রাজধানীতে দিনভর দুর্ভোগ
রাজধানীতে
আওয়ামী লীগের জনসভাকে ঘিরে দিনভর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে নগরবাসীকে।
জনসভায় ঢাকা ও আশেপাশের নেতাকর্মীরা বাস এবং ট্রাকে করে অংশ নেয়ায় সকাল
থেকেই নগরীতে গণপরিবহন সংকট দেখা দেয়। দুপুরের আগ থেকে বিভিন্ন সড়কে ছড়িয়ে
পড়ে তীব্র যানজট। কয়েকটি সড়কে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় এর চাপ পড়ে
অন্য সড়কে। এতে সাধারণ যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকেন যানজটে।
যানবাহন না পেয়ে অনেকে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের
জনসভা ঘিরে আশেপাশের এলাকার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করায় ওই এলাকায়
অবস্থিত কয়েকটি হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে
দেখা গেছে। বুধবার সকাল থেকেই সমাবেশের প্রভাব পড়তে থাকে নগরীতে। অফিসগামী
লোকজন সকাল থেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও যানবাহন পাচ্ছিলেন না। সঙ্গে
রাস্তায় যানজটের মাত্রাও ছিল অন্যদিনের থেকে বেশি। সকালের এ বিড়ম্বনা বেলা
বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিণত হয় চরম ভোগান্তিতে। যেসব সড়ক চালু ছিল সেখানেও
সমাবেশের গাড়ির বাইরে গণপরিবহন চোখে পড়েনি। রাজধানীতে এমন একটা কিছু এদিন
হতে পারে তার আঁচ পাওয়া গেছিল দুদিন আগেই। ঢাকা সড়ক পরিবহন ও মালিক সমিতির
সাধারণ সম্পাদক এনায়েতুল্লাহ শ্রমিকদের বড় একটা অংশ ৭ই মার্চের সমাবেশে
অংশগ্রহণ করবে এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন। গতকাল দুপুরের আগেই বন্ধ করে দেয়া
হয়েছিল রাজধানীর মিরপুরের রোকেয়া সরণি, মানিক মিয়া এভিনিউ, খামারবাড়ী থেকে
ফার্মগেট সড়ক। রোকেয়া সরণি বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছিল মিরপুর রোডে।
মিরপুর-গাবতলী অঞ্চলের অধিকাংশ গাড়ি এ সড়ক দিয়ে প্রবেশ করায় দীর্ঘ যানজট
লেগেছিল। সঙ্গে ছিল তপ্ত দুপুরের তাপ। এ সময় অনেক মানুষকে ক্লান্ত হয়ে পড়তে
দেখা যায়। গাড়ি শূন্যতা ছিল কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে। এ সময় ফাঁকা
রাস্তায় উল্টো সড়কে প্রাইভেট কার চলতে দেখা গেছে। দুপুরের পরে এ সড়ক দিয়ে
সমাবেশের গাড়ির বাইরে আর কোনো গণপরিবহন চলেনি।
কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব ছমিরুন বিবির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নাতনিকে চিকিৎসক দেখিয়ে মেয়েসহ কল্যাণপুরে বাসায় ফিরছিলেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে শাহবাগে মোড়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি। তারপর তিনজনে মিলে হাঁটা শুরু করেন। সঙ্গে ছিল কয়েকটি হাত ব্যাগ। কাওরানবাজার পর্যন্ত আসার পরে ছমিরুন বিবির পা আর চলছিল না। এখানে আবার অপেক্ষা করতে থাকেন গাড়ির জন্য। কিন্তু কোনোভাবে গাড়ি পাচ্ছিলেন না। এ সময় তার মানুষিক প্রতিবন্ধী নাতনি হাঁটতে পারবে না বলে বারবার চিৎকার করছিল। উপায়ান্তর না পেয়ে তারা আবার হাঁটা শুরু করে। মাহবুবুল আলম কাওরানবাজার থেকে সংসারের কেনাকাট করে শেওড়াপারার বাসায় ফিরছিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও গাড়ি না পেয়ে মাথায় বস্তা তুলে হাঁটা শুরু করেন। বাংলামোটর এলাকায় দেখা যায় মধ্য বয়স্ক চার পাঁচজন লোক এক সঙ্গে রাস্তার পাশে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তারা কোথায় যাবেন জানতে চাইলে জানান, আমরা গাজীপুর যাবো। গুলিস্তান থেকে গাড়ি না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। হাঁটতে না পেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। রমনা