বেইজিংয়ে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
জিকো চেয়েছিলেন, চেয়েছিলেন রোনালদো—দ্য
ফেনোমেননও। ‘সম্ভাবনার সূত্র’, ‘মন্টে কার্লো সিমুলেশন’—এমন আরও কত কঠিন
তত্ত্ব মিলিয়ে-টিলিয়ে ‘গোল্ডেন স্যাকস’ নামে ওয়াল স্ট্রিটের অন্যতম
প্রভাবশালী বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংকও বলে দিয়েছিল, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা
ফাইনালই হবে বিশ্বকাপে! সেটা হলে দারুণ হবে—বলেছিলেন নেইমারও। আর সবার মতো
তাঁর কাছেও এটা স্বপ্নের ফাইনাল। ক্লাব-সতীর্থ ও বিশ্বের অন্যতম সেরা
ফুটবলার লিওনেল মেসিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
মেসি-নেইমাররা তখনো জানতেন না জোয়াকিম লোয়ের দল এমন ‘নিষ্ঠুর’ পরিকল্পনা
এঁটে রেখেছে তাঁদের জন্য। সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে ওদের ফুটবল ইতিহাসের
সবচেয়ে বড় লজ্জা দিয়ে আর ফাইনালে মেসিদের কাঁদিয়ে বিশ্বকাপ জিতল জার্মানি।
স্বপ্নের ফাইনাল স্বপ্নই রয়ে গেল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার কাছে।
না, বেইজিংয়ের ‘বার্ডস নেস্টে’ আজ সন্ধ্যার ম্যাচটা সেই স্বপ্নপূরণ করবে না। বিশ্বকাপের ফাইনালের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচের তুলনা হয় নাকি! এটা মেসি-নেইমাররা যেমন জানেন, তেমনি জানেন দুদলের সমর্থকেরাও। তাই বলে উন্মাদনাটা কি কম? ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচ বলে কথা! যে দুটি দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবলভক্তের রক্তে উন্মাদনার আগুন জ্বলে ওঠা। সেটা বিশ্বকাপেই হোক বা প্রীতি ম্যাচে। বুয়েনস এইরেস, রিও ডি জেনিরোতে হোক কিংবা বেইজিংয়ে। প্রতিবেশী দুদেশের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব তো আছেই, সঙ্গে আলাদা মাত্রা যোগ করা পেলে-ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে চিরন্তন বিতর্ক। সম্প্রতি যোগ হয়েছে সময়ের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলার মেসি-নেইমারকে মুখোমুখি হতে দেখার বাড়তি আকর্ষণও। এরপর ম্যাচটা শুধুই ‘প্রীতি ম্যাচ’ থাকে কী করে! আর্জেন্টিনার কোচ জেরার্ডো মার্টিনো তো বলেই দিয়েছেন, ‘জাতীয় দলের দ্বৈরথগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল লড়াইটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা কোথায় হচ্ছে সেটা বড় নয়, বড় কথা হচ্ছে দুদেশের ইতিহাস। খেলোয়াড়দেরও এটা ভালোই জানা।’
চিরন্তন এই দ্বন্দ্ব ছাড়াও এই ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ দুই দলের দুই নতুন কোচ মার্টিনো আর কার্লোস দুঙ্গার জন্য। বিশ্বকাপের পর জাতীয় দলের দায়িত্ব পাওয়া দুই কোচের সামনেই আপাতত লক্ষ্য আগামী বছরের কোপা আমেরিকা। তার জন্য দলকে ঠিক রাস্তাটা দেখানোর কাজটা এখন থেকেই শুরু করে দিতে চান দুঙ্গা আর মার্টিনো। বিশ্বকাপের পর গত মাসে ডুসেলডর্ফের প্রীতি ম্যাচে জার্মানিকে ৪-২ হারিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী আর্জেন্টিনা। তাই ব্রাজিলের বিপক্ষেও সেই একই কৌশল ধরে রাখতে চান আর্জেন্টিনার কোচ, ‘জার্মানির সঙ্গে যেভাবে খেলেছি সেভাবেই এ ম্যাচে খেলার চেষ্টা করব।’ বিশ্বকাপের পর কলম্বিয়া আর ইকুয়েডর দুই দলকেই ১-০ গোলে হারিয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে দুঙ্গার ব্রাজিলও। স্কলারির বিশ্বকাপ দলে উপেক্ষিত কাকা ডাক পেয়েছেন দুঙ্গার দলে। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও এসি মিলান মিডফিল্ডারও বলে দিয়েছেন, সুযোগ পেলে বুঝিয়ে দেবেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। শেষ পর্যন্ত ৩২ বছর বয়সী ব্রাজিল মিডফিল্ডার খেললে ডি মারিয়া-ফার্নান্দো গ্যাগোদের সঙ্গে মাঝ মাঠে বল দখলের লড়াইটা আরও জমবে বলেই আশা করা যায়।
তবে ফুটবল-বিশ্ব আদতে তাকিয়ে আছে মেসি-নেইমারের লড়াই দেখার জন্যই। যে লড়াইয়ের আগে নেইমারও রসিকতা করে বলেছেন, ‘মেসির মুখোমুখি হওয়াটা সব সময়ই দারুণ। তবে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে সে বল না পায়।’ আর মেসি? আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড শুধু বলেছেন, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে নামতে আমি তৈরি।’
মেসি তৈরি, তৈরি নেইমারও।
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থকেরা তৈরি তো? গোল ডটকম, এএফপি।
No comments