নানা রঙের স্বপ্ন-শিক্ষক হতে চাই by হাবিবা সিদ্দিকা

‘তোমার স্বপ্ন কী?’ ছোটবেলায় আমরা সবচেয়ে বেশি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। একটা সময় খুব বিরক্ত হতাম এই প্রশ্নে। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার নিজেরও একটা স্বপ্ন তৈরি হয়ে গেল, যেটা ভবিষ্যতে আমি পূরণ করতে চাই ।


আমার স্বপ্নটা খুব সাদামাটা, তবে আমার কাছে স্বপ্নটা অনেক বড়। আমার স্বপ্ন, আমি একজন শিক্ষক হব। আরও একটা স্বপ্ন আছে আমার, আর তা হলো লেখালেখি। দুটোই খুব কাছাকাছি। ছোটবেলা থেকেই আমার লেখালেখি পছন্দ। আমি বই পড়তে ভালোবাসি। শুধু নিজে নয়, অপরকেও পড়তে উৎসাহিত করি। নতুন কিছু জানা, তা অন্যকে জানানো, শেখানো—এসব আমি খুব উপভোগ করি । এসব কারণে আমার স্বপ্নটা লেখালেখি ও শিক্ষকতাকে ঘিরেই। আমি সব সময় চাই যে এমন কিছু করব, যার মধ্য দিয়ে আরেকজনকে উৎসাহিত করতে পারব, অন্যের কাছে অনুকরণীয় হব।
আমি এমন হতে চাই, যাতে করে একটা সমাজকে পরিবর্তন করতে পারি, মানুষের আত্মাকে জাগাতে পারি, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারি। এমন কিছু করা আমার স্বপ্ন, যাতে মানুষ আমাকে মনে রাখে। হয়তো পৃথিবীজুড়ে সবাই আমাকে মনে রাখবে না, অত খ্যাতি লাভ অবশ্য আমার স্বপ্নও নয়, তবু আমি সব সময় চাই, কিছু মানুষ অন্তত আমাকে সারা জীবন মনে রাখবে, শ্রদ্ধা করবে, আদর্শ হিসেবে অনুসরণ করবে। আমি মনে করি, একজন লেখক এবং একজন শিক্ষকই পারেন এভাবে মানুষকে প্রভাবিত করতে। একটা সমাজ বা জাতির ভিত্তি এই দুই ধরনের মানুষের দ্বারাই স্থাপিত হয়।

দেশেই তৈরি করব বিশ্বমানের গাড়ি
মেহরাব মাসাঈদ হাবিব
শিক্ষার্থী, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (এআইইউবি)
ছোটবেলা থেকেই গাড়ির প্রতি আমার অন্য রকম এক আগ্রহ ছিল। সে সময় বিবিসিতে ‘টপগিয়ার’ দেখতাম নিয়মিত। টপগিয়ার দেখতে দেখতেই গাড়ির প্রতি এক অমোঘ নেশা জন্ম নিল আমার। এরপর স্কুলজীবনেই গাড়ি বানানোর ভূত চাপে আমার মাথায়। শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। ঠিক করলাম, অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ার হব। এরপর স্বল্প পরিসরে হলেও গাড়ির কারখানা চালু করব, যেখানে কম দামি থেকে শুরু করে বিলাসবহুল—সব ধরনের গাড়ি তৈরি হবে। আমি জানি, মধ্যবিত্ত মানুষেরই একটা চাওয়া থাকে, যদি কম দামে একটা গাড়ি পাওয়া যেত! কিন্তু সাধ ও সাধ্যের মেলবন্ধন ঘটে না অধিকাংশ সময়। এই শ্রেণীর মানুষের জন্য গাড়ি তৈরি করাই আমার জীবনের স্বপ্ন।
আমার পরিবারে আমার মা বাদে সবাই প্রকৌশলী। তবে আমি প্রকৌশল বিষয়ে পড়ছি আমার পরিবারকে অনুসরণ করে নয়, স্রেফ গাড়ি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন পূরণের জন্য। পরিবারের অনুপ্রেরণা আর নিজের ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমি এই স্বপ্ন পূরণের কাজে নেমে পড়ব খুব শিগগিরই।

স্বপ্ন বাড়ি যাবে...
আমরিন আহমেদ
শিক্ষার্থী, বিবিএ, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট
স্বপ্ন দেখতে কে না ভালোবাসে? প্রতিটি মানুষই ছোট-বড় কিছু স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হয়। ছোটবেলা থেকেই পরম যত্নে কিছু লালিত স্বপ্ন আজ আমাকে নিয়ে এসেছে এই পর্যায়ে। খুব ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম চিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই স্বপ্নের পরিবর্তন হয়, যার কারণে আমার পা পড়েছে এখন ব্যবসায় প্রশাসনে। উচ্চমাধ্যমিকের পর স্বপ্ন ছিল ভালো ফলাফল করে দেশসেরা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হব। কিন্তু ভালো ফলাফল করার পরও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি। কিন্তু তাতে কী? আমি মুষড়ে পড়িনি, বরং আমার স্বপ্নই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে সাফল্যের নতুন পথ খোঁজার জন্য। আমি এখন সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়ছি। আর স্বপ্ন দেখছি ভালো একটি ব্যাংকে চাকরি করার। ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে। সেই স্বপ্নগুলোই আমাকে পৌঁছে দেবে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের বাড়িতে।

