সাম্প্রদায়িকতার প্রকৃত উত্থান by জসিম উদ্দিন

মিয়ানমার পররাষ্ট্রনীতিতে পারদর্শিতা দেখিয়েছে। তাদের কঠোর সমালোচক যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান বজায় রাখতে পেরেছে। এসব দেশের সমালোচনাকে গ্রাহ্য করে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পথ উন্মুক্ত করেনি, বরং উল্টো তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বন্ধু ভারতকে দারুণভাবে তাদের পাশে রাখতে সক্ষম হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের সমর্থন আদায় করে নিয়েছে। রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর এখন নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে মিয়ানমারের সামরিক নীতি।
বাংলাদেশ সীমান্তে এরা শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে। সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য, সামরিক যান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র জড়ো করছে এরা সেখানে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ আগে থেকেই শুরু করেছে। এবার ওপার থেকে গুলি বর্ষণ করছে। পতাকা বৈঠকে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি অস্বীকার করলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গুলি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আসার প্রমাণ রয়েছে। মিয়ানমারের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বিষয়টি স্পষ্ট। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাদের এমন আগ্রাসী অবস্থানের খবর এসেছে। নো-ম্যানস ল্যান্ডের নিকটে তারা সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিবাদের পর তারা বিষয়টি অস্বীকার করে যুক্তি দেখাচ্ছে- সশস্ত্র সংগঠন আরসাকে মোকাবেলা করতে তাদের সামরিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আরসাকে প্রতিহত করার জন্য এরা এমন উচ্চ সামরিক অবস্থান গ্রহণ করছে বলে বলতে চাইছে। মেশিনগানসহ ভারী অস্ত্র আরসার মতো অদৃশ্য একটি শক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন হতে পারে না। মিয়ানমার পুরোপুরি সামরিক বাহিনীনির্ভর তথাকথিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। সু চি সরকারের কোনো কার্যকর অবস্থান সেখানে দেখা যায় না। সামরিক সরকারের নীতিকে সমর্থন করে দেশটির ক্ষমতায় প্রাসঙ্গিক হতে চান সু চি। এর বাইরে অন্য কোনো অবস্থান মোটেও তার এখন আর দেখা যায় না। তিন নারী নোবেল বিজয়ীর কড়া সমালোচনার পরও সু চির কোনো ধরনের নড়াচড়া দেখা গেল না। সেনা সমাবেশ ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শনীর পরে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
অর্থাৎ এ ব্যাপারটি পেছনে পড়ে যাচ্ছে। নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের উল্টো বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেয়ার প্রেক্ষিত তৈরি হচ্ছে। মোটকথা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া দূরে থাক, সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টায় এখানো তারা লিপ্ত রয়েছে। ভারী অস্ত্রশস্ত্র তাক করা অবস্থায় রোহিঙ্গারা দেশটিতে ফিরে যেতে কোনোভাবেই রাজি হবেন না। এমনকি যারা দেশটির ভেতরে জীবন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারাও যেকোনোভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাইবেন। আর নো-ম্যানস ল্যান্ডে থাকা বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা অনিবার্যভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন। সামরিক শক্তি প্রদর্শনের অন্তর্নিহিত কারণ এখন বুঝতে আর কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মিয়ানমার রাষ্ট্র হিসেবে তার শক্তি-সামর্থ্য বাড়িয়ে চলেছে। নিজেদের অন্যায় অবস্থানকে সংহত করতে কূটনীতিতে সফলতার পরিচয় দিচ্ছে। নিজ দেশের মানুষকে স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া