পাট নিয়ে বাহাস
পাট
শিল্প নিয়ে শুরু হয়েছে দুই মন্ত্রণালয়ের বাহাস। গত কয়েকদিন ধরে
অর্থমন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এ বাহাস চলছে।
অর্থমন্ত্রী বলছেন, লোকসানি এ খাত বন্ধ করে দেয়া উচিত। অপরদিকে অপার
সম্ভাবনাময় হিসেবে এ খাতে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। গতকালও রাজধানীর দু’টি
পৃথক অনুষ্ঠানে তারা পরস্পরের বিপরীতমুখী বক্তব্য রেখেছেন। গতকাল সচিবালয়ে
অর্থ বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির
স্মরণিকা ‘প্রয়াস’-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সরকারের লোকসানি প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) একেবারে বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে
মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পাটের বিকাশে বাধা
অর্থমন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজমের এমন অভিযোগের দুই
দিনের মাথায় তিনি এ মন্তব্য করলেন। এর আগে গত সোমবার বস্ত্র ও পাট
প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘পাট নিয়ে অর্থমন্ত্রী
নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অর্থমন্ত্রীর এ নেতিবাচক মনোভাবের প্রভাব অর্থ
মন্ত্রণালয়েও পড়েছে। ফলে পাটের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। গতকালও একই ধরনের
বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
(ডিসিসিআই) এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় যৌথভাবে আয়োজনে ‘পাট শিল্পের
উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে মির্জা আজম বলেন, পাট শিল্পের
ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহ থাকলেও আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে
যথেষ্ট অনাগ্রহ রয়েছে। জাতীয় পাট দিবস-২০১৮ উপলক্ষে মতিঝিলের ডিসিসিআই
অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ওই সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
সাবেক উপদেষ্টা এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার
(পিপিআরসি)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। সেমিনারে
বিভিন্ন পর্যায়ের উদ্যোক্তা, গবেষকসহ নানা স্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এ
শিল্পকে সম্ভাবনাময় উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
পাট প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। সুতরাং এটার ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অসুবিধা যেটা আমাদের হয়, পাটকে আমরা রিভাইস করতে চাই। পাটের একটা নতুন বাজারও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রিভিশনের প্রক্রিয়াটা আমার ভালো লাগছে না। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ওল্ড বিজেএমসি’র এক্সিসটেন্সের (থাকার) কোনো প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। আমি তাদের (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়) বলেছি বিজেএমসির কোনো জায়গা নেই এই নতুন ব্যবস্থায়। একই অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, স্যার আপনি (অর্থমন্ত্রী) তো সমপ্রতি পলিসি সাপোর্ট দিয়েছেন। যেটা আমার মাধ্যমে হয়েছে। কাঁচা পাটের ব্যবসা এক সময় বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনি পলিসি সাপোর্ট দিয়ে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। তারপরও এই মন্তব্যটা আসলে ঠিক হয়নি। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, পাটে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট কত আছে! ইনিশিয়ালি যখন বিজিএমসি হলো তখন কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়েছি, এরপর প্রত্যেক বছরে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা করে দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা আনস্যাটিসফাইড হাঙ্গার ফর মানি। পাট খাতকে এগিয়ে নেয়ার প্রথম পরামর্শ কী- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ফার্স্ট পরামর্শ অ্যাবোলিশ দি বিজেএমসি। দ্যাট উইল বি গুড ফর দ্য জুট সেক্টর। এ সময় অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, বিজেএমসির সিজনাল কর্মচারী থাকার কথা ৫০ শতাংশ, আর ৫০ শতাংশ স্থায়ী। ওরা ৯০ শতাংশ স্টাফকে স্থায়ী করে ফেলেছে। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, বিজেএমসি’র ম্যানেজমেন্ট ইজ হরিবল অ্যান্ড দ্যাটস হোয়াই আই ডিজলাইক দেম।
