লক্ষ্মীপুরে পুলিশের এএসআই জলিলকে গুলি করে হত্যা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থানার সামনে
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিলকে গুলি করে হত্যা
করা হয়েছে। রায়পুরা থানার ওসির দাবি করেছেন, নিজ গুলিতে আবদুল জলিল নিহত
হয়েছেন। তবে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, নিজ গুলিতে নয়
দুর্বৃত্তদের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন। ঘটনা তদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুরের
পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর রহমান তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি
গঠন করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঈদুল আজহার আগের দিন
থেকে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ ও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের দাবিতে স্থানীয়
পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় লক্ষ্মীপুর-রায়পুর
সড়কের বাসাবাড়ি থেকে রাখালিয়া বাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় রাস্তায়
গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সড়ক অবরোধ করে শত শত
মানুষ। এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীবাহী বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে
যায়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। এ সময় রায়পুর থানা পুলিশের সঙ্গে
লক্ষ্মীপুর গোয়েন্দা পুলিশ এবং জেলা পুলিশ লাইনস থেকে অন্যান্য পুলিশের
সঙ্গে (এএসআই) উপ-সহকারী পরিদর্শক মো. আবদুল জলিলসহ অতিরিক্ত পুলিশ
ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য। এসময় পুলিশের সঙ্গে
ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে বিক্ষুব্ধ জনতার সঙ্গে। এক
পর্যায়ে পুলিশ সড়ক থেকে গাছ ও লোকজনকে সরিয়ে দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করে।
পরে ওই রাত সাড়ে বারোটার দিকে রায়পুর থানার সামনে একটি চা দোকানে বসে চা
খাচ্ছিলেন এএসআই আবদুল জলিল। চা খাওয়া অবস্থায় গুলির শব্দ শুনে সহকর্মীরা
এগিয়ে আসে জলিলের কাছে। এতে আবদুল জলিল বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে
পড়ে। পরে তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে
আনার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার লাশ উদ্ধার করে
ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ দিকে রায়পুর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মঞ্জরুল হক আখন্দ সাংবাদিকদের জানান, আবদুল জলিল
নিজ বন্দুকের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তবে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী
সূত্রে জানা গেছে, থানার সামনে বিপুল পরিমাণ পুলিশের উপস্থিতি ছিল। হঠাৎ
একটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই এএসআই আবদুল জলিল
গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কার গুলিতে আবদুল জলিল গুলিবিদ্ধ হয়ে
মারা গেছে সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। অপর দিকে শুক্রবার সকালে
ময়নাতদন্ত শেষে জেলা পুলিশ লাইন মাঠে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার প্রথম নামাজে
জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজাতে অংশ নেন জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান সাফিউর
রহমানসহ উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও নিহতের বড় ভাই আবদুল
মতিনসহ পরিবারের লোকজন। জানাজা শেষে বড় ভাই আবদুল মতিনের কাছে নিহতের মরদেহ
হস্তান্তর করেন পুলিশ সুপার। নিহতের ভাই আবদুল মতিন জানান, বিকাল ৩টায়
নোয়খালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের হরিবল্লভপুর গ্রামের
বাড়িতে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। পরে পুলিশ
সুপার এক প্রেসব্রিফিংয়ের আয়োজন করেন। তিনি জানান, ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ
কর্মকর্তা আবদুল জলিলের শরীরে যে গুলি পাওয়া গেছে, ওই গুলি আবদুল জলিলের
ব্যবহৃত এসএমজির গুলি নয়। এটা ছিল শটগানের গুলি। বিদ্যুতের দাবিতে
লক্ষ্মীপুর-রায়পুর সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক
অবরোধ করার পর রাতে দুর্বৃত্তরা সুযোগ নিয়ে তাকে গুলি করতে পারে এবং অন্য
পুলিশ ও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। এসব শটগানের
গুলি ব্যবহার করে মূলত সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.
মারুফ হোসেনকে তদন্ত টিমের প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি
গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেন এএসপি সার্কেল মো. সৈকত শাহীন ও
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা মো. মঞ্জুরুল হক আখন্দ। প্রেস ব্রিফিংকালে
উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার
(সার্কেল) মো. সৈকত শাহীন, সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাসিম মিয়া ও সদর থানার
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন প্রমুখ। নিহত আবদুল জলিলের গ্রামের
বাড়ি পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার হরিভল্লবপুর গ্রামের
মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে। তার পরিবারে রয়েছে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও দুই ছেলে।
No comments