সিরিয়াতে প্রেম ও অন্য জীবনের ছবি আঁকেন যে শিল্পী
একটা
ক্রিসমাস ট্রি-কে ঘিরে বসে বন্ধুরা গল্পগুজব করছে, দুজন লং ডিসট্যান্স
প্রেমিক কথা বলছে টেলিফোনে - আর একজন পুরুষ তার বান্ধবীর জন্য ইন্টারনেট
কানকেশনটা মেরামত করার চেষ্টা করছেন। প্রথম দেখায় ডিমা নাচাউই-র ছবিগুলো
দেখলে মনে হবে এ ছবি পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেরই ভালোবাসার ছবি হতে পারে।
কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, না - এ ছবিতে সম্পূর্ণ অন্য গল্পও
আছে। সে গল্প বিমান হামলার, সে গল্প আঘাতের, এবং মৃত্যুর। আসলে এ ছবি হল
সিরিয়ার ইস্টার্ন ঘৌটা অঞ্চলে সত্যিকারের মানুষ কীভাবে বেঁচে আছে - এবং
ভালও বাসছে - তারই। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুটেরেস এ অঞ্চলকে বর্ণনা
করেছেন 'পৃথিবীর বুকে এক নরক' হিসেবে। ডিমার কথায়, "তবুও কিন্তু এখানকার
বাসিন্দারা তাদের রোজকার জীবন যাপন করছে, তারা প্রেমেও পড়ছে - এবং
ভালবাসার জনকে বাঁচানোর চেষ্টাও করছে!" ডিমা বড় হয়েছে সিরিয়াতেই। কিন্তু
বহু বছর আগে দেশ ছাড়ার পর তিনি এখন বৈরুটের বাসিন্দা, আর সেখানেই একজন
শিল্পী হিসেবে তিনি নিজের কেরিয়ার গড়ে তুলেছেন। সিরিয়ার পরিস্থতি নিয়ে
নানা ধরনের সৃষ্টিশীল প্রকল্পেও তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। তার এই 'প্রেম
হল ...' কালেকশনটা সদ্যই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে। এর ছবিগুলো
সত্যিকারের মানুষের জীবন নিয়ে, আর তাদের সম্পর্কে সিরিয়ার সংঘাত কী
প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে। প্রতিটি ছবিতেই ডিমা তুলে ধরেছেন আলাদা আলাদা,
অনামা কোনও দম্পতিকে - আর তাদের পরিচয় সম্পর্কে খুব কম তথ্যই তিনি প্রকাশ
করেছেন। "এই প্রোজেক্টটা ছিল ভীষণই কঠিন - বিশেষ করে যে ছবিটায় মেয়েটি
মারা যায়, সেটি", ডিমা বলছিলেন নিচের ছবিটার দিকে আঙুল দেখিয়ে। "ছবিটা
কেমন দেখতে লাগবে সেটা যেমন আমি ভাবছিলাম, তেমনি ছবিটা আঁকার সময় আমার
মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে ছিল। "আসলে যার শেষটা সুখের নয়, সে ছবি আঁকাটা
ভীষণ, ভীষণ কঠিন।" "কিন্তু আমি কৃতজ্ঞ যে এই সুযোগে আমি সিরিয়ানদের জীবনের
অন্য দিকটাও দেখার সুযোগ পেয়েছি। জীবনের এই দিকটায় তারাও বাঁচেন, তারাও
ভালবাসেন - এবং তারা সেখানে কিন্তু ভিক্টিম নন।" "আমার ছবিগুলোতে আমি তাদের
ঠিক সেই দিকটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।" এদিকে বিদ্রোহী-অধিকৃত ইস্টার্ন
ঘৌটা থেকে দলে দলে মানুষের পালিয়ে যাওয়ার খবর আসছে, বলা হচ্ছে সেখানকার
পরিস্থিতি 'সঙ্কটজনকের চেয়েও খারাপ'। সামান্য কিছু ত্রাণ সেখানে পৌঁছেছে
ঠিকই - কিন্তু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো বলছে আরও অনেক বেশি সহায়তা পাঠানো
দরকার। গত কয়েক সপ্তাহে সাতশোরও বেশি মানুষ সেখানে মারা গেছেন, যাদের
মধ্যে অনেকেই শিশু। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে যেভাবে সিরিয়ার মানুষের
ছবি তুলে ধরছে, ডিমা তাতে আদৌ খুশি নন। "মানুষ হিসেবে আমাদের যেন শরণার্থী ও
ভিক্টিম হিসেবে স্টিরিওটাইপ করে ফেলা হচ্ছে", গভীর খেদের সঙ্গে বলছিলেন
তিনি। "আমি তো বরং সিরিয়ার মানুষের সঙ্গে সেটা নিয়েই কথা বলতে চাইব যে
কীভাবে তারা বাঁচার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে তাদের রোজকার দিন
কাটছে।" "তবে যখনই আমার খারাপ লাগে, আমি কিছু-না-কিছু করার চেষ্টা করি। আমি
জানি আমার ছবির ভক্তরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন - আমি তাদের কাছে একটা
বার্তা পৌঁছে দিতে চাই, সিরিয়া নিয়ে এমন কিছু তাদের জানাতে চাই যেটা তারা
আগে জানতেন না!" "আমার ছবি আর শিল্পকলাই এই কাজে আমার একমাত্র হাতিয়ার।
ঠিকই, আমি হয়তো সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব একটা বড় কোনও পরিবর্তন
আনতে পারব না।" "কিন্তু আমি এটা জানি আমার ছবি সিরিয়ার সাংস্কৃতিক
স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার কাজটা করছে, পরবর্তী প্রজন্ম যেটা দেখে জানতে
পারবে আসলে সে দেশে তখন কী ঘটেছিল!"
No comments