গোয়েন্দা হওয়ার জন্য
তন্ময় দেবনাথ
শিক্ষার্থী, বিবিএ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্ন—খুবই রহস্যময় একটা শব্দ। স্বপ্ন দেখার পৃথিবী আর বাস্তবের পৃথিবী দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। অনেকেই বলে, ‘স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না। তো দেখতে দোষ কী?’
আমরা স্বপ্ন, নিজেই ব্যবসা করব, উদ্যোক্তা হব। আমার একদিন নিজের চিংড়ি ফার্ম থাকবে, মুরগির ডিমের ব্যবসা করব। কিন্তু সবাই বলল, বিয়ে করার জন্য নাকি মেয়ে পাব না। মা বলেন, ‘আমি কীভাবে মানুষজনকে বলব যে আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ডিমের বিজনেস করে?’ খুবই হাস্যকর কথা। তাই বাধ্য হয়ে আবার নিজের স্বপ্ন পাল্টালাম। ঠিক করলাম অধ্যাপক হব। আমার আরেকটা স্বপ্ন আছে—একটু ভিন্ন রকম। অনেকেই হয়তো হাসবেন। আমার ‘ফেস রিডিংয়ে’র ওপর অনেক নেশা আছে। এমনকি পড়ালেখা শুরু করে দিয়েছি এটার ওপর। কিছুটা এগিয়েছি। এখন অনেক কিছু বুঝতেও পারি।
স্বপ্ন আছে ‘অপরাধ বিজ্ঞান’ নিয়ে পড়ার। যদি দেশের বাইরে যেতে পারি, তা হলে পিএইচডির পাশাপাশি এটাও পড়ব। তারপর দেশে এসে গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেব। দেশের জন্য কিছু করব।

প্রথম সেরা
রাজনীতির সুপথের সন্ধানে
অনন্যা কানিজ, শিক্ষার্থী
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা
আতঙ্ক! সর্বত্র আতঙ্ক!!
ভালোবাসার বাগানে, সন্দেহের প্রাচীরে, পাহাড়ের চূড়ায়, মফস্বলের রাস্তায়, টিনের চালে, কংক্রিটের শহরে, কামারের হাপরে, ধীবরের জালে, বিধবা মায়ের আটপৌরে শাড়িতে, আকাশে, জমিনে...৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল স্বাধীনতা হারানোর কিংবা পরাধীন হওয়ার ভয়াল আতঙ্ক।
তখনকার সেই কালো চিতার মতো আঁধারঘেরা সময়ে চেতনার মশাল জ্বালিয়েছিল আত্মোৎসর্গকারী কতগুলো প্রাণ। আত্মপ্রত্যয়ের ক্ষীণ আলোয় আঁধার কেটে কেটে পা চালিয়েছিল সামনে। এবং দীর্ঘ নয় মাসের পথপরিক্রমা শেষে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে গড়ে তুলেছিল এক আলোকোজ্জ্বল সুবৃহৎ ভাস্কর্য, যার নাম স্বাধীনতা।
তারপর ‘জীবন গিয়াছে চলে আমাদের কুড়ি কুড়ি বছরের পার’। কিন্তু মেলেনি কোনো অর্থেই মুক্তি—না রাজনৈতিক, না অর্থনৈতিক, না সামাজিক; বরং পিছু হটতে হটতে আমরা এসে দাঁড়িয়েছি আবারও এক বিরুদ্ধ সময়ের মুখোমুখি। কাঁঠালচাঁপার গন্ধে ভরা উঠান ভরে গেছে দুধ-কলায় পোষা কালসাপে। পুনর্বার ‘জাতির পতাকা খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’। ঘাতকের গান পাউডার ঝলসে দিচ্ছে সংখ্যালঘুর শরীর। সম্ভাবনাময়ী মায়ের আঁচলে জ্বলছে ধ্বংসের আগুন। বিপন্ন মানবতা শূন্যের পরিধিতে আঁকছে স্বপ্নের স্বাধীনতা। হায় স্বাধীনতা!
কিন্তু কেন এই অনাচার? উত্তর সবারই জানা, বেপথু রাজনীতি। তবু এই বেপথু রাজনীতিকে সুপথে ফিরিয়ে আনার কোনো বিকার নেই করও মধ্যে। তাই আমি স্বপ্ন দেখি রাজনীতিবিদ হওয়ার। স্বপ্ন দেখি, আমার মতো হাজারো তরুণ হাতে হাত রেখে আবার একতাবদ্ধ হচ্ছে, ফিরিয়ে আনছে দ্বীপান্তরী সুবোধকে। একাত্তরের দুরন্ত সাহস বুকে নিয়ে ফের ঝেটিয়ে বিদায় করছে রাজনীতির মাঠ থেকে যত পাপ, তাপ ও পঙ্কিলতা।

ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতে চাই
আশা চাকমা
শিক্ষার্থী, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্নের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে আমি কিন্তু দুবার হোঁচট খেয়েছি। তবু হাল ছেড়ে দিইনি। গন্তব্য খুঁজে নিয়েছি আবার নিজের মতো করে।
আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে একসময় আমি পাইলট হতে চেয়েছি। কিন্তু বাদ সাধল আমার ওজন ও উচ্চতা। তাতে কী হয়েছে, আমার তো গণিতের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। তাকেই এবার কাজে লাগানোর স্বপ্ন বুনতে লাগলাম।
প্রকৌশলী হব, সে আশায় বুয়েটে পরীক্ষা দিলাম। কিন্তু ভাগ্য আমার সেখানেও সহায় হলো না। এবার ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পেয়েছি। খুব হতাশ হয়ে পড়েছিলাম।
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিন প্রকৌশলে ভর্তি হলাম। আমি এখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছি। এখন মনে হয়, বুয়েটে পড়া হয়নি বলে আমি খুব একটা পিছিয়ে পড়িনি। কারণ, এটাও তো একধরনের প্রকৌশলীর কাজ। এর সঙ্গে ইট-পাথর, যন্ত্রপাতির যোগাযোগ হয়তো নেই। এখানে জিনগত প্রকৌশলের কাজ হয় মানুষের শরীরের কলকবজা নিয়ে। তার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব কম কিসের। সে হিসেবে এখন আর নিজেকে কোনোভাবে খাটো মনে করি না। মনে করি, আমার গবেষণা ও দায়িত্ববোধের ওপর মানুষের জীবনের নির্ভরতার অনেক বড় সিদ্ধান্ত অপেক্ষা করছে।
ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করার ইচ্ছা আছে আমার। বিশেষ করে স্তন ক্যানসারের ওপর কাজ করতে চাইছি। কারণ, চোখের সামনে আমার এক আন্টিকে এ জন্য বেশ কষ্ট পেতে দেখেছি।
একটি কথা বলা হয়নি, আমার মা-বাবার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার বানানোর। তাঁদের কথা রাখতে পারিনি বলে অখুশী নন তাঁরা। এখনো উৎসাহ জুগিয়ে যাচ্ছেন সমানে।

স্বপ্নের পেছনে নিরন্তর
ফারুক ফয়সাল
শিক্ষার্থী, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, ঢাকা
না, হঠাৎ করেই দানা বাঁধেনি, বরং ছোটবেলা থেকেই তিল তিল করে গড়ে উঠেছে স্বপ্নটা। আমার সেই স্বপ্নটার নাম ‘অভিনেতা হওয়া’। যখন ছোট ছিলাম, তখন টেলিভিশনে নাটক-সিনেমা দেখতাম। মুগ্ধ হতাম মাহফুজ আহমেদ-জাহিদ হাসানের অভিনয় দেখে। আর মনে মনে ভাবতাম, আমিও একদিন তাঁদের মতো অভিনেতা হব। কত দিন যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় নকল করেছি তার ইয়ত্তা নেই! সুযোগ পেলেই স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোয় একক অভিনয় করতাম। কলেজে পড়ার সময়ও কলেজের অনুষ্ঠানগুলোয় থাকত আমার অবধারিত অংশগ্রহণ। এখন ঢাকার মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে সম্মান পড়ছি। কিন্তু মুখ ফিরাইনি অভিনয় থেকে। একটি থিয়েটার দলের নিয়মিত কর্মী হয়ে তালিম নিচ্ছি অভিনয়ের। আমি বিশ্বাস করি, স্বপ্নের পেছনে নিরন্তর ছুটলে স্বপ্ন একদিন না একদিন হাতের মুঠোয় ধরা দেয়ই।

দেশের জন্য কিছু করতে চাই
নাজিফা আনজুম
শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
আমার জীবনে প্রতিদিনই নতুন নতুন স্বপ্ন দানা বাঁধে। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল ভালো ড্রয়িং করব। তারপর একটু বড় হলে মনে হলো, ফ্যাশন ডিজাইন শিখব। লেখালেখিও করতে ইচ্ছা হলো। এখন যখন বড় হয়েছি, কৈশোরজীবনটা ফেলে নিজেকে একটু বড় বড় ভাবতে শিখেছি, তখন স্বপ্নটাও বদলে গেল।
রোজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে একটা বস্তি এলাকা পড়ে। সেখানে সব স্বল্প আয়ের মানুষের ঘর। জোড়াতালি দেওয়া ছাপরাঘর। কেউ রিকশা চালায়, কেউ বাসাবাড়িতে কাজ করে, কেউ হয়তো পোশাককর্মী। এসব মানুষের মানবেতর জীবন দেখে এমন কিছু করতে ইচ্ছা করে, যার মাধ্যমে তাদের জীবনমান বদলে দেওয়া সম্ভব।
দেশকে ভালোবেসে বড় বড় কথা ভাবছি তা নয়। নিজের জীবন ও চারপাশ দেখে বুঝতে পারছি কী করা দরকার। স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছা করে বড় কিছু করার। এমন কিছুর স্বপ্ন দেখি, যেখানে রাজনীতি আর মৌলবাদের গোঁড়ামি থাকবে না এবং ধর্মের নামে চলবে না অরাজকতা, দুর্নীতি-যানজট অনেক দূরে ফেলে দিতে পারব।

তারকার তকমা
রিমি করিম
শিক্ষার্থী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ
সীমাহীন স্বপ্নের মাঝে আমার বসবাস। জানি, এত সব স্বপ্নের মাঝে খুব কম স্বপ্নই বাস্তবায়িত হবে। তাই বলে হতাশ হই না, বরং আমার লক্ষ্যে পৌঁছানোর আশায় এক পা এক পা করে অগ্রসর হই।
বয়স তখন পাঁচ-ছয় বছর হবে। বাবার সঙ্গে বসে টিভি দেখছি, বাদাম খাচ্ছি আর দুষ্টুমি তো সঙ্গে আছেই। আমার মাত্রাতিরিক্ত দুষ্টুমি সহ্য করতে না পেরে বাবুলি (বাবা) বলল, ‘তোর এসব দুষ্টুমি কিন্তু তারকারা দেখছে, চুপচাপ বসে থাক, মা।’ আমি হেসে বললাম, ওরা কি একা আমাকে দেখছে? আমিও তো ওদের দেখছি। একটু বড় হয়ে বুঝলাম, নাহ্... ওরা আমাকে মোটেও দেখছে না। আর ঠিক তখন থেকেই স্বপ্নটাকে লালন করতে লাগলাম। একদিন আমিও হব এই তারকাজগতের এক উজ্জ্বল তারকা। তরুণ-তরুণীরা পত্রিকা হাতে দেখবে বিনোদন পাতায় আমার রঙিন ছবি। রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়বে বড় বড় বিলবোর্ডে আমার মুখখানি। টিভির পর্দায় কোনো বিজ্ঞাপনে, কখনো বা নাটক-সিনেমার চরিত্রে। হা... হা... আরও কত কী!
এমন স্বপ্ন আমার মনের গহিনে দোলা দেয় প্রায়ই তন্দ্রায়-জাগরণে। প্রতীক্ষার প্রহর গুনতে থাকি, কবে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে। কবে আমি স্টার... সুপারস্টার হব।

লেখক হওয়ার পথে
মোস্তাফিজুর রহমান
শিক্ষার্থী, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
লেখক হব—ঠিক কবে থেকে এই স্বপ্নটা মনের মধ্যে দানা বেঁধেছে, তা দিনক্ষণ মেপে বলতে পারব না। তবে নানা বই পড়তে পড়তেই বোধ করি এই স্বপ্নটা মনে দানা বেঁধেছে। আমার পড়ার শুরু শেক্সপিয়ারের রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট দিয়ে। এসএসসি পরীক্ষার টেস্টপেপার কিনতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে কিনেছিলাম রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট। এরপর আমার স্বপ্নের গোড়ায় জল ঢাললেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্প দিয়ে ভালোলাগা শুরু; তারপর গোটা গল্পগুচ্ছ। এখন তো রবিঠাকুরের গান ছাড়া একটা দিনও ভাবতে পারি না। কলেজে পড়া অবস্থায়ই সন্ধান পাই গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের। মার্কেসের আকাশচুম্বী সাফল্য আর পৃথিবীব্যাপী জনপ্রিয়তা আমাকে প্রতিনিয়তই লেখক হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগায়।