পার্কে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন। অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, গাড়ি না পাওয়ার কারণে পিজি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হেঁটে আসছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোনো গাড়ি না পাওয়ায় কীভাবে স্বামীকে নিয়ে বাসায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মোড় থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীসহ যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এতে উভয় এলাকার সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে বয়স্ক ও অসুস্থদের সীমাহীন যাতায়াত ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হন নরসিংদীর বাসিন্দা অসুস্থ আয়াতুল্লাহ। পা অপারেশন করায় ঠিকমতো হাঁটতে না পারার কারণে তার স্ত্রী স্বামীকে ধরে ধরে নিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, আজকে স্বামীর পা অপারেশন করিয়েছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তাই হাঁটছি সামনে গাড়ি পাওয়ার আশায়। প্রেস ক্লাব এলাকায় কোনো গাড়ি না চললেও পুরানা পল্টন এলাকায় ছিল চরম যানজট। গুলিস্তান, মতিঝিল ও কাকরাইল থেকে দফায় দফায় মিছিল নিয়ে আসায় পুরানা পল্টন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। বেশি বিপাকে পড়তে দেখা গেছে দূরের যাত্রীদের। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য। সমাবেশে আসা গণপরিবহনগুলো সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখায় যানজট বেড়ে যায় দ্বিগুণ। যাত্রী সেবা না দিয়ে এভাবে গাড়ি বন্ধ করে রাখার কারণ জানতে চাইলে কাকরাইল এলাকায় গাজিপুর পরিবহন বাসের চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, চাহিবা মাত্র সরকারকে গাড়ি দিতে আমরা বাধ্য। গাড়ি না দিলে জোর করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। গাড়ির চলমান যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এই চালক বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজার টাকা ভাড়া পাই। অথচ সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে আসায় ভাড়া দিবে মাত্র ২ হাজার টাকা। এভাবে বাধ্য হয়ে প্রায় সব গাড়ি সমাবেশে আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি। মিরপুর টু আজিমপুর রুটের গাড়ি চলে ধানমন্ডির ভিতর দিয়ে। অন্যদিকে ধানমন্ডি টু মতিঝিলের গাড়ি চলে আজিমপুর দিয়ে। ডিলিংক, মিরপুর লিংক, পালকিসহ অন্য কোম্পানির গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখা গেলেও তাতে ছিল সমাবেশগামী যাত্রীরা। নিউ মার্কেট থেকে উত্তরাগামী রিয়াজ হোসেন বলেন, অফিসের কাজের জন্য প্রতিদিনই সকালে উত্তরা যাওয়া এবং সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে আজিমপুর আসা লাগে আমাকে। কিন্তু জনসভার জন্য আমরা দুর্ভোগে পড়েছি।
কথা হয় সত্তরোর্ধ্ব ছমিরুন বিবির সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নাতনিকে চিকিৎসক দেখিয়ে মেয়েসহ কল্যাণপুরে বাসায় ফিরছিলেন। হাসপাতাল থেকে বের হয়ে শাহবাগে মোড়ে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি। তারপর তিনজনে মিলে হাঁটা শুরু করেন। সঙ্গে ছিল কয়েকটি হাত ব্যাগ। কাওরানবাজার পর্যন্ত আসার পরে ছমিরুন বিবির পা আর চলছিল না। এখানে আবার অপেক্ষা করতে থাকেন গাড়ির জন্য। কিন্তু কোনোভাবে গাড়ি পাচ্ছিলেন না। এ সময় তার মানুষিক প্রতিবন্ধী নাতনি হাঁটতে পারবে না বলে বারবার চিৎকার করছিল। উপায়ান্তর না পেয়ে তারা আবার হাঁটা শুরু করে। মাহবুবুল আলম কাওরানবাজার থেকে সংসারের কেনাকাট করে শেওড়াপারার