হয়নি। রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। এ অবস্থায় কিভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশটি নিজেদের ফায়দা তুলছে, সেটি কৌতূহল জাগায়। চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মিয়ানমার বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এ দেশগুলোই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় শক্তি। সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। তারা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যপানে এগিয়ে চলেছে। এ অঞ্চলে এরা একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। এ জন্য তারা বৌদ্ধ ধর্মের উগ্র রূপটিকে অস্ত্র হিসেবে হাতে নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের দেশ থেকে বিতাড়নের জন্য বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের উসকানিকে আশকারা দিয়েছে। এটিকে তাদের লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার বানিয়েছে। রোহিঙ্গা উৎখাতে সফল হওয়ার আগে থেকে পরমাণু উচ্চাভিলাষের কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে আসছে। এ জন্য দেশটি উত্তর কোরিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে। তারা চাচ্ছিল, কোরিয়া থেকে কিছু পরমাণু প্রযুক্তি করায়ত্ত করতে। ২০১১ সালের মে মাসে উত্তর কোরিয়ার একটি জাহাজ আটক হয়। ওই জাহাজে তারা মিয়ানমারকে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সরবরাহ করছিল। নিউ ইয়র্ক টাইম তখন এক প্রতিবেদনে জানায়, উত্তর কোরিয়ার একটি কার্গো শিপ জোর করে আবার নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে ওয়াশিংটন এবং নেতৃস্থানীয় এশীয় দেশ একযোগে উত্তর কোরিয়াকে চাপ প্রয়োগ করে। ওই কার্গো শিপটি উত্তর কোরিয়ায় ফেরত পাঠানোর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর উদ্যোগ নেন। এশিয়ায় তার কূটনৈতিক চেষ্টার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল এ দেশটি। ওই সময় মিয়ানমার-উত্তর কোরিয়া সম্পর্ক অগ্রসর হওয়ার পথে যুক্তরাষ্ট্র বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র নিজে দেশটির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। মিয়ানমারকে নিয়ে তখন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আগ্রহে অনেকে বিস্মিত হয়েছিল। দরিদ্র একটি রাষ্ট্রকে এতটা গুরুত্ব দেয়ার কী আছে। মূলত পরমাণু অস্ত্রের বিস্তার রোধ করতে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ তুলে নেয়ার প্যাকেজ নিয়ে যায়। তারা মূলত দেশটিকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের মাধ্যমে কোরিয়ার মতো দেশ থেকে দূরে সরানোর নানা পদক্ষেপ নেয়।
সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সু চি-কে জোরালোভাবে সামনে আনা হয়। কার্যত শেষ পর্যন্ত সু চিও সামরিক জান্তার পেটে হজম হয়ে গেলেন। দেশ হিসেবে মিয়ানমার ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের সেভাবে হুঁশ আসেনি। তারা এখনো এমন কোনো নীতি গ্রহণ করেনি, যাতে মিয়ানমারকে বাগে আনা যায়। চীন ও রাশিয়ান বলয়ে থেকে মিয়ানমার এক স্বেচ্ছাচারী শাসনের মধ্যে রয়েছে। পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করার কাজ মান্দালয়ের একটি গ্রামে পাহাড়ের গুহায় অগ্রসরমান। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকা এ খবর দিয়েছে উচ্চপদস্থ মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তার বরাতে। তিনি সেনাবাহিনী ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। একই কথা মিয়ানমার ছেড়ে আসা আরেকজন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে বিবিসি প্রচার করেছে। মেজর সাই থেইন উইন নরওয়ে-কেন্দ্রিক ডেমোক্র্যাটিক ভয়েস অব বার্মা রেডিওকে ব্যাপারটি বিস্তারিত জানান। এর সমর্থনে তিনি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার ছবি ও নানা তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে জাতিসঙ্ঘের একজন সাবেক পরিদর্শক মন্তব্য করেছেন, মিয়ানমার পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে আশার কথা তারা জানাচ্ছেন, সামরিক জান্তা পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে এখন সফলতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। ২০০৭ সালে পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হলেও সেখানে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম-২৩৫ উৎপাদিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেখানে পরমাণু উৎপাদন থেকে শুরু করে এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পুরো প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করার কথা রয়েছে। মিয়ানমার জান্তার সামরিক উচ্চাকাক্সক্ষা সাম্প্রদায়িক মোড়কে এখন বেগবান। তারা বৌদ্ধ নেতাদের এই উচ্চাকাক্সক্ষার সাথে এক করে নিয়েছে। ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে তারা দেশের জনগণকে এ কথা বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে যে, বৌদ্ধ ছাড়া অন্যরা শত্রু। এর মধ্যে মুসলিমেরা সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই তাদের তাড়াতে দারুণভাবে সেন্টিমেন্ট গড়ে তোলা গেছে। মিয়ানমারের পরমাণু উচ্চাকাক্সক্ষা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
বিষয়টি বাংলাদেশের অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে ভাবা দরকার হলেও বাংলাদেশের এ ব্যাপারে কোনো চেতনা রয়েছে, এমন আঁচ করা যায় না। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার কোনো ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েনি। কারণ, তাদের জাতীয় শক্তির পুরোটাই ব্যয় করেছে রোহিঙ্গা বিতাড়ন ও তাদের সামরিক শক্তি বিকাশের জন্য। এ অবস্থায় বাংলাদেশ তার শক্তির প্রায় পুরোটাই ব্যয় করছে নিজের মানুষের বিরুদ্ধে। মূলত সরকারের পুরো মনোযোগ কিভাবে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে সেই লক্ষ্যে। নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করেছে ভিন্নমত দমাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ কাজ করছে। এর বাইরে সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ কাজে ব্যবহার হচ্ছে। গোয়েন্দা শক্তি পুরোটাই নিজেদের মানুষের বিরুদ্ধে ব্যয় হচ্ছে। বিদেশী মিশন ব্যবহৃত হচ্ছে দলীয় চিন্তাভাবনা বাস্তবায়নে। মিয়ানমারের উচ্চ সামরিক আয়োজনের লক্ষ্য কারা, সেটি চিন্তা করার ফুরসতও সম্ভবত বাঙালিদের নেই। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়ে মিয়ানমার যখন সফলতা পেয়েছে, তখন অন্য সীমান্ত ভারতের আসামে বহিরাগত বলে এক কোটির বেশি মানুষকে জড়ো করার আয়োজন চলছে। আসামের মোট জনসংখ্যা তিন কোটি ৩০ লাখ। রাজ্যের জনসংখ্যার ৩৪ শতাংশের বেশি মুসলিম। তাদের মোট সংখ্যার এক কোটির বেশি মুসলিম। নাগরিক সনদ প্রদানের প্রথম দফায় ৬০ শতাংশকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাদ পড়েছে ৪০ শতাংশ। বাদ পড়া অংশটি মূলত মুসলিম ও বাঙালি। রোহিঙ্গাদের রাষ্ট্রহীন করার যে কৌশল, সেটা আসামের সাথে মিলে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমার এ জন্য প্রথমে একটি নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ন করে। যখন এ আইনটি রচিত হয়, তখন রোহিঙ্গারা একটি জাতিগোষ্ঠী হিসেবে দেশটিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাদের সদস্যরা জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। অং সান সু চি এবং তার বাবার উপদেষ্টা পরিষদে রোহিঙ্গা সদস্যরা ছিলেন। ধূর্ত সেনাবাহিনী যখন এই পরিকল্পনার সূচনা করে, কেউ সেটাতে নেতিবাচক কিছু দেখেননি। এখন মিয়ানমারের কোনো পর্যায়ে রোহিঙ্গা থাকার কথা চিন্তাও করা যায় না।
