‘আলোচনার আহ্বান আর নয়, পদত্যাগের দাবি আসছে’ by কাজী সুমন
ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এখন আর আলোচনার প্রস্তাব নয়, পদত্যাগের দাবি জানাবেন বিএনপি’র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মহাত্মা গান্ধী যেভাবে অহিংস আন্দোলন করে বৃটিশদের হটিয়েছিলেন একই ভাবে আন্দোলন করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটাতে চায় বিএনপি। তবে অহিংস আন্দোলনে যদি পুলিশ গুলি চালায় তাহলে রাজপথে দলের নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে থেকে তা মোকাবিলা করবে। মানবজমিনকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর কমিটিকে সুসংগঠিত করার দায়িত্ব আমাকে দেয়া হয়েছে। এই দায়িত্বটা আমাকে না হলে অন্য কাউকে নিতে হতো। তবে মহানগরে দীর্ঘদিনের যে বন্ধ্যাত্ব রয়েছে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। মহানগরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয় তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নতুন কমিটি কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, ঢাকা মহানগরের কোন থানা বা ওয়ার্ডে সুসংগঠিত কোন কমিটি নেই। বিভিন্ন থানায় নানা গ্রুপ, দলাদলি কিংবা নতুন করে তৈরি হওয়া কোন্দলে জর্জরিত। আবার যারা অনেকদিন ধরে একই পদে আছেন তারা অবস্থান ছাড়তে চাইছেন না। অথচ তিনি নিজেও কিছু করতে পারছেন না। এ ধরনের কিছু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই সংগঠন করে এই পর্যায়ে এসেছি। আগে সংগঠনের সম্মেলনের জন্য কোন এলাকার কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতাম। সেখানে দিনব্যাপী আলোচনা চলতো। ইলেকশন বা সিলেকশনের মাধ্যমে কমিটি নির্বাচিত হতো। কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে, আমরা যেমন রাস্তায় মিছিল করতে পারি না তেমনিভাবে কোন কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করলে সেখানেও পুলিশ বাধা দেয়। যেটা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অগণতান্ত্রিক। তবে সে সব বাধাও অতিক্রম করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বেঁধে দেয়া দুই মাস সময়ের মধ্যে থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমাদের নতুন কমিটি দায়িত্ব পাওয়ার পর এক মাস চলে গেছে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে। কালো পতাকা মিছিল, মানববন্ধন, জনসভা, হরতালের মতো বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করেছি। তার ওপর সপ্তাহে ৫ দিন আমাদের কোর্টে যেতে হয়। সেই হিসেবে ২ মাস পূর্ণাঙ্গ হয়নি আমাদের। ঘণ্টার হিসাবে এক মাসও হয়নি। তবে ঘণ্টা আর মাস হিসাব করে কমিটি করা যাবে না। সুষ্ঠু, সুন্দর কমিটি করার জন্য আমার যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকু ব্যয় করবো। তাতে আমি অনেকখানি এগিয়ে গেছি। মহানগরের গঠিত টিমপ্রধানদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, আসলে ১৫টা টিম করা হয়নি। কথাটা ছড়িয়ে গেছে। আমিই সব করছি। যাকে আমি এক্সপার্ট মনে করছি তাকে এলাকাগুলোর দায়িত্ব দিচ্ছি। সেই হিসেবে কেউ যদি বাসা বাড়িতে কিংবা নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক আলোচনা সেরে নেন তাহলে তো দোষের কিছু নেই। আমিও তো অফিসে সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। আপনি ও সাদেক হোসেন খোকার আলাদা বলয় আছে বলে আলোচনা আছে এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি মনে করি না আমার কোন আলাদা অনুসারী আছে। সাদেক হোসেন খোকারও কোন অনুসারী আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। তবে তিনি যেহেতু মেয়র ছিলেন তাকে কেন্দ্র করে কিছু লোকের একটি বলয় গড়ে উঠেছিল। সেটা ছিল স্বার্থান্বেষী মহল। এছাড়া আর কোন অনুসারী নেই। সবাই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের অনুসারী। সবাই বিএনপি’র রাজনীতি করেন। আন্দোলন সফল করার জন্য কোন সমন্বয় কমিটি করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ২০ দলের তো একটা সমন্বয় কমিটি আছে। এছাড়া বিএনপি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের সমন্বয় কমিটির কোন প্রয়োজন নেই। সবাই তো বিএনপি করেন। সহিংসতার জন্য সরকারের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বিএনপি’র এই প্রভাবশালী নেতা বলেন, অতীতে ’৫২-র ভাষা আন্দোলন ছিল অহিংস। রাজপথে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে যখন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়েছিল তখন পুলিশ গুলি চালিয়েছে। সহিংতা করেছিল পুলিশ। একই ভাবে আমাদের অহিংস আন্দোলনে পুলিশ সহিংসতা করছে। আমরা কোন রেজিমেন্টাল ফোর্স কিংবা সশস্ত্র দল নই। আমরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে রাজপথে অহিংস আন্দোলন করবো। অহিংস আন্দোলনে সরকার পতনের বিষয়ে তিনি বলেন, গান্ধী যদি অহিংস আন্দোলন করে বৃটিশদের হটাতে পারেন তাহলে আমরা পারবো না কেন? আমরাও এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে পারবো। পুলিশের গুলির ভয় দেখিয়ে যদি এবার বিরোধী জোটের আন্দোলন ঠেকানোর চেষ্টা করে সরকার তাহলে বিএনপি’র কৌশল কি হবে- এমন প্রশ্নে মির্জা আব্বাস বলেন, গত ২৯শে ডিসেম্বরের আগে পুলিশ যা করেছে এবারও তা করবে নিশ্চিতভাবে অনুমান করা যায়। এবারও যদি পুলিশ গুলি করে আমরা রাজপথে দাঁড়িয়ে থাকবো। আমি দলের নেতাকর্মীদের বলেছি, গুলি ওরা করুক। অহিংস আন্দোলনে পুলিশ যখন সহিংসতা করবে তখন সাধারণ মানুষ এর জবাব দেবে। সাধারণ মানুষ যখন দেখবে, আমার ভাই রাস্তায় গুলি খেয়েছে তখন তারা ঘরে বসে থাকবে না। এটা অতীতে বাংলাদেশে কখনও হয়নি। বিএনপি’র আলোচনার প্রস্তাব সরকারের নাকচ করার বিষয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কয়েকদিন আগে আমার দেখা হয়েছিল। উনি আর আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহী নন। এখন তিনি শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের কথাই বলবেন।
সামনের আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে আব্বাস বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কখনও সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের কথা বলেননি। আন্দোলন যথাসময়ে হয়েই যাবে। ঈদের পর না কোরবানির পর, না মহররমের পর- এটা বলা খুব কঠিন। তবে সামনে এখন যা করছি সেরকম স্বাভাবিক কর্মসূচি থাকবে। মিছিল, জনসভা এবং জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি থাকবে।
সামনের আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে আব্বাস বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন কখনও সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনের কথা বলেননি। আন্দোলন যথাসময়ে হয়েই যাবে। ঈদের পর না কোরবানির পর, না মহররমের পর- এটা বলা খুব কঠিন। তবে সামনে এখন যা করছি সেরকম স্বাভাবিক কর্মসূচি থাকবে। মিছিল, জনসভা এবং জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি থাকবে।
No comments