ভালোবাসি প্রকৃতিকে
সৌর মেহেদী হাসান
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার স্বপ্নের কখনোই কোনো সীমারেখা ছিল না। তবে সব সময়ই জীবনে বড় কিছু করার, বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বেড়ে যায়। এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়ে আমার আত্মবিশ্বাস চূড়ায় উঠে যায়। তবে ভর্তিযুদ্ধে কিছুটা হোঁচট খাই। অনেক চরাই-উতরাই পেরিয়ে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সুযোগ হয়। তবে আমার স্বপ্নের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রির তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। আমি একজন প্রকৃতিপ্রেমী। প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ আমাকে মোহিত করে। গ্রামবাংলার মাঠে-ঘাটে আমি মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াতে চাই। রোদেলা দুপুরে নাঙা গায়ে বিলের ঠান্ডা জলে অবগাহন করতে চাই। হতদরিদ্র পরিবারের খেটে খাওয়া কৃষক কী করে মুখে সুখের হাসি ধরে রাখে, সেই রহস্য জানতে চাই। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে গ্রাম্য কিশোরদের সঙ্গে কাদা মাখামাখি করে ফুটবল খেলতে চাই।

কলমসৈনিক
সামা নূর
শিক্ষার্থী, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
‘উড়াই চল স্বপ্নডানা/ আকাশ ছুঁতে নেই যে মানা’
সত্যিই! স্বপ্নডানায় ভর করে তো আকাশটাও ছোঁয়া যায়। তাই না? কিন্তু না, আমি স্বপ্নে নয়, বাস্তবতার বাহনে চড়েই পূরণ করতে চাই আমার স্বপ্ন।
আমার স্বপ্ন? আমি স্থির করছি যে আমি একজন সাংবাদিক হব। আমি এমন কিছু লিখতে চাই, যা পড়ে সাধারণ মানুষ বুকের বাঁ পাশে একটা কিছু অনুভব করবে, যে অনুভূতি তাদের মধ্যে জাগাবে দেশের প্রতি তীব্র ভালোবাসা আর যে ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তারা প্রতি মুহূর্তে শুভ কিছু ভাবতে শিখবে। আমি এটাই চাই—দোলা দিতে চাই তাদের ভাবনার জগৎটাকে। কারণ আমি জানি, সবার এই ভাবনাগুলোই একদিন একত্র করবে এই বাংলার মানুষকে। আমি আমার লেখার মাধ্যমে তৈরি করতে চাই আরেকটা মুক্তিবাহিনী, যাঁরা এই দেশকে মুক্ত করবে দুর্নীতির ভয়াল থাকা, দারিদ্র্যের অভিশাপ আর ক্ষুধার হাহাকার থেকে। আমার স্বপ্ন এটাই, আমার লেখা এ দেশের মানুষকে আবার স্বপ্ন দেখাবে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ ঠিক তার স্বপ্নের সমান হয়।...!

একটা স্কুল বানাতে চাই
জান্নাতুল ফেরদৌস
শিক্ষার্থী, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মানুষ নিজের অজান্তেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে এবং এটা প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি ছোটবেলায় ভাবতাম, দারিদ্র্য হচ্ছে আমাদের দেশের একমাত্র সমস্যা। এমন কিছু করতে হবে, যাতে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখেছি, দারিদ্র্য ছাড়াও আছে আরও অনেক সমস্যা। বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, নারী নির্যাতন, সুচিকিৎসার অভাবসহ অনেক কিছু। সুতরাং সময়ের সঙ্গে বেড়েছে আমার স্বপ্নের পরিধি।
আজ যখন বড় হয়েছি, তখন দেখি, দারিদ্র্য অনেকটাই কমে এসেছে। দেশের উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু কুসংস্কার কমেনি। নারী নির্যাতন কমলেও তৈরি হয়েছে নারী নির্যাতনের নতুন নতুন মাত্রা। তাই এখন বুঝতে পারি, সবার আগে যেটা দরকার, সেটা হচ্ছে, প্রতিটি মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। আমার স্বপ্ন, প্রথমে আমার গ্রামে এমন একটা কমপ্লেক্স করা, যেখানে থাকবে খুব ভালো প্রাইমারি স্কুল, হাইস্কুল আর একটা কলেজ। যেখানে ছেলেমেয়েদের শুধু তথাকথিত শিক্ষা নয়, বরং সততা, ন্যায়, আদর্শের শিক্ষায় পরিপূর্ণ মানুষ করে গড়ে তোলা হবে।
আমি ভর্তি হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে। আমার বিশ্বাস, আমি পারব আমার স্বপ্ন পূরণ করতে। বন্ধুদের যখন বলি আমার স্বপ্নের কথা, ওরা আমাকে বলে স্বপ্নবিলাসী। আমি হাসি। বলুক না ওরা। কিন্তু আমি ঠিকই জানি, যখন প্রয়োজন পড়বে, ওরা ঠিক আমার পাশে দাঁড়াবে। পাশে দাঁড়াবে আমার গ্রামের সব মানুষ। আমি জানি, স্বপ্ন নিয়েই মানুষ পৌঁছাতে পারে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে।