বাসায় ফিরছিলেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও গাড়ি না পেয়ে মাথায় বস্তা তুলে হাঁটা শুরু করেন। বাংলামোটর এলাকায় দেখা যায় মধ্য বয়স্ক চার পাঁচজন লোক এক সঙ্গে রাস্তার পাশে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তারা কোথায় যাবেন জানতে চাইলে জানান, আমরা গাজীপুর যাবো। গুলিস্তান থেকে গাড়ি না পেয়ে হাঁটা শুরু করেছিলাম। রোদে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। হাঁটতে না পেরে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। রমনা পার্কে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন। অসুস্থ ব্যক্তির স্ত্রী বলেন, গাড়ি না পাওয়ার কারণে পিজি হাসপাতাল থেকে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে হেঁটে আসছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোনো গাড়ি না পাওয়ায় কীভাবে স্বামীকে নিয়ে বাসায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। মৎস্য ভবন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, মোড় থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে যাত্রীসহ যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এতে উভয় এলাকার সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়ে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে বয়স্ক ও অসুস্থদের সীমাহীন যাতায়াত ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
যানবাহন না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হন নরসিংদীর বাসিন্দা অসুস্থ আয়াতুল্লাহ। পা অপারেশন করায় ঠিকমতো হাঁটতে না পারার কারণে তার স্ত্রী স্বামীকে ধরে ধরে নিয়ে আসছিলেন। তিনি বলেন, আজকে স্বামীর পা অপারেশন করিয়েছি। বাড়ি যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তাই হাঁটছি সামনে গাড়ি পাওয়ার আশায়। প্রেস ক্লাব এলাকায় কোনো গাড়ি না চললেও পুরানা পল্টন এলাকায় ছিল চরম যানজট। গুলিস্তান, মতিঝিল ও কাকরাইল থেকে দফায় দফায় মিছিল নিয়ে আসায় পুরানা পল্টন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব এলাকায় হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। বেশি বিপাকে পড়তে দেখা গেছে দূরের যাত্রীদের। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য। সমাবেশে আসা গণপরিবহনগুলো সড়কের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখায় যানজট বেড়ে যায় দ্বিগুণ। যাত্রী সেবা না দিয়ে এভাবে গাড়ি বন্ধ করে রাখার কারণ জানতে চাইলে কাকরাইল এলাকায় গাজিপুর পরিবহন বাসের চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, চাহিবা মাত্র সরকারকে গাড়ি দিতে আমরা বাধ্য। গাড়ি না দিলে জোর করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। গাড়ির চলমান যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এই চালক বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৯ হাজার টাকা ভাড়া পাই। অথচ সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশে আসায় ভাড়া দিবে মাত্র ২ হাজার টাকা। এভাবে বাধ্য হয়ে প্রায় সব গাড়ি সমাবেশে আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি। মিরপুর টু আজিমপুর রুটের গাড়ি চলে ধানমন্ডির ভিতর দিয়ে। অন্যদিকে ধানমন্ডি টু মতিঝিলের গাড়ি চলে আজিমপুর দিয়ে। ডিলিংক, মিরপুর লিংক, পালকিসহ অন্য কোম্পানির গাড়ি রাস্তায় চলতে দেখা গেলেও তাতে ছিল সমাবেশগামী যাত্রীরা। নিউ মার্কেট থেকে উত্তরাগামী রিয়াজ হোসেন বলেন, অফিসের কাজের জন্য প্রতিদিনই সকালে উত্তরা যাওয়া এবং সন্ধ্যায় উত্তরা থেকে আজিমপুর আসা লাগে আমাকে। কিন্তু জনসভার জন্য আমরা দুর্ভোগে পড়েছি।
No comments