চরাচর-আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ দিবস by পাভেল রহমান

২৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ দিবস। ১৯৪৭ সালে সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতিসংঘ সনদ অনুমোদনের দিন প্রতিবছর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে পালন করা হয়।


দিবসটি উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানানো। ফলে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্নভাবে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘ দিবস উদ্‌যাপন করে, সেসব দেশের নাগরিকদের জাতিসংঘের কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হয়। ১৯৭২ সাল থেকে ২৪ অক্টোবরকে একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক তথ্য দিবস হিসেবেও উদ্‌যাপন করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ও মানবিক বিষয়ে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ। প্রতিষ্ঠাকালে সদস্যসংখ্যা ছিল ৫১, বর্তমানে এর সদস্য হিসেবে কাজ করছে ১৯৩টি রাষ্ট্র। জাতিসংঘের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশ্বের জাতিগুলোর মধ্যে আইনের সঠিক প্রয়োগ, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি ও মানবাধিকার বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করা। ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বান কি মুন জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন রাষ্ট্র ও জাতিসত্তার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করলেও যথেষ্ট পরিমাণে সমালোচনাও রয়েছে জাতিসংঘকে নিয়ে। অনেকে মনে করেন, জাতিসংঘ শুধু প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। সমালোচনা থাকলেও বিশ্বের অনেক পিছিয়ে পড়া জাতি-গোষ্ঠীর সাহায্যে জাতিসংঘ এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘ কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যুদ্ধবিরতির কথা বললে রাশিয়া তখন ভেটো প্রস্তাব আনে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের পর বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিলে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে জাতিসংঘের ভূমিকা খুবই নগণ্য। তাই প্রতিষ্ঠার ৬৭ বছরে দাঁড়িয়ে জাতিসংঘের কাছে সাধারণ মানুষের একটাই চাওয়া, জাতিসংঘ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরো বেশি সক্রিয় হবে এবং নিপীড়িত মানুষের পাশে থাকবে। তাই এবারের জাতিসংঘ দিবসে আমাদের প্রত্যাশা, জাতিসংঘ যেন প্রভাবশালীদের মুখপাত্র না থেকে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কাজ করে।
পাভেল রহমান

No comments

Powered by Blogger.