দ্বিতীয় সেরা
সবুজ পাতায় মন নাচে...
মোহন রবিদাস
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্ন দেখতাম, একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসের কারণে সেই স্বপ্নও পূরণ হলো। মহানন্দে পড়তে এলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কিছুদিন পরই আবিষ্কার করলাম, ১০ লক্ষাধিক চা-জনগোষ্ঠীর মধ্যে এখানে ঠাঁই মিলেছে মাত্র একজনেরই! ভাবতেই মনটা ভারী হয়ে গেল। কিছুদিন পর আরও জানলাম, অনগ্রসর বা পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য এখানে বিশেষ ‘কোটা’ রয়েছে। কিন্তু দুঃখ পেলাম, যখন জানলাম, সেই কোটায় আমাদের ঠাঁই নেই! এরপর চা-জনগোষ্ঠী দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী হয়েও কেন এই কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়লাম দীর্ঘ দুটি বছর। কিন্তু কোনো উত্তর পেলাম না। যা হোক, এখন লক্ষ্য একটাই, যেকোনো মূল্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চা-বাগানের ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে হবে। তাই প্রতিটি বাগানে গিয়ে ভর্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করলাম। সেই মন্ত্রে সাড়া দিয়ে এবার চা-বাগানের ১০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা চা-বাগানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। তাই এখন স্বপ্ন দেখছি চা-বাগানের ছাত্র-ছাত্রীরাও দেশের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। আমরাও একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ছাদে সমস্বরে গেয়ে উঠব চা-বাগানের গান—‘সবুজ টিলায়, সবুজ গাছে সবুজ পাতায় মন নাচে...ও ও ও শ্রমিক ভাই...’।

তৃতীয় সেরা
অর্ডার! অর্ডার!
আরেফিন সুলতানা
শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
সেই ছোটবেলার কথা। তর্কযুদ্ধে নামার বড় শখ ছিল। তখন ছোট ছোট বিষয়কে যুক্তির খাপে মাপার চেষ্টা করতাম। কারণ, আমার মনে হতো, সমাজের এত এত অসংগতির শেষ কোথায়? স্বপ্ন দেখতাম, কালো গাউন পরে বিচারকের আসনে বসে আছি। মাঝেমধ্যে বলছি, অর্ডার...অর্ডার। সেই স্বপ্নকে জীবন থেকে ছুটি দিইনি। তাই পাঠ নিচ্ছি আইন বিষয়েই। স্বপ্ন দেখি, আইনজীবী হয়ে অসহায় মানুষের আইনি সহায়তা দেব বিনা মূল্যে।
জীবনের নানা চড়াই-উতরাই থেকে শিখেছি, জীবন একটা লড়াইক্ষেত্র। এই লড়াইক্ষেত্রে নিজের অধিকার নিজেকেই অর্জন করতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা এখনো অধিকারসচেতন নয়। তাই স্বপ্ন দেখি নারীর অধিকারসচেতনতা নিয়ে কাজ করার। আমি বিশ্বাস করি, নারী যদি সুশিক্ষিত হয়, তবে জাতি শিক্ষিত হতে বাধ্য। তাই নারী শিক্ষার ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখারও স্বপ্ন দেখি।

স্বপ্নেরা ভিড় করে
মোহনা তানজিরা, শিক্ষার্থী
সরকারি আযিযুল হক কলেজ, বগুড়া
আমার স্বপ্ন—প্রশ্নটা শুনে সত্যিই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। সত্যিই তো, আমার স্বপ্ন কী? ভাবতে বসে দেখি, প্রতি মুহূর্তেই তো আমি হাজারো স্বপ্নের বীজ বুনি। আর একেকটি স্বপ্ন যেন আমাকে নতুন করে জন্ম দেয় এ পৃথিবীতে। মা যখন কলেজ থেকে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরেন, তখন আমি স্বপ্ন দেখি মাকে একটা গাড়ি কিনে দেওয়ার। রোজ এতটা পথ তাঁর বাসের ঝাঁকুনি খেতে হয়! ছোট বোনটি যখন মা-বাবার সঙ্গে নতুন ঘড়ি কেনার জন্য জেদ করে, আমি তখন স্বপ্ন দেখি তাকে একটা ঘড়ির দোকান কিনে দেওয়ার, যেন যত খুশি তত নতুন ঘড়ি পরতে পারে সে। ছোট্ট ভাইটি যখন আমাকে আপু বলে ডাক দেয়, তার মুখের চাহনিতেও আমি হাজারো স্বপ্ন এঁকে ফেলি।
পত্রিকায় সালমান খানের খান একাডেমির কথা পড়ে স্বপ্ন জাগে সালমান খান হওয়ার। পার্কে যখন একা একা হেঁটে বেড়াই, তখন স্বপ্ন দেখি, ভালোবাসার মানুষটি ঠিকই একদিন এসে আমার হাতটি ধরবে। আমরা হেঁটে যাব বহু দূর। আমাদের বাড়ির গৃহকর্মী রহিমার মাকে নিয়েও আমি স্বপ্ন দেখি। ওর খুব শখ একটা সিল্কের শাড়ির। ভাবি, এবার বৃত্তির টাকাটা পেলে ওকে একটা শাড়ি কিনে দেব। ছোট্ট টুকটুকিও কিন্তু আমার স্বপ্নের ঝুড়ি থেকে বাদ পড়ে না। ওকে যখন ধান খেতে দিই, তখনো আমার চোখে স্বপ্ন চিকচিক করে। আচ্ছা, টুকটুকিটা কি এবার ডিম পাড়বে? কী নাম রাখব টুকটুকির বাচ্চাটার...। আমার এত স্বপ্ন, স্বপ্নের ভিড়ে কোনটি তোমাদের বলব!