প্রতিবেশী ত্রিপুরার নির্বাচন বিজেপির বিতাড়ন পরিকল্পনাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বিজেপির নামটি সেভাবে ত্রিপুরায় পরিচিত ছিল না। এর আগের নির্বাচনে মাত্র দেড় শতাংশ ভোট পেয়েছিল দলটি। এক লাফে তা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে। নিজেদের উগ্র সাম্প্রদায়িক লিপ্সাকে আড়ালে রেখে ভোটারদের আকর্ষণীয় সব প্রতিশ্রুতি দিতে বিজেপি ওস্তাদ। চাকুরেদের জন্য নতুন বেতন কমিশন, দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের জন্য মজুরি দ্বিগুণ করে দেয়া ভোটারদের টেনেছে। রেজিমেন্টেট সংগঠনগুলোর আদর্শ রয়েছে বিজেপিতে। একই আদর্শ বামদের মধ্যেও রয়েছে। ত্রিপুরার বামদের এই রেজিমেন্টেট অবস্থান মার খেয়েছে বিজেপির কৌশলের কাছে। এসব দলে রীতিমতো হোলটাইমার রয়েছে, যারা বেতনের বিনিময়ে দিনরাত খাটে দলের জন্য। এদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে আদর্শিক লক্ষ্য-উদ্দেশ্য যত দিন প্রধান থাকে, দল তত দিন উপকৃত হয়। যখনই বেতনটা প্রধান হয়ে যায়, দলটি পেছনে ঝুলে যায়। দলের কাজ আর এগোয় না। ত্রিপুরায় বিজেপির ছাত্র, যুব, নারী আদিবাসিদের বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এ ধরনের আত্মনিবেদিত কর্মীদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এদের মধ্যে দলীয় লক্ষ্য হাসিলের প্রচেষ্টা এখন সর্বোচ্চ গতিতে রয়েছে। বাম বিরোধী ভোট একজোট করতে পেরেছে বিজেপি। বিজেপি তাদের অঙ্গ ও আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনগুলো ছলে-বলে-কৌশলে এ কাজটি করেছে। যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা করায়ত্ত করাই তাদের লক্ষ্য। এরা রাতদিন খেটেছে বিজেপির হয়ে। তাই ভোটের প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে যায় বহু ব্যবধানে। ভোটের আগেই দোদুল্যমান ভোটারদের তাদের বাক্সে ঢুকিয়ে নিতে সমর্থ হয়। গতবারের নির্বাচনে কংগ্রেস দলের বাক্সে ৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। সেই ভোটাররা এবার বিজেপির প্রচারণা কৌশলের কাছে অনেকটাই ধরাশায়ী হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী ফলাফল আঞ্চলিক রাজনীতিতে পড়বে। বিশেষ করে আসাম থেকে তাড়িয়ে দেয়ার যে অ্যাজেন্ডা, সেটা বেগবান হবে। রোহিঙ্গাদের পর নতুন এই উদ্বাস্তুদের আবাস কোথায় হবে, এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কোনো ধরনের প্রস্তুতি আছে কি?
মোদি সরকার এটা বুঝে গেছে, এ পথে হাঁটলে হিন্দুপ্রধান ভারতে তাদের পক্ষে ভোটারের অভাব হবে না। তাহলে বাংলাদেশ কি এ অঞ্চলের একটি ডাম্পিং জোন হবে? যারাই মনে করবে এসব মানুষ তাদের দেশের আদিবাসী নয়, তারাই কি সেসব মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে দেবে? আদমের পর থেকে মানুষ তাদের বসতির জায়গা পরিবর্তন করেছে। যেমন এবারের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিপ্লব কুমার দেব। তার বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়ায়। উপজেলার মেঘদাইর গ্রামের হিরুধন দেব ও মিনা রানী দেবের একমাত্র ছেলে বিপ্লব। ১৯৭১ সালে তার বাবা-মা ত্রিপুরা চলে যান। তারা সেখানেই স্থায়ী বাসিন্দা হন। তার চাচা প্রাণধন দেব এখন কচুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি। বিপ্লবকে গর্ভে নিয়ে তার মা ত্রিপুরায় গিয়েছিলেন। ত্রিপুরাতেই বিপ্লবের জন্ম হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য বিজেপির সভাপতি বিপ্লব বড় ব্যবধানে জিতেছেন। তিনি রাজ্য বিজেপির দায়িত্ব পান ২০১৬ সালে। বিপ্লব দেব গত বছর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে বিজেপির প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে এসেছিলেন। সম্মেলন শেষে হেলিকপ্টারে করে কচুয়ায় গিয়েছিলেন। এভাবে এক জায়গা থেকে বসতবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া সব সময় হয়েছে। এখন আমরা ধর্মের ভিত্তিতে মাইগ্রেশনকে কখনো করছি জায়েজ আবার কখনো করছি নাজায়েজ।
jjshim146@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.