কর্মের মাঝে বেঁচে থাকবেন চিরদিন- বিদায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন অবিভক্ত বাংলায়। বাংলা সাহিত্যে বিপুল ঐশ্বর্য যোগ করার জন্যই যেন-বা তাঁকে জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর। ইতিহাসের দুর্বিপাকে উপমহাদেশ বিভক্তির ফলে তাঁর পরিচিতি ঘটেছে ভারতীয় কবি ও কথাশিল্পী হিসেবে।


কিন্তু নিজেকে তিনি বলতেন বাংলাদেশের সন্তান। গত সোমবার রাতে ৭৮ বছর বয়সে যে মানুষটি আলোছায়ামায়াময় পৃথিবীর রূপরসগন্ধ পেছনে ফেলে অমরলোকে চলে গেলেন, তাঁর চিরপ্রস্থান আমাদের বেদনার্ত করে।
বহুলপ্রজ এই কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, শিশুসাহিত্যিক ও ভ্রমণসাহিত্য রচয়িতা বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সর্বাধিক জনপ্রিয়দের একজন। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, বাংলাদেশেও তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় ঔপন্যাসিকদের একজন। এবং এই জনপ্রিয়তা শুধু রাজধানী বা বড় বড় শহরকেন্দ্রিক নয়, এ দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বইয়ের দোকান ও পাঠাগারের তাকে পাওয়া যায় তাঁর বইগুলো। তাঁর অনেক কবিতার পঙিক্ত এখনো তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফেরে; অত্যন্ত জনপ্রিয় অনেকগুলো উপন্যাস সৃষ্টি হয়েছে তাঁর হাতে।
সাহিত্যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রবেশ কবিতা দিয়ে; তরুণ বয়সে তাঁর সম্পাদনায় কৃত্তিবাস নামের কবিতা পত্রিকাকে ঘিরে গড়ে ওঠে একধরনের কাব্য আন্দোলন। কবি হিসেবে সুনীলের জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে মানব-মানবীর চিরন্তন আবেগের হূদয়গ্রাহী ও কাব্যিক প্রকাশের দক্ষতা। সহজ-সরল কাহিনিগদ্য রচনায় অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রয়েছে তাঁর উপন্যাসগুলোতে। ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিষয়কে উপজীব্য করে তিনি বেশ কয়েকটি বৃহদাকার উপন্যাস রচনা করেছেন, যেগুলোতে আমাদের অভিন্ন ইতিহাসের বিশেষ কিছু সময় বাস্তবরূপে মূর্ত হয়েছে। এসব উপন্যাসে ইতিহাসের সত্য-মিথ্যার বিচারের থেকেও বেশি আবেদনময় হয়ে উঠেছে মানবিক সম্পর্কে নাটকীয়তা, তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা। তাঁর লেখা ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাসগুলোও একেকটি মানবিক দলিল।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম সুহূদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়িয়ে লিখেছেন অনেক কবিতা ও প্রবন্ধ, ঘুরেছেন অনেক শরণার্থী শিবির। বাংলাদেশ তাঁকে স্মরণ করবে। তাঁর রচিত সৃষ্টিকর্মের মাঝে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন এ দেশের অগণিত পাঠকের মনে।

No comments

Powered by Blogger.