স্ক্রিপালকে হত্যাচেষ্টায় নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে
রাশিয়ার
সাবেক গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা ইউলিয়াকে হত্যাচেষ্টায় নার্ভ
গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। এখন সেই নার্ভ গ্যাসের উৎস খুঁজে বের করতে কাজ
চলছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকর্তারা। বিবিসির খবরে এ
তথ্য জানানো হয়েছে। গত রোববার বিকালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের স্যালিসবুরিতে
তাদের অচেতন অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। এর পর থেকে তারা গুরুতর অসুস্থ অবস্থায়
হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ব্রিটিশ পুলিশের
সহকারী কমিশনার মার্ক রাউলি জানিয়েছেন, স্ক্রিপাল ও ইউলিয়াকে উদ্ধার করতে
যাওয়া এক পুলিশ কর্মকর্তাও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
নার্ভ গ্যাস একটি মারাত্মক বিষাক্ত রাসায়নিক। এটি স্নায়ু ব্যবস্থাকে অকেজো
করে দৈহিক ক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। সাধারণত মুখ অথবা নাক দিয়েই গ্যাসটি শরীরে
প্রবেশ করে। তবে চোখ বা চামড়ার মাধ্যমেও এটি শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তবে
স্ক্রিপাল ও ইউলিয়ার ক্ষেত্রে যে রাসায়নিক পদার্থটি ব্যবহার করা হয়েছে,
সেটি সারিন ও ভিএক্স নার্ভ গ্যাসের চেয়েও দুর্লভ। পুলিশ জানিয়েছে,
বিজ্ঞানীরা নার্ভ গ্যাসটি শনাক্ত করতে পেরেছেন। কিন্তু এসব তথ্য তারা গোপন
রাখতে চাচ্ছেন। তদন্তের সঙ্গে জড়িত এক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, সিরিয়ায়
ব্যবহৃত সারিন গ্যাস ও ১৯৯৫ সালে টোকিওর পাতাল রেলে হামলায় যে নার্ভ গ্যাস
ব্যবহার করা হয়েছে, তার চেয়েও এটি দুর্লভ। গত বছর মালয়েশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার
নেতা কিম জং উনের সৎ ভাইকে হত্যা করতে ভিএক্স নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করা
হয়েছিল। কিন্তু স্ক্রিপালের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের সঙ্গে সেটির কোনো মিল
নেই। ব্রিটিশ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম বিভাগের প্রধান রাউলি আরও
জানিয়েছেন, এটিকে গুরুতর একটি ঘটনা হিসেবে আমলে নেওয়া হয়েছে।
যেহেতু নার্ভ
গ্যাস ব্যবহার করে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে এটি তুচ্ছ কোনো ঘটনা
নয়। এ ঘটনায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপকভিত্তিক কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে, এমন
কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে,
সের্গেই স্ক্রিপাল ও তার কন্যা ইউলিয়াকে নার্ভ গ্যাস প্রয়োগ করে মারার
চেষ্টা করা হয়েছে, পুলিশের এমন ঘোষণায় রাশিয়ার আরেক সাবেক গুপ্তচর
আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কোকে বিষপ্রয়োগের ঘটনাটিকেও সামনে নিয়ে এসেছে। ২০০৬
সালে লন্ডনে লিটভিনেঙ্কোর চায়ের সঙ্গে তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম মিশিয়ে দিয়ে
তাকে হত্যা করা হয়েছিল। তেজস্ক্রিয় পোলোনিয়াম ও নার্ভ গ্যাসের মতো উপাদান
অপরাধী দল কিংবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সাধারণত তৈরি করতে পারে না। এগুলো
সাধারণত সরকারি নিয়ন্ত্রণে বিশেষায়িত গবেষণাগারে তৈরি করা হয়। তাই এ দুটি
ঘটনার সঙ্গে কোনো রাষ্ট্র জড়িত থাকার বিষয়টি যেমন জোরালো হয়, তেমনি
সন্দেহভাজন রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার নামটিও সামনে চলে আসে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা
সংস্থা এমআই-৬ কে গোপন তথ্য পাচারের দায়ে রাশিয়ায় স্ক্রিপালের ১৩ বছরের
সাজা হয়েছিল। কিন্তু ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গোয়েন্দা অদলবদলের সময়
তাকে ছেড়ে দেয় হয়। পরবর্তী সময় তিনি ব্রিটেনে আশ্রয় নেন। রাউলি বলেন, এখন
আমাদের খুঁজে বের করতে হবে, এ ঘটনার নেপথ্যে কারা রয়েছেন। কেন তারা এ কাজটি
করেছেন।
No comments