উলুখাগড়ার প্রাণ যায়
ভারতশাসিত কাশ্মীরের সাম্বা জেলার নাঙ্গা গ্রামে গতকাল পাকিস্তানি গোলায় ক্ষতিগ্রস্ত এক বাড়ি। এক নারী ঘরের এলোমেলো হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছেন। ছবি: এএফপি |
‘আমার বাচ্চাগুলো ঈদের নতুন জামা পরেছিল কেবল। আনন্দ করতে বের হতে তৈরি হচ্ছিল। আজ ওরা কেউই আর বেঁচে নেই।’কথাটি বলেই হুহু করে কেঁদে ফেললেন ইরাম শেহজাদি। ভারতের সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক শ গজ দূরের পাকিস্তানি গ্রাম ধামালায় বাড়ি ইরামের। মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার দিন ভারত-পাকিস্তান গোলাগুলির শিকার হয় ইরামের তিন ছেলের মধ্যে দুজনই। বিরোধপূর্ণ কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলা তুমুল সংঘর্ষে পাকিস্তানের দিকে ১১ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ধামালা গ্রামেরই তিনজন। দুই ছেলে ছাড়াও ইরামের বাড়ির এক বৃদ্ধাও মারা যান। ইরামের বেঁচে যাওয়া ছেলে ছয় বছরের আকিল আখতারও আহত। তাকে ভর্তি করা হয়েছে গ্রামের কাছের এক হাসপাতালে। সীমান্তে অব্যাহত গোলাগুলিতে ইতিমধ্যে পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশের ১৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
যদিও দুটি দেশের মধ্যে ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কাগজে-কলমে এখনো বলবৎ। এবারের সংঘর্ষে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং যুদ্ধবিরতি শর্ত ভঙ্গ করার জন্য দুই দেশ পরস্পরকে দায়ী করছে। এই দোষারোপের মধ্যে প্রাণ যাচ্ছে ‘উলুখাগড়া’ সাধারণ মানুষের। প্রাণভয়ে দুই দেশের সীমান্তবর্তী বহু গ্রামের হাজারো মানুষ ঘর ছেড়েছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের এমন একটি গ্রাম আরানিয়া। পুরো গ্রামের সব ঘরের দুয়ারে খিল আঁটা। চারদিকে সুনসান। গ্রামে কেবল আছে গৃহপালিত গবাদিপশু আর কুকুর। পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া গোলায় আরানিয়া গ্রামের সুবর্ণা দেবীর ভাই ও ভাবি প্রাণ হারিয়েছেন। সুবর্ণা বললেন, ‘যখন গোলা পড়ল, তখন ওরা দুজনই ঘুমিয়ে ছিল। আঘাতের সঙ্গে সঙ্গেই ওরা মরে যায়।’ আরানিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ১০ কিলোমিটার দূরের সালেহরের সরকারি হাইস্কুলে। এখানে আশ্রয় নেওয়া সত্যদেবী বলছিলেন, ‘কেবল গায়ের কাপড় পরেই চলে এসেছি। সঙ্গে আর কিছু নেই।’ ভারতভূষণ নামের আরেকজনের কথা, ‘আমরা গ্রামে গিয়ে মরতে চাই না। কিন্তু গ্রামে জমিজমা আছে। কী করব, ভেবে পাই না।’ সূত্র: বিবিসি
No comments