হতে চাই বিসিএস কর্মকর্তা
মদন মোহন তঞ্চঙ্গা
শিক্ষার্থী, বান্দরবান সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম
আমি পাহাড়ি আদিবাসীদের একজন। শৈশবে কোনো স্বপ্ন ছিল না। বাবা সামান্য অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন হলেও বেশি দূর এগোতে পারেননি। তাই তাঁর প্রবল ইচ্ছে ছিল, আমাকে শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলবেন। সেই উদ্দেশ্যে আমাকে বান্দরবান জেলার আমতলীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান বাবা। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সুয়ালক উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হই। অনেক কষ্টে পায়ে হেঁটে পাঁচ-ছয় কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতাম।
এভাবে পাঁচটি বছর অতিক্রম করে এসএসসি পাস করি। এসএসসি পাস করে বান্দরবান সরকারি কলেজে ভর্তি হই। তখনো কিন্তু আমার জীবনের লক্ষ্য ঠিক করিনি। একদিন নবীনবরণ অনুষ্ঠানে কলেজের অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র বসু স্যারের বক্তব্য শুনে মনের মধ্যে স্বপ্নের বীজ রোপণ করলাম। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন। এটি বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ। তাই আমি এ স্বপ্নকে মনে মনে অনেক যত্নে লালন করি।

চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে
আনিকা প্রতীতি
শিক্ষার্থী, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমার জীবনের সুন্দর সময়গুলো পেরিয়ে যাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও ‘সময়’ নামক গতিদানবকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। তবু গত কয়েক বছরের সময়গুলোর কথা মনে পড়লে আনমনা না হয়ে পারি না। এই তো কদিন আগেও নিজেকে লুকিয়ে রাখতাম অন্য সবার কাছ থেকে। নিজেকে কেন্দ্র করে বিষণ্নতার গোলক টেনে তার একঘেয়ে পরিধিতে ঘুরপাক খেতাম ক্রমাগত। কখনো ভাবিনি যে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে লেখাপড়ার সুযোগ পাব। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিয়েছি, স্বপ্নের ঘুড়ি তখন আকাশের চূড়ায়। বন্ধুবান্ধব আর পরিবেশের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিলাম।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলে আর ভালো লাগে না, হলের ডাল না খেলে পেটের ভাত হজম হয় না ইত্যাদি অনুভূতি। প্রথম কয়েক মাস কেটে গেল এভাবেই। তারপর শুরু হলো পড়াশোনা, পরীক্ষা আর ল্যাব ক্লাসের ধকল। বাস্তবতার কশাঘাতের শুরু আরকি!
পরীক্ষার বেড়াজালে জীবন যখন অতিষ্ঠ, রাফ খাতায় ছবি আঁকি, হিজিবিজি কবিতা লিখি; তখন স্বপ্ন জাগে, লেখালেখি করি। আবার কখনো ‘গানের পাখি’ হওয়ার সুপ্ত বাসনা ডানা মেলে। কিন্তু এতশত সংখ্যাগুরু বাস্তবতার ভিড়ে সংখ্যালঘু স্বপ্নেরা কোথায় হারিয়ে যায়! ক্লাস আর পরীক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বারবার তালগোল পাকাই। তার পরও স্বপ্ন দেখি ভালো ফল করার। স্বপ্ন দেখতে তো আর টিকিট লাগে না!
স্বপ্ন দেখি, শাহবাগে ‘জীবাণুমুক্ত’ ফুচকা খাচ্ছি! অল্প দিনের মধ্যে চাই, ঢাকার রাস্তা যানজটমুক্ত হোক। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল হয়েছে বিশ্বের এক নম্বর! স্বপ্ন দেখি, উচ্চতর গবেষণা করার, যে গবেষণা আমাকে এনে দেবে নোবেল পুরস্কার!

স্বপ্নবিলাস
অনামিকা দাস
শিক্ষার্থী, স্থাপত্য বিভাগ, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা
খুব ছোটবেলার কথা। অসহায় মানুষের সবকিছু হারিয়ে ফেলার আর্তচিৎকার যখন আমাকে নাড়া দিত, ছুটে গিয়ে মাকে বলতাম, ‘মা আমি পুলিশ হব।’ ছোট মানুষের এ কথা সে সময় হয়তো অনেকের কাছে কোনো গুরুত্বের ছিল না। কিন্তু তখন থেকেই অপরাধীদের একটি নামের তালিকা আমার খাতার এক কোনায় লেখা থাকত। স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে পুলিশ হয়ে আগে ওদের বিচার করব।
অনেক গরিব মানুষকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে দেখে একসময় চিকিৎসক হওয়ার বাসনাও তৈরি হয়। বাবার কাছে শিখেছি, সবার আগে ভালো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখতে হবে।
মানুষ যদি প্রতিদিন একটি করে হলেও তার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পায়, তবু এক জীবনে আরও হাজারো স্বপ্ন রয়েই যাবে। স্বপ্ন দেখি, দেশকে না পাওয়া কোনো পদক এনে দিতে। কত স্বপ্ন মানুষ দেখে, লেখক হওয়ার স্বপ্নও আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।

দেশের বাইরে পড়তে চাই
সোফিয়ান ইসলাম
শিক্ষার্থী, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
ভাগ্যিস, খুব ভালো ফলধারী শিক্ষার্থী নই! তাই স্বপ্ন তৈরিতে বাবা-মায়ের ইচ্ছা থেকে মুক্তি পেয়েছি। না হলে তো চোখের পলকে ঠিক করতে হতো—বড় হয়ে কী হব, ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার!
নিজের ইচ্ছায় বাণিজ্য বিভাগে লেখাপড়া করে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে এলাম। মুখস্থবিদ্যার প্রতি আস্থা কিংবা ভরসা কোনো দিনই ছিল না। স্বপ্নকে জাগ্রত করার ইচ্ছারা যখন থেকে মাথায় ছোটাছুটি শুরু করল, তখন থেকেই কেবল সার্টিফিকেট অর্জনকেই মুখ্য মনে করিনি। বেড়েছিল জানার আগ্রহ ও জ্ঞান আত্মস্থ করার কৌতূহল। তাই বিশ্বায়নের অদ্ভুত এই সময়ে বিবিএ বিষয়টি আমার জানার এবং স্বপ্ন পূরণের পথকে প্রশস্ত করবে বলে মনে হয়েছে। এখন আমার ইচ্ছা, বিবিএ শেষ করে এমবিএ করতে দেশের বাইরে যাওয়া। এমবিএর পর দেশে ফিরে আমি যে সেক্টরেই কাজ করি না কেন, সেখানেই আমার মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে চাই।

হতে চাই ক্রিকেটার
রঙ্গন রাফসানজানী
শিক্ষার্থী, ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ
আমার কাছে খেলা মানেই ক্রিকেট। আমার স্বপ্নের সঙ্গে তাই ক্রিকেটের এক অদ্ভুত মিতালি বলা চলে। ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে একটাই ইচ্ছার উঁকিঝুঁকি, আর তা হলো ক্রিকেট। একজন সাকিব আল হাসান যত সহজে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেন, একজন সাধারণ চাকুরে সেভাবে পারেন না। তাই আমি স্বপ্ন দেখি জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার। ব্যাটে-বলে অসাধারণ নৈপুণ্যে বাংলাদেশকে এনে দিতে চাই বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ। মাঝেমধ্যে ঘুমের ভেতরে দেখি ক্রিস গেইলের মতো একটার পর একটা ছক্কা পেটাচ্ছি। আর স্টেডিয়ামজুড়ে একটাই শব্দ—বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! গ্রাম, মফস্বল আর জেলা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে আমি খেলতে চাই দেশে আর দেশের বাইরে। আমার স্বপ্নকে সত্যি করতে চলছে প্রচেষ্টা। প্রতিদিন মাঠে খেলতে না পারলে আমার ভালো লাগে না। খেলা নিয়ে বাসা থেকে কিছু বললে মন খারাপ হয়। আমি তো খারাপ কাজ করছি না, তা হলে সবাই খেলার কথায় খেপে যায় কেন? বুঝি না। মাঝেমধ্যে আমাদের স্কুলের মাঠে ভালো খেলার পরে সবাই বাহবা দিলে আমার উৎসাহ বেড়ে যায়। মনে হয়, ঢাকার শেরেবাংলা ক্রিকেট মাঠে অথবা লর্ডসে দাঁড়িয়ে এমন পারফর্ম করছি। আমার ইচ্ছে আছে মালিঙ্গার বলে ছক্কা মেরে নিজেকে চিনিয়ে দেওয়ার। আর সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি আমি। আর মাত্র তো কটা দিন, তাই না!

No comments

Powered by Blogger.