শুভ বিজয়া-শক্তিশালী হোক সম্প্রীতির বন্ধন

মহালয়ায় পূর্বপুরুষদের তর্পণের ভেতর দিয়ে বেজে উঠেছিল তাঁর আগমনী সুর। আজ বিজয়া দশমী। গত শনিবার ষষ্ঠীতে বোধনের ভেতর দিয়ে শুরু হওয়া বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ দিন। এবার গজে চড়ে দেবীর আগমন ঘটেছে মর্ত্যে।


এর অর্থ এবার ফসলাদি ভালো হবে- 'গজে চ জলদাদেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।' আজ তিনি বিদায় নেবেন নৌকায়। নৌকায় বিদায় নেওয়া মানে শস্যবৃদ্ধি- 'নৌকায়ং শস্যবৃদ্ধিস্তথা জলম।' দুর্গতিনাশিনী হিসেবে সম্মানীয়া এই দেবী বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে দুর্গা। পরম পূজনীয়া তিনি। তিনিই আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা। মানবের কল্যাণে ও অশুভের ওপর শুভর বিজয়কে তিনি নিশ্চিত করেন। অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয়। তিনি মানুষকে মহৎ হতে প্রাণিত করেন। দূর করেন মানুষের মনের দৈন্য। তাই শুভ ও অশুভর দ্বন্দ্বে শুভ শক্তির বিজয়ের তাৎপর্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি সর্বজনীন।
বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে শারদীয় দুর্গোৎসব বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অন্যায়, অশুভ ও অসত্যের বিরুদ্ধে ন্যায়, শুভ ও সত্যের চূড়ান্ত বিজয় ঘটে- এই হলো সব সম্প্রদায়ের মানুষের, সব ধর্মের মূল কথা। মানুষের পরম লক্ষ্য আত্মিক শুচিতা অর্জন ও তা রক্ষা করে চলা। কিন্তু মানুষ সে লক্ষ্যে সব সময় অবিচল থাকতে পারে না। কখনো কখনো মানুষ পথের দিশা হারায়। হয়ে ওঠে নির্মম, কখনো বা নৃশংস। পৌরাণিক মহিষাসুর সেই নির্মমতা ও নৃশংসতারই প্রতীক। মানুষকে পতন ও ধ্বংসের পথে টেনে নিয়ে যায় মানুষের মনের ভেতরে থাকা মহিষাসুর। মানুষকে সেই পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে আবির্ভূত হন দেবী দুর্গা। তিনি মানুষকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করে সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে দেন। খণ্ডাংশ থেকে সমগ্রের দিকে, অপূর্ণতা থেকে পূর্ণতার দিকে, বিচ্ছিন্নতা থেকে মিলনের দিকে, বিরোধ থেকে ঐক্যের দিকে মানুষের যে চিরন্তন যাত্রা- এই যাত্রাপথে দেবী দুর্গা মানুষের চিরন্তন দিশারি। দুর্গতিনাশিনী হিসেবে সম্মানীয়া আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত দেবী দুর্গা মানবের কল্যাণে এবং অশুভের ওপর শুভর বিজয়কে নিশ্চিত করেন।
ষষ্ঠীর দিন থেকেই দেশজুড়ে যে উৎসবের আমেজ শুরু হয়, পরের দিনগুলোতেও সেই পরিবেশ ও আবহ বজায় থেকেছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মন্দির প্রাঙ্গণ ছিল উৎসবে মুখর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভক্তদের এবং নারী-শিশুসহ সব বয়সের মানুষের নির্বিঘ্ন ও নিঃশঙ্ক আনাগোনায় মুখর ছিল দেশের সব পূজামণ্ডপ। উৎসবমুখর ছিল সারা দেশ।
বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষে-মানুষে সব বিভেদ ও সংকীর্ণতা চিরতরে দূর হয়ে যাক। শক্তিশালী হোক মিলন ও সম্প্রীতির ধারা। বিজয়া দশমীতে সত্য, ন্যায় ও শুভ শক্তির জয় হোক- বিজয়া দশমীতে এটাই আমাদের কামনা। সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা। শুভ বিজয়া।

No comments

Powered by Blogger.