ভিডিও পাইরেসি ও নকলের দৌরাত্ম্য বাড়ছেই by মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে ভিডিও পাইরেসি এবং নকল গল্পের ছবি নির্মাণ। বলা যায়, সাম্প্রতিক ভিডিও পাইরেসি ও নকলের দৌরাত্ম্য ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযোজকদের হাতে চলে যাচ্ছে পাইরেটেড সিডি কিংবা টেলিফোন। দাবি করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। প্রযোজকরা ভিডিও পাইরেসি ঠেকিয়ে রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিকে টাকা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নিজের ছবিকে রক্ষা করতে পারছেন না। যেসব প্রভাবশালী প্রযোজক পরিবেশক ভিডিও পাইরেসির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে লালন-পালন করেছেন, রক্ষা করেছেন, সেসব প্রযোজকের ছবিও পাইরেসি হয়ে যাচ্ছে। পথে বসে যাচ্ছেন প্রযোজকরা। ডিজিটাল সিনেমা কিংবা প্রজেক্টরে পেন ড্রাইভ দিয়ে ছবি প্রদর্শনের কারণে ভিডিও পাইরেসি অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। একজন ব্যস্ত চিত্রসম্পাদক ও তার সহকারীরা এই ভিডিও পাইরেসির সঙ্গে জড়িত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক জানিয়েছেন। পরিচালক আরও জানান, একটি বড় প্রযোজনা সংস্থার কর্ণধারকে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। তার হাবভাব দেখে বোঝা গেছে, বিষয়টি তিনি জানেন। বড় বড় প্রযোজনা সংস্থার মালিকদের এই রহস্যজনক আচরণের কারণে ভিডিও পাইরেসির আগ্রাসন ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর কাহিনীকার ও পরিচালক তামিল, তেলেগু ছবির হুবহু নকল করে ছবি নির্মাণ করে দর্শকদের বিরক্ত করছেন। নির্লজ্জ নকলের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের ভূমিকাও রহস্যের জন্ম দিচ্ছে। সম্প্রতি ঈদের একটি ছবি হুবহু নকলের অভিযোগে অভিযুক্ত হলেও একদিন পরে সেটা সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে যায়। এতে বিস্মিত হন চলচ্চিত্র শিল্পের অনেকেই। এর আগে হুবহু নকল ছবির বিষয়ে গণমাধ্যম সক্রিয় থাকলেও সেন্সর বোর্ডের টনক নড়েনি। অথচ সেন্সর বোর্ডের বিধি অনুসারে ছবি সেন্সরের সময় কাহিনীকার এবং পরিচালককে মুচলেকা দিতে হয়। কাহিনীকার নির্বিকারভাবে কাহিনী মৌলিক বলে লিখিত মুচলেকা দিচ্ছেন। অথচ দেখা যাচ্ছে ছবির গল্প শুধু নকল নয়, প্রতিটি দৃশ্যই হুবহু নকল। এসব ধরিয়ে দেয়ার জন্য একটি মহল আসল ছবির ডিভিডিও পাঠিয়ে দিচ্ছে সেন্সর বোর্ডে। তার পরও ছবিগুলো অবলীলায় সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে এবং অবাধে প্রদর্শন হচ্ছে। চলচ্চিত্রে দর্শক সঙ্কট, শিল্পী সঙ্কট, মেধা সঙ্কটের পাশাপাশি ভিডিও পাইরেসির আগ্রাসন এবং নির্লজ্জ নকলের দৌরাত্ম্য দেখে চলচ্চিত্রপ্রেমীরা শঙ্কিত হয়ে উঠছেন। এদিকে আবার একটি মহল বাংলাদেশে ভারতীয় ছবির বাজার তৈরির অপচেষ্টায় ব্যস্ত। সব মিলিয়ে চলচ্চিত্রের চারপাশে গভীর অন্ধকার। দেশীয় সংস্কৃতিও আজ ধ্বংসের পথে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সক্রিয় না হলে ভিডিও পাইরেসি, নকল, অশ্লীলতা, সব মিলিয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে চলচ্চিত্রবোদ্ধারা আশঙ্কা করছেন।
No comments