ভুয়া চিঠিতে দিঘি বেহাত
একটি
ভুয়া চিঠি দেখিয়ে নাটোরের রানি ভবানীর ঐতিহ্যবাহী জয়কালী দিঘি যেভাবে
বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে তা শুধু নিন্দনীয় নয়, গর্হিত অপরাধ। গত সোমবার প্রথম
আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক চিঠি অনুযায়ী
নাটোর আধুনিক মৎস্য চাষ প্রকল্প লিমিটেডের পরিচালক গোলাম নবীকে ৩০ বছরের
জন্য ‘অকৃষি খাসজমি’ হিসেবে দিঘিটির বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। ‘বৈজ্ঞানিক
পদ্ধতিতে’ মাছ চাষ করতে গোলাম নবী এই দিঘির বন্দোবস্ত নেন। কিন্তু পরে এক
তদন্তে দেখা যায় যে চিঠিটিই ভুয়া। ভূমি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো চিঠি ইস্যু
করেনি। প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, রানির দিঘির বন্দোবস্তের খবরে তৎকালীন
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার ২০১০ সালে বন্দোবস্ত বাতিলের
জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র দেন। তখন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত
প্রতিবেদন দিতে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দেয়। এই চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে গোলাম নবী
আদালতে একটি রিট আবেদন করলে আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেন। এদিকে চিঠির
পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন দিঘিটি সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিতে মন্ত্রণালয়ে
চিঠি দেয়। তখন মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
ওই কমিটির জমা
দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে রিটের আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন এবং
সরকারি সম্পত্তি বেহাত প্রক্রিয়ায় সহায়তার ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা ও
কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দলিল বাতিলের জন্য দেওয়ানি আদালতে
মামলা করতে বলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দিঘি বন্দোবস্ত
বিধিসম্মত হয়নি। এতে সরকারের ১ কোটি ২৬ লাখ ৯ হাজার ৫১২ টাকার রাজস্ব ক্ষতি
হয়েছে। এখানে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, গোলাম নবী ভূমি মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু
কর্মকর্তার যোগসাজশে এই দিঘি নিজের নামে বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এখানে বড়
ধরনের অর্থের লেনদেন হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। কিছু লোভী মানুষের
জন্য এমন একটি দিঘির বেহাত হওয়া কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। জয়কালী দিঘিটি
নাটোরের ঐতিহ্য। পৃথিবীর বহু দেশ থেকে লোকজন এখানে দিঘিটি দেখতে আসে। আমরা
মনে করি, সরকারিভাবে এই দিঘিটি সংরক্ষণ করা উচিত, যা পর্যটকদের জন্যও
আকর্ষণীয় হতে পারে। তদন্ত কমিটির পরামর্শ অনুযায়ীই ভূমি মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্ব হচ্ছে কাজ করতে হবে। যে চিঠি দেখিয়ে গোলাম নবী দিঘি নিজের নামে
বন্দোবস্ত নিয়েছেন, তা ভুয়া হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। দিঘি বন্দোবস্ত
বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অপকর্ম করতে সাহস
না পায়।
No comments