে সকালেই মাজার জিয়ারত করতে আসেন। এবং জুমার নামাজ আদায় করে তারা ঘুরতে বের হন। ওদিকে, এবারের ঈদে জাফলং, রাতারগুল, পান্তুমাই ও বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকা পর্যটকদের স্মরণকালের বৃহত্তম মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেষা অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং, পান্তুমাই, বিছনাকান্দি আর বিশ্বের অন্যতম সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুলকে এক নজর দেখতে উপচে পড়েন দর্শকরা। আর এজন্য চা-বাগানবেষ্টিত সাদা-কালো, রঙ- বেরঙের পাথর ঘেসা জাফলং, পান্তুমাই, বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকা ঘুরে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন নানা বয়সের নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশুকিশোর। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেকটি জেলা থেকে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ছাত্র-শিক্ষকসহ নানা পেশার মানুষ বিভিন্ন রকম যানবাহন নিয়ে এবং নানা রকম পোশাক পরে জাফলং, পান্তুমাই, বিছনাকান্দি পর্যটন এলাকায় এসে এক মিলনমেলার সৃষ্টি করেন। সিলেট শহর থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে ভারতের আসাম রাজ্যের মেঘালয় পাহাড়ের সীমান্ত ঘেষা এলাকায় জাফলং পর্যটন স্পট। এখানে রয়েছে জেলা পরিষদ নির্মিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, পার্বত্য অঞ্চলের আঁকাবাঁকা মনোরম সড়ক পথ, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা, জাফলং পিকনিক সেন্টার, জাফলং গ্রীন পার্ক, জাফলং পাথর কোয়ারী, জাফলং চা-বাগান, খাসিয়া আদিবাসীদের প্রকৃতিবান্ধব বসতবাড়ি, পুঞ্জি এলাকায় জুমচাষ, সাতকরা জুম, কমলা বাগান এবং ভিন্ন রকম পাক-পাখালীর অপরূপ সমাবেশ। সীমান্তের কাছে থেকে দেখা যাচ্ছিল সীমান্তের ওপারে ভারতীয় পাহাড়ের গায়ে মনোরম ঝর্ণা। পাহাড়ের গা বেয়ে আসা বৃষ্টির পানিতে ঝর্ণাগুলো ফুলেফেঁপে হয়ে উঠেছে চঞ্চলা। এইসব কারণে কয়েক যুগ ধরে জাফলং এলাকা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন স্পট হিসেবে দেশ ও বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে পরিচিত। এসব পর্যটকের আদর-আপ্যায়ন করতে গড়ে উঠেছে জাফলং এলাকায় দেশী-বিদেশী ভিন্ন রকম ব্যবসা-বাণিজ্য। গত চারদিন ধরে বিছনাকান্দি, জাফলং ও পান্তুমাই এলাকায় প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকদের পদচারণায় পর্যটন এরিয়া জাফলং মুখরিত। জাফলংয়ের মামার দোকান থেকে শুরু করে বল্লাঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক পর্যটকবাহী গাড়ির সমাবেশ ঘটেছে। বিশ্বের অন্যতম বন রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট দেখতেও পর্যটকদের ব্যাপক সমাগম ঘটে। সেখানে প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটক ঘুরে বেড়ান। প্রকৃতি কন্যা পান্তুমাই বড়হিল ঝর্ণা দেখতেও সকল বয়সের প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন ভিড় জমান পান্তুমাই। বিশেষ করে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। তাছাড়া উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারী বিছনাকান্দি এলাকায়ও পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। সব মিলিয়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট এখন পর্যটন নগরীতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা যেভাবে পর্যটন নগরীকে দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে একইভাবে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকলে আরও এলাকাটি আরও উন্নতি লাভ করবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবার পর্যটকদের সংখ্যা বেশি, ব্যবসা মোটামুটি ভাল হচ্ছে। পর্যটকদের সেবা দিতে আমরা প্রস্তত রয়েছি।
No comments