৩৬ কোটি ৬ লাখ বিনামূল্যের বই ছাপানো হবে by নূর মোহাম্মদ
আগামী
শিক্ষাবর্ষের জন্য বিনামূল্যের ৩৬ কোটি ছয় লাখ বই ছাপানো হবে। ইতিমধ্যে
ছাপার টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাস থেকে শুরু হবে ছাপার
কাজ। আর অক্টোবরের মধ্যে সব বই ছাপা শেষে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হবে।
নির্বাচনী বছর হওয়ায় কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না সরকার। যে কারণে আগে
থেকে বই ছাপার সব ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও
পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
এনসিটিবির কর্মকর্তাদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে বই ছাপার বিষয়ে কঠোর
বার্তা দিয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, শিক্ষামন্ত্রী এনসিটিবির কর্মকর্তাদের
উদ্দেশ্যে বলেছেন, এবার নির্বাচনী বছর। অক্টোবরের মধ্যেই বই ছাপা শেষ করতে
হবে। পরে ঝামেলা হতে পারে। বইয়ের ছাপার মানে কোনো ছাড় দেয়া চলবে না। কোনো
প্রেস যদি দুই নম্বরি করে, সঙ্গে সঙ্গে ছাপা বন্ধ করে দিবেন। প্রয়োজনে একটা
দুইটা প্রেসের বই আমরা নিবো না। তাদের বই না হলেও ১লা জানুয়ারি
পাঠ্যপুস্তক উৎসব করতে কোনো সমস্যা হবে না। এনসিটিবির সূত্র জানায়, ২০১৯
শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির
(পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভাষায় বই), প্রাথমিক (বাংলা, ইংরেজি ভার্সন),
মাধ্যমিক (বাংলা, ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়ী ও দাখিল, কারিগরি, এসএসসি ও
দাখিল ভোকেশনাল (ট্রেড বই), দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই, প্রাথমিক
ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষক নির্দেশিকা ছাপানো হবে। চলতি শিক্ষাবর্ষের মতো
আগামী শিক্ষাবর্ষেও নবম শ্রেণির সাধারণ বিজ্ঞান, পদার্থ, রসায়ন ও জীব
বিজ্ঞান এই চারটি বই পুরো রঙিন করে ছাপানো হবে। এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত
বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের চাহিদা
জমা দিয়েছে। তাদের পাঠানো চাহিদা অনুযায়ী- মাধ্যমিক (বাংলা ভার্সন) এক কোটি
২৪ লাখ সাত হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীর জন্য চার কোটি ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার
৩৬১টি, মাধ্যমিক (ইংরেজি ভার্সন) ৭৬ হাজার হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থীর জন্য
১১ লাখ দুই হাজার ১৯০টি। ইবতেদায়ীতে ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থীর
জন্য দুই কোটি ২৫ লাখ ৩১ হাজার ৭৮০টি। দাখিলের ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৪ জনের
জন্য তিন কোটি ৭৮ লাখ ৯৮ হাজার ৫৬১টি, এসএসসি ভোকেশনালের দুই লাখ ৩৯ হাজার
১২ জনের জন্য ৩১ লাখ ৩১ হাজার ৯১৫টি, দাখিল ভোকেশনাল ১০ হাজার ৯৫ জনের জন্য
এক লাখ ৪০ হাজার ৪৯৫টি, ট্রেডের দুই লাখ ৩১ হাজার ৩১৩ জনের জন্য ১২ লাখ ২১
হাজার ৮২২টি। মাধ্যমিক স্তরে মোট এক কোটি ৮৭ লাখ ১৬ হাজার ১১৮ জন
শিক্ষার্থীর জন্য ২৪ কোটি ৫৮ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৩টি বই ছাপানো হবে। প্রাথমিক
স্তরে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিকে ৬৮ লাখ ৬৩ হাজার ৪৮টি এবং
প্রাথমিকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ চার হাজার ১১০টি বই ছাপানো হবে। অন্ধদের জন্য আট
হাজার ৯০৫টি বই ছাপানো হবে। এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. ফরহাদ
হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক স্তরের বইয়ের চাহিদা মাউশি (মাধ্যমিক ও
উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) থেকে পেয়েছি। এখন চাহিদা যাচাই-বাছাই চলছে। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর থেকে অন্ধদের ব্রেইল বইয়ের চাহিদাও পেয়েছি। এবার অন্ধদের বইয়ের
সঙ্গে মাল্টিমিডিয়া টাচ বুকও (সিডি আকারে) দেয়া হবে। তারা টাচ করলেই
মিউজিকের মতো বেজে উঠবে। আগামী শিক্ষাবর্ষে চার কোটি ২১ লাখ শিক্ষার্থীর
মাঝে ৩৬ কোটি ২১ লাখ বই বিতরণ করা হবে। এরমধ্যে প্রাথমিক (বাংলা ও ইংরেজি
ভার্সন) স্তরের দুই কোটি এক লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৬ জন শিক্ষার্থীর ৩৩টি বিষয়ের
১০ কোটি ২২ লাখ ২৭ হাজার ১১টি বই ছাপানো হবে। আর মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি
ভার্সন) স্তরের এক কোটি ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩ জন শিক্ষার্থীর ১১৪টি বিষয়ের ১৭
কোটি ৮৯ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৩টি বই ছাপানো হবে। ইবতেদায়ী ও দাখিল ৫৪ লাখ ৩
হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষার্থীর ১২৪টি বিষয়ের ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৯টি বই
ছাপানো হবে। এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. মিয়া ইনামুল হক রতন
সিদ্দিকী বলেন, টেন্ডারের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে এপ্রিল মাসের মধ্যে বই
ছাপার কাজ শুরু করা হবে। আর অক্টোবরের মধ্যে শত ভাগ বই ছাপা শেষ করবো বলে
আশা করছি।
No comments