ভূমিকম্পের পূর্বাভাসে ব্যর্থতা-ইতালির ছয় বিজ্ঞানীসহ সাতজনের কারাদণ্ড

ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থতার দায়ে ইতালির ছয় বিজ্ঞানী এবং এক সরকারি কর্মকর্তাকে ছয় বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে লাকুইলা শহরে আঘাত হানা ৬ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জনগণকে ঠিকঠাক সতর্কতা দিতে পারেননি তাঁরা।


ওই ভূমিকম্পে ৩০৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। অভিযুক্তদের প্রায় এক কোটি ২০ লাখ ডলার জরিমানাও করা হয়েছে। গত সোমবার লাকুইলায় স্থাপিত একটি আদালত এ রায় দেন।
তবে নজিরবিহীন এ বিচার নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহলে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ রায়ের প্রতিবাদে ইতালির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক ব্যুরোর মেজর রিস্কস কমিটির (এমআরসি) প্রধান লুসিয়ানো মায়ামি পদত্যাগ করেছেন। ভূকম্পবিদরা বলছেন, এ বিচারের মাধ্যমে কেবল বিজ্ঞানের এই শাখাকেই নয়, পুরো বিজ্ঞানকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে।
আদালতের রায় অনুযায়ী, জরিমানার অর্থ ভূমিকম্পের আঘাত থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া হবে। বাদীপক্ষের দাবি, বিজ্ঞানের সতর্কতা যথাযথ হলে প্রাণহানির সংখ্যা কমত। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তদের চারজন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দেশটির আইন অনুযায়ী, এ রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা দুই দফা আপিল করার সুযোগ পাবেন। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা মুক্ত থাকবেন।
২০০৯ সালের ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পে মধ্যযুগে গড়ে ওঠা শহরটির ৩০৯ জন মারা যায়। ঘরবাড়িসহ পুরনো অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ভেঙে পড়ে। ক্ষতির শিকার হয় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার মানুষ। অভিযুক্ত সাতজন ২০০৯ সালে এমআরসির সদস্য ছিলেন। ভূমিকম্প আঘাত হানার ছয় দিন আগে ৩১ মার্চ তাঁদের জারি করা সতর্কতায় এর ঝুঁকির মাত্রা কম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এতে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়ে দাবি করে সরকারি কৌঁসুলি ফাবিও পিচুতি প্রত্যেকের চার বছরের কারাদণ্ডের আর্জি জানান আদালতে। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা সাধারণ মানুষের সামনে 'অসম্পূর্ণ, অপটু ও ভুলভাল' বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। এর ওপর ভরসা করে মানুষজন ভূমিকম্পের প্রথম আঘাতের পরও ঘরবাড়িতে থাকে। তা না হলে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে বাইরে বের হলে এত বেশি মানুষ মারা যেত না। দণ্ডপ্রাপ্তদের একজন ইতালির জাতীয় ভূবিদ্যাবিষয়ক ইনস্টিটিউটের (আইএনজিভি) তৎকালীন প্রধান এনজো বোশি। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, 'আমি হতাশ, ক্ষুব্ধ। আমার ধারণা ছিল, আমি বেকসুর খালাস পাব। আমি এখনো বুঝতে পারছি না কেন আমাকে দোষী অভিযুক্ত করা হলো।'
ব্রিটিশ ভূতাত্তি্বক জরিপ সংস্থার বিজ্ঞানী রজার মুসন রায়কে 'অবিশ্বাস্য' বলে অভিহিত করেন। ইউরোপীয় ভূবিদ্যাবিষয়ক ইউনিয়নের (ইজিইউ) ভূমিকম্পবিদ্যা বিভাগের প্রেসিডেন্ট শারলট ক্রাউসজিক বলেন, 'রায়ের ব্যাপারে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। এ ঘটনায় বিজ্ঞানীরা সবাই খুব আঘাত পেয়েছেন।' তিনি বলেন, 'আমরা নিজেরা সবাই সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছি। রায়ের ব্যাপারে আমরা কঠোর ভাষায় বিবৃতি দেব, যাতে বিজ্ঞানীদের জেলে যেতে না হয়।' এ বিচার শুরু হওয়ার পরপরই আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সম্প্রদায়ের পাঁচ হাজারেরও বেশি সদস্য এর নিন্দা জানিয়ে ইতালির প্রেসিডেন্ট জর্জো নাপোলিতানোকে একটি খোলা চিঠি দেন। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.