অপরদিকে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের ৪ কোটি মানুষ সরাসরি পাট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মন্ত্রী বলেন, সরকার ‘জুট প্যাকেজিং অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে প্যাকেজিং’র ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কারণে দেশের পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাট চাষিরা ভালো মূল্যে পাট বিক্রি করতে পারছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে দেশের পাটের উৎপাদন ছিল ৬৫ লাখ বেল, ২০১৫ সালে ৭০ লাখ বেল, ২০১৬ সালে ৮৫ লাখ বেল এবং ২০১৭ সালে ছিল ৯২ লাখ বেল। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের উদ্যোক্তাবৃন্দ ২৪০ ধরনের পাট পণ্য উৎপাদন করছে, ২০১৭ সালে যেটির সংখ্যা ১৩৫টি। তিনি বলেন, পরিসংখ্যানে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ পাট পণ্যের বহুমুখীকরণে অত্যন্ত মনোযোগী এবং আন্তরিক। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পাট খাতের দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করে, সরকার ইতিমধ্যে ৬টি টেক্সটাইল কলেজ এবং ১২টি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছে। তিনি পাট পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য পাট বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরো বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাট প্রতিমন্ত্রী স্বল্পমূল্যে পাটের তৈরি ব্যাগ উৎপাদন করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে দেশের মানুষকে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে আরো উৎসাহিত করা যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার কয়েক বছর পর্যন্ত পাটই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম। ৭৫-এ দেশে পট পরিবর্তনের পর সরকারের অসহযোগিতার কারণে কৃষক পাটচাষে বিমুখ হয়ে পড়েন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সর্বোৎকৃষ্ট পাট বাংলাদেশে উৎপাদন হলেও বীজ আনতে হয় ভারত থেকে। মির্জা আজম বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাট শিল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পাট শিল্পের প্রতি আগ্রহী হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে যথেষ্ট অনাগ্রহ রয়েছে। তবে মিডিয়াতে কিছুদিন ধরে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ায় সেগুলো ওভারকাম হচ্ছে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান। তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৯৬২.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, তবে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, বাণিজ্যিক সৃজনশীল-জ্ঞান স্বল্পতার জন্য পাটের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং প্রায় কাঁচাপাটের ৯০ শতাংশ রপ্তানি করে। তিনি দেশে-বিদেশে পাটের বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে ‘জুট পাল্প পেপার অ্যাক্ট’ এবং ‘পাট আইন’ প্রণয়ন একান্ত আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত কয়েক দশক ধরে তৈরি পোশাক খাত এবং প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক হিসেবে কাজ করেছে, এখন সময় এসেছে নতুন চালক খুঁজে বের করার। এক্ষেত্রে পাটের সম্ভাবনা খুবই বেশি। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য আমাদের অর্থনীতির জন্য নতুন একটি শক্তিশালী চালক প্রয়োজন, যা পাটের মাধ্যমে সম্ভব। তিনি আরো বলেন, পাটের বহুমুখীকরণের জন্য দেশের উদ্যোক্তা সম্প্রদায় ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য একবারে অমূলক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের নিকট তা সঠিকভাবে উপস্থাপন জরুরি। এর সম্ভাবনার দিক দেখানো গেলে তার আশঙ্কা দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া নির্ধারিত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন-এর উপদেষ্টা (গবেষণা) বাবুল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর প্রাক্তন পরিচালক ড. এএফএম আকতারুজ্জামান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান, ডিসিসিআই পরিচালক এসএম জিল্লুর রহমান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এমএস সেকিল চৌধুরী, প্রাক্তন পরিচালক আহম্মদ হোসেন মজুমদার, একেডি খায়ের মোহাম্মদ খান, আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (জিটিপিডিসি)’র পরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি এনামুল হক পাটোয়ারী প্রমুখ। তারা পাট শিল্পের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর আগে ডিসিসিআই’র পাটের বহুমুখীকরণ বিষয়ক বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক এবং নির্বাহী পরিচালক, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড মো. রাশেদুল করিম মুন্না মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, পরিবেশ সচেতনতা ও সবুজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাটের তৈরি শপিং ও ফুড গ্রেড ব্যাগ, কম্পোজিট, জিও-টেক্সটাইল, পাল্প ও কাগজের বিশাল বাজার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের তথ্যানুযায়ী বিশ্ব বাজারে শপিং ব্যাগ-এর বার্ষিক চাহিদা ৫০ বিলিয়ন পিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৯ সালের মধ্যে ৮০% প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কিনা আমাদের পাট শিল্পের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।
পাট প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। সুতরাং এটার ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। অসুবিধা যেটা আমাদের হয়, পাটকে আমরা রিভাইস করতে চাই। পাটের একটা নতুন বাজারও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু রিভিশনের প্রক্রিয়াটা আমার ভালো লাগছে না। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় ওল্ড বিজেএমসি’র এক্সিসটেন্সের (থাকার) কোনো প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। আমি তাদের (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়) বলেছি বিজেএমসির কোনো জায়গা নেই এই নতুন ব্যবস্থায়। একই অনুষ্ঠানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, স্যার আপনি (অর্থমন্ত্রী) তো সমপ্রতি পলিসি সাপোর্ট দিয়েছেন। যেটা আমার মাধ্যমে হয়েছে। কাঁচা পাটের ব্যবসা এক সময় বন্ধ করে দিয়েছিল, আপনি পলিসি সাপোর্ট দিয়ে সেগুলো বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। তারপরও এই মন্তব্যটা আসলে ঠিক হয়নি। এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, পাটে আমাদের ইনভেস্টমেন্ট কত আছে! ইনিশিয়ালি যখন বিজিএমসি হলো তখন কয়েক হাজার কোটি টাকা দিয়েছি, এরপর প্রত্যেক বছরে ৪০০-৫০০ কোটি টাকা করে দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা আনস্যাটিসফাইড হাঙ্গার ফর মানি। পাট খাতকে এগিয়ে নেয়ার প্রথম পরামর্শ কী- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ফার্স্ট পরামর্শ অ্যাবোলিশ দি বিজেএমসি। দ্যাট উইল বি গুড ফর দ্য জুট সেক্টর। এ সময় অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, বিজেএমসির সিজনাল কর্মচারী থাকার কথা ৫০ শতাংশ, আর ৫০ শতাংশ স্থায়ী। ওরা ৯০ শতাংশ স্টাফকে স্থায়ী করে ফেলেছে। এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, বিজেএমসি’র ম্যানেজমেন্ট ইজ হরিবল অ্যান্ড দ্যাটস হোয়াই আই ডিজলাইক দেম।
অপরদিকে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত ‘পাট শিল্পের উন্নয়নে পাটের বহুমুখীকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের ৪ কোটি মানুষ সরাসরি পাট খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মন্ত্রী বলেন, সরকার ‘জুট প্যাকেজিং অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে প্যাকেজিং’র ক্ষেত্রে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার কারণে দেশের পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাট চাষিরা ভালো মূল্যে পাট বিক্রি করতে পারছে। তিনি জানান, ২০১৪ সালে দেশের পাটের উৎপাদন ছিল ৬৫ লাখ বেল, ২০১৫ সালে ৭০ লাখ বেল, ২০১৬ সালে ৮৫ লাখ বেল এবং ২০১৭ সালে ছিল ৯২ লাখ বেল। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের উদ্যোক্তাবৃন্দ ২৪০ ধরনের পাট পণ্য উৎপাদন করছে, ২০১৭ সালে যেটির সংখ্যা ১৩৫টি। তিনি বলেন, পরিসংখ্যানে প্রতীয়মান হয় যে, দেশের উদ্যোক্তাবৃন্দ পাট পণ্যের বহুমুখীকরণে অত্যন্ত মনোযোগী এবং আন্তরিক। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, পাট খাতের দক্ষ জনবলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করে, সরকার ইতিমধ্যে ৬টি টেক্সটাইল কলেজ এবং ১২টি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছে। তিনি পাট পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য পাট বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরো বাড়ানোর ওপর জোর দেন। পাট প্রতিমন্ত্রী স্বল্পমূল্যে পাটের তৈরি ব্যাগ উৎপাদন করার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে দেশের মানুষকে পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে আরো উৎসাহিত করা যাবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার কয়েক বছর পর্যন্ত পাটই ছিল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র মাধ্যম। ৭৫-এ দেশে পট পরিবর্তনের পর সরকারের অসহযোগিতার কারণে কৃষক পাটচাষে বিমুখ হয়ে পড়েন। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, সর্বোৎকৃষ্ট পাট বাংলাদেশে উৎপাদন হলেও বীজ আনতে হয় ভারত থেকে। মির্জা আজম বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাট শিল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী পাট শিল্পের প্রতি আগ্রহী হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাপারে যথেষ্ট অনাগ্রহ রয়েছে। তবে মিডিয়াতে কিছুদিন ধরে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ায় সেগুলো ওভারকাম হচ্ছে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান। তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ৯৬২.৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে, তবে পাটপণ্যের বহুমুখীকরণ, বাণিজ্যিক সৃজনশীল-জ্ঞান স্বল্পতার জন্য পাটের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের মোট পাটের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন করে এবং প্রায় কাঁচাপাটের ৯০ শতাংশ রপ্তানি করে। তিনি দেশে-বিদেশে পাটের বাজার পুনরুজ্জীবিত করতে ‘জুট পাল্প পেপার অ্যাক্ট’ এবং ‘পাট আইন’ প্রণয়ন একান্ত আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গত কয়েক দশক ধরে তৈরি পোশাক খাত এবং প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালক হিসেবে কাজ করেছে, এখন সময় এসেছে নতুন চালক খুঁজে বের করার। এক্ষেত্রে পাটের সম্ভাবনা খুবই বেশি। তিনি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য আমাদের অর্থনীতির জন্য নতুন একটি শক্তিশালী চালক প্রয়োজন, যা পাটের মাধ্যমে সম্ভব। তিনি আরো বলেন, পাটের বহুমুখীকরণের জন্য দেশের উদ্যোক্তা সম্প্রদায় ইতিমধ্যে নিজেদের তৈরি করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য একবারে অমূলক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের নিকট তা সঠিকভাবে উপস্থাপন জরুরি। এর সম্ভাবনার দিক দেখানো গেলে তার আশঙ্কা দূর হবে বলে মনে করেন তিনি।
এছাড়া নির্ধারিত আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন-এর উপদেষ্টা (গবেষণা) বাবুল চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইন্সটিটিউট-এর প্রাক্তন পরিচালক ড. এএফএম আকতারুজ্জামান, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. মাহমুদুল হাসান, ডিসিসিআই পরিচালক এসএম জিল্লুর রহমান, ডিসিসিআই’র প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এমএস সেকিল চৌধুরী, প্রাক্তন পরিচালক আহম্মদ হোসেন মজুমদার, একেডি খায়ের মোহাম্মদ খান, আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকী, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (জিটিপিডিসি)’র পরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ জুট গুডস্ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি এনামুল হক পাটোয়ারী প্রমুখ। তারা পাট শিল্পের সম্ভাবনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর আগে ডিসিসিআই’র পাটের বহুমুখীকরণ বিষয়ক বিশেষ কমিটির আহ্বায়ক এবং নির্বাহী পরিচালক, ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেড মো. রাশেদুল করিম মুন্না মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, পরিবেশ সচেতনতা ও সবুজ পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পাটের তৈরি শপিং ও ফুড গ্রেড ব্যাগ, কম্পোজিট, জিও-টেক্সটাইল, পাল্প ও কাগজের বিশাল বাজার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল জুট স্টাডি গ্রুপের তথ্যানুযায়ী বিশ্ব বাজারে শপিং ব্যাগ-এর বার্ষিক চাহিদা ৫০ বিলিয়ন পিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৯ সালের মধ্যে ৮০% প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা কিনা আমাদের পাট শিল্পের জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়।
No comments