বিদেশে খেলতে গেলেও বাবা ঈদের কাপড় কিনে দেন by তৌহিদা শিরোপা

আজ থেকে চীনে শুরু হবে ‘প্রমিলা টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ’ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল খেলতে গিয়েছে। যাওয়ার আগে দলের অফ স্পিনার খাদিজাতুল কুবরার সঙ্গে কথা হয়। ছোটবেলার ঈদ, নিজের খেলা ও নানা বিষয়ে বলেন কুবরা।


ঈদের আগে দেশের বাইরে যেতে হচ্ছে। মন খারাপ লাগছে?—এমন প্রশ্নের উত্তরে খাদিজাতুল কুবরা পেশাদার খেলোয়াড়ের মতো উত্তরটা দেন। ‘গত ঈদ প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে করেছি। একটু খারাপ যে লাগেনি তা বলব না। তবে দেশের জন্য খেলতে বিদেশে যাচ্ছি। এর থেকে বড় আর কী হতে পারে! ফলে মন খারাপ বেশিক্ষণ স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায়নি।’
গত রোজার ঈদের সময় আয়ারল্যান্ডে খেলা ছিল কুবরাদের। পরিবারকে ছাড়া সেটাই ছিল প্রথম ঈদ। বাড়ির মেয়েটিকে ছাড়া মা-বাবারও ঈদ করতে ভালো লাগেনি। বাবাভক্ত মেয়ে কুবরার মন খারাপ হলেও বাবাকে বুঝতে দেননি। উল্টো বাবাকেই বুঝিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দিন মেয়ে নতুন পোশাক পরবে না, তা কেমন করে হয়? বাবা সেবার কুবরার বিদেশ সফরের আগেই ঈদের কেনাকাটা করে ফেলেন। মেয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেন বাবার দেওয়া ঈদের নতুন সালোয়ার-কামিজ। কিন্তু ঈদের দিন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলায় হেরে গেলেন। প্রথমবারের মতো ঈদের দিন ভীষণ নিরানন্দে কাটল। মেয়ের মন খারাপ শুনে কুবরার বাবাও নতুন পোশাক পরলেন না।
কুবরা বলেন, ‘রাতে সেদিন বেশ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ দরজায় ধাক্কা। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে দিয়ে দেখি জাহান আপু, রিপা আপু আর বৈশাখী আপু। দেখি, তাঁরা ঈদের নতুন পোশাক পরে এসেছেন। আমাদের বললেন নতুন পোশাক পরে নিতে। তাঁদের উৎসাহ দেখে ঈদের আমেজ একটু হলেও টের পেলাম। বাবার দেওয়া সালোয়ার-কামিজ পরে সবার সঙ্গে ছবি তুললাম। বড় আপুরা সালামিও দিলেন।’
আগে শুধু সালামি পেতেন, এখন কুবরাকেও দিতে হয়। চার ভাইবোনের মধ্যে কুবরা মেজ। ছোট ভাইবোনেরা এখন তাঁর কাছে সালামি চায়। ‘ঈদে আগেও মজা হতো, এখনো হয়। তবে ধরনটা বদলে গেছে।’ ছোটবেলায় কুবরারা ঈদের দিন চাচা-চাচি, ফুফু-ফুফাসহ সব ভাইবোন মিলে চড়ুইভাতি করতেন। বিশেষ করে কুরবানির ঈদে গরুকে খাওয়ানো, মাংস কাটা ও মা-চাচিদের সাহায্য করে খুব আনন্দ পেতেন তিনি। সেই আনন্দ থেকে এবার খানিকটা বঞ্চিত হবেন। তা নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন কুবরা। কেননা, খেলায় জিতলে ঈদের আনন্দের থেকে বেশি আনন্দ হয়। তবে বাবা এবারও তাঁকে নতুন পোশাক কিনে দিতে ভোলেননি।
বগুড়া সরকারি মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগ থেকে সামনের বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবেন কুবরা। খেলার পাশাপাশি পড়াশোনায়ও সময় দিতে হয়। চীন থেকে ফিরে কলেজের নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে হবে। শুধু পরিবারের সহযোগিতা-সমর্থনের কারণে আজকে এত দূর আসতে পেরেছেন খাদিজাতুল কুবরা। দাদার স্বপ্ন পূরণ করতে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। কুবরা আজ জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলছেন। কিন্তু দাদা দেখে যেতে পারেননি। এটা কুবরার জীবনে সবচেয়ে বড় কষ্ট। তবে কোনো খেলায় জিতলে কুবরা ভাবেন, হয়তো তাঁর আশপাশেই দাদা আছেন।
কুবরার স্বপ্ন, একদিন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিতবে। সেই দলে তিনি খেলবেন। সে জন্য পুরো দলকে ভালো করতে হবে। ১১ জনের দলের সবাই ভালো না করলে বিশ্বকাপ আসবে কীভাবে?
কুবরার স্বপ্ন পূরণ হবে। বাংলাদেশের মেয়েরা আরও এগিয়ে যাবে, এমন প্রত্যাশা সবার।

No comments

Powered by Blogger.