অশান্ত নগরে শান্তি by সুভাষ সাহা

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারের পছন্দের বা দলীয় পরিচয় অথবা আদর্শের লোককে উপাচার্য করে পাঠানোই এখানে রেওয়াজ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। বিষয়টি মানুষ অনেকটা স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণও করে নিয়েছে। কিন্তু মানুষ যখন দেখে; যাকে ভিসি করে পাঠানো হলো বা নির্বাচনের মাধ্যমে যিনি ভিসি হলেন, তিনি প্রশাসক হিসেবে যথেষ্ট


কুশলী নন, যার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং গবেষণাকর্ম নিয়ে মাথা ঘামানোর ফুরসত নেই এবং যিনি ক্ষমতাসীন দলের উপদলীয় কোন্দলকে আশ্রয় করে নিজের ক্ষমতা ও বিত্তবৈভব বানানোর চেষ্টারত; তখন তারা অখুশি হয়। কারণ ক্ষমতাসীন দলের উপদলীয় কোন্দলের অংশীদার হতে গিয়ে ভিসি নিজেই ক্যাম্পাসে রক্তারক্তির পরিবেশ সৃষ্টিতে পরোক্ষ, এমনকি কখনও কখনও প্রত্যক্ষ অবদান রাখেন। তাছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠন ছাড়াও অনেক ছোট ছোট প্রতিবাদী পকেট সৃষ্টি হয়। বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত মতামত প্রকাশের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তার ওপর রয়েছে শিক্ষক রাজনীতির নানা প্যাঁচ। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ বা অর্থনৈতিক প্রণোদনাকে বিভিন্ন ছাত্রগোষ্ঠীর মধ্যে নিজেদের করে নেওয়ার প্রতিযোগিতাকে ক্যালকুলাস থেকে বাদ রাখা যায় না। একজন ভিসিকে এত সব ফ্যাক্টর সামাল দিয়েই প্রশাসন চালাতে হয়। সেজন্য ভিসি কোনো নির্দিষ্ট দল বা মতাদর্শের মানুষ হয়েও তাকে দল-মতের মধ্যে একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করতে হয়। আর ভিসি শিক্ষানুরাগী হলে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হন, তেমনি শিক্ষকরাও গবেষণাকমের্র মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজেদের জ্ঞানের জগৎকে আরও প্রসারিত করতে উৎসাহী হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি মত ও পথ চর্চার পরিবেশ তৈরি হয়।
এভাবে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক থেকে শুরু করে বড় অর্থনীতিবিদ মায় সফল প্রশাসকও উপহার দিতে সক্ষম হতে পারে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত এর বিপরীত চিত্রই দেখতে পাই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে বলেই অনুমান করা যায়। কীভাবে এই অতি অল্প সময়ে এখানকার হুড়হাঙ্গামা থেমে গিয়ে শান্তি-স্থিতি প্রতিষ্ঠিত হলো? এখানে নতুন ভিসি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করার পর খুব বেশি দিন যায়নি। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ভিসি প্যানেল নির্বাচন দিলেন। পরে ওই নির্বাচিত প্যানেল থেকে তাকেই পুনরায় ভিসি হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন। এরপর একে একে প্রতিষ্ঠানটিতে নির্বাচন লেগেই আছে। দায়িত্ব গ্রহণের সময় তিনি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো একে একে বাস্তবায়িত হচ্ছে। যাদের পরিবর্তন করা দরকার, তাদের ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে রদবদল নজরে আসছে।
ছাত্ররাজনীত এবং শিক্ষক রাজনীতি_ উভয় ক্ষেত্রেই তাকে একটা ভারসাম্যমূলক নীতি অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। সব কাজের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকদের গবেষণাকর্ম ও পাঠদানের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজেও তিনি হাত দিয়ে থাকবেন। আসলে, সরকার উপযুক্ত লোককে উপাচার্য হিসেবে মনোনয়ন দিলে কী সুফল ফলে, তার প্রমাণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের বিদ্যানুরাগী ও প্রশাসনিক দক্ষতাসম্পন্নদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে।
 

No comments

Powered by Blogger.