শুভ বিজয়া দশমী-সহাবস্থান ও সম্প্রীতিই হোক আরাধ্য
আকাশে পেঁজা তুলোর মতো খণ্ড খণ্ড ভাসমান মেঘ, নদী ও জলাশয়ের কোলে শুভ্র কাশের গায়ে কখনও উত্তুরে, কখনও দখিনা বাতাসের দোলা। হালকা শীতের মিষ্টি রোদের আড়ালে কখনওবা হঠাৎ বৃষ্টির সম্ভাবনা। শরৎ বলতে এমন এক অতুলনীয় প্রকৃতির ছবিই বাঙালির স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। আর এ ছবি যদি শব্দ সহকারে আত্মপ্রকাশ করে,
তবে তার আবশ্যিক অঙ্গ ঢাক ও মৃদঙ্গের শব্দ। শরৎ মানে গ্রামবাংলায় সাজসাজ রব। সবার মনে এক অনাবিল খুশির আগমনী। বাঙালি হিন্দুর প্রধান ধর্মীয় উৎসব, শক্তিময়ী দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানানোর সময় শরৎ। শুধু বাঙালি হিন্দুর নয়, নয় শুধু গ্রামবাংলারও, শরৎ ও দুর্গাপূজা প্রত্যেক নগর-গ্রাম, শ্রেণী নির্বিশেষ সকল বাঙালির উৎসব। চলতি কথায় পূজা শারদীয় বলে আখ্যায়িত হলেও পঞ্জিকা অনুসারে এবারের দুর্গাপূজার অধিকাংশ আচার-অনুষ্ঠান পড়েছে কার্তিকে, অর্থাৎ ঋতু গণনার কাল অনুসারে হেমন্তে। অবশ্য মহালয়ার ক্ষণ শরৎকালে, অর্থাৎ ২৯ কার্তিকেই পড়েছে। ৩ কার্তিক, শনিবার থেকে মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। গত চার দিন সারা বাংলায় মহাসমারোহে পালিত হয়েছে দুর্গাপূজা। পূজার আনন্দ স্পর্শ করেছে প্রকৃতিকে যেমন, তেমনি মানুষের জীবনকেও। দেবীর আগমনে ভক্তি ও আনন্দে ভেসেছে চরাচর। আজ বিজয়া দশমী, চোখের জলে দেবীকে বিদায় জানাবার দিন। আজকের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুভ সমাপ্তি ঘটবে দুর্গাপূজার। পঞ্জিকা অনুসারে এবার দেবী গজে আগমন করেছেন। কিংবদন্তী মতে হস্তীপৃষ্ঠে আগমনের তাৎপর্য হলো_ এবার বসুন্ধরা শস্য-শ্যামলা হবে, ফলে ফসলে ভরে উঠবে পৃথিবী। আর দেবী যাবেন নৌকায় করে। অর্থাৎ ফসল উৎপাদন বাড়বে। তবে দেবীর যাওয়া মানে প্রস্থান নয়, আবার ফিরে আসবেন জেনেই দেবীকে বিদায় জানান সনাতন ধর্মাবলম্বী ভক্তরা। পূজার নানা আচারের মধ্য দিয়ে মানুষের বৃহত্তর মঙ্গল ও কল্যাণ কামনা করা হয়, দেশমাতৃকার উন্নতির জন্য প্রার্থনাও জানানো হয়। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভক্তদের মাঝে ভক্তি ও ভাবের যে অপূর্ব সম্মিলন ঘটে, তা প্রেরণাদায়ী। শুভ ও মঙ্গলবোধের এমন উৎসব সবার কাছে শান্তি ও সুখের বার্তা ছড়িয়ে দেবে এমনটাই প্রত্যাশিত। কিছু আশঙ্কা সত্ত্বেও এবারের দুর্গাপূজা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই শেষ হতে যাচ্ছে, এটি খুবই আনন্দের সংবাদ। বাংলাদেশ বরাবরই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের উজ্জ্বল উদাহরণ। এখানে হাজার বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ ধর্মাচার নিয়ে মিলেমিশে বসবাস করছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন দীর্ঘ ঐতিহ্য সত্ত্বেও এ দেশে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। রামুর সাম্প্রদায়িক অবাঞ্ছিত ঘটনা সেই ঐতিহ্যকে কলুষিত করেছে। এ ঘটনার পর দুর্গোৎসব নিয়ে কারও কারও মনে আশঙ্কা ঘনীভূত হয়েছিল। কিন্তু সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সর্বোপরি নাগরিকদের সচেতন পদক্ষেপে দুর্গোৎসব শান্তিপূর্ণভাবেই পালিত হয়েছে। সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও সহযোগিতার এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আর কোনো সংঘাত আমরা দেখতে চাই না। উৎসবের রঙ ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে। হিংসা নয়, ধর্মের কল্যাণময় বাণীই ছড়িয়ে যাক দিকে দিকে। বিজয়া দশমী উপলক্ষে সেটাই আমাদের চাওয়া। দেশ শস্যশ্যামলে, সুন্দর হয়ে উঠুক। সকলের কল্যাণ ও মঙ্গল নিশ্চিত হোক। শুভ বিজয়